28/07/2025
🗣️ বাংলাদেশে অপ্টোমেট্রি পেশার বিবর্তন ও উন্নয়নঃ
বাংলাদেশে অপ্টোমেট্রি বা দৃষ্টিবিজ্ঞান পেশার ইতিহাস খুব বেশি পুরোনো না হলেও এর বিকাশ ও অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। চক্ষু স্বাস্থ্যসেবায় অপ্টোমেট্রিস্টদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগীদের দৃষ্টিত্রুটি নির্ণয় ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই পেশাজীবীরা দেশের চক্ষুসেবার মানোন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে এই পেশা আজকের অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে।
👉 প্রারম্ভিক পর্যায় ও শিক্ষার সূচনাঃ
বাংলাদেশে অপ্টোমেট্রি পেশার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় মূলত ডিপ্লোমা স্তরের শিক্ষার মাধ্যমে। প্রথমদিকে, এই পেশা চক্ষু চিকিৎসকদের সহকারী হিসেবেই বেশি পরিচিত ছিল। তবে সময়ের সাথে সাথে এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বাড়তে থাকে।
প্রথমদিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ বা স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টির অধীনে ১ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স চালু হয়। পরবর্তীতে, বেসরকারি পর্যায়েও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যেমন, ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইন্সটিটিউট এন্ড হসপিটাল, ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ এশিয়া অপ্টোমেট্রিতে ডিপ্লোমা ও স্বল্পমেয়াদী কোর্স চালু করে।
👉 স্নাতক পর্যায়ে উত্তরণঃ
সময়ের সাথে সাথে ডিপ্লোমা শিক্ষা এই পেশার ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে পারছিল না। ফলে, উন্নত ও আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা চালুর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশে অপ্টোমেট্রিতে স্নাতক বা বি.এসসি কোর্স চালু হয়, যা এই পেশার ইতিহাসে একটি অন্যতম মাইলফলক। চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইনস্টিটিউট অফ কমিউনিটি অফথালমোলজি (ICO) এই ক্ষেত্রে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দিনাজপুরে ইত্তেহাদ কলেজ অব হেলথ সায়েন্স B.Sc in Optometry কোর্স চালুর মাধ্যমে দেশে দক্ষ ও উচ্চশিক্ষিত অপ্টোমেট্রিস্ট তৈরির পথ সুগম হয়।
👉উচ্চশিক্ষা ও আন্তর্জাতিক মানঃ
বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ অপ্টোমেট্রিস্ট তাদের উচ্চশিক্ষা এবং পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভারত,পাকিস্তান, নেপাল, যুক্তরাষ্ট্রের সহ বিভিন্ন দেশ থেকে Bachelor of Optometry (B.Optom), Master of Optometry (M.Optom) এবং বিভিন্ন Fellowship কোর্সসহ Ph.D সম্পন্ন করছেন। এর ফলে চক্ষু চিকিৎসা ব্যবস্থার মান উন্নয়ন হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের অপ্টোমেট্রিস্টরা সমাদৃত হচ্ছেন।
👉পেশাজীবী সংগঠনসমূহের ভূমিকাঃ
বাংলাদেশে অপ্টোমেট্রি পেশার বিকাশ ও মানোন্নয়নে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের অবদান অনস্বীকার্য। এই সংগঠনগুলো অপ্টোমেট্রিস্টদের অধিকার রক্ষা, পেশাগত মান উন্নয়ন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পেশার প্রতিনিধিত্ব করে থাকে।
👉 নিম্নলিখিত সংগঠনগুলো এই পেশার উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেঃ
✅ বাংলাদেশ অপ্টোমেট্রি ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (BODS):
উন্নত, নিরাপদ ও মানসম্মত দৃষ্টিসেবা নিশ্চিত করা এবং অপ্টোমেট্রি পেশাকে জাতীয় স্বাস্থ্যখাতের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভে পরিণত করাই এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য।
BODS অপ্টোমেট্রিস্টদের স্বীকৃতি, স্বাস্থ্যনীতিতে অন্তর্ভুক্তি, এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছে।
✅ অপ্টোমেট্রিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (OAB):
এই অ্যাসোসিয়েশনটি World Council of Optometry (WCO)-এর সদস্য। তারা আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের অপ্টোমেট্রিস্টদের প্রতিনিধিত্ব করছে।
✅ বাংলাদেশ অপ্টোমেট্রিক সোসাইটি (BOS):
"উন্নত দৃষ্টি, উন্নত জীবন" প্রতিপাদ্যে তারা বিভিন্ন সেমিনার, ওয়ার্কশপ এবং সচেতনতা কার্যক্রমের মাধ্যমে পেশাকে এগিয়ে নিচ্ছে।
✅ বাংলাদেশ একাডেমি অফ অপ্টোমেট্রি (BAO):
অধ্যাপক ডা. এম এ মতিন বাংলাদেশের অপ্টোমেট্রির স্বপ্নদ্রষ্টা। অধ্যাপক ডা. হাসান শহীদ BAO-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং অপ্টোমেট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের আজীবন উপদেষ্টা।
👉বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাঃ
বর্তমানে বাংলাদেশের অপ্টোমেট্রিস্টরা প্রাথমিক চক্ষু স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তারা চোখের দৃষ্টিত্রুটি নির্ণয়, চশমা ও কন্টাক্ট লেন্স প্রেসক্রাইব করা, লো-ভিশন ব্যবস্থাপনা এবং বিভিন্ন চক্ষু রোগ শনাক্তকরণে সহায়তা করছেন। যার ফলে চক্ষু চিকিৎসকরা আরও জটিল রোগের চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচারে মনোনিবেশ করতে পারছেন।
তবে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এখনও অপ্টোমেট্রিস্টের সংখ্যা অপ্রতুল। সরকারি পর্যায়ে আরও বেশি পদ সৃষ্টি এবং পেশাটির সঠিক মূল্যায়ন করা গেলে দেশের চক্ষু স্বাস্থ্যসেবায় আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব।
👉 দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এবং Vision 2020 ও Universal Eye Health Coverage এর লক্ষ্য অর্জনে অপ্টোমেট্রিস্টদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
👉 গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ – দ্রুত অপ্টোমেট্রি পেশাকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি প্রদান করে জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এদের স্থায়ী ভূমিকা নিশ্চিত করা । এতে করে নিশ্চিত বাংলাদেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে একটি দৃষ্টিসম্পন্ন ও সুস্থ জাতি গঠনের পথে। Copy post from BODS.