17/07/2022
"ক্যান্সার, নাকি টিউমার?"
"টিউমার থেকে ক্যান্সার হয়ে গেছে।"
"টিউমারই ছিল, কিন্তু একটু দোষ পাওয়া গেছে।"
"টিউমারের মধ্যে কি ক্যান্সারের জীবাণু আছে?"
প্রায় প্রতিদিনই এধরণের কিছু না কিছু আমাদের শুনতে হয়। টিউমার আর ক্যান্সার নিয়ে একটু ধারণা দেয়ার জন্যই নিচের পোস্টের অবতারণা।
#ক্যান্সার_কে_জানুন ২
্ষারই_ক্ষারক_কিন্তু_সকল_ক্ষারক_ক্ষার_নয়!
#টিউমার কি?
টিউমার শব্দটি একটি বৃহদার্থে ব্যবহৃত শব্দ। এর মানে হলো শরীরের কোথাও অনাকাংক্ষিত ও অনিয়ন্ত্রিত ভাবে দেহ কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট ফোলা অংশ! এর ফলে শরীরের যে কোন স্থানে চাকা তৈরি হয়। এই চাকা ভাল বা নিরীহ হতে পারে (বিনাইন), অথবা হতে পারে মারত্মক এবং প্রাণনাশী (ম্যালিগনেন্ট)! দ্বিতীয়টির অপর নাম ক্যান্সার।
#বিনাইন টিউমার শরীরের তেমন ক্ষতি করে না। খুব ধীরে ধীরে বাড়ে, যেখানে উৎপত্তি সেখানেই থাকে, সাধারনত কোন চিকিৎসা লাগেনা। তবে যদি টিউমারটি এমন কোন স্থানে তৈরি হয় যেখানে
- এটি দৃষ্টি নন্দন নয় বা আকারে খুব বড়
- শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কোন অঙ্গের স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে
- এটি ব্যাথার কারন হয়
তাহলে, ক্ষেত্র বিশেষে এটি সার্জারীর মাধ্যমে অপসারন করা হয়। এ ধরনের টিউমার কদাচিৎ ম্যালিগনেন্ট টিউমারে রূপান্তরিত হয়।
এধরনের টিউমারের একটি উদাহরন লাইপোমা, যা একেবারেই নিরীহ প্রকৃতির টিউমার; নিতান্ত বিশালাকৃতি বা অনাকাংক্ষিত স্থানে না হলে এর কোন প্রকার চিকিৎসার প্রয়োজন হয়না।
#ম্যালিগনেন্ট টিউমার বা ক্যান্সার সাধারনত খুব দ্রুত বর্ধনশীল হয়, খুব তাড়াতাড়ি উৎপত্তি স্থলের পুরোটাই দখল করে নিয়ে সে স্থানের বা সেই অঙ্গের স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে, খুব সহজেই শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে আরো মারাত্মক অবস্থা তৈরি করে।
টিউমার শরীরের যেকোন জায়গায় তৈরি হতে পারে! আমাদের শরীর তৈরি হয়েছে কোষ দিয়ে। একারনে যেখানেই কোষ আছে সেখানেই তৈরি হতে পারে টিউমার বা চাকা! প্রায় ১০০ এরও বেশি ধরনের টিউমার হতে পারে আমাদের দেহে। তবে চাকা তৈরি না হয়েও কিন্তু ক্যান্সার হতে পারে! যেমন লিউকেমিয়া বা সাধারনের ভাষ্যে ব্লাড ক্যান্সার যা রক্ত কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে সৃষ্টি হয়।
ক্যান্সার গুলো তো দেহ কোষ দিয়েই তৈরি। তাহলে আমরা একে এত ভয় পাই কেন? কারণ, এরা দেহ কোষ হলেও এরা স্বাভাবিক দেহ কোষের মতো নয়।
একটা স্বাভাবিক দেহ কোষ প্রথমে জন্ম নেয়, তার যেই কাজ করার কথা দেহের ভেতর, সেটা করতে করতে একসময় তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়, প্রয়োজনে আবার নতুন করে তৈরি হয় আবার একই রকমের আরেকটি কোষ!
