প্রান্তিক জেনারেল হাসপাতাল

প্রান্তিক জেনারেল হাসপাতাল প্রান্তিক জেনারেল হাসপাতাল, ওয়াপদা রোড, রামগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর। মোবাইলঃ ০১৭৭২৪০৭৮৭০

06/03/2024
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।💐💐
21/02/2024

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।💐💐

কোমরে ব্যথার সাতকাহনডাঃ রাজীব হালদারকোমর ব্যথার অন্যতম কারণ হল ডিস্কের সমস্যা। মেরুদন্ডের দু’টো কমেরুকার মধ্যে যে ডিস্ক ...
08/01/2024

কোমরে ব্যথার সাতকাহন
ডাঃ রাজীব হালদার
কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ হল ডিস্কের সমস্যা। মেরুদন্ডের দু’টো কমেরুকার মধ্যে যে ডিস্ক থাকে সেটা কোনো কারণে সরে গিয়ে স্নায়ুকে আঘাত করে ব্যথার সৃষ্টি করে।
কোমরের ব্যথা শুধুমাত্র কোমরেই সীমাবদ্ধ না থেকে কোমর থেকে পা পর্যন্ত নেমে আসে। ব্যথার সাথে অবশ ভাব এবং পা দিয়ে ঝিন ঝিন করা একটা অনুভূতি নামা-ওঠা করে। অনেক সময় যন্ত্রণা হয়। হাঁটাচলার ক্ষেত্রে অসুবিধে সৃষ্টি হয়। এ সব কিছু হয় আসলে নার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টির ফলে। দীর্ঘস্থায়ী কোমর ব্যথা তাকে বলা হবে, যে ব্যথা তিন থেকে ছ’মাস পর্যন্ত থাকে।
ব্যথা কী কী কারণে হতে পারে
• ক্রমাগত ঝুঁকে-বসে কাজ করা। বিশেষ করে অফিসের টেবিল-চেয়ারে বসে একটানা কাজ করা।
• শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে ঘন্টার পর ঘন্টা কম্পিউটার কাজ করলে কোমরে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা হতে পারে।
• স্লিপড ডিস্ক ও কোমরের লিগামেন্টে টান ধরেও কোমরে ব্যথা হতে পারে।
• কোমরের মাংসপেশি দুর্বল হয়ে গেলে মেরুদন্ডের শক্তি কমে যায়, যার ফলেও ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে।
• কোনো প্রদাহজনিত রোগ বিশেষ করে টিউবারকুলোসিস, স্পন্ডিলোসিস, রিউম্যাটরয়েড স্পন্ডেলাইসিস থেকে কোমরে ব্যথা হতে পারে।
• পড়ে গিয়ে চোট পেলে এবং পরবর্তীকালে বসার পশ্চার সঠিক না হলে কোমরে ব্যথা শুরু হতে পারে।
• ভারী জিনিস তুলবার কারণেও অনেক সময় কোমরে ব্যথা হতে পারে।
কোমরে ব্যথাকে আধুনিক মহামারি বলা চলে। শতকরা ৮০% মানুষ এতে আক্রান্ত। এদের মধ্যে ৭৮%, মহিলা ৮৯%।
স্পান্ডিলাইটিস থেকে কি কোমরে
ব্যথা হতে পারে
হ্যাঁ, ব্যথা হবে। এবং অসহ্য ব্যথার ফলে চলাফেরা, কাজকর্মে অসুবিধে দেখা দেবে। সামনে ঝুঁকি অথবা ভারী কাজ করলে কোমরের ব্যথা বাড়তে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে কোমরের ব্যথা পা পর্যন্ত নেমে আসে। এমনকী কোমরে বিকৃতি আসা এবং টেবিল-চেয়ারে বসে কাজ করতে অসুবিধে হতে পারে।
অস্টিওপোরেসিসে কি কোমরে
ব্যথা হয়
অস্থিক্ষয়ের জন্য কোমরে ব্যথা হতে পারে। কারণ অস্থিক্ষয় হতে থাকলে তার জোর কমে যায় এবং কোমরে চাপ পড়ে তার ফলে কোমরে ব্যথা শুরু হয়। গাড়ি বিশেষ করে রিক্সা, সাইকেল, মোটর সাইকেল ইত্যাদি কোনো খানাখন্দে বা গর্তে পড়লে কোমরে চাপ পড়ে এবং ব্যথা শুরু হয়।
কোমরে ব্যথার নানান কারণের মধ্যে আরো একটি কারণকে গুরুত্ব দিতে হবে। সেটা হল ওভার ওয়েট। শরীরের অত্যধিক ওজনের কারণে কোমরে চাপ পড়ে ব্যথা আসতে পারে। লিগামেন্ট এবং মাসলস-এর অত্যধিক ব্যবহার, ক্র্যাম্প ধরা, নার্ভ রুটে ইরিটেশন ইত্যাদি সব কিছুর জন্য কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে।
হঠাৎ করে যদি কোমরে ব্যথা শুরু হয় কী করা দরকার
ভারী কোনো কাজ না করাই ভালো। নীচু হয়ে কোনো জিনিস তোলা কিংবা মাটিতে ধপ করে বসে পড়ার দরকার নেই।
কিন্তু যদি কোমর ব্যথার সাথে সাথে পা শিরশির করা, পা অবশ হয়ে দুর্বল হয়ে যাওয়া, প্রস্রাব ও মলত্যাগে সমস্যা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কোমরে ব্যথা শুরু হলে একটা এক্স-রে করিয়ে নিন। যদি দেখা যায় বিশেষ কোনো সমস্যা নেই তাহলে ব্যথার ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু যদি ব্যথা না কমে তাহলে চিকিৎসকের নির্দেশ মতো এম.আর.আই করতে হতে পারে।
শিরদাঁড়াকে সুস্থ রাখতে কতকগুলো জিনিসি মেনে চলতে হবে। কারণ শিরদাঁড়া ঠিক না থাকলে কোমরের ব্যথা শুরু হতে পারে।
• জেনেটিক্স।
• মাসল স্ট্রেংথ এবং ব্যালেন্স ঠিক রাখতে হবে।
• নমনীয়তা বা ফ্লেক্সিব্লিটিবজায় রাখতে হবে।
• পশ্চার ঠিক রাখতে হবে।
• বডিওয়েট বা শরীরের ওজন কমাতে হবে।
• স্ট্রেস কমিয়ে ফেলতে হবে।
চিকিৎসা
• বেড রেস্ট।
• ট্রাকশন।
• বেল্ট।
• ফিজিওথেরাপি।
কোমরে ব্যথা শুরু হলে বিশ্রামে প্রয়োজন। প্রাথমিকভাবে ব্যথা কমাবার ওষুধ দিয়ে রোগীকে শুয়ে থাকতে বলা হয়। হাঁটাচলা বন্ধ করতেও বলা হয়। গরম সেঁক চলতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো কোমরে ট্রাকশন নিতে হবে, সহ্যমতো ওজন সহযোগে। বেল্ট বাঁধতে হবে দরকার মনে হলে।
আর একটি প্রয়োজনীয় কথা, নরম বিছানায় না শোওয়াই ভালো। ম্যাট্রেসের ওপর তোষক পেতে শুতে হবে।
কোমরে ব্যথার জন্যে ফিজিওথেরাপির সাহায্য নিতে হবে। এক্স-রে করে দেখে ঠিক কী ধরনের ফিজিওথেরাপি করা হবে সেটা ঠিক করা হয়। দেখা হয় ইলেকট্রোথেরাপি, আলট্রাসাউন্ড থেরাপি, আই.এফ.টি., এস.ডব্লিই.ডি, ফ্লেক্সশন নাকি এক্সটেনশন ব্যায়াম, কোনটি বেশি কার্যকরী হবে।
ব্যথা যাতে না হয় তার জন্য কী করা উচিত
কোমরের এক্সারসাইজ। ঠিকমতো পশ্চার অভ্যাস করা। সামনে ঝুঁকে কাজ করা কিংবা ভারী জিনিস তুলতে না যাওয়া। বেশি সিঁড়ি না ভাঙা। ঝুঁকে-বসে লেখা বা কম্পিউটারে কাজ খুব বেশি না করাই উচিত। পিঠের এক্সারসাইজ বা ব্যায়াম করা দরকার, নিয়মিত শারীরি ব্যায়াম এবং নিয়ম করে হাঁটা দরকার। জীবনশৈলীর পরিবর্তনও দরকার। নিকোটিন বা ধূমপানকে প্রশ্রয় দেবেন না।
শেষে একটা কথা বলা দরকার দীর্ঘদিন কোমরে ব্যথা অথচ এক্স-রে’তে কোনো সমস্যা নেই। এইসব ক্ষেত্রে কোমরে ব্যথার কারণ হিসেবে দেখা গেছে কোষ্ঠকাঠিন্য। সেইজন্য বেশি পরিমাণে শাকসবজি, ফলমুল গ্রহণ করা উচিত। রাতে ইসবগুলোর ভূষিও গ্রহণ করা যেত পারে। অর্থাৎ পেট যাতে পরিষ্কার থাকে সেটাও দেখা উচিত।

সদ্যোজাত শিশুর জনডিসঅবহেলায় ব্রেন ড্যামেজ হয়ে যেতে পারেডাঃ অঞ্জন ভট্টাচার্যসদ্যোজাত শিশুদের জনডিস (গা, চোখ হলুদ হয়ে যাওয়...
01/01/2024

সদ্যোজাত শিশুর জনডিস
অবহেলায় ব্রেন ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে

ডাঃ অঞ্জন ভট্টাচার্য

সদ্যোজাত শিশুদের জনডিস (গা, চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া) কিন্তু বড়দের বা বড় বাচ্চাদের মতো নয়। আলাদা কারণে হয়।
বড়দের বা বড় শিশুদের জনডিস হয় সাধারণত হেপাটাইটিস এ, বি, সি, নন-এ নন বি ইত্যাদি ভাইরাস বা সিরোসিস (যা সাধারণত মদ্যপান থেকে হয়)-এর জন্য।
সদ্যোজাত শিশুদের জননডিস প্রধানত দু’প্রকারের। একটা হয় প্রথম এক সপ্তাহের মধ্যে। আর দ্বিতীয়টাতে দু’সপ্তাহ বয়সের পরেও জনডিস থেকে যায়। দু’ক্ষেত্রে ব্যাপারটা যে ভয়ের বা গন্ডগোলের কিছু হতেই হবে, এমনটা নয়।
তবে ঘোরতর ভয়ের ব্যাপার কিছু আছে বৈকি। আসুন সে সব ব্যাপারে আমরা তৈরি থাকি প্রতিকুলতার মোকাবিলা করার জন্য। কখন দরকার পড়ে কেই বা বলতে পারে। সোনামনি যেন সুস্থ থাকে।
প্রথমে আসা যাক জন্মানোর ক’দিনের মধ্যেই (এক থেকে পাঁচদিনের) যে জনডিস দেখা দেয় সেই ব্যাপারে।
সব স্বাভাবিক শিশুর শরীরে জন্মের সময়ে রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ বেশি থাকে, শারীরবৃত্তীয় কারণে। কিছু দিনের মধ্যে স্বাভাবিক ভাবেই এই লোহিত কণিকা ভেঙে স্বাভাবিক মাত্রায় চলে আসে। এই কাজ সম্পন্ন হতে গিয়ে হু হু করে লোহিত কণিকা ভেঙে হলুদ রঙের অংশে (পিগমেন্ট) পরিণত হয়। এদের বলে বিলিরুবিন।
বিলিরুবিন রক্তে যখন অযুগ্ম (আন কুনজুগেটেড) অবস্থায় ঘুরতে থাকে, তখন সে বর্জ্যপদার্থ হলেও শরীর থেকে বেরোতে পারে না। যকৃৎ বা লিভারে গিয়ে সে ইউ.ডি.পি নামের একটি পদার্থের সঙ্গে যুগ্ম (কনজুগেটেড) হয়ে প্রস্রাব (ও কিছুটা মলের)-এর সাথে শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। শারীরবৃত্তীয় কারণেই বহু শিশুর যকৃৎ দু’তিন দিন সময় নেয় পরিণত হতে। ফলত, শিশুর রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। যখন এই কারণের জন্য জনডিস হয়, তখন তাকে শারীরবৃত্তীয় জনডিস বা ফিজিওলজিক্যাল জনডিস।
শারীরবৃত্তীয় কারণই অধিকাংশ সদ্যোজাত শিশুর জনডিস হওয়ার মূল কারণ। তবে এটাই একমাত্র কারণ নয়। অন্যান্য গোলমেলে (প্যাথোলজিক্যাল) কারণ সম্বন্ধে যেমন অবগত থাকা প্রয়োজন, তেমনই জানা দরকার যে কী কী ক্ষেত্রে শারীরবৃত্তীয় জনডিস থেকেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
জানা এই কারণে দরকার, রক্তে বিলিরুবিন খুব বেড়ে যাওয়ার আগে চিকিৎসা না শুরু করতে পারলে চিরস্থায়ী মস্তিষ্কবিকৃতি ঘটে যেতে পারে। আর সেটা অনেক মাস অবধি ধরতে পারা না-ও যেতে পারে। সুতরাং এক এক করে জেনে নেওয়া যাক। প্যাথলজিক্যাল জনডিস এবং অতিরিক্ত শারীরবৃত্তীয় জনডিস (এক্সাজারেটেড ফিজিওলজিক্যাল জনডিস) সম্বন্ধে।
প্যাথোলজিক্যাল জনডিসের যে সকল বিবিধ গোলমেলে কারণ থাকে, তার মধ্যে মূলত তিন প্রকার সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার।
প্রথম, যদি শিশুর শরীরে রক্তের লোহিত কণিকা অসুখ জনিত কোনো কারণে হু হু করে মাত্রাতিরিক্ত ভাঙতে থাকে। একে বলে হিমোলিসিস। দ্বিতীয়ত, ইনফেকশন—বিশেষত সদ্যোজাত শিশুর ক্ষেত্রে মূত্রের সংক্রমণ বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (কিডনি বা বৃক্ক, ইউরেটর, মূত্রাশয় বা ইউরিনারি ব্লাডার এবং মূত্রনালী বা ইউরেথ্রার সংক্রমণ) খুবই মারাত্মক। তৃতীয়, জন্মগত থাইরয়েড কমের সমস্যা বা কনজেনিট্যাল হাইপোথাইরয়েডিজম।
হিমোলিসিস হওয়ার অন্যতম কারণ হল মায়ের আর.এইচ. নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত থাকায় গর্ভকালে যথাযথ সাবধানতা ও চিকিৎসা না নেওয়া। আর.এইচ.নেগেটিভ মায়ের শিশুরা যদি আর.এইচ. পজেটিভ রক্তের গ্রুপ নিয়ে পেটে আসে তাহলে বিশেষজ্ঞ ধাত্রীবিদের (অবস্টেট্রিশিয়ান) কথা মতো গর্ভাবস্থায় থাকার সময়ে নির্দিষ্ট কিছু প্রয়োজনীয় ইঞ্জেকশন (অ্যান্টি ডি) নেওয়া ভীষণ জরুরি। আর.এইচ.নেগেটিভ প্রেগনেন্সির সময়ে একটা ব্যাপার খেয়াল রাখা অত্যাবশ্যকীয় তা হল প্রথম শিশু যদিও বা জনডিসের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারে, সমূহ বিপদের সম্ভাবনা কিন্তু দ্বিতীয় বা তৃতীয় গর্ভের ক্ষেত্রে।
মূত্রের সংক্রমণ হলে নিয়ম করে প্রত্যেক জনডিস হওয়া শিশুর ইউরিনই ভালো করে পরীক্ষা না করলেই চিন্তার। কেননা যতদিনে বোঝা যাবে যে অতিরিক্ত জনডিস মূত্রের সংক্রমণের জন্য, ততদিনে মূত্রতন্ত্রের চিরস্থায়ী ড্যামেজ বা ক্ষতি হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা থাকতে পারে। ‘ডাক্তারবাবুরা তো কথায় কথায় অকারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন’ এইসব মেঠো কথার ফাঁদে পড়লে শিশুর ভবিষ্যৎ আমরা গোড়াতেই ঝরঝরে করে দিতে পারি। বৃক্কে ক্ষত (রেনাল স্কারিং) হয়ে গেলে পরিণতি এন্ড স্টেজ রেনাল ডিজিজ। ফল---৪০-৫০ বছর বয়সের মধ্যেই ডায়ালিসিস মেশিনের ওপর নির্ভর করা, কিডনির বারোটা বেজে গিয়ে। এই ধরনের নানা কারণে ভারতবর্ষে পৃথিবীর সব থেকে বেশি ডায়ালিসিস করার মতো রোগের বাড়বাড়ন্ত। হয়তো, কোনো এক সবজান্তা পড়শির পরামর্শে ডায়ালিসিস মেশিন লাগানো আজকের এই প্রৌঢ়টির বাবা-মা তার শৈশবে ইউরিন টেস্টাটি করাননি! বা ধরা পড়ার পর ওষুধের কোর্স কমপ্লিট করেন নি। বা তারপর সময়ে সময়ে রক্তচাপ মাপা ইত্যাদি ফলোআপ যা যা করা উচিত ছিল, তা করাননি! শুভানুধ্যায়ী সেই সবজান্তা পড়শিটি আজ সটকে পড়েছেন। ডায়ালিসিস মেশিনে লাগানো প্রৌঢ়র কুড়ি বছর বয়সী ছেলেটি বাধ্য হয়েছে গ্রাজুয়েশন শেষ না করেই সাধারণ চাকরিতে ঢুকে যেতে।
