08/07/2025
জিন-জাদুতে আক্রান্ত রোগীদের অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে নাসীহা (সকল পর্ব একসাথে)
জিন-জাদুতে আক্রান্ত পেশেন্টদের অভিভাবকদের মাঝে কিছু এমন বিষয় আছে যা থাকলে ঐ রোগীর ঝামেলা পরিবারে ছড়িয়ে পরে ও এরা হয়রান হতেই থাকে। যতক্ষণ তাঁরা ঐ বদগুণগুলো দূর করবে না ততক্ষণ তাঁদের মুক্তিও মিলবে না। আর মুক্তি মিললেও সেটা সাময়িক পরবর্তী ধাক্কা হবে খুবই ভয়াবহ ও কঠিন।
বিষয়গুলো হলো
১। অস্থিরতা
রোগীর অভিভাবক অস্থির হলে চিকিৎসকেও অস্থির করে তুলবেই। অথচ চিকিৎসক আরো রোগীদের বিষয় নিয়ে কাজ করছে। বরং অস্থির না হয়ে কঠিন বিপদ অস্থিরতা ও পেরেশানিতে আল্লাহর সাহায্য লাভে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো ছোট্ট দোয়াটি ছিল এমন-
اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوَرَاتِنَا ، وَآمِنْ رَوَعَاتِنَا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাসতুর আওয়ারাতিনা ওয়া আমিন রাওয়াআতিনা।’ (মুসনাদে আহমদ)
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সব দুর্বলতাকে ঢেকে দিন এবং আমাদের অস্থিরতাকে স্থির করে দিন।’
২। ইবাদাতে অলসতা
ইবাদাতে অলসতা হলো আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও শয়তান জিনের শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যম। তাই ইবাদাতে অলসতা থাকলে দুআ ও প্রচেষ্টা দিয়ে ঠিক করুন।
কারন আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদে ইবাদাতে অলসতা মুনাফিকদের অভ্যাস বলেছেন। তিনি বলেন,
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَإِذَا قَامُواْ إِلَى الصَّلاَةِ قَامُواْ كُسَالَى يُرَآؤُونَ النَّاسَ وَلاَ يَذْكُرُونَ اللّهَ إِلاَّ قَلِيلاً
অবশ্যই মুনাফেকরা প্রতারণা করছে আল্লাহর সাথে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুতঃ তারা যখন নামাযে দাঁড়ায় তখন দাঁড়ায়, একান্ত শীথিলভাবে লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে। (সুরা নিসা ১৪২)
এই দুআটা আমল করুন ও ইবাদাতে সচেতন হতে হবে
রাসূলুল্লাহ্ ﷺ এই দুআ করতেন।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল।
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। (বুখারী ২৮৯৩)
৩। রুকইয়াহ বিষয়ে খরচ করতে কৃপণতা করা
আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তাদের দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে, তারা যেন মনে না করে যে তা তাদের জন্য কল্যাণকর, বরং তা তাদের জন্য (খুবই) অকল্যাণকর। তারা যাতে কৃপণতা করেছে, সত্বর কিয়ামতের দিন তারই বেড়ি তাদের গলায় পরিয়ে দেওয়া হবে। আসমান ও জমিনের স্বত্বাধিকার শুধু আল্লাহরই। তোমরা যা কিছুই করছ আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণরূপে অবহিত।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮০)
রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কৃপণতার ব্যাপারে সাবধান হও। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা কৃপণতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অর্থলোভ তাদের কৃপণতার নির্দেশ দিয়েছে, ফলে তারা কৃপণতা করেছে, তাদের আত্মীয়তা ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে, তখন তারা তা-ই করেছে এবং তাদের পাপাচারে প্ররোচিত করেছে, তখন তারা তাতে লিপ্ত হয়েছে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৬৯৮)
পরিবারের চিকিৎসায় খরচ করা ওয়াজিব কারন তা মৌলিক অধিকারের বিষয়।
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম জাওজি রহিমাহুল্লাহ বলেন, সামর্থ্য অনুসারে স্ত্রী-সন্তান, অক্ষম মা-বাবার ব্যয় নির্বাহ করা আবশ্যক। ভরণ-পোষণ দেওয়া আবশ্যক এমন ব্যক্তির ভরণ-পোষণ না দেওয়া কৃপণতা। (আল আদাবুশ শারইয়্যা : ৩/৩০৩)
৪। রোগীকে বোঝা মনে করা
এটা তো বাস্তব যে অধিকাংশ রুকইয়াহ পেশেন্টরা জিন শয়তানের পাশাপাশি পরিবারের সাথেও মনস্তাত্ত্বিক লড়াই জড়িত। ফলে এমন অনেক কেইজে দেখা যায় রোগীকে বিরক্ত বা বোঝা মনে করে রুকইয়াহ চালিয়ে যায় এবং আল্লাহর প্রতিও আশা রাখে না এই অভিভাবকগুলো যতটুকু আশা এরা ডাক্তার, কবিরাজ ও তান্ত্রিকদের প্রতি রাখে তার ছিটেফোঁটাও আল্লাহর প্রতি রাখে না এরা। ফলে বোঝা নামানোর জন্য রুকইয়াহ করে। অথচ কুরআন ও হাদিসে এসেছে অসুস্থ ব্যক্তির খাবার ও সুস্থ করার দায়িত্ব আল্লাহর। যদি খাবার ও সুস্থ করার দায়িত্ব আল্লাহই নেন তাহলে অভিভাবকরা কোন সাহসে বোঝা মনে করে!? তাঁদের এই বোঝা মনে করার জন্য রোগী সাফার করে। কারন যে খরচ করে তাঁর নিয়তের প্রভাবও রোগীর উপর পরে।
৫। গুনাহের রাস্তা ওপেন ও গুনাহ বহাল রাখা
অধিকাংশ অভিভাবক ঘরে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ সেভাবে করে না যেভাবে কুরআন ও হাদিসে করতে বলা হয়েছে। তাঁরা যতটুকু করে তা করে মানুষ কি বলবে এইভেবে। ফলে ঘরের কর্তার জন্য ঘরের রোগীদের মুসিবত আসে। কারন গুনাহের জন্য জিন আরো শক্তি অর্জন করে এবং জাদু গুনাহের প্রভাবে ক্রিয়াশীল হয়। অনেক সময় অভিভাবকের হারাম আয়ের জন্য সন্তান বা স্ত্রীর জিন শরীর থেকে যায় না কারন সে শরীরে থাকার হারাম রক্ত মাংস পাচ্ছে তো যাবে কেন? কারন হারাম ইনকাম থেকে যা খাবে তাতো সবকিছুই হারামে পরিণত করে যতক্ষণ রক্ত মাংস পবিত্র না হয় হারাম থেকে ততক্ষণ শয়তানও কষ্ট দিতে দেখতেছি বর্তমানে। এসব কথা হজম করা কঠিন কিন্তু সত্য তো বলতেই হবে।
-------
আগামী লেখায় জানবো
রুকইয়াহতে এতো সেশন কেন লাগে এই প্রশ্নের উত্তর ইন শা আল্লাহ।
© Raqi Farhat vai