04/10/2025
শায়খ আলী তানতাভি ছিলেন মিশরের একজন বিচারপতি। তিনি তাঁর জীবনে ২০ হাজারের অধিক কেবল বিবাহ সংক্রান্ত কেইস সমাধান করেছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে সফল দাম্পত্য জীবনের কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন। তার মধ্যে একটা অন্যতম পরামর্শ ছিল— নিজেদের সমস্যা কখনোই তৃতীয় কাউকে শেয়ার না করা, এমনকি বাবা-মা, ভাই-বোনকেও না।
তাঁর মতে, স্বামী-স্ত্রীর নিজেদের সমস্যা যখনই তৃতীয় কারও কাছে যাবে, সেটার শেষ পরিণতি বিচ্ছেদের রূপ নেবে। তাই পরামর্শ হলো: নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করা।
প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ রুকইয়া উদ্দেশ্যে আমার সঙ্গে তাদের দাম্পত্য জীবনের নানা কলহ শেয়ার করে। এখন পর্যন্ত আমি যতগুলো পরিবার ভেঙে যাওয়ার ঘটনা দেখেছি বা শুনেছি, তার প্রায় ৯০% ক্ষেত্রেই একটি সাধারণ কারণ লক্ষ্য করেছি — স্বামী-স্ত্রীর প্রাইভেসি না থাকা। দাম্পত্য জীবনে বাবা-মা/শশুর-শাশুড়ির হস্তক্ষেপ। নিজেদের সমস্যা নিজেদের মধ্যে না রেখে চৌদ্দ গুষ্টিকে জড়ানো। চাইলে আপনারাও মিলিয়ে দেখতে পারেন - আশেপাশের যেসব পরিবার ভেঙে গেছে, তাদের মূল কারণ হিসেবে দেখবেন এই ব্যাপারটা কতটা বাস্তব।
দাম্পত্য জীবনে মনোমালিন্য একটি অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয়। প্রত্যেকের সাংসারিক জীবনেই আপনি মনোমালিন্য পাবেন। আমরা মানুষ, ফেরেশতা নই। প্রত্যেকের মধ্যেই ভালো-মন্দ রয়েছে।
একেবারে আপনার মনের মতো, আপনি যা চাইবেন, যেভাবে চাইবেন, হুবহু সেভাবে পাবেন এবং ন্যূনতম বাদানুবাদ হবে না— এমনটা কেবল জান্নাতেই পাবেন, এই দুনিয়াতে নয়।
আপনি যদি 'পারফেক্ট কাপল' হতে চান কিংবা পারফেক্ট সঙ্গী আশা করেন, তাহলে সেটা হবে অবাস্তব । এতে বরং আপনার হতাশা আরও বাড়বে, কারণ চাওয়া মাফিক না পাওয়ার হতাশা থাকবে।
আর বাস্তবসম্মত সমাধান এইটাই যে, এই বাস্তবতা মেনে নেওয়া এবং নিজেদের সমস্যাগুলো নিজেরা সমাধান করা।
আর এ কারণেই কুরআনে স্বামী-স্ত্রীকে পোশাকের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
"তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের জন্য পোশাকস্বরূপ এবং তোমরা (স্বামীরা) তাদের জন্য পোশাকস্বরূপ।" (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৮৭)
পোশাক যেভাবে মানুষের গোপনীয়তাকে ঢেকে রাখে, স্বামী-স্ত্রীও সেভাবে একে অপরের ভুলত্রুটিগুলো ঢেকে রাখবে।
সবথেকে বড় আইরনি কি জানেন? বিজ্ঞজনরা যেখানে বাবা-মা’র সাথেও স্বামী-স্ত্রীর বিষয়গুলো শেয়ার করতে নিষেধ করেছেন, সেখানে বর্তমানে মানুষ বাবা-মা তো বটেই, গোটা দুনিয়াকে নিজেদের সমস্যাগুলো প্রচার করে বেড়াচ্ছে সোস্যাল মিডিয়ায়। কেউ সরাসরি, কেউবা আকারে-ইঙ্গিতে।
বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তাদের পোস্ট, লেখালেখি বা স্ট্যাটাস দেখলেই বোঝা যায় তাদের দাম্পত্য জীবনে কী চলছে। এমনকি আল্লাহর কাছে দোয়া করে সেটাও ফেসবুকে পোস্ট করে। মনে হয় যেন তাদের দোয়া ফেসবুক হয়ে আল্লাহর কাছে পৌছাবে। নাউজুবিল্লাহ।
তাই সফল দাম্পত্য জীবন চাইলে সবার আগে নিজেদের প্রাইভেসি স্ট্রং করুন। স্বামী-স্ত্রী সকালে ঝগড়া করবেন,বিকালে মিটে যাবে। কিন্তু স্থায়ী ক্ষত হিসেবে রয়ে যাবে ঝগড়ার মুহুর্তে আবেগের বসে করে বসা ভুল, যার মাধ্যমে নিজেদের প্রাইভেসিকে নষ্ট করেছেন। আপনার দাম্পত্য জীবনের ভালো স্মৃতিগুলো পাথরে খোদাই করে লিখে রাখুন,আর খারাপ স্মৃতিগুলো লিখুন সমুদ্রের বালিতে। মনে রাখবেন-
"It’s not marriage that makes you happy,it's you that makes your marriage happy "
Shams Al rifat vai