সদ্যোজাত শিশুর থাইরয়েড হরমোন কম থাকলে রক্ত পরীক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায়ই নেই এই রোগ নির্ণয় করার। তাই তো উন্নত দেশগুলোতে সমস্ত সদ্যোজাত শিশুকেই পরীক্ষা করা হয় তাদের থাইরয়েড কম আছে কি না। এই ধরনের পরীক্ষাকে বলে নিউ বর্ন স্ক্রিনিং। ‘আহা,ওইটুকু বাচ্চাকে কেউ সুচ ফোটায়’ গোছের আহাম্মকী ভালোবাসা যারা দেখায়, তাদের বুদ্ধির দোষে আমাদের মতো দেশগুলোতে হাজার হাজার শিশু অকারণে মূক, বধির, জড়বুদ্ধিসম্পন্ন বা বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। একথা মনে রাখা দরকার। এই সব প্যাথোলজিক্যাল কারণ ছাড়াও বলেছি যে মাত্রাতিরিক্ত শারীরবৃত্তীয় জনডিস হলেও বিলিরুবিন মাত্রাছাড়া ক্ষতিকারক মাত্রায় পৌঁছে মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটতে পারে।
অযুগ্ম বিলিরুবিন যখন শরীর থেকে বেরোতে পারে না যকৃৎ পরিণত হয়নি বলে, সেই বিলিরুবিন তখন রক্ত থেকে মস্তিষ্কে চলে যেতে পারে সদ্যোজাত শিশুর অপরিণত ব্লাড-ক্লেন বেড়া (ব্যারিয়ার) ভেদ করে।
প্রিম্যাচিওর শিশুর ক্ষেত্রে অতি অল্প মাত্রাতেই এই বেড়া পেরোনো সম্ভব বিলিরুবিনের। সময়ে জন্মানে শিশুর মস্তিষ্কে এই বেড়া পরিণত হতে সময় নেয় সাধারণত (কিছু ব্যতিক্রম সম্ভব) জন্মের পরে প্রথম তিন থেকে পাঁদিন। সময়ের আগে জন্মানো প্রিম্যাচিওর শিশুর ক্ষেত্রে দু’-সপ্তাহে বা তার বেশিও লাগে।
ব্রেনের কিছু অংশের প্রতি বিলিরুবিনের আগ্রহ বেশি। থ্যালামাস বলে ব্রেনের যে অংশে হাত-পা সঞালনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়, সেইখানটাতে গিয়ে অতিরিক্ত বিলিরুবিন আটকে যায়। থ্যালামাসের মধ্যে কডেট নিউক্লিয়ার, যার তিনটি অংশ (সাব্সট্য্নশিয়া নায়গ্রা, পুটামেন ও গ্লোবাস প্যালাইডাস), বিলরুবিন পক্ষপাতিত্ব দেখায় সেই অংশটির প্রতি। শরীরের চামড়ার নীচে বা চোখের সাদা অংশটিতে, যেখানে ইলাসটিন টিস্যু আছে, বিলিরুবিনের তার প্রতি পক্ষপাতিত্বের জন্য জনডিসে আমাদের চোখ বা ত্বক হলুদ দেখায়।
ইলাস্টিনের সাথে বিলিরুবিনের হাত মেলানো সাময়িক ব্যাপার। রক্তে বিলিরুবিন কমে গেলে ত্বক বা চোখের সাদা মিলিয়ে যায়। কিন্তু কডেট নিউক্লিয়াসে অযুগ্ম বিলিরুবিন একবার পৌছলে একেবারে মরণ কামড় বসিয়ে দেয়। বিলিরুবিন কডেট নিউক্লিয়াসের কাছে বিষের মতো। একবার ক্ষত করে দিলে সেই ক্ষত আর মিলিয়ে যায় না। সেই ক্ষতের মাশুল দিতে হয় শিশুকে সারাজীবন বিকলাঙ্গ হয়ে গিয়ে।
সদ্যোজাত শিশুর মাত্রাতিরিক্ত জনডিস থেকে এই ধরনের চিরস্থায়ী মস্তিষ্ক বিকৃতিকে বলে কারনিকটেরাস।
কারনিকটেরাস একবার হয়ে গেলে কিন্তু সোনামনির আর রক্ষে নেই। সারা জীবনের জন্য বিকলাঙ্গ।
রক্ষা পাওয়ার উপায়
চিকিৎসার মূল সূত্র দু’টো। প্রথম উপায় হল রোগ হতে না দেওয়া বা প্রিভেনশন। দ্বিতীয় সূত্র হল বিপদ ঘটে গেছে জানতে পারলে তার আশু সমাধান বা আর্লি ইন্টারভেনশন করা।
হতে না দেওয়ার জন্য এই যে বলেছি, চেষ্টা করা উচিত গর্ভকালে কোনো ধাত্রীবিদ ডাক্তারের হাতে থাকার, যাতে সুস্থ শিশুর জন্ম হয়, প্রিম্যাচিওরিটি বা জন্মগত রুগ্নতা এড়ানো যায় যথাসম্ভব (যেমন আর.এইচ ইনকমপ্যাটিবিলিটি)। শিশু বিশেষজ্ঞদের সাথে যদি ধাত্রীবিদ ডাক্তার পূর্ব পরিচয় করিয়ে দিয়ে থাকেন, তাহলে তো অনেক দুশ্চিন্তারই বিজ্ঞানসম্মত মুক্তি মেলা সম্ভব। তা যদি নাও হয়, জন্ম মুহূর্ত থেকেও যদি শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ রাখা যায় তাহলে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। তবে আপনাকে জনডিসের ব্যাপারে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ অক্ষরে অক্ষরে মানতে হবে। জানি দু’-তিন দিনে বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক কখনোই ডাক্তার-রোগীর মধ্যে হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু কী করা যাবে, দেশে যতদিন না উন্নত পন্থা ডাক্তারবাবুরা অবলম্বন করতে শুরু করছেন, যেখানে আপনার হবু সন্তানের সাথে তার জন্মের কয়েক সপ্তাহ বা মাস আগে থেকেই ধাত্রীবিদ ডাক্তারেরা শিশু বিশেষজ্ঞের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন, ততদিন অবধি জনডিসের ব্যাপারে নব্য পরিচিত শিশু বিশেষজ্ঞটির ওপর আপনি অন্ধ বিশ্বাস করতে না পারলে যে আপনার শিশুটির চিরস্থায়ী অঙ্গ বৈকল্যের সম্ভাবনা থাকছেই।
জনডিস যত শীঘ্র ধরা পড়বে, তত তাড়াতাড়ি প্রয়োজন মতো তার চিকিৎসা হওয়া সম্ভব। তবে জনডিস হলেই চিকিৎসা করাতেই হবে এমন কিন্তু নয়।
শিশু বিশেষজ্ঞই আপনাকে বলে দিতে পারবেন একটি রক্ত পরীক্ষা করে যে চিকিৎসা লাগবে কি লাগবে না।
আপনার কর্তব্য ডাক্তারবাবুকে জানানো যে, প্রয়োজন মতো ডাক্তারবাবুকে জানানো যে, প্রয়োজন মতো ডাক্তারবাবু যেন পরীক্ষা করে দেখে নেন চিকিৎসা লাগবে কি না।
জনডিস যদি ভয় পাওয়ার মতো কোনো কারণে হয় তাহলে তা সাধারণত জন্মের প্রথম আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যেই দেখা দেয়। তৃতীয়দিন থেকে হওয়া জনডিস সাধারণত শারীরবৃত্তীয় কারণে হয়। যদিও দু’ক্ষেত্রেই চিকিৎসার প্রয়োজন পড়তে পারে, যদি বিলিরুবিনের মাত্রা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে পড়ে।
মাত্রাটি আপনার শিশুটির ক্ষেত্রে কত হবে তার চার্ট থাকে নবজাতক শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কাছে। ডাক্তারবাবু সেই চার্ট মতো আপনার শিশুটির চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কি না বলবেন।
মাত্রা এই মুহূর্তে কম আছে, কিন্তু এবেলা ওবেলার মধ্যেই হুট করে বেড়ে যেতে পারে। একবার রক্ত পরীক্ষা করেই যেমন নিশ্চিত হয়ে শিশুকে বাড়ি পাঠাতে পারেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারবাবু, তেমনই দরকার পড়লে তিনি দু’চারবার পরীক্ষা করে চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কি না বা কতটা চিকিৎসা করতে হবে তা নির্ণয় করলেই আপনার শিশু হতে পারে নিশ্চিত।
জন্মের বাহাত্তর ঘন্টা পরে যে কোনো কারণেই যদি কেউ কখনো আপনার শিশুর রক্ত পরীক্ষা করে, নিজ স্বার্থেই আপনার বলা উচিত ‘ডাক্তারবাবু, নিউ বর্ণ স্ক্রিনিংও এক সাথে করিয়ে দিন’। তাতে ওই থাইরয়েড ও অন্যান্য লুকিয়ে থাকা রোগ নির্মূল করা সম্ভব।
বিলিরুবিন বেড়ে যাওয়ার চিকিৎসা কিন্তু সে হিসেবে খবুই সহজ।
প্রথমত, যদি কোনো রোগের কারণে বিলিরুবিন বাড়ে, তার যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে। যেমন আর.এইচ.ইনকম্প্যাটিবিলিটির ক্ষেত্রে অ্যান্টি-ডি ইঞ্জেকশন বা থাইরয়েডের সমস্যার জন্য থাইরয়েডের ওষুধ খাওয়ানো অথবা মূত্র সংক্রমণের জন্য হাতের বা পায়ের ধমনীর মাধ্যমে ইনট্রাভেনাস ইঞ্জেকশন দেওয়া।
দ্বিতীয়ত, বিলিরুবিন কমানোর জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করতে হবে। বিজ্ঞানের সমূহ উন্নতির ফলে কেবলমাত্র বিশেষ প্রকৃতির আলো ফটোথেরাপি মেশিনের সাহায্যে শিশুর ত্বকের মাধ্যমেই বিলিরুবিনকে ভেঙে শরীর থেকে বের করে ফেলে।
তবে হ্যাঁ, যে সে আলো, যেমন তেমন করে দিয়ে কিন্তু কোনো লাভ নেই। বরঞ্চ ক্ষতি আছে সময় নষ্ট হওয়ায়। এই ফটোথেরাপি চিকিৎসার মূল মন্ত্র হল সময় নষ্ট না করে চিকিৎসা চালু করা। যথাযথ ফটোথেরাপি মেশিনের নীচে যথাযথ ভাবে নবজাতককে না রাখতে পারলে তার বিলিরুবিন মস্তিষ্কে গিয়ে ক্ষত করে ফেলতে পারে। সুতরাং নবজাতকের জনডিস বেড়েছে, ফটোথেরাপি লাগবে, এ কথা জানার পর যত শীঘ্র সম্ভব শিশুকে ফটোথেরাপি মেশিনের নীচে এনে ফেলার বন্দোবস্ত করতে হবে।
শিশুর জন্ম যেখানে হয়েছে, সেখানে নিয়মিত ফটোথেরাপি দেওয়ার বন্দোবস্ত থাকলে তো কোনো কথাই নেই। সঙ্গে সঙ্গে সুচিকিৎসা সম্ভব। তা না হলে জেনে রাখুন, নবজাতককে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়তে হবে নিয়মিত ফটোথেরাপি হয় এমন কোনো হাসপাতালে দ্রুত পৌঁছে যাওয়ার জন্য।
যদি দেখেন বাচ্চা একটু বেশি ঘুমোচ্ছে বা ঝিমোচ্ছে, তাহলে কিন্তু কথাই নেই। বিলিরুবিন কিন্তু ইতিমধ্যেই ব্রেনে আপদ সৃষ্টি করতে শুরু করেছে। যত তাড়াতাড়ি ফপোথেরাপি শুরু করা যায় ততই ভালো।
জনডিস খুব বাড়লে ডাক্তারবাবুরা একটি ওষুধ (ফেনোবারবিটোন) খাওয়াবেন শিশুকে দু’থেকে পাঁচদিন অবধি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই দুই পদ্ধতির সাহায্যে সব তাবড় তাবড় জনডিস ঠিক করে ফেলা যায় নবজাতকের ক্ষেত্রে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে, যেমন আর.এইচ ইনকম্প্যাটিবিলিটি যদি খুব খুশি বেশি হিমোলিসিস সৃষ্টি করে বা অতিরিক্ত মাত্রায় লোহিত কণিকাকে রক্তে ভাঙচুর করে ফেলতে থাকে, তবে রক্ত বদলানোর মতো বড় অপারেশনও (এক্সচেঞ্জ ট্রান্সফিউশন) করতে হতে পারে। উন্নতমানের ফটোথেরাপি বেরোনোর পরে আজকাল রক্ত বদলানোর মতো মারাত্মক অপারেশন আর সচরাচর লাগে না।
যে সব শিশুদের ফটোথেরাপি লাগে, তারা সাধারণত চব্বিশ থেকে আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যেই স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে এবং বাড়ি চলে যেতে পারে। তবে ডাক্তারবাবু যদি খুশি না হন, পাঁচ-সাতদিন লাগতেই পারে জনডিসের কারণ নির্মূল করতে। সুতরাং ডাক্তারের কথামতো ধৈর্য ধরা কিন্তু খুবই জরুরি। যাদের ফটোথেরাপি লেগেছে, তাদের মধ্যে মাত্র কয়েকজনেরই বাড়ি যাওয়ার পরেও আবার জনডিস বেড়ে উঠতে পারে।
যেমন এ.বি.ও-ইনকমপ্যাটিবিলিটিতে রিবাউন্ড জনডিস একটি চেনা কমপ্লিকেশন। এছাড়া দীর্ঘস্থায়ী ডনজিস বা দু’সপ্তাহের পরেও না ভালো হওয়া জনডিসের কারণসমূহ হতে পারে।
বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পরেও যদি শিশুর জনডিস আবার বাড়ছে মনে হয়, দেরি না করে ডাক্তারবাবুর কাছে আবার দৌড়নো উচিত। আপনার মনের ভুল বা চোখের ভুল হলে ডাক্তারবাবু তো আছেনই নিশ্চিন্ত করতে, কিন্তু মনের সন্দেহ মনে পুষে রেখে আপনি সময় নষ্ট করার রিস্ক নেবেন না। দু’বার না হয় অকারণেই ডাক্তার দেখিয়ে এলেন। তাতেই যদি শিশুটি নিরাপদ থাকে, তবে সেটা করাই ভালো নয় কি? আমাদের মতো দেশে যেখানে কমিউনিটি মিডওয়াইফ নেই, দরকার কি বেয়াড়া রিস্ক নিয়ে। ভেতরে ভেতরে জনডিস যদি বেড়ে বসে থাক পার্মানেন্ট ব্রেন ড্যামেজ তো হবে আমার শিশুটিরই!
আজকাল যেখানে শিশুদের তাড়াতাড়ি হাসপাতালে থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে এই কথাটি মন দিয়ে বুঝে নেওয়া খুব দরকার। যদি তিনদিনের মাথায় বাড়ি নিয়ে যান, তবে চতুর্থ এবং দরকার পড়লে পঞ্চশ দিন একজন অভিজ্ঞ শিশু বিশেষজ্ঞকে দিয়ে শিশুটিতে দেখিয়ে নেবেন। জিজ্ঞেস করুন রক্ত পরীক্ষার দরকার আছে কি না। দেখে নিন নিউবর্ন স্ক্রিনিং হয়েছে কি না।
যে শিশুর বিলিরুবিন বেড়েছিল বলে চিকিৎসা লেগেছে, মনে রাখতে হবে তার কিন্তু শ্রবণশক্তি ব্যাহত হওয়ার রিস্ক বেশি। আজকাল তো সমস্ত শিশুকেই জন্মের পর অভিজ্ঞ শিশু-অডিওলজিস্ট দিয়ে কান পরীক্ষা করিয়ে নিতে বলা হচ্ছে বিদেশের মতো (নিউবর্ন হিয়ারিংস্ক্রিনিং)। শুধুমাত্র অভিজ্ঞ শিশু-অডিওলজিস্ট, যারা এ ব্যাপারে যথাযথভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, তাদেরই এই পরীক্ষা করতে দেওয়া উচিত। এই সব কারণের জন্যেই পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে জেলায় জেলায় শিশু বিকাশ কেন্দ্র বা চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার থাকে, যেখানে শিশুর বিকাশ বিশেষজ্ঞরা এই সব শিশুর সহজ-সুলভ কিন্তু এক্সপার্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানটিকে বিশেষভাবে ব্যবহার করে শিশুটির সম্ভাব্য আগামীদিনের বিপদগুলোকে সব দূরে সরিয়ে রাখতে জানেন।