অপরদিকে, একটি ক্যান্সার রোগের কোষের উৎপত্তি হয় এই একই দেহের ভেতর, কিন্তু এর কাজকর্ম এর মাতৃকোষ গুলো থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন; এরা অমর, এরা খুব দ্রুত বিভাজিত হয়ে সংখ্যাবৃদ্ধি করে, আর প্রত্যেকবার বিভাজনের সময় এরা নিজেদের পরিবর্তিত করে! এরা বিভিন্ন উপায়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নতুন বসতি স্থাপন করে, দেহের মূল কোষ ও অঙ্গের স্বাভাবিক কাজে বাধা দেয়, দেহের সকল পুষ্টি ধীরে ধীরে নিজের প্রয়োজনে ও বংশবিস্তারে ব্যবহার করে! ফলে দেহের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হয়, দেহ তার নিজস্ব কোষ ও প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়ে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যায় এদেরকে অপসারণ করার জন্য, কিন্তু অমর অপ্রতিরোধ্য এই ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে কোন কিছুই কাজে আসেনা, একসময় এদের কাছে সব কিছুই হার মানে!!
বিনাইন আর ম্যালিগন্যান্ট এই দুইয়ের মাঝে আরেক রকম টিউমার আছে যার নাম #প্রি-ম্যালিগনেন্ট টিউমার। এটা আসলে ম্যালিগনেন্ট টিউমারেরই পূর্বাবস্থা, যা বিনা চিকিৎসায় বা বিনা ফলো আপে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হতে পারে!
তবে মোটা দাগে বলা যায়, সকল ক্যান্সারই টিউমার, কিন্তু সব টিউমার ক্যান্সার নয়!
এখন আসি ক্যান্সার এর স্টেজে। আমরা প্রায়ই এধরনের কথা শুনি- “একেবারে লাস্ট স্টেজ”, কিংবা “ডাক্তার বলেছে, শুধু লিভারে একটা ছোট্ট স্পট আছে, এছাড়া শরীরের কোথাও ছড়ায় নাই”!!
ক্যান্সার ধরা পড়লেই কিন্তু আর দশটা রোগের মতো চিকিৎসা শুরু করা যায়না! প্রথমেই জানতে হয় ক্যান্সারটা কোন স্টেজে আছে! সাধারনত ক্যন্সার এর চারটা #স্টেজ- এক থেকে চার। স্টেজ এক বা দুই হলে সাধারন ভাবে বোঝায় যে ক্যান্সারটা মোটামুটি নিজের জায়গাতেই আছে, এখনো খুব বেশি ছড়ায়নি! তিন বা চার হলে বোঝায় রোগ ছড়িয়ে যাচ্ছে বা গেছে! স্টেজ ৪ মানে অবশ্যই তা ক্যান্সারের উৎপত্তির জায়গা থেকে দূরবর্তী স্থানে ছড়িয়ে গেছে! সেটা একটা ছোট্ট স্পটই হোক, কিংবা একাধিক স্থানে অনেক বড় বড় টিউমার হোক!
#কেন চিকিৎসার পূর্বে এই স্টেজিং করা জরুরী?
ক্যান্সার এর স্টেজিং এর কিছু সাধারন নিয়ম আছে। টিউমার এর আকার ( ), লিম্ফ নোড এ ক্যান্সার এর উপস্থিতি ( ) এবং দূরবর্তী স্থানে ছড়িয়ে যাওয়া ( ) বা মেটাস্টেসিস এই তিন টির সমন্বয়ে সকল ক্যান্সারের আন্তর্জাতিক স্টেজিং করা হয় এবং দুই একটা ব্যতিক্রম ছাড়া সকল ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হয়! মজার ব্যাপার হল প্রতিটি ক্যান্সার এর TNM স্টেজিং ভিন্ন! আর চিকিৎসা পদ্ধতিও স্টেজ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন! তাই সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্বাচনের জন্য স্টেজিং অপরিহার্য! আরেকটা ব্যাপার বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, স্টেজ এক বা দুই এর চিকিৎসার ফলাফল স্টেজ তিন বা চার এর চেয়ে অনেক ভালো হবে আর বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও প্রাথমিক স্টেজে তুলনামূলক ভাবে বেশি!