29/06/2025
রুকইয়ার সাপ্লিমেন্ট: পরিচিতি, ব্যবহার ও সতর্কতা
রুকইয়ার সাপ্লিমেন্ট বলতে সেই উপকরণগুলোকে বোঝানো হয়, যেগুলো সরাসরি রুকইয়া না কিন্তু রুকইয়ার কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। এগুলো শরিয়াহসম্মত ও চিকিৎসাগতভাবে উপকারী হওয়া জরুরি। মধু, পানি, তেল ইত্যাদি অনেক জিনিসই রুকইয়ার সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে প্রতিটি উপকরণের একটি নির্দিষ্ট ব্যবহারবিধি ও সীমা রয়েছে।
সাপ্লিমেন্ট ব্যবহারের নিয়ম
---------
প্রথমে (পানি বা তেলের মত) সাপ্লিমেন্ট প্রস্তুত করার জন্য- এর কাছে মুখ নিয়ে কুরআনের আয়াত বা দোয়া পড়া হয়। অথবা স্বাভাবিকভাবে পড়ার পর ফুঁক দেওয়া হয়, কখনো হালকা থুথুসহ ফুঁ দেয়া হয়। কেউ কেউ হাত বা আঙুল সাপ্লিমেন্টের উপর রেখে তেলাওয়াত করেন, ফুঁ দেননা।
সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস ইত্যাদি যেসব আয়াত বা দোয়া পড়ে রুকইয়াহ করা হয়, একই জিনিস পড়ে সাপ্লিমেন্ট তৈরি করা হয়। একই জিনিস একাধিকবার বা কয়েক দিন ধরে পড়া যেতে পারে, কিংবা অন্য কেউ পড়ে দিলে ব্যবহার করা যেতে পারে, এতে সমস্যা নেই। এছাড়া পূর্বে তৈরি সাপ্লিমেন্ট মিশিয়েও ব্যবহার করা যায়, (এভাবে মেশানোর ফলে উপকারিতায় কিছু কমতি হতে পারে, তবুও কিছুক্ষেত্রে এটা সহায়ক)।
পড়া হয়ে গেলে পরে এসব খাওয়া, পান করা, গোসল করা, মালিশ করা এবং ঘরে ছিটানো হয়। পড়ার সময় মনোযোগ ও দৃঢ় বিশ্বাস রাখা জরুরি। নির্দিষ্ট নিয়ত মনে রেখে পড়া এবং ব্যবহার করা অধিক কার্যকর।
কয়েকটি উপকারী সাপ্লিমেন্ট পরিচিতি
--------
পানি:
রুকইয়ার পানি বা পড়া পানি পান করা, গোসল করা এবং ঘরে ছিটিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে জমজমের পানি সবচেয়ে উত্তম, এরপর বৃষ্টির পানি। সবশেষে সাধারণ পানি দ্বারাও রুকইয়াহ করা যায়। প্রয়োজনে জমজম বা বৃষ্টির পানি সাধারণ পানিতে মিশিয়ে নেওয়া যায়। গোসলের জন্য রুকইয়ার পানির সাথে গরম পানি মেশানো যায়, তবে পড়া পানি গরম করা উচিত না।
মধু:
এটি আরোগ্যের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। সরাসরি খাওয়া বা পানিতে গুলিয়ে পান করা—দুইভাবেই বেশ উপকারী।
অলিভ অয়েল (যায়তুনের তেল):
কুরআনে একে বরকতময় বলা হয়েছে। সাধারণত সমস্যার স্থানে তেল মালিশের জন্য ব্যবহৃত হয়। রেচক হিসেবে পান করা হয়। এক্সট্রা ভার্জিন কোল্ড প্রেসড তেল উত্তম, না পেলে শরীরে ব্যবহারের উপযোগী ভালো অলিভ অয়েলের মাঝে রুকইয়াহ করে ব্যবহার করবেন।
অলিভ অয়েল দুষ্প্রাপ্য হলে অন্য তেলও ব্যবহার করা যায়, তবে এটা অধিক উপকারী।
কালোজিরা:
এটি খাওয়া ও ব্যবহার করা যায়। কালোজিরার তেলও রুকইয়ার সহায়ক হিসেবে উপকারী।
বরই পাতা:
জাদু বা জিনের সমস্যায়- সাতটি সবুজ বরই পাতা পিষে পানিতে মিশিয়ে আয়াতুল কুরসি ও তিনকুল তিনবার করে পড়ে পান করা ও গোসল করা হয়।
ফ্রেশ পাতা না পেলে শুকনা পাতা বা গুড়া এর বিকল্প হতে পারে। কিংবা একসাথে বেটে নিয়ে ফ্রিজে রেখেও ব্যবহার করতে পারেন।
সোনা পাতা (অথবা এর গুড়া):
এটিও উপকারী সাপ্লিমেন্ট হিসেবে বিবেচিত। সামান্য সোনাপাতা দিয়ে চা তৈরি করে অথবা গরম পানির সাথে মিশিয়ে তারমধ্যে দোয়া-কালাম পড়ে খেতে হয়। বিশেষতঃ কাউকে জাদুর জিনিস খাওয়ালে, তার চিকিৎসায় এটা উপকারী।