শিশু বিকাশ বিশেষজ্ঞের কাজ হল আপনার শিশুটির আগামী দিনে বিপদের সম্ভাবনা কী ও তার জন্য কী কী পদ্ধতি অবলম্বন করা প্রয়োজন তা নির্ণয় করা ও উপদেশ দেওয়া।
কারনিকটেরাস একটি ডেভেলপমেন্টাল প্রবলেম বা বিকাশজনিত সমস্যা। যেকোনো শিশু বিকাশ জনিত সমস্যার মূলচাবিকাঠি হল আর্লি ইন্টারভেনশন বা যত শীঘ্র চিকিৎসা করা যায় ততই ভালো। যত দিন যাচ্ছে, তত বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করে চলেছেন যে শুভস্য শীঘ্রম, না হলে এই শিশুরা নিষ্প্রয়োজনে কত ভুগতে থাকে সারা জীবন ধরে। তা তো ভালো কথা নয়।
তাই সত্যকে শ্রদ্ধা জানিয়ে, বিজ্ঞানকে পাথেয় করে, আমাদের উচিত জনডিস সন্দেহ হলে বা ডাক্তার বললে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া। বাড়ি নিয়ে এসেও নজর রাখা। চিকিৎসার পরেও বহুদিন ডেভেলপমেন্টাল ফলো আপ চালু রাখা। যথাযথ শ্রবণ পরীক্ষা করানো। ভালো একটি চাইল্ড ডেভেলপমেন্টাল সেন্টারে শিশুকে প্রয়োজন মতো আর্লি ইনন্টারভেশন করানো।
আসুন এবার আমরা আলোচনা করি দ্বিতীয় সপ্তাহের পরেও থেকে যাওয়া জনডিস সম্পর্কে। এই দ্বিতীয় ধরনের জনডিসকে প্রোলংগ্ড বা দীর্ঘস্থায়ী জনডিস বলে।
এই ধরনের জনডিসের কারণ হতে পারে তিন প্রকার। যেমন---
• শারীরবৃত্তীয় বা স্বাভাবিক।
• মেডিকেল
• সার্জিক্যাল
স্বাভাবিক বা শারীরবৃত্তীয় কারণে জনডিস হলে ভয়ের কিছুই নেই। নির্ভাবনায় সদ্যোজাত শিমুকে বুকের দুধ খাইয়ে যেমন স্বাভাবিকভাবে প্রতিপালন করা উচিত, তেমনই স্বাভাবিকভাবে প্রতিপালন করলে চলবে। কেননা শরীরের নিজস্ব ধর্ম অনুযায়ী জনডিস তিন থেকে ছ’মাসের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে।
শারীরবৃত্তীয় কারণে প্রোলংগ্ড জনডিস হয় বুকের দুধে অনেক সময় থ্রি-প্রেগনানেডিওল কলে একটি স্বাভাবিক রাসায়নিক পদার্থ থাক বলে। যাদের মাতৃদুগ্ধে থ্রি-প্রেগনানেডিওল থাকে, তাদের যকৃতে বিলিরুবিন ইউ.ডি.পি-র সাথে যুগ্ম হতে পারে না। ফলে সেই সব শিশুর শরীরে অযুগ্ম বিলিরুবিন অতিরিক্ত মাত্রায় ঘুরে বেড়াতে থাকে। কিন্তু যেহেতু ততদিনে ব্লাড-ব্রেন বেড়া ভালোভাবে তৈরি হয়ে গেছে, তাই এই অযুগ্ম বিলিরুবিন আর কোনো ক্ষতি করতে পারে না শরীরের।
এক্ষেত্রে স্তন্যপান বন্ধ করানোই ক্ষতিকারক। শিশুটি দিব্যি থাকবে, বুকের দুধ খাওয়া সত্ত্বেও। তাকে স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠতে দিন। এই প্রকারের জনডিস তার কোনো ক্ষতি করবে না।
চিন্তা কিন্তু অন্য কারণগুলোকে নিয়ে জনডিস যদি প্রোলংগ্ড হয়, অর্থাৎ দু’সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও যদি সদ্যোজাত শিশুর জনডিস দেখতে পাওয়া যায়, তাহলে চিন্তা না করাটাই চিন্তার কথা। ভয়টা কোথায়? ভয়টা হল, যদি এটা সার্জিক্যাল কারণে হয়। যদি বিলিয়ারি অ্যাট্রেশিয়া নামক কারণগুলোর জন্য এই জনডিস হয়। এছাড়া অনেকগুলো ভয় পাওয়ার মতো মেডিকেল কারণও আছে বৈকি।
সে সব নিয়ে আলোচনা করার আগে কিন্তু নিশ্চিত করতে হবে যে এই জনডিস প্রিম্যাচিওর শিশু বলে দু’সপ্তাহের বেশি দিন ধরে চলছে না। অথবা এক সপ্তাহ আগে যে জনডিস হয়েছিল, সেই জনডিসের মধ্যে যেটা স্বাভাবিক, যাকে ফিজিওলজিক্যাল জনডিস বলা হয়, সেটাই মিলিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য এই অবস্থায় ডাক্তারবাবু সিঁদুরে মেঘ দেখছেন না। ঘন ঘন ডাক্তার বদলালে কিংবা নতুন ডাক্তার দু’প্তাহের মাথায় প্রথম হলদেটে নবজাতকে দেখে ধন্দে পড়ে যেতেই পারেন।
সমস্যা হল, গোড়ায় এমনকী গুরুত্বপূর্ণ সার্জিক্যাল কারণেও জনডিস হয় খুবই কম। শিশুটির আর কোনো সমস্যা থাকে না। বাবা-মা বা বাড়ির লোকের মনে হতেই পারে যে বাচ্চা সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে। সেটাই বিপদ!
লক্ষ্মীন্দরের লৌহ বাসরের ছিদ্রের মধ্য দিয়ে কালসাপের মতো বিপদ ঢুকেছিল। এও তাই, কাউকে বুঝতে দেয় না। বুঝতে যতদিন পারা যায়, ততদিনে বাচ্চার লিভারের বারোটা বেজে যায়। যদি না দেশ জুড়ে আমরা প্রোলংগ্ড জনডিস স্ক্রিনিং প্রোটোকল ফলো করি। তাহলে কিন্তু এই জাতীয় সমস্যা বাড়তেই থাকবে। লক্ষ লক্ষ শিশু চরমতম সষ্কটের মুখোমুখি হবে। তাই ফলো আপ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। একে বলে ইয়েলো ওয়াচ স্কিম বা ‘হলুদ মানেই বিপদ’ বলে ভাবার দক্ষতা রাখা।
সময়ে ধরা পড়লে শিশু একদম ভালো হয়ে যায় নচেৎ দু’মাস পেরিয়ে গেলে লিভার চিরস্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যার একমাত্র চিকিৎসা আঠেরো-কুড়ি লক্ষ টাকার বিনিময়ে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা। আর তিন সপ্তাহ থেকে দু’মাসের মধ্যে ধরা পড়লে লিভারের অসুস্থতা সারিয়ে নির্মূল করা যায়। অর্থাৎ, এই রোগকে নির্ণয় করতে হবে একুশ দিন বয়সের আগেই এবং শল্যচিকিৎসায় রোগের বিনাশ ঘটাতে হবে আঠাশ, তিরিশ দিন হয়ে যাওয়ার আগেই।
সুতরায় একমাত্র নিশ্চত উপায় হল দেশ জুড়ে সমস্ত শিশু বিশেষজ্ঞের এক পদ্ধতিই ব্যবহার করা। এটা হল প্রোলংগ্ড জনডিস স্ক্রিনিং প্রোটোকল ফলো করা। অর্থাৎ দু’সপ্তাহ হয়ে যাওয়া যে শিশুরই জনডিস হবে, তার রক্ত পরীক্ষা করে নির্ণয় করতে হবে যে সেই জনডিস অযুগ্ম না যুগ্ম।
