
17/08/2025
"অনিচ্ছাকৃত মূত্রস্রাব একটি নিরাময় যোগ্য মেয়েলি সমস্যা ও তার সমাধান"
এটি ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স (Urinary incontinence) নামেও পরিচিত। এ অবস্থায় ব্যক্তি মূত্র নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। এমনকি সাধারণ হাঁচি বা কাশি দেওয়ার ফলেও হঠাৎ করে মূত্রত্যাগ করে ফেলে বা মূত্রত্যাগের চাপ অনুভব করে। এই সমস্যার কারণে দৈনন্দিন জীবনে নানা ধরনের অস্বস্থিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। তবে অভ্যাসগত বিভিন্ন পরিবর্তন ও চিকিৎসার সাহায্যে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
হাঁচলে বা কাশলে প্রস্রাব বেরিয়ে আসে। প্রস্রাব পেলেই তাড়াতাড়ি টয়লেটে ছুটতে হয়। তা সত্ত্বেও মাঝে মাঝে কাপড় ভিজে যায়। অনেক মহিলাই এই বিরক্তিকর সমস্যার মুখোমুখি হন। পঞ্চাশ বছরের কাছাকাছি অন্তত কুড়ি শতাংশ মহিলাই ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স বা প্রস্রাব ধরে রাখার অক্ষমতায় ভোগেন। এ ভাবে বাঁচা সত্যিই দুর্বিসহ। বাইরে বেরনোই মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এটি যেহেতু কোনও মারণব্যাধি নয়, তাই চিকিৎসার গরজ অনেকেই করেন না। তাছাড়া ব্যাপারটা অস্বস্তিকর বলে অনেকেই ব্যাপারটা চেপেও রাখেন। কারও সঙ্গে এটা আলোচনাও করেন না। বয়স বাড়তে থাকলে মেনোপজের কাছাকাছি সময় এসে গেলে ইউরিন ধরে রাখার অক্ষমতা বাড়ে। তবে এই সমস্যা শুধু যে বয়স্কদের হয়, তা কিন্তু নয়।
কেন এ রকম হয়ঃ
নর্ম্যাল ডেলিভারি হলে এ রকম হতে পারে। তবে ভাববেন না, সিজারিয়ান ডেলিভারি হলে এমনটা আর হবে না। যে মহিলার সন্তান হয়নি, তাঁরও কিন্তু এই সমস্যা হতে পারে। ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স দুই রকম। আর্জ ইনকন্টিনেন্স আর স্ট্রেস ইনকন্টিনেন্স। আর্জ ইনকন্টিনেন্স থাকলে পেশির দেওয়ালের সক্রিয়তা কমে যায়। তার জন্য প্রস্রাব বেরিয়ে আসে। স্ট্রেস ইনকন্টিনেন্সে শারীরিক কসরত করলেই প্রস্রাব বেরিয়ে আসে। যেমন, হাসলে কাশলে এমনকি দৌড়ালেও ইউরিন বেরিয়ে আসতে পারে।
চিকিৎসাঃ
দিনে কত বার টয়লেটে যেতে হচ্ছে, রাতে ক’বার উঠতে হয়- এসবের ওপর চিকিৎসা নির্ভর করে। এর কার্যকরী চিকিৎসা হল মূত্রাশয় বা ব্লাডারের উপযুক্ত ট্রেনিং।
এতে দিনে কয় বার প্রস্রাব করলেন, তা নোট করতে বলা হয়। আর সবচেয়ে কম কত সময় প্রস্রাব না করে থাকতে পারেন তা-ও বলা হয়। এটা চিকিৎসার প্রথম অবস্থা। এর পর রোগীকে বলা হয়, চেষ্টা করুন বেগ এলেও কিছুক্ষণ প্রস্রাব না করে থাকতে। যিনি তিরিশ মিনিট প্রস্রাব ধরে রাখতে পারেন, তাঁকে বলা হয় ৩৫ মিনিটের আগে কোনও মতেই বাথরুম যাওয়া হবে না। কাপড় ভিজলেও না। নিষ্ঠুর শোনালেও এর উদ্দেশ্য আদতে মনের জোড় বাড়ানো। দুই-চার দিনের মধ্যেই ফল পাওয়া যায়। ৯০% মহিলারই আর কোনও ওষুধের প্রয়োজন হয় না।
তবে ওষুধ প্রয়োগ করেও ট্রিটমেন্ট করা সম্ভব। এই ধরনের সমস্যা হলে মানসিক ভারসাম্য অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। পারিবারিক ও কাজের ক্ষতি হয়। এ সব ক্ষেত্রে যোগাসন, সাইকোথেরাপি এবং হিপনোসিসও ভাল ফল দিতে পারে।
পেলভিক ফ্লোরের পেশির দুর্বলতার জন্যই যেহেতু এ রকম সমস্যা হতে পারে, তাই পেশির জোর বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। একই সঙ্গে চেষ্টা করা হয় মূত্রথলি বা ব্লাডারের সাপোর্ট দেওয়া। পেলভিক ফ্লোরের এক্সারসাইজ শেখাবেন এক জন অভিজ্ঞ ফিজিয়োথেরাপিস্ট। যে পেশিগুলোর সংকোচন শেখানো হয়, সেগুলি আসলে মূত্র ত্যাগের মাঝখানে প্রয়োজনে মূত্রত্যাগ বন্ধ করতে পারে। অল্প স্বল্প ইউরিন ইনকন্টিনেন্স থাকলে তা সারাতে এই পেলভিক ফ্লোরের পেশির এক্সারসাইজের জুড়ি নেই। যতক্ষণ ব্যায়াম, তত ক্ষণ ভাল থাকবেন। বন্ধ করলেই পেশির টানটান ভাব কম। উপসর্গ আবার ফিরে আসবে।
তবে ব্যায়ামে সমাধান না হলে সার্জারির দরকার হয়। একই উদ্দেশ্য সাধন সম্ভব টেনশন ফ্রি ভ্যাজাইনাল টেপ-এ। এতে ভ্যাজাইনা দিয়ে একটি পাতলা টেপ প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। তা প্রস্বাবের থলি বা ব্লাডারকে ওপরের দিকে টেনে তোলে। যার ফলে হাঁচলে কাশলে বা কোনও রকম পেটে চাপ পড়লেও প্রস্রাবের থলির মধ্যে যে প্রেসার আছে, তা প্রস্রাবের রাস্তায় চলে আসতে পারে না। কারণ তাকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। এখন অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে কোলোজেন জাতীয় ইনজেকশন দিয়ে ইউরেথ্রার কোষ কলাকে সাপোর্ট দেওয়া হয়।
ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স থাকলে কী করবেন?
সারা দিনে পানি খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে তা কমাতে হবে।
ক্রনিক কাশিতে ভুগলে সমস্যা বাড়ে। ফলে সেটা কমাতে হবে।
মোটা হয়ে যাওয়া ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্সের অন্যতম কারণ।
সবথেকে বড় কথা, এই সমস্যা তৈরি হলে তা চেপে না রেখে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। তাতেই সমস্যা মিটবে।
তাই যেসব মহিলাদের এই ধরনের সমস্যা থাকে তারা নিজেদের মধ্যে চেপে না রেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালেই আপনি ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স রোগের চিকিৎসা নিতে পারেন। এজন্যে লজ্জার খোলস থেকে বেরিয়ে আসুন এবং গোপন শারীরিক সমস্যার চিকিৎসা করুন।
নিম্নে উল্লেখিত সার্জারি বা চিকিৎসার জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করুনঃ
১) #পস্রাবের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা, #জ্বালা পোড়া, #রক্ত যাওয়া #মূত্রাশয় সংক্রমণে বা #পস্রাব লিকেজ সংক্রান্ত চিকিৎসা করা হয়।
২) যন্ত্রের সাহায্যে(PCNL, ESWL and icpl methods ) #মুত্রাশয়, #কিডনী, ও #পিত্ত থলিতে পাথর অপসারণ।
৩ #)মলদ্বারের স্থানচ্যুতি, #মলদ্বার স্পিঙ্কটার(sphincter) আঘাত অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে সার্জারি করা হয়।
৪) #লেপরস্কপিক ও এন্ডোস্কোপিক সার্জারি।
ডাঃ তাজকেরা সুলতানা চৌধুরী, সহকারী অধ্যাপক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। এপয়েনটমেনট নিতে ফোন করুন ০১৯৮৯৯৯৭১৮০(চেম্বার সহকর্মী) , ০১৯২১৫০৩৮৪৭ ও ০১৯৭৯৯৯৭১৮৯ এই নম্বরে।
চেম্বারঃ ইস্টার্ন দোলন, ১৫২/২ - এইচ (৭ম তলা), বীর উত্তম কাজী নুরুজ্জামান স্মরনী, পশ্চিম পান্থপথ, ঢাকা -১২০৫। https://goo.gl/maps/HP1zctovRkmT3XPc9