আজওয়া খেজুর:
হাদিসে এসেছে, সকালে খালি পেটে ৭টা আজওয়া খেজুর খেলে জাদু ও বিষের ক্ষতি থেকে বাঁচা যায়। এছাড়া চিকিৎসা হিসেবেও সিহরের আয়াত পড়ে নিয়মিত খাওয়া যায়। মদিনার আজওয়া খেজুর সবচেয়ে উপকারী।
আতর বা সুগন্ধি:
রুকইয়ার সময় দোয়া পড়ে বারবার ঘ্রাণ নেয়া, ঘুমের সময় আশেপাশে ব্যবহার করা, পানির সাথে মিশিয়ে ঘরে ছিটানো… ইত্যাদি কাজে আতর ব্যবহার হয়। দুষ্ট জিনেরা সাধারণত আতরের ঘ্রাণ সহ্য করতে পারে না।
কুস্ত (কস্টাস):
কুস্ত এর শেকড়ের গুড়া (কস্টাস রুট পাউডার) গরম পানিতে গুলিয়ে খাওয়া হয়। এছাড়া তেলের মধ্যে গুলিয়ে ড্রপ হিসেবে নাকে দেয়া যায়।
অডিও এবং গোসল:
রুকইয়ার অডিও এবং রুকইয়ার গোসল - এই দুটি বহুল ব্যবহৃত সহায়ক উপকরণ। এগুলো নিয়ে আমাদের ব্লগে স্বতন্ত্র ও বিস্তারিত প্রবন্ধ আছে। পড়ে দেখতে পারেন।
অন্যান্য উপকরণ:
লবণ, ভিটামিন, পুষ্টিকর খাবার, এমনকি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ার সময়েও এসবের উপর আয়াত বা দোয়া পড়া উপকারী হতে পারে।..
বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যবহারের দিকনির্দেশনা
--------
১. মাসিকের সময় রুকইয়ার সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করা যায়, তবে কোরআন পড়া যায় না। তাই অন্য কেউ এসব পড়ে ফুঁ দিয়ে দেবে অথবা আগে থেকে পড়া পানি ব্যবহার করবে। এছাড়া শুধু দোয়া পড়েও পানি তৈরি করা যেতে পারে।
২. গর্ভাবস্থায় সাধারণত জটিল রুকইয়া বা সাপ্লিমেন্ট থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়, সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কায়। তবে হিফাজতের দোয়া ও আমল অবশ্যই করা উচিত। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কারও পরামর্শ অনুযায়ী সীমিতভাবে নিয়মিত রুকইয়াও করা যাবে।
৩. রোজার দিনে: দিনের বেলায় কিছু খাওয়া যায় না যেহেতু, তাই সাহরী বা ইফতারের সময় বা রাতে খেতে হবে। গোসল বা তেল মালিশ জাতীয় সর্বদাই করা যায়।
৪. ৭দিনের ডিটক্স রুকইয়াহ প্রোগ্রাম: এতে বিভিন্ন সাপ্লিমেন্ট, যেমন- পানি, মধু, কালোজিরা, তেল নির্দিষ্ট নিয়মে ব্যবহার করা হয়। এটা দারুণ উপকারী রুটিন। ..
সতর্কতা
--------
১. যেকোনো সাপ্লিমেন্ট ব্যবহারের আগে নিশ্চিত হতে হবে যে তা “শরিয়াহসম্মত এবং চিকিৎসকদের মতেও উপকারী।” মনে রাখতে হবে, আরোগ্য দানকারী আল্লাহ তাআলা, আর এসব শুধু সহায়ক বস্তু মাত্র।
২. সাপ্লিমেন্ট নিয়ে অতিরিক্ত এক্সপেরিমেন্ট বা গবেষণা করা ঠিক নয়। সাপ্লিমেন্ট পবিত্র স্থানে তৈরি করতে হবে (টয়লেট ও গোসলখানা একত্রে থাকলে সেখানে কোরআন পড়া যাবে না)।
৩. সাপ্লিমেন্ট তৈরির পর যত দ্রুত ব্যবহার করে ফেলা যায়, তত ভাল। এগুলো ঢেকে রাখবেন, প্রয়োজনে বিসমিল্লাহ বলে মুখ বন্ধ করবেন।
৪. যদি সাপ্লিমেন্ট তৈরির জন্য রাকির কাছে যান, তবে আকিদা, আমল, সততা এবং পর্দাসহ শরিয়াহর নিয়ম অবশ্যই মানতে হবে।
__________________
এই আলোচনাটি “রুকইয়াহ” বইয়ের “রুকইয়াহ সাপ্লিমেন্টারি” অধ্যায় থেকে নিয়ে সংক্ষেপন করা হয়েছে। রুকইয়াহ বইয়ে রুকইয়া করার বিস্তারিত নিয়মের পাশাপাশি কীভাবে এসব উপকরণ ব্যবহার করতে হয়, তার নির্দেশনা, রেফারেন্স এবং সতর্কতা উপস্থাপন করা হয়েছে।
_Abdullah Al Mahmud Vai