অযুগ্ম জনডিস মানে নিশ্চিন্ত। ডাক্তারবাবু আপনাকে নিশ্চিন্ত করলে আর আপনার ভয়ের কোনো কারণ নেই। অবশ্যই দু’সপ্তাহ বাদে ডাক্তারবাবুকে দিয়ে আরও একবার চেক-আপ করিয়ে তবেই আপনি ক্ষান্ত হবেন। যুগ্ম জনডিস হলে আর দেরি নয়। ডাক্তারবাবু আলট্রাসনোগ্রাফি, লিভারের স্পেশাল স্ক্যান (এইচ.আই.আই.ডি.এ) ইত্যাদি যা যা বলবেন, সব করিয়ে নেবেন। খরচার পরোয়া করবেন না। ফেলে রাখলে খরচ আরও বেশি। আর অবহেলায় সময় পেরিয়ে গেলে এমনকী খরচা করেও লাভ নাও হতে পারে।
যদি সার্জিক্যাল কারণে জনডিস ধরা পড়ে, তাহলে শিশুটির আশু অস্ত্রোপচার অত্যাবশ্যাক। তিন সপ্তাহ বয়স হয়ে যাওয়ার আগে যদি অপারেশন করে ফেলা যায়, তাহলে লিভারকে সম্পূর্ণ সুস্থ রাখার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি।
ডাক্তারবাবুরা এ কথা জানেন বলে ওরা খুবই দ্রুত এ অপারেশনটি করিয়ে নিতে বলেন। ওদের হাত-পা খুব নিশপিস করে এই ভেবে যে, এমতাবস্থায় শিশুটির বাবা-মা ও বাড়ির লোকেরা মিলে বেশ কিছুদিন দেরি না করিয়ে দিলে হয়তো ওরা শিশুটিকে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ করে ফেলতে পারতেন। কিন্তু, পারে না কেবলমাত্র সমাজে এই বিজ্ঞানের তথ্য চাউর না থাকার দরুন।
আমাদের মতো দেশে শিশুকে (অর্থাৎ দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক) নিরাপদ রাখার মতো কোনো শিশু আইন নেই বলে। আমাদের মতো দেশে এই অবস্থায় শিশুটিকে ডাক্তাররা ফেলে রাখতে বাধ্য হন তাদের পরিবারে অজ্ঞানতার জন্য। যার ফলে শিশুটির সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাওয়ার সুযোগ সারা জীবনের মতো নষ্ট হয়ে যায়।
এই মুহূর্তে এই ধরনের সমস্যায় অধিকাংশ শিশুরাই আমাদের দেশে সুচিকিৎসা পায় না পরিবারের বুঝে উঠতে সময় লেগে যায় বলে। যতদিন তারা বুঝে ওঠেন ততদিনে জনডিস গভীর হয়ে যায়। এই ধরনের অধিকাংশ শিশুই অবশেষে চিকিৎসার জন্য হাজির হয় যখন লিভার চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে, চিকিৎসা অনেক গুণ ব্যয়বহুল হয়ে গেছে এবং খরচ করে চিকিৎসা করলেও জীবনরক্ষা যে হবেই, তার আর কোনো ভরসা দেওয়া সম্ভব নয়, এই অবস্থায়। দেখা যাবে যে এর মধ্যে শিশুটি বহু হাতুড়ের হাত ঘুরে, মন্দির-মসজিদ করে বারোটা বাজিয়ে হাজির হয়েছে ডাক্তারবাবুর কাছে।
কারণ অতিরিক্ত যুগ্ম বিলিরুবিন শরীরে বিষের মতো জমতে থাকে। জীবনের গোড়ায় তা যেমন কারনিকটেরাসের জন্ম দিতে পারে, জীবনের দু’সপ্তাহের পরে সেই অতিরিক্ত যুগ্ম বিলিরুবিন লিভারের কোষগুলোকে একে একে মেরে ফেলতে পারে। অধিকাংশ কোষ মারা গেল লিভার ফেইলিওর হয়। জনডিস অর্থাৎ গা হলুদ গয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো বহিঃপ্রকাশ প্রথম দিকে না থাকতে পারে তার।
সেজন্য, ধারণা বা পড়াশোনা না থাকলে বুঝতে পারাও সম্ভব নয় যে, যে বাচ্চা দেখতে অসুস্থ নয়, জনডিস ছাড়া আর সমস্ত কিছুই স্বাভাবিক লাগছে, খাচ্ছে-দাচ্ছে, চনমন করছে, সে কি করে ভেতরে ভেতরে এতটা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে?
এই কারণেই এটা জানা অত্যাবশ্যকীয় যে, ডাক্তারবাবুরা কেন এইটুকু একটি শিশুর ওপর এতশত পরীক্ষা করাচ্ছেন বা অস্ত্রোপচার করানোর ওপর চাপ দিচ্ছেন! নইলে যে সোনামনির জীবনটাই নষ্ট হয়ে যাবে!
তাই প্রত্যেকের অতি অবশ্যই থাইরয়েড টেস্ট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় নিউবর্ন স্ক্রিনিং টেস্ট হয়ে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি। আধুনিক পরীক্ষার এর অনেকগুলোই শিশুর মূত্র থেকে ধরতে পারা যায়। তবে থাইরয়েড পরীক্ষা এখনও রক্ত নিয়েই করত হয়।
শিশুর রক্ত নেওয়ার কথায় আপনার যদি গা শিউরে ওঠে, সেই অজুহাতে কিন্তু শিশুটির এতবড় ক্ষতি করে বসে থাকবেন না। এই-ই সুযোগ শিশুটির রোগ নির্ণয় করে রোগ নির্মূল করার। পরে আর এ সুযোগ আসবে না তার জীবনে। অবশ্য যদি সে বেঁচে থাকে!
সুতরাং তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিতে হবে অপারেশন করানোর। তা বলে কিন্তু যেখানে সেখানে, যাকে তাকে দিয়ে এই অপারেশন করাবেন না।
একমাত্র শিশুশল্যবিদ (পেডিয়াট্রিক সার্জেন) দিয়েই এই সার্জারি করানো উচিত। বিশেষ করে সেই শিশুশল্যবিদের হাতে, যিনি এই অপারেশনে পারদর্শী। এছাড়া অপারেশন এমন হাসপাতালে করানো উচিত, যেখানে শিশুদের জন্য আলাদা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট আছে এবং লিভারের ব্যাপারে পারদর্শী বিভাগ আছে।
আজকাল আর সে দিনকাল নেই, যে আমরা চোখ-কান বুজে ভাগ্যের হাতে শিশুকে জলাঞ্জলি দেব। ভালো ভালো হাসপাতালে, সরকারি বা বেসরকারি, ভালো ভালো ডাক্তার এবং এইসব ব্যাপারে সুপার স্পেশালিস্টরা ভারতবর্ষের মতো দেশেই যে শুধু আছেন। তাই-ই নয়, কলকাতার মতো জায়গাতেও আজ বর্তমান। তাহলে আর চিন্তা কী ?
ডাক্তারবাবু জন্মের সময় যা যা টেস্ট দেবেন, সব করিয়ে নেবেন। নিজে থেকে উদ্যোগী হয়ে বাচ্চার চোদ্দো দিন বয়সে সেই শিশু বিশেষজ্ঞের কাছেই ফিরে যাবেন। ডাক্তারবাবু যদি বলেন জনডিস আছে এবং টেস্ট করাতে হবে, পা ঘষবেন না। তৎক্ষণাৎ তা করিয়ে বিলিরুবিনের রেজাল্ট (যুগ্ম ও অযুগ্ম রিপোর্ট দেখাবে এমন ল্যাবরেটরি থেকে) নিয়ে সে দিনই কি খুব বেশি হলে পরের দিনই হাজির হবেন ডাক্তারের কাছে। এই নিবন্ধ পড়া থাকলে বুঝতেই পারবেন ডাক্তার কী বলছেন এবং কেন বলছেন। সুতরাং তার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন। ডাক্তারবাবু যদি বলেন অপারেশন লাগবে, সঙ্গে সঙ্গে শিশুশল্যবিদ দিয়ে উন্নত হাসপাতালে (সরকারি বা বেসরকারি, যেখানে এই পরিকাঠাসো রয়েছে) একুশ দিন বয়সের মধ্যেই অপারেশন সময়ে সাদা রঙের হয়ে যায়। ততদিন অবধি ফেলে রাখবেন না। তার আগেই রোগ নির্মূলের ব্যবস্থা করবেন।

অদল-বদল করে সবই খাবেনডা: অভিজিৎ চন্দ(বিশিষ্ট এন্ডোক্রিনোলজিস্ট)একবিংশ শতাব্দীতে ডায়াবেটিস মহামারি হতে চলেছে। এই ভয়াবহ পর...
28/12/2023

অদল-বদল করে সবই খাবেন
ডা: অভিজিৎ চন্দ
(বিশিষ্ট এন্ডোক্রিনোলজিস্ট)
একবিংশ শতাব্দীতে ডায়াবেটিস মহামারি হতে চলেছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এই রোগ সম্পর্কে জনসচেতন গড়ে তোলার জন্য নিরলস চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এবং গণমাধ্যমের মানুষজন। একথা অনস্বীকার্য যে ডায়াবেটিসের সু-চিকিৎসায় ওষুধের মতোই সঠিক আহার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। অথচ এ সম্বন্ধে সাধারণ মানুষ এখনো যথেষ্ট সচেতন নন। বিজ্ঞানের দ্রুত অগ্রগতির জন্য পুরনো দিনের চিন্তাধারর অনেক পরিবর্তন এসেছে ঠিকই, তবে তা মানুষের কাছে এখনো পুরোপুরি পৌঁছয়নি। ফলে অনেকের মনেই সৃষ্টি হয়েছে অহেতুক ভয়।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে মানুষের প্রথমেই একটা হতাশা চলে আসে আর এর অন্যতম প্রধান কারণ এ বুঝি ‘সব খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল’ মনে হওয়া। আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র যদিও এরকম কথা কোথাও বলেনি। ডায়াবেটিসে খাদ্যের মূলমন্ত্র হল পর্যাপ্ত ক্যালোরির খাদ্য খাওয়া এবং কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যান্টের পরিমাণ ঠিক রাখা। কোনো খাবারই সারাজীবনের মতো বর্জনীয় নয়। শুনলে অবাক লাগবে, সাধারণ সুষম আহারের সঙ্গে ডায়াবেটিসের আহারের খুব বেশি তফাত নেই।
প্রথমে আসি ক্যালোরি, অর্থাৎ খাবার থেকে কতটা এনার্জি আসবে তার কথায়। প্রধানত উচ্চতা, ওজন এবং সারাদিনের পরিশ্রম অনুযায়ী দৈনিক কতটা ক্যালোরির প্রয়োজন তা নির্ধারণ করা হয়। উচ্চতা অনুযায়ী দেহের ওজন যদি ঠিক থাকে তাহলে সারাদিনে যতটা ক্যালোরি ব্যয় হয় ততটুকু ক্যালোরির খাবারই খাওয়া উচিত। যাতে দেহের ওজনের বিশেষ হেরফের না হয়। যাদের দেহের ওজন বেশি তাদের ক্ষেত্রে প্রতিদিনের ক্যালোরি ব্যয়ের থেকে একটু কম ক্যালোরির খাবার খাওয়া উচিত যাতে করে প্রতিদিনই একটু করে ক্যালোরির ঘাটতি পড়ে। এর ফলে ধীরে ধীরে দেহের ওজন কমতে থাকে। যারা খুব রোগা, তাদের ওজন ফেরানোর জন্য প্রতিদিনের ক্যালোরি ব্যয়ের থেকে একটু বেশি ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। গর্ভাবস্থায় বা দুগ্ধদানকালে মায়েদের কিছু বেশি ক্যালোরিরই প্রয়োজন হয়।
সারাদিনের খাবার থেকে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাট থেকে সঠিক পরিমাণ ক্যালোরি আসাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত সারাদিনের ক্যালোরির শতকরা পঞ্চাশ থেকে ষাট ভাগ কার্বোহাইড্রেট, কুড়ি ভাগ প্রোটিন এবং বাকিটা ফ্যাট থেকে আসা দরকার। আমাদের বাঙালিদের কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট প্রধানত আসে এইসব খাবার থেকে—
 কার্বোহাইড্রেট : ভাত, রুটি, ডাল, আলু, চিনি।
চার ক্যালোরি এনার্জি রয়েছে প্রতি গ্রাম কার্বোহাইড্রেটে।
 প্রোটিন : মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল।
চার ক্যালোরি এনার্জি রয়েছে প্রতি গ্রাম ওজনে।
 ফ্যাট : তেল, মাখন, ঘি।
নয় ক্যালোরি এনার্জি রয়েছে প্রতি গ্রাম ফ্যাটে।
তবে প্রায় সব খাবারেই কম-বেশি পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট তিনটি উপাদানই বর্তমান থাকে।
প্রথমে আসি কার্বোহাইড্রেটের কথায়। প্রধানত ভাত, রুটি, ডাল, মধু, ফল আমাদের কার্বোহাইড্রেট যোগায়। এক্ষেত্রে কতকগুলো ভ্রান্ত ধারণা ঠিক করে দেওয়া প্রয়োজন।
প্রথমে কথা হল ডায়াবেটিসে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কম খাওয়া উচিত, একথা ভুল। কারণ আগেই বলা হয়েছে সারাদিনের ক্যালোরির পঞ্চাশ থেকে ষাট শতাংশ আসে কার্বোহাইড্রেট থেকে। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে মোট কত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট খাওয়া হচ্ছে সেটা তত গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভাত, ফল ডায়াবেটিসে খাওয়া যাবে না, একথা ভুল। ভাত, রুটির মধ্যে ক্যালোরির বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। তবে রুটির সুবিধেটা হল খাবার মাপ ঠিক রাখা সহজ এবং আটার রুটিতে ফাইবার বেশি থাকায় পেট পরিষ্কার থাকে এবং সগারের মাত্রা ঠিক রাখতে কিছুটা সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস রোগীরাও ফল (এমনকী মিষ্টি ফলও), আলু খেতে পারেন। তবে কিছু খাবার যেমন, আলু, কলা ইত্যাদিতে ক্যালোরির পরিমাণ বেশি। অর্থাৎ সমপরিমাণ ঢেঁড়স, কপি, বেগুন ইত্যাদি সবজিতে যা ক্যালোরি থাকে আলুতে তার থেকে অনেক বেশি রয়েছে। সেই অর্ধেক ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেয়ে পেট ভরাতে গেলে সারাদিনের মোট ক্যালোরির পরিমাণ অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পায়। সেটা বাঞ্ছনীয় নয়। তেমনি পেয়ারা, আপেল, কমলালেবুর থেকে কলায় ও আমে ক্যালোরি বেশি। তবে প্রতিদিনের ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বজায় রেখে এগুলো মাত্রা রেখে খেলে কোনো ক্ষতি নেই। তবে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে মাত্রা বজায় রাখাটাই একান্ত প্রয়োজন। অর্থাৎ প্রতিদিনের খাবারের সঙ্গে কোনো দিন আম খেলে রোজগার খাবারের রুটিন থেকে কোনো একটা সম ক্যালোরির কার্বোহাইড্রেটকে বাদ দিতে হবে। এর জন্য ‘ফুড এক্সচেঞ্জ’ ব্যাপারটা বোঝা দরকার। কোন খাবারের বদলে কতটা অন্য খাবার খেলে, প্রতিদিনের ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট ও প্রোটিনের মাপ বজায় রাখা যায়, এটাই জানায় ‘ফুড এক্সচেঞ্জ’ তালিকা। (এইরকম একটি তালিকা এই লেখার সঙ্গে দেখানো হয়েছে)। ফলের ব্যাপারে একটি অতিরিক্ত কথা জানাই। ফলের রসের থেকে গোটা ফল যেখানে খাওয়া যায়, সেটাই খাওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ, গোটা ফল খেলে তার ফাইবারটাও খাওয়া হয়।
এবার আসছি প্রোটিনের কথায়। আমাদের খাবারের সাধারণত মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধ ইত্যাদি থেকে আমরা প্রোটিন পাই। এ সবের মধ্যে পাঁঠার মাংসে ক্যালোরি ও ফ্যাট বেশি। ফলে এ ধরনের মাংস এড়িয়ে চলাই ভালো। তবে একেবারে খাওয়া যাবে না, এমন কোনো কথা নেই। মাছের ক্ষেত্রে বড়-ছোট দুই-ই খাওয়া চলে। মাছের তেলে বিশেষ এক ধরনের ফ্যাট থাকে (ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড), উপযুক্ত পরিমাণে যা শরীরের পক্ষে ভালো। রক্তে কোলেস্টেরল বেশি থাকলে ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে খাওয়া ভালো। দুধ খেলে স্কিমড মিল্ক (যে দুধ থেকে ক্রিম বার করে নেওয়া হয়েছে) খাওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। এতে খাবার ফ্যাটের পরিমাণ কমে।
এবার ফ্যাটের কথা। এটা আমরা মূলত রান্নার তেল, ঘি, মাখন, বাদাম ইত্যাদি থেকে পাই। ফ্যাট বেশি আছে এমন খাবার যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো। কারণ এই ধরনের খাবারে ক্যালোরির পরিমাণ অত্যধিক বেশি। দ্বিতীয়ত, যে সব খাবারে ফ্যাট বেশি আছে, সাধারণত সেই সব খাবার বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা থাকে। বেশি ক্যালোরি যুক্ত খাবার বেশি পরিমাণে খেলে, ওজন বাড়ায় প্রবণতা দেখা যায়। এবং শরীরে ফ্যাট যত বেশি হয়, ব্লাডসুগার নিয়ন্ত্রণ করা ততই মুশকিল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া যাদের রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, তারা এ সব খাবার যত কম খাবে ততই ভলো। আমাদের বাঙালিদের যা দেহের গড়ন তাতে গড়ে মাথা পিছু দিনে চার চা-চামচ তেল খাওয়া যেতে পারে। রান্নার তেল হিসাবে সমপরিমাণ রিফাইন্ড, সরিষা এবং সানফ্লাওয়ার তেল ব্যবহার করা ভালো। অল্প পরিমাণ ঘিও ব্যবহার করা যেতে পারে।
যেসব শাকসবজি ইচ্ছেমতো খাওয়া যেতে পারে, তা হল করলা, বেগুন, কারিপাতা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, পিঁয়াজকলি, লাউ, শশা, ঢেঁড়স, ধনেপাতা, বরবটি, শিম, ডাঁটা, শালগম, ওলকপি, ধনেপাতা, লেটুস।
পরিশেষে নমুনা হিসেবে একটি চোদ্দশো ক্যালোরির খাদ্য তালিয়ে দেওয়া হল। এই খাদ্য তালিকায় যা খাবারের উল্লেখ আছে তার পরিবর্তে পছন্দসই খাবারও বেছে নেওয়া যেতে পারে, ফুড এক্সচেঞ্জ তালিকা দেখে। তবে একটি সিরিয়ালের বদলে সম ক্যালোরির আরেকটি সিরিয়াল, একটি ফলের বদলে সম ক্যালোরির অন্য ফল, এই ভাবেই খাবার বদলালে সারাদিনের মোট ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের অনুপাতের বিশেষ কোনো পরিবর্তন না করে, রুচি অনুযায়ী স্বাদ বদলানো যেতে পারে।
ভোরবেলা : এক কাপ চা (চিনি ছাড়া), মারি বিস্কুট, দুধ।
প্রাতরাশ : তিন পিস পাঁউরুটি (মাঝারি), এক গ্লাস স্কিমড মিল্ক, একটা ডিম।
বেলা ১০-১২ টা : কল বার বরা (স্প্রাউটেড মুগ ডাল-পঞ্চাশ গ্রাম)।
মধ্যাহ্নে : পঁচাত্তর গ্রাম চালের ভাত, অর্ধেক বাটি ডাল, এক বাটি সবজি, মাছ-ষাট গ্রাম, টক দই—পঞ্চাশ গ্রাম।
বিকেলে : এক কাপ চা (চিনি ছাড়া), দুটো মারি বিস্কুট, একটা ফল।
রাত্রে : পঁচাত্তর গ্রামের ভাত বা মাঝারি সাইজের দু’-তিনটি রুটি, অর্ধেক বাটি ডাল, এক বাটি সবজি, মাছ ষাট গ্রাম, স্কিমড মিল্ক এক গ্লাস।
 রান্নার তেল : সারাদিনে তিন-চার চা-চামচ।
 মদ্যপান এড়িয়ে চলা ভালো। করলেও কখনোই অতিরিক্ত নয়।

Address

ওয়াপদা রোড, রামগঞ্জ, লক্ষীপুর
Lakshmipur

Telephone

+8801300255525

Website

https://www.prantik-ngo.org/prantikhospital/

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when প্রান্তিক জেনারেল হাসপাতাল posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Practice

Send a message to প্রান্তিক জেনারেল হাসপাতাল:

Share

Category