14/06/2024
মনের কথা :
আমার একজন বন্ধুপ্রতিম ব্যক্তির বাচ্চার অপারেশন করার পরে আমি নিজে কোন ভিজিট না নিয়ে শুধু হাসপাতালের চার্জ দিয়ে রুগী নিয়ে যেতে বলেছিলাম। এই অপারেশনের টিম চার্জ আমি সাধারণত ২০ হাজার টাকা রাখি। তিনি কিন্তু দরিদ্র না; শুধুমাত্র বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবেই টাকা নেইনি।
কিছুদিন আগে সেই বন্ধুর দোকানে গেলাম একটা জিনিশ কিনতে ২২০০ টাকার পন্যটি কিনে ২০০ টাকা কম দিতে চাইলে সে মাথা নিচু করে বলে "দোস্ত লাভ হয়না"....
এটা কিন্তু ব্যাতক্রম না।
আমাদের সমাজে এটাই নিয়ম।
আমার যে সব আত্বীয় / প্রতিবেশী/ বন্ধুরা অসুস্থ হয়ে রাত বিরাতে আমাকে তাদের পাশে পান; আমার বাবা মা অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে তারা দেখতেও যান না।
আমার একজন আত্বীয় আমার চেম্বারে আসার আগে ফোন করে বলে দেয় তার বাচ্চার জন্য ওষুধ কম্পানির প্যাড, কলম গুছিয়ে রাখতে। তিনিই আবার ওষুধ কম্পানির কাছ থেকে উপঢৌকন নেবার অভিযোগে ফেসবুকে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস লেখেন।
একবার আমাদের বাড়িওয়ালাকে গভীর রাতে চিকিৎসা দেবার পরে তৃপ্তির হাসি হেসে বলেছিলেন, " ডাক্তার ভাড়াটিয়া থাকার অনেক সুবিধা আছে"। এই বাড়িওয়ালারা কিন্তু কখনোই ডাক্তার ভাড়াটিয়াদের সুবিধা দেননা।
যে ব্যাংকে আমি লেনদেন করি সেখানে ডাক্তার হিসেবে আমি লাইন ভেংগে আগে কাউন্টারে যাবার সুযোগ না পেলেও তারা সেই পরিচয়ের সুবাদে আমার চেম্বারে লাইন ভেংগে আগে রুগী দেখিয়ে যায়।
প্রফেসরের কাছে নিজের রুগীর সিরিয়ালের জন্য যারা তদবির করে ; তারাই আবার বেশী রুগী দেখার জন্য ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে।
এই দেশের মানুষ ডাক্তার আত্বীয়/ পরিচিত / বন্ধুর কাছ থেকে যে পরিমান সুযোগ সুবিধা নেয় বা পায় অন্য প্রফেশনাল আত্বীয়/ পরিচিত / বন্ধুর কাছে তার শিকি ভাগও পায় না। এরাই আবার ডাক্তারদের বিরুদ্ধে যে পরিমান কুৎসা রটায় অন্যদের প্রতি এর শিকি ভাগও করে না।
হিপোক্রেসির চিকিৎসা আগে দরকার এই সমাজের।
সৌজন্যে- ডাঃ ওয়ার্সি