30/06/2025
Naturalis (Graph.)
Graphites রোগীদের মধ্যে "blandness" বা নীরসতা, মাথা ভারভাব এবং তীব্র উদাসীনতা থাকে—তিনটি স্তরে:
1. শারীরিকভাবে
2. আবেগগতভাবে
3. মানসিকভাবে (ইন্টেলেকচুয়াল স্তরে)
রোগী যেন "মোটাসোটা চামড়া" বা "ঘন, শক্ত আবরণে মোড়ানো" — বাইরের কোনো উত্তেজনা বা উদ্দীপনা (stimuli) সহজে তার মধ্যে পৌঁছায় না।
ফলে তারা হয় নীরস, প্রতিক্রিয়াহীন এবং ভারী অনুভূতির মানুষ।
#শারীরিক চেহারা (Physical Appearance):
সাধারণত রোগী স্থূলকায় (overweight) ও ঢিলে-ঢালা (flabby) গড়নের হয়।
চুল প্রায়ই কালো, ত্বক মলিন ও মাটির রঙের মতো (earthy complexion)।
চেহারায় অনেকটা Cushing's syndrome-এর মতো ভঙ্গিমা দেখা যায়।
তবে Calcarea carb.-এর মতো অতটা ফোলা বা নরম শরীর নয়।
অনেক সময় Graphites রোগীরা মজদুর, গ্রামবাসী বা ট্রাকচালক হয়ে থাকে।
এদের শরীর Calcarea-র তুলনায় একটু বেশি জীবনশক্তিতে ভরপুর দেখায়।
#মানসিক বৈশিষ্ট্য (Mental Characteristics):
#তীব্র সংবেদনশীলতার অভাব:
শারীরিক, আবেগিক ও মানসিক স্তরে সবকিছুতেই প্রতিক্রিয়া কম।
চিন্তাভাবনার জড়তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বলতা:
কোনো ধরনের বিশ্লেষণমূলক বা বিজ্ঞানভিত্তিক কাজ করতে পারে না।
মন ধীরগতি, অলস ও তথ্য গ্রহণে অসচ্ছল।
বাইরের ঘটনা বা কথা ঠিকভাবে তার মনে দাগ কাটে না।
রোগীর মধ্যে এই অবস্থা চিকিৎসা সাক্ষাৎকারের সময় পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়:
নিজে থেকে খুব কম তথ্য দেয়।
প্রশ্নের উত্তর সংক্ষেপে ও অগভীরভাবে দেয়।
মনে হয়, তার সাথে গভীরভাবে যোগাযোগ স্থাপন খুব কঠিন।
এমন যেন মনের ওপর মোটা আবরণ পড়ে আছে, কোনো কিছু ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না।
#স্মৃতিশক্তি (Memory):
সাধারণত স্মৃতিশক্তি দুর্বল, বিশেষ করে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনা ভুলে যায়।
দৈনন্দিন ঘটনা রোগীর মনে সম্পূর্ণভাবে ছাপ ফেলে না, তাই মনে থাকে না।
তবে পুরোনো দিনের ঘটনা – অর্থাৎ Graphites-এর মানসিক উপসর্গ শুরু হওয়ার আগে যা ঘটেছে, তা সে ভালোভাবে মনে রাখতে পারে।
#মানসিক শূন্যতা (Mental Emptiness):
শেষ পর্যন্ত রোগীর মনে একধরনের শূন্যতা সৃষ্টি হয়।
তবে এটি Phosphorus-এর রোগীদের মতো সাধারণ “mind goes blank” নয়।
Graphites রোগীদের মনে এক ধরনের চিন্তার অনুপস্থিতি দেখা যায়।
এটি এমন নয় যে তারা শুধুই ক্লান্ত, বরং তারা মাথার ভেতর এক ধরনের শূন্যতা অনুভব করে — যেন মাথার ভেতরে কিছুই ঘটছে না, সব কিছু থেমে আছে।
তারা বলে: "মাথাটা যেন বোঝাই হয়ে আছে, কিন্তু কোনো ভাবনা আসছে না।"
এই শূন্যতা ধীরে ধীরে চিন্তা-শক্তিকে আরও ভোঁতা (blunt) করে তোলে।
Graphites রোগীদের মধ্যে অনেক সময় এই দুই বিপরীত অবস্থাই দেখা যায় — কখনো অতিরিক্ত ভার, আবার কখনো একেবারে ফাঁকা।
#অস্থিরতা ও সিদ্ধান্তহীনতা (Indecision):
মন মেধাহীন ও জড়তার কারণে তারা সহজ সিদ্ধান্তও নিতে পারে না।
যেমন, দোকানে গিয়ে তারা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে — ভাবছে দামটা ঠিক আছে কি না, কিনবে কি না। শেষ পর্যন্ত তারা কিছুই না কিনে ফিরে আসে।
এই ধরনের মানসিক সিদ্ধান্তহীনতা তাদের দৈনন্দিন কাজেও ব্যাপকভাবে ব্যাঘাত ঘটায়।
#অবশেষে উদ্বেগ ও ভয়:
এক সময় Graphites রোগীরা বুঝতে পারে যে তাদের মন ঠিকভাবে কাজ করছে না।
এই আত্মচেতনা থেকেই বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তা ও ভয় তৈরি হয়।
তারা অনুভব করে, "আমার চারপাশে যা ঘটছে আমি ঠিক বুঝতে পারছি না" — তাই একটা অজ্ঞাত বিপদ বা দুর্ভাগ্যের ভয় তাদের ঘিরে ফেলে।
এটি Calcarea carb.-এর মতো "পাগল হয়ে যাওয়ার ভয়" নয়, বরং বাইরের দুনিয়া থেকে কোনো খারাপ কিছু ঘটবে — এই আশঙ্কা।
#সকালে অবস্থা খারাপ, সন্ধ্যায় কিছুটা স্বস্তি:
সব মানসিক উপসর্গ — বুদ্ধির স্থবিরতা, উদ্বেগ, ভয়, সিদ্ধান্তহীনতা — এগুলো সকালে বিশেষ করে ঘুম থেকে ওঠার পর সবচেয়ে বেশি হয়।
তারা বুদ্ধিবৃত্তিক কোনো কাজ করতে চায় না, বিশেষ করে সকালে।
তবে সন্ধ্যার দিকে তারা কিছুটা স্বস্তি পায়, তখন মানসিক চাপ কমে আসে, কখনো কখনো আবেগপ্রবণ হয়।
কিন্তু পরদিন সকালে আবার একই প্যাথলজিক্যাল অবস্থায় ফিরে যায়।
#সঙ্গীতের প্রতিক্রিয়া:
যখন তারা মন খারাপ অবস্থায় থাকে, তখন সঙ্গীত তাদের আরও দুঃখিত করে তোলে।
তারা কান্নায় ভেঙে পড়ে — কিন্তু এটি আবেগঘন বা রোমান্টিক কান্না নয়, বরং আত্মদয়ার কারণে কান্না।
এটি Natrum muriaticum-এর মতো নয় — Nat-m রোগীরা সঙ্গীত উপভোগ করে, তাদের দুঃখকে রোমান্টিক করে তোলে।
কিন্তু Graphites-এ, সঙ্গীত আসলে অবস্থার অবনতি ঘটায়।
#শারীরিক লক্ষণ – চর্মরোগ:
#ত্বক (Skin):
শারীরিক দৃষ্টিকোণ থেকে ত্বক (চর্ম) হলো Graphites-এর প্রধান লক্ষণ ক্ষেত্র।
যেমনভাবে দেহের গভীরে বিভিন্ন স্তরে শক্তভাব ও স্ক্লেরোসিস (sclerosis) দেখা যায়, তেমনি ত্বকেও মোটা ও শক্ত স্তর তৈরি হয়।
কাটা-ছেঁড়া বা অস্ত্রোপচারের পর ঘন ঘন কেলয়েড (keloid) তৈরি হওয়ার প্রবণতা — এটি Graphites-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন।
লেখক নিজেও এরকম দুটি রোগীর কথা স্মরণ করেছেন, যাদের কেলয়েড সমস্যায় Graphites চমৎকারভাবে উপকার দিয়েছে।
#রস নিঃসরণ বা ডিসচার্জ (Discharges):
Graphites-এর সব ধরণের নিঃসরণ (discharges) হয় ঘন, আঠালো এবং হলুদাভ।
যেমনভাবে মন (mind) জড় এবং কঠিন — প্রবেশ করা কঠিন — তেমনই ত্বক ও নিঃসরণগুলিও ঘন ও কঠিন প্রকৃতির।
#চর্মরোগ / স্কিনের উপসর্গ:
Graphites সব ধরণের চর্মরোগে বিখ্যাত, বিশেষত:
একজিমা (eczema) — পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে
হারপেটিক ব্রণ বা ফুসকুড়ি (herpetic eruptions)
স্কেলিং/চামড়া উঠা জাতীয় ফুসকুড়ি
সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকা:
হাতের ভাঁজ (antecubital fossa)
হাঁটুর পেছনের ভাঁজ (popliteal fossa)
মাথার চুলের সীমান্ত অঞ্চল
কানের ভিতর/পাশে
আক্রান্ত জায়গায় চামড়া ফেটে যায়, বিশেষ করে শিশুদের কানে।
তখন ঘন, হলুদ, আঠালো এক ধরনের সিরাম সদৃশ দুর্গন্ধযুক্ত তরল বের হয় — এটি Graphites-এর জন্য খুবই নির্দিষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
#নখের সমস্যা (Nails):
Graphites-এর আরেকটি মুখ্য লক্ষণ হল:
নখ ভঙ্গুর (brittle) হয়ে যাওয়া
নখের আকৃতি বিকৃত (deformed) হয়ে যাওয়া
#স্কিন ডিজঅর্ডার দমন করলে পরিণাম:
যদি ত্বকের রোগ Cortisone বা অন্য ওষুধ দিয়ে দমন করা হয়, তাহলে রোগী:
অ্যাজমা (asthma)
মাথাব্যথা
অথবা ডিউডেনাল আলসার (duodenal ulcer) – এসব সমস্যা নিয়ে ভুগতে পারে।
এদের মধ্যে পেট (stomach) একটি বিশেষ টার্গেট অঙ্গ।
#পেটের লক্ষণ (Stomach Symptoms):
পেট মোচড়ানো ও জ্বালাভাব — যা খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই কমে যায়।
এটা আলসার রোগীদের মধ্যে সাধারণ লক্ষণ, তাই একে নির্দিষ্ট গাইডিং লক্ষণ বলা যাবে না, তবে Graphites রোগীদের মধ্যে এটি অন্যান্য উপসর্গের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত।
রোগী বলেন:
“পেটে মোচড় দেয়, আমি শুধু শুয়ে থাকতে চাই, চুপ থাকতে চাই, আর কিছু খেতে চাই।”
#অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অসাড়তা (Numbness):
পায়ের আঙুলেও অসাড়তা দেখা দিতে পারে, তবে সবচেয়ে বেশি হয় হাতের আগার (forearms) অংশে।
এই অসাড়তার সঙ্গে প্রায়ই ক্র্যাম্প বা মোচড় যুক্ত থাকে।
কিন্তু যদি আঙুলের ডগায় অসাড়তা থাকে, তাহলে ভেবে দেখা উচিত Phosphorus।
#ঠান্ডার প্রতি সংবেদনশীলতা:
Graphites সাধারণত বাম পাশে লক্ষণ সৃষ্টি করