
28/07/2025
অটিজম শিশুর খাবার ব্যবস্থাপনাঃ
অটিজম আক্রান্ত শিশুদের খাদ্যাভ্যাস ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ অনেক অটিস্টিক শিশুর নির্দিষ্ট কিছু খাবার গ্রহণে সংবেদনশীলতা থাকে বা তারা বিশেষ কিছু খাবার খেতে পছন্দ করে না। আবার কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কিছু খাদ্যের পরিবর্তন অটিস্টিক শিশুদের আচরণ ও স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, প্রতিটি শিশুর প্রয়োজন ভিন্ন এবং কোনো খাদ্য পরিবর্তন করার আগে অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এখানে অটিজম আক্রান্ত শিশুর খাদ্য ব্যবস্থাপনার কিছু সাধারণ দিক আলোচনা করা হলো:
১. গ্লুটেন-ফ্রি এবং কেসিন-ফ্রি (GF/CF) ডায়েট:
* গ্লুটেন: গম, বার্লি, রাই (যব) জাতীয় শস্যে পাওয়া যায়।
* কেসিন: দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যে পাওয়া যায়।
* অনেক অভিভাবক এবং কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই দুটি উপাদান খাদ্য থেকে বাদ দিলে অটিস্টিক শিশুদের আচরণগত সমস্যা, হজমের সমস্যা এবং মনোযোগের উন্নতি হতে পারে।
২. চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কমানো:
* প্রচুর পরিমাণে চিনি এবং কৃত্রিম রং, স্বাদযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার শিশুদের হাইপারঅ্যাকটিভিটি এবং আচরণগত সমস্যা বাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হয়।
* এগুলো পরিহার করে তাজা ফল, শাকসবজি এবং সম্পূর্ণ শস্যের প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত।
৩. স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড:
* ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের কার্যকারিতা এবং স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
* চর্বিযুক্ত মাছ (যেমন – স্যালমন, টুনা), ফ্ল্যাক্স সিড, চিয়া সিড, এবং আখরোট ওমেগা-৩ এর ভালো উৎস।
* কিছু গবেষণায় অটিস্টিক শিশুদের আচরণগত এবং সামাজিক দক্ষতার উন্নতির জন্য ওমেগা-৩ সাপ্লিমেন্টের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা চলছে।
৪. প্রোবায়োটিকস:
* অটিজম আক্রান্ত অনেক শিশুর হজমের সমস্যা যেমন - কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া দেখা যায়।
* স্বাস্থ্যকর অন্ত্রের জন্য প্রোবায়োটিকস (যেমন - দই) উপকারী হতে পারে।
* সুস্থ অন্ত্র মস্তিষ্ক এবং আচরণের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বলে ধারণা করা হয়।
৫. অ্যালার্জি এবং সংবেদনশীলতা পরীক্ষা:
* অনেক অটিস্টিক শিশুর নির্দিষ্ট কিছু খাবারের প্রতি অ্যালার্জি বা সংবেদনশীলতা থাকতে পারে যা তাদের আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে।
* খাদ্য ডায়েরি রাখা বা অ্যালার্জি পরীক্ষা করিয়ে কোন খাবার সমস্যা করছে তা চিহ্নিত করা যেতে পারে।
৬. পুষ্টির ঘাটতি পূরণ:
* অটিজম আক্রান্ত শিশুরা প্রায়শই খাদ্যে নির্বাচনী হয়, অর্থাৎ তারা খুব কম সংখ্যক খাবার খেতে পছন্দ করে। এর ফলে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের ঘাটতি হতে পারে।
* ভিটামিন ডি, বি৬, বি১২, ম্যাগনেসিয়াম, এবং জিঙ্ক এর ঘাটতি সাধারণত দেখা যায়।
* চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে।
৭. খাবারের রুটিন এবং উপস্থাপনা:
* অনেক অটিস্টিক শিশু নতুন খাবার গ্রহণ করতে অনিচ্ছুক থাকে। তাই ধৈর্য ধরে খাবারের রুটিন তৈরি করা এবং ধীরে ধীরে নতুন খাবার পরিচয় করিয়ে দেওয়া উচিত।
* খাবারের রঙ, গন্ধ, এবং টেক্সচার (গঠন) তাদের কাছে সংবেদনশীল হতে পারে। তাই খাবার আকর্ষণীয়ভাবে পরিবেশন করা যেতে পারে।
* ছোট ছোট অংশে খাবার পরিবেশন করা এবং প্রশংসা করে উৎসাহিত করা যেতে পারে।
৮. পর্যাপ্ত পানি পান:
* পানি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং হজমে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত পানি পান নিশ্চিত করা জরুরি।
গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা:
* বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: যেকোনো খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের আগে অবশ্যই একজন শিশু বিশেষজ্ঞ, পুষ্টিবিদ, অথবা ডায়েটিশিয়ানের সাথে পরামর্শ করুন। তারা আপনার শিশুর ব্যক্তিগত চাহিদা এবং পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে একটি উপযুক্ত পরিকল্পনা দিতে পারবেন।
* ধৈর্য: অটিজম আক্রান্ত শিশুদের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে সময় লাগে এবং ধৈর্য প্রয়োজন। রাতারাতি ফল আশা করা উচিত নয়।
* পর্যবেক্ষণ: খাদ্য পরিবর্তনের পর শিশুর আচরণ, মেজাজ, এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের পরিবর্তনগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করুন এবং নোট রাখুন।
অটিজম আক্রান্ত শিশুর জন্য সঠিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা তাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য, আচরণ এবং উন্নতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
ডাঃ মোঃ নাসির উদ্দিন,
কনসালটেন্ট ( ফিজিওথেরাপি)
প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র,মাদারীপুর
জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
#অটিজমশিশুরখাবার
#অটিজমচিকিৎসা
#ফিজিওথেরাপিচিকিৎসা
#ফিজিওথেরাপিস্টমাদারীপুর