24/04/2025
“পাবনার বেড়া উপজেলায় একরাতেই ১৫ কবর থেকে কঙ্কাল চুরি।”
সকালে পত্রিকার পাতাটায় চোখ বুলিয়ে নিতে এমন একটা শিরোনামে আটকে গেলেন আহমেদ। পাশেই থাকা তার স্ত্রী খাদিজা অবাক হয়ে বললেন, “সত্যি? একরকমটাও হয়!”
: হ্যাঁ এরকমটাও হয়, দেখলে না কয়দিন আগেই তো খবরে দেখলাম, ‘মানিকগঞ্জের শিবালয়ে কবরস্থান থেকে একরাতেই ১৮ টি কঙ্কাল চুরি।’
: আচ্ছা এরকমটা কেন হয়?
: তোমার মনে আছে, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর আমাদের হাফসার জন্য কঙ্কাল কিনতে হয়েছিল? তো সেসব কঙ্কাল কোথা থেকে আসে?
: এগুলো তাহলে কবর থেকে চুরি করে বিক্রি করে টাকার জন্য! কিন্তু এগুলো গুনাহ না; একে তো চুরি, তারপর আবার মানবশরীরের অংশ?
ইতোমধ্যে তাদের কথোপকথনে যুক্ত হলেন, তাদের ছোট মেয়ে আয়েশা। আয়েশা সদ্যই প্রথম প্রফ পাশ করে এমবিবিএস তৃতীয় বর্ষে উন্নীত হয়েছে। তিনি বলে উঠলেন, “গুনাহ তো অবশ্যই।
islamweb এর ফতোয়া নং : ২৭৯০৮২ এর মতে, সাধারণ অবস্থায় মানবদেহের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় জায়েজ নয়। জরুরতের ক্ষেত্রে বা মানবদেহ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য বোনস কেনা জায়েজ হলেও বিক্রি জায়েজ নয়।”
: কিন্তু বিক্রি কেন জায়েজ নয়? আমরা তো যে টাকা দিয়ে কিনেছি, সে টাকা দিয়েই বিক্রি করছি।
: যতই আমরা লাভ না করি, কেনাবেচার এ প্রক্রিয়া চলতে থাকলে, মানবকঙ্কাল বিক্রি করে টাকা কামানোর জন্য এভাবে চুরি হতেই থাকবে।
এরমধ্যে আহমেদ বলে উঠলেন, “কিন্তু মানব শরীরকে সৃষ্টিকর্তা করেছেন সম্মানিত। আল্লাহ বলেছেন, ‘অবশ্যই আমি আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি।… এবং তাদের অনেক সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি’, সূরা আল ইসরা : ৭০।
: ঠিক বলেছ আব্বু।
রাসূল (সা.) আরও বলেছেন, ‘মৃত মানুষের হাড় ভাঙা, জীবিত মানুষের হাড় ভাঙার সমতুল্য।’ (সুনান ইবনু মাজাহ ১৬১৬)
অর্থাৎ, আমার পড়ার কঙ্কাল সেট যদি বিক্রি করি, একদিকে ইসলামি ফতোয়াবিরোধী কাজ করছি, অপরদিকে মানবদেহের অংশের দাম নেয়ার মাধ্যমে তাকে অসম্মানিত করছি। আর একদল স্বার্থান্ধ মানুষের হারাম কার্যক্রম চলমান রাখতে পরোক্ষভাবে সাহায্য করছি!
: আসলেই তো মা, এভাবে তো ভেবে দেখিনি।
: সেজন্যই তো চাচ্ছি কঙ্কালসেটটা কোনো কাউকে দান করে দিতে।
: কিন্তু তুমি যে দান করবে, যাকে দান করছ সে যদি বিক্রি করে দেয়?
: আমি তো ব্যক্তিগতভাবে দান করব না। Bangladesh Islamic Medical Society (BIMS) বিগত কয়েকবছর যাবৎ মানবকঙ্কাল বেচাকেনার মতো চরম এ পাপকাজ রুখতে পরিচালনা করে আসছে ‘বোনসব্যাংক’। এর মাধ্যমে তারা সিনিয়রদের থেকে বোনস নিয়ে জুনিয়রদের দেয়, যা তারা সর্বোচ্চ আমানতদারিতার সঙ্গে রক্ষা করে।
: আচ্ছা, ঠিক আছে তাহলে আমি আর তোমার আব্বু আরও একটু আলোচনা করে দেখি, তোমাদের পড়ার কঙ্কালটা তাদের মাধ্যমে দান করে দিতে পারলে তো সবদিক রক্ষা হয়।
: জি আম্মু।
উল্লেখ্য আয়েশার বড়বোন হাফসা তার দুইবছর আগে যখন মেডিকেলে চান্স পায়, তখন তার পড়াশোনার জন্য মা-বাবা একসেট কঙ্কাল কিনে দেয়। সে ফার্স্ট প্রফ পাশ করার পর, আয়েশাও মেডিকেল ছাত্রী হয়ে যায় এবং একই প্রয়োজনে কঙ্কালসেট ব্যবহার করতে থাকে। তখন তার দ্বীনের বুঝ খুব একটা না থাকলেও, মানুষের শরীরের অংশ কেনাবেচা তার কাছে অনুচিত মনে হওয়ায় সে সিদ্ধান্ত নেয় ফার্স্ট প্রফ পাশ করার পর তা দান করার। তার পরিবার তখন তাকে এ-বিষয়ে কিছু না বললেও পরবর্তীতে তার আম্মু আপত্তি জানায়। ততদিন মেডিকেল কলেজে দ্বীনি সোহবতে তার এ-বিষয়ক জ্ঞান কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় আজকের পত্রিকার খবরকে কেন্দ্র করে সে পরিবারের বিষয়টিকে আরও ভালোভাবে তুলে ধরার সুযোগ পেল। এবং আলহামদুলিল্লাহ তার আম্মুও ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সায় দিলেন। আমরা যারা কঙ্কাল দান করার ব্যাপারটা বুঝেও পরিবারকে বোঝাতে পারি না, তারা আয়েশার মতো করে বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করতে পারি। আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে হারাম থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন।