03/05/2025
আমি পড়ে কান্না আটকে রাখতে পারিনি⁉️
আমার ছেলে অ্যান্ড্রু কখনও বিয়ে করবে না।
তার নিজের সন্তান হবে না, গাড়িও চালাবে না, এমন অনেক কিছুই সে কখনও অনুভব করতে পারবে না—যেগুলো আমাদের কাছে স্বাভাবিক, এমনকি খুব সাধারণ মনে হয়…
কিন্তু সে সুখী। আর সে সুস্থ।
এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় বিষয়।
যখন কোনো অপরিচিত মানুষ তাকে দেখে হেসে ওঠে, তখন আমার পুরো দিন আলোয় ভরে যায়।
যখন কোনো মেয়ে তাকে মমতা ভরা দৃষ্টিতে দেখে, তখন শুধু তার মুখেই নয়, বরং তার পুরো শরীরজুড়ে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে।
মানুষ হয়ে ওঠার জন্য খুব বেশি কিছু লাগে না।
এবার শুনুন একটি গল্প:
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের একটি স্কুলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে, এক ছাত্রের বাবা এমন এক আবেগঘন বক্তব্য দেন, যা সেখানে উপস্থিত সবার হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলে।
স্কুল এবং এর আন্তরিক কর্মীদের ধন্যবাদ জানানোর পর তিনি বলেন—
“যখন প্রকৃতির ভারসাম্য ব্যাহত হয় না, তখন সবকিছুতে একটি স্বাভাবিক শৃঙ্খলা দেখা যায়, এক অপূর্ব সঙ্গতি দেখা যায়।”
তারপর গলা কেঁপে উঠে তিনি বলেন—
“কিন্তু আমার ছেলে হারবার্ট তো অন্যদের মতো শেখে না। সে অন্যদের মতো বুঝতেও পারে না।
তাহলে তার ক্ষেত্রে সেই প্রকৃতির স্বাভাবিক শৃঙ্খলা কোথায়?”
ঘরে নিস্তব্ধতা নেমে আসে।
তিনি আবার বলতে শুরু করেন—
“আমি বিশ্বাস করি, যখন কোনো শিশুর জন্ম হয় যিনি শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন, তখন পৃথিবী একটি দুর্লভ সুযোগ পায়—
সেই সুযোগ হলো: মানুষের সত্যিকারের আত্মাকে প্রকাশ করার সুযোগ।
আর এই আত্মা প্রকাশ পায়—অন্যরা তাকে কীভাবে গ্রহণ করে, তার মাধ্যমে।”
এরপর তিনি একটি স্মৃতি শেয়ার করেন—
একদিন তিনি হারবার্টকে নিয়ে হাঁটছিলেন একটি মাঠের পাশে, যেখানে কিছু ছেলে ফুটবল খেলছিল।
হারবার্ট জিজ্ঞেস করল—
— বাবা, তুমি কি মনে করো ওরা আমাকে খেলতে দেবে?
বাবা জানতেন, বেশিরভাগ সময় উত্তর হবে “না।”
তবুও তিনি জানতেন, যদি ওরা “হ্যাঁ” বলে, তাহলে সেটা হারবার্টের জন্য হবে এক অমূল্য মুহূর্ত—
একটা গ্রহণযোগ্যতা, একটা আত্মমর্যাদার অনুভব।
তাই তিনি একটু ভয়ে ভয়ে এক ছেলের কাছে গিয়ে বললেন—
“আমার ছেলে হারবার্ট কি তোমাদের সঙ্গে খেলতে পারবে?”
ছেলেটি একটু থেমে তার বন্ধুদের দিকে তাকাল, তারপর বলল—
“আমরা তো ৩-০ তে পিছিয়ে আছি, ১০ মিনিট বাকি… ঠিক আছে, ও আসুক। আমরা ওকে পেনাল্টি কিক নিতে দেব।”
হারবার্ট দৌড়ে গিয়ে বেঞ্চে বসা ছেলেদের সঙ্গে মিশে গেল এক বিশাল হাসি নিয়ে।
সে জার্সি পরল, আর বাবা—চোখে পানি নিয়ে—এই দৃশ্য দেখলেন এক পূর্ণ হৃদয়ে।
বাকি খেলায় সে মাঠের পাশে ছিল, খুশিতে ভরপুর।
আর বাকি ছেলেরাও তখন বুঝতে লাগল—এই শিশুটিকে তারা গ্রহণ করেছে।
শেষ মিনিটে তাদের দল এক পেনাল্টি কিক পেল।
যে ছেলে প্রথমে ওকে স্বাগত জানিয়েছিল, সে বাবার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল—
“এটা ওর সময়।”
হারবার্ট বল হাতে ধীরে ধীরে পেনাল্টি স্পটের দিকে এগিয়ে গেল।
গোলকিপার তখনই বুঝে গেল। সে ধীরে ধীরে একদিকে ঝাঁপ দিল, গোলপোস্ট ফাঁকা করে দিল।
হারবার্ট হালকা করে বলটা কিক করল।
বলটা ধীরে ধীরে গড়িয়ে গোললাইন পার করল।
গোল।
ছেলেরা চিৎকার করে উঠল আনন্দে।
তারা হারবার্টকে কাঁধে তুলে নিল, জড়িয়ে ধরল, এমনভাবে উদযাপন করল যেন সে বিশ্বকাপের ফাইনালে জয়সূচক গোল করেছে।
বাবা তখন বলছিলেন কাঁপা কণ্ঠে—
“সেদিন, কিছু ছেলে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল…
জয়ের জন্য নয়,
বরং দুনিয়াকে একটা শিক্ষা দেয়ার জন্য—
মমতা, মানবতা আর ভালোবাসার শিক্ষা।”
হারবার্ট আর কখনো গ্রীষ্ম দেখতে পায়নি।
সে শীতেই সে চলে যায়।
কিন্তু সে কখনও ভুলে যায়নি যে, একদিন সে ছিল এক হিরো।
আর তার বাবা কখনও ভুলে যাননি সেদিন রাতে বাড়ি ফিরে হারবার্টের মায়ের হাতে তাকে তুলে দিয়ে, তার চোখের অশ্রুতে ভরা হাসি দেখে…
যেন সেটাই ছিল জীবনের সবচেয়ে সুন্দর গোল।
এই গল্পটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়:
প্রতিদিন আমরা বহু হাসির কনটেন্ট, ভিডিও, হালকা পোস্ট শেয়ার করি ভাবনাহীনভাবে।
কিন্তু যখন এমন কিছু সামনে আসে—যা অর্থবহ, মূল্যবান, যা সত্যিকারের সুন্দর—
তখন আমরা একটু থেমে যাই।
ভাবি:
“আমি কাকে এটা পাঠাবো?”
“কে এটা বুঝবে?”
যিনি এই গল্পটি আপনাকে পাঠিয়েছেন, তিনি আপনার প্রতি আস্থা রাখেন।
তারা বিশ্বাস করেন আপনি এই মানবতার চেইনের একটি সংযোগ হতে পারেন।
কারণ প্রতিদিন আমাদের সামনে থাকে অসংখ্য সুযোগ—
একটু দয়া দেখানোর, একটু সহমর্মিতা ছড়ানোর,
একটু মানবিকতা ফিরিয়ে আনার।
এক মহান মানুষ বলেছিলেন:
“একটি সমাজকে বিচার করতে হলে, দেখতে হবে তারা সবচেয়ে দুর্বলদের কেমনভাবে আচরণ করে।”
(সংগৃহীত)
কিশোরগঞ্জ জেলা - Kishoreganj District