
12/08/2025
অ্যাব্রোটেনাম 🔰
ডাঃ কাজী সাব্বীর হোসেন
বি. এইচ এম এস
01711-070774
১. সারমর্ম
ক) রোগের পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন বা রূপান্তর: অ্যাব্রোটেনামের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো রোগের পরিবর্তনশীলতা। যদি একটি রোগ আরোগ্য হওয়ার পর অন্য একটি রোগ দেখা দেয়, এবং সেটি নিরাময় হওয়ার আগেই পূর্বের রোগটি আবার ফিরে আসে, তবে অ্যাব্রোটেনাম কার্যকর হতে পারে। কুচিকিৎসার ফলে রোগ চাপা পড়ে ভিন্ন রূপে প্রকাশ পেলেও এটি প্রযোজ্য। এর মূলে ক্ষয়দোষ থাকে, যার কারণে রোগ ক্রমাগত রূপ পরিবর্তন করে। যেমন: বাত সেরে যাওয়ার পর উদরাময় বা আমাশয় দেখা দেওয়া, অথবা কর্ণমূল প্রদাহ সেরে অণ্ডকোষে প্রদাহ হওয়া।
খ) উদরাময়ে উপশম: কোষ্ঠকাঠিন্য অ্যাব্রোটেনামের সকল যন্ত্রণা বৃদ্ধি করে, আর উদরাময় দেখা দিলে যন্ত্রণার উপশম হয়। রোগীর বিভিন্ন কষ্ট থাকলেও যদি উদরাময় শুরু হলে তার উপশম হয়, তবে অ্যাব্রোটেনাম বিবেচনা করা উচিত।
গ) প্রবল ক্ষুধা সত্ত্বেও কৃশতা বা ক্ষয়দোষ: অ্যাব্রোটেনাম ক্ষয়দোষের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ। প্রবল ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও রোগী দিন দিন শীর্ণ হয়ে যায়, শিশুরা বৃদ্ধের মতো দেখায়, এবং শরীর কঙ্কালসার হয়ে যায়। এক্ষেত্রে হজমের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। শিশুদের অপুষ্টি, রিকেট এবং কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণ হিসেবে পিতামাতার মদ্যপান বা যৌনব্যাধিকে দায়ী করা হয়েছে। শিশুদের কৃত্রিম খাবার এবং ফিডিং বোতলের ব্যবহারকেও বিপজ্জনক বলা হয়েছে।
ঘ) বাচালতা: অ্যাব্রোটেনামের আরেকটি লক্ষণ হলো বাচালতা, যা ক্ষয়দোষের ইঙ্গিত দেয়। এছাড়াও, শিশুদের ক্ষয়জাতীয় জ্বর, বাতের হৃৎপিণ্ড আক্রমণ, সদ্যোজাত শিশুর নাভি থেকে রক্তপাত, হাইড্রোসিল, গেঁটে বাত, কটিব্যথা, পেটে ব্যথা, বমি, স্বরভঙ্গ, এবং ক্রুদ্ধভাব অ্যাব্রোটেনামের অন্যান্য লক্ষণ।
২. কোন কোন রোগে ব্যবহৃত হয়
অ্যাব্রোটেনাম নিম্নলিখিত অবস্থায় ব্যবহৃত হয়:
• বিভিন্ন রোগের পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন বা রূপান্তর: যেমন - বাত ভালো হওয়ার পর উদরাময় বা আমাশয়, অর্শ ভালো হওয়ার পর আমাশয়, বা কর্ণমূল প্রদাহ সেরে যাওয়ার পর অণ্ডকোষে প্রদাহ হওয়া।
• বাত: বিশেষ করে যখন বাত নিম্নাঙ্গ ছেড়ে হৃৎপিণ্ড আক্রমণ করে।
• অর্শ।
• গ্রন্থি প্রদাহ।
• ক্ষয়জাতীয় দুর্বলতা বা কৃশতা: প্রবল ক্ষুধা সত্ত্বেও দেহের শুকিয়ে যাওয়া (যেমন: রিকেট বা 'পুঁয়ে-পাওয়া'), ছোট ছেলেদের বৃদ্ধের মতো দেখায়।
• শিশুদের ক্ষয়জাতীয় জ্বর (প্রচণ্ড দুর্বলতা সহ)।
• নবজাতকের নাভি থেকে রক্তপাত।
• হাইড্রোসিল।
• কুরগু ( মাম্পস)।
• গেঁটে বাত: গ্রন্থি ফুলে আড়ষ্ট হয়ে গেলে, নড়াচড়া করতে না পারলে।
