04/06/2025
আমি আমার কয়েকজন রোগীকে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং দিয়েছি। এর মধ্যে একজন পারফেক্টলি ডায়েট চার্ট ফলো করেছে এক সপ্তাহে ৪ কেজি ওজন কমিয়েছে। মেয়েটা খুব খুশি....
🕒 ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং (IF): ওজন কমানোর একটি কার্যকর পদ্ধতি
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং (IF) এখন বিশ্বের নানা প্রান্তে একটি জনপ্রিয় ও বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত ওজন কমানোর পদ্ধতি। এটি শুধু খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে নয়, বরং খাওয়ার সময়সূচী নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শরীরকে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
🔍 কী এই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং?
IF মানে হলো দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় খাবার খাওয়া এবং বাকি সময় না খাওয়া (fasting)।
🕐 ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং-এর জনপ্রিয় পদ্ধতিগুলো
১. ১৬:৮ পদ্ধতি
• ১৬ ঘণ্টা ফাস্টিং, ৮ ঘণ্টা খাওয়ার সময়।
• উদাহরণ: দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে খাবেন, বাকি সময় পানি/চা/কফি ছাড়া কিছু খাবেন না।
• সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কার্যকর ওজন কমানোর জন্য।
২. ১৪:১০ পদ্ধতি
• ১৪ ঘণ্টা উপোস, ১০ ঘণ্টা খাওয়ার সময়।
• যাদের জন্য ১৬ ঘণ্টা বেশি কঠিন, তাদের জন্য সহজ অপশন।
৩. ২০:৪ পদ্ধতি (ওয়ারিয়র ডায়েট)
• দিনে ২০ ঘণ্টা ফাস্টিং, ৪ ঘণ্টার মধ্যে সব খাবার খেতে হয়।
• অ্যাডভান্সড লেভেলের ফাস্টিং।
৪. ৫:২ পদ্ধতি
• সপ্তাহে ৫ দিন নরমাল খাওয়া, বাকি ২ দিন ৫০০–৬০০ ক্যালোরির সীমিত খাবার।
• ফাস্টিং ডে দুইটি একটানা বা আলাদা হতে পারে।
৫. OMAD (One Meal A Day)
• দিনে শুধু ১ বেলা খাবার।
• সাধারণত ২৩ ঘণ্টা ফাস্টিং, ১ ঘণ্টা খাওয়ার সময়।
• কঠোর, কিন্তু দ্রুত ওজন কমাতে সহায়ক।
৬. Eat-Stop-Eat
• সপ্তাহে ১–২ দিন ২৪ ঘণ্টা ফাস্টিং।
• যেমন: রাত ৮টা থেকে পরের দিন রাত ৮টা পর্যন্ত কিছু না খাওয়া।
৭. Alternate Day Fasting (ADF)
• এক দিন খাবেন, পরের দিন পুরোপুরি না খেয়ে থাকবেন বা ২৫% ক্যালোরি নিবেন।
• ধৈর্য ও পরিকল্পনা দরকার।
⚙️ কীভাবে কাজ করে?
১. ইনসুলিন লেভেল কমে যায়:
ফাস্টিং-এর সময় শরীরের ইনসুলিন লেভেল কমে যায়, ফলে শরীর চর্বি বার্ন করতে সহজে পারে।
• হিউম্যান গ্রোথ হরমোন (HGH) বৃদ্ধি পায়:
যা চর্বি পোড়ানো এবং পেশী গঠনে সাহায্য করে।
• মেটাবলিজম বাড়ে:
ফাস্টিং শরীরের ক্যালোরি পোড়ানোর হার বাড়ায় (temporary metabolic boost)।
✅ ওজন কমানোর উপকারিতা
• 🍽️ কম ক্যালোরি গ্রহণ হয় (অটো-ক্যালোরি রিডাকশন)
• 🔥 শরীর ফ্যাট বার্ন করতে শুরু করে
• 🚫 স্ন্যাকস খাওয়া কমে
• 🧠 মানসিক ফোকাস ও ক্লারিটি বাড়ে
• 📉 ইনসুলিন সেনসিটিভিটি উন্নত হয় (ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী)
📊 বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কী পাওয়া গেছে?
• একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, IF করলে ৮-১০ সপ্তাহে গড়ে ৩-৫ কেজি ওজন কমে
• ২০১৯ সালের এক গবেষণায় বলা হয়: IF ডায়েট ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমাতে এবং পেটের চর্বি (visceral fat) হ্রাসে সহায়ক
🛑 কারা করবেন না বা সতর্ক থাকবেন?
• গর্ভবতী/স্তন্যদানকারী নারী
• ইনসুলিন ব্যবহারকারী ডায়াবেটিক রোগী
• যাদের খাবারের সময় না পেলে মাথা ঘোরে
• যাদের কিডনির সমস্যা রয়েছে
(এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।)
🍽️ IF এর সঙ্গে খাবার কেমন হওয়া উচিত?
• 🥦 বেশি ফাইবার ও কম কার্বোহাইড্রেট
• 🐟 প্রোটিন সমৃদ্ধ (ডিম, মাছ, চিকেন, বাদাম)
• 🫒 স্বাস্থ্যকর ফ্যাট (সরিষার তেল, অলিভ অয়েল,বাদাম)
• 🧂 কম লবণ ও চিনি
• 💧 ২.৫-৩ লিটার পানি/দিন ( ওজন এবং শারীরিক পরিশ্রমের ধরন অনুযায়ী কম বেশি হতে পারে)
🔚 শেষ কথা
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং শুধুমাত্র একটি ডায়েট নয়, বরং এটি একটি জীবনযাত্রার ধরন। সঠিকভাবে অনুসরণ করলে এটি শুধু ওজন নয়, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ইউরিক অ্যাসিড এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে মনে রাখবেন, IF ম্যাজিক নয় — এটি কাজ করে ধৈর্য, পরিকল্পনা ও নিয়মিত অভ্যাসে।