29/05/2022
বদনজর সম্পর্কে ইসলামী আক্বীদা : বদনজর ১
বিসমিল্লাহ
সর্বকালের কিছু নিরব ফিতনা হলো নজর,হিংসা,যাদূ।এসব বিষয়গুলোই আমাদের সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশের জন্য এক ভয়ানক ফিতনা,এ বিষয়গুলো যেমন আমাদের মাঝে মরণকামড় বসাচ্ছে তেমনি মহামারীর রুপও ধারন করছে।
এ সমস্ত বিষয়গুলো থেকে নিজের ঈমান,ইজ্জত আব্রু রক্ষার্তে আমরা সব গুলো বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করবো এবং শরীয়ত সম্মত চিকিৎসার পরামর্শ দিবো ইনশাআল্লাহ।
"বদনজর,জ্বীন,যাদূ এসবের অস্তিত্বে অনেকেই বিশ্বাস করেন না।যারা এ বিষয়ে বিশ্বাস করেন না তারা এড়িয়ে যেতে পারেন।আমাদের উদ্দেশ্য ঈমানদার ভাই এবং বোনেরা ;যারা এ বিষয়গুলো কোনধরনের সন্দেহ বা আপোষ করেন না।আর এটাই আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ যে এই বিষয়গুলো অধিকাংশ মানুষ হয়ত বিজ্ঞানের দোহাই অথবা কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন।
এজন্য আমরা কোরআন এবং হাদিসের আলোকে বদনজর সম্পর্কে বিশুদ্ধ ইসলামি আক্বিদাগুলো আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
।
১। সহীহ বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে আছে, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “বদনজর সত্য!”
২। সহীহ মুসলিম এবং মুসনাদে আহমাদের হাদিসে আছে, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “বদনজর সত্য, ভাগ্যের চেয়েও আগে বেড়ে যায় এমন কিছু যদি থাকতো, তাহলে অবশ্যই সেটা হতো বদনজর! যদি তোমাদের বদনজরের জন্য গোসল করতে বলা হয় তবে গোসল করে নিও..”
৩। মুসনাদে আবু দাউদে আছে জাবের রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আল্লাহর ফায়সালা ও তাক্বদিরের পর, আমার উম্মতের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হবে বদনজরের কারণে!”
৪। আরেকটি হাদীস আছে ইবনে মাজাহ শরীফে, আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমরা বদনজর থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও, কেননা বদনজর সত্য!”
৫। আরেকটি হাদীস রয়েছে মুসনাদে শিহাবে, হাদিসটির সনদ হাসান। জাবের রা. এবং আবু যর গিফারী রা. বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “বদনজর মানুষকে কবর পর্যন্ত আর উটকে রান্নার পাতিল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়!”
৬। মুসনাদে আহমাদ, মু’জামে তাবারানীতে হাসান সনদের অপর একটি হাদিস আছে এরকম
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “বদনজর মানুষকে উঁচু থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়!”
রাসূল সা. থেকে বিশুদ্ধ সনদে এমন অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়, যা প্রমাণ করে বদনজর সত্য, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবুও এরপর আমরা কোরআনুল কারীমের কিছু আয়াত লক্ষ্য করি..
১। …”ইয়াকুব আ. বললেনঃ হে আমার সন্তানেরা! (শহরে প্রবেশের সময়) তোমরা সবাই একই দরজা দিয়ে প্রবেশ করো না, বরং পৃথক পৃথক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। আল্লাহর কোন বিধান থেকে আমি তোমাদেরকে রক্ষা করতে পারি না, নির্দেশ আল্লাহরই চলে। তাঁরই উপর আমি ভরসা করি, আর ভরসাকারীদের তাঁর উপরেই ভরসা করা উচিত ।” (সুরা ইউসুফ আয়াত ৬৭)
ইবনে আব্বাস রা. ইমাম মুজাহিদ রহ. কাতাদাহ রহ. সহ সকল মুফাসসিররাই এই আয়াত প্রসঙ্গে বলেন,
“ইয়াকুব আ. সন্তানদের ব্যাপারে বদনজরের আশংকা করেছিলেন, যে উনার সন্তানদের দেখে লোকদের বদনজর লাগতে পারে.. (হয়তোবা তাঁরা স্বাস্থ্যবান বা সুন্দর চেহারার অধিকারী ছিলো) এজন্য সন্তানদের শহরে প্রবেশের সময় আলাদা আলাদাভাবে প্রবেশ করতে বলেছেন। পাশাপাশি এটাও উল্লেখ করে দিয়েছেন ‘এসব (বদনজর) তো আসলে আল্লাহর তৈরি সিস্টেম, এখানে আমার কিছু করার নাই.. আল্লাহর ওপর ভরসা ছাড়া!”
(বিস্তারিত জানতে তাফসীরে ইবনে কাসির অথবা বয়ানুল কোরআনে আয়াতের প্রাসঙ্গিক আলোচনা দেখা যেতে পারে..)
২। “তবে যখন তুমি তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন কেন “মা-শা-আল্লাহ, লা-ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বললে না?” (সুরা কাহফ, আয়াত ৩৯)
এই আয়াতকে আলেমরা একথার প্রমাণ হিসেবে পেশ করেন যে, কোনো কিছু দেখে মুগ্ধ হলে সাথেসাথে মাশা-আল্লাহ, সুবহানাল্লাহ অথবা আলহামদুলিল্লাহ্ এসব বলতে হয়। যদি আলোচ্য আয়াতে উল্লেখিত ব্যক্তি নিজের বাগান দেখে মুগ্ধ হয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতো, আল্লাহকে স্মরণ করতো তাহলে ওর বাগান হয়তো নষ্ট হতো না।
এব্যাপারে বায়হাকী শরিফের হাদিস উল্লেখযোগ্য, আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেন- “কোনো পছন্দনীয় বস্তু দেখার পর যদি কেউ বলে,
مَا شَاء اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّه
ِ (আল্লাহ যা চেয়েছে তেমন হয়েছে, আল্লাহ ছাড়া কারো ক্ষমতা নেই) তাহলে কোনো (বদনজর ইত্যাদি) বস্তু সেটার ক্ষতি করতে পারবে না।”
এখানে আমাদের কাছে একটা বিষয় তো পানির মত স্পষ্ট যে আমার নিজের নজরও নিজেকে লাগতে,আমাদের সন্তানদেরও লাগতে পারে। (বিস্তারিত জানতে দুররে মানসুর অথবা ইবনে কাসির দেখা যেতে পারে)
৩। “..কাফেররা যখন কোরআন শুনে, তখন তারা (এমন ভাবে তাকায় যে মনে হয়) তাদের দৃষ্টি দ্বারা যেন আপনাকে আছাড় দিয়ে ফেলে দিবে এবং তারা বলেঃ ও তো একজন পাগল!!” (সুরা কলাম, আয়াত ৫১)
এ আয়াত প্রসঙ্গে মুফাসসিররা বলেন, এক লোক বদজরের কারণে প্রসিদ্ধ ছিলো, (মানে আমাদের ভাষায় লোকটার নজর খারাপ ছিলো) তো মক্কার কাফিররা ওই লোকটাকে কোত্থেকে নিয়ে এসেছিলো, রাসূল সা. যখন কোরআন পড়তে বসতেন, তখন ওই লোকটা চেষ্টা করতো নজর দিতে!! শেষে যখন কাজ হতো না, তখন বলতো ধুর! এতো পাগল (নাউযুবিল্লাহ) এজন্য এর কিছু হচ্ছেনা..!! (বিস্তারিত জানতে তাফসীরে মাযহারি বা মা’রিফুল কোরআনের পুর্ণাঙ্গ এডিশনটা দেখা যেতে পারে)
তো, এথেকে বুঝা যায় অনেক লোকের নজর খুব বেশি লাগে, আবার অনেকে এমন আছে যারা একটুতেই নজর আক্রান্ত হয়। ইনশাআল্লাহ এবিষয়ে সামনে হাদিস আসবে..।
নজর এর মত মারাত্মক একটা বিষয়ে কিন্তু আমরা ইচ্ছাকৃত ভাবে আক্রান্ত হইনা,এটাতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তখনই হয় যখন আমরা কোন কিছু দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করি এবং তাতে আল্লাহকে স্বরন করিনা।তবে ব্লাক ম্যাজিক'র কিছু সিস্টেম আছে যেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে যাদুকর আমাদেরকে নজর এ আক্রান্ত করতে পারে।(আল্লাহ ভালো করে জানেন তারা এটা কিভাবে করে)
সবগুলো বিষয় মিলিয়ে আশা করছি নজর নিয়ে কারো মধ্যে কোন অস্পষ্টতা নেই।। ঈামনের সাথে সম্পর্ক রাখে এটা এমন কোন মৌলিক আকিদা না।তারপরও যদি আমরা কোরআন,হাদিস,ইজমা,কিয়াসের আলোচনা কারার পরও বিষয়টাকে অস্বীকার করি তাহলে আমাদের ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
………..
পরবর্তী পোষ্ট আমরা নজর সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো ইনশাআল্লাহ।