• ফোড়া: হিপার ঔষধের পর যদি অ্যাব্রোটেনামের লক্ষণ বর্তমান থাকে।
• প্লুরিসী: যেখানে অ্যাকোনাইট ও ব্রাইওনিয়ার পর আক্রান্ত স্থানে চাপ দেওয়ার মতো ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট হয়।
• কটিব্যথা।
• পেটে ব্যথা ও বমি।
• হঠাৎ স্বরভঙ্গ।
৩. রোগের হ্রাস বৃদ্ধি
• বৃদ্ধি: অ্যাব্রোটেনামের সকল যন্ত্রণা কোষ্ঠবদ্ধ অবস্থায় বৃদ্ধি পায়। কটিব্যথা রাত্রে বৃদ্ধি পায়।
• উপশম: উদরাময় দেখা দিলে সকল যন্ত্রণার উপশম হয়। কটিব্যথা নড়াচড়ায় উপশম হয়।
৪. রোগের কারণ
অ্যাব্রোটেনামের মূল কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
• ক্ষয়দোষ: এটি রোগের বারবার রূপ পরিবর্তনের মূল ভিত্তি। প্রকৃত চিকিৎসার অভাবে রোগশক্তি ক্রমাগত নতুন রূপে প্রকাশ পায়।
• কুচিকিৎসা: রোগের কুচিকিৎসার ফলে রোগ চাপা পড়ে ভিন্ন মূর্তিতে প্রকাশ পেতে পারে।
• পিতামাতার কারণ: শিশুদের ক্ষেত্রে রিকেট বা অন্যান্য চিররোগের মূল কারণ হিসেবে পিতামাতার পানদোষ (মদ্যপান) এবং যৌনব্যাধি
• শিশুদের অজীর্ণদোষ (অনুপযুক্ত লালন-পালন):
o পিতামাতা একত্রে শয়নের অব্যবহিত পরে শিশুকে স্তন্যদান।
o শিশু যতদিন স্তন্যপায়ী থাকবে, ততদিন জননীর পুনরায় গর্ভসঞ্চার।
o শিশুদের কৃত্রিম খাদ্য (যেমন ম্যাক্সো, হরলিকস) সেবন।
o ফিডিং বোতলের ব্যবহার।
৫. রোগীর বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য
• কৃশতা: প্রবল ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও রোগী দিন দিন জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে যায়।
• বয়স্ক চেহারা: ছোট ছোট ছেলেরা অশীতিপর বৃদ্ধের মতো দেখায়, অর্থাৎ কঙ্কালসার হয়ে পড়ে।
• শারীরিক গঠন: শীর্ণ দেহ, মাথা সোজা করে রাখতে পারে না, দেহের চামড়া লোল ও শিথিল।
• শুকিয়ে যাওয়া: সাধারণত পা থেকে শুকিয়ে যাওয়া শুরু হয়।
• দুর্বলতা: মারাত্মক দুর্বলতার সাথে শিশুদের এক প্রকারের ক্ষয়জাতীয় জ্বর দেখা যায়, শিশুরা উঠে দাঁড়াতে পারে না।
৬. রোগীর মানসিক বৈশিষ্ট্য
• বাচালতা: রোগী অতিরিক্ত কথা বলতে ভালোবাসে।
• ক্রুদ্ধভাব: রোগীর মধ্যে এক প্রকারের ক্রুদ্ধ বা খিটখিটে ভাব দেখা যায়।
৭. কাতরতা: শীতার্ত। রোগী ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারে না এবং শীতার্ত থাকে।
৯. রোগীর কোন খাবারে ইচ্ছা: প্রবল ক্ষুধা ('রাক্ষসের মত খায় বটে'), তবে নির্দিষ্ট কোনো খাবারের প্রতি ইচ্ছা নেই।
১০. রোগীর কোন খাবারে অনিচ্ছা : সুনির্দিস্ট নয়
১১. রোগীর কোন খাবার খেলে সমস্যা হয় : সুনির্দিস্ট নয় তবে, শিশুদের অজীর্ণদোষ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, কৃত্রিম খাদ্য যেমন ম্যাক্সো, হরলিকস ইত্যাদি এবং ফিডিং বোতলের ব্যবহার অনুপযুক্ত, যা শিশুদের অজীর্ণদোষের কারণ হতে পারে।
------------------------------------
ডাঃ কাজী সাব্বীর হোসেন
বি. এইচ এম এস
01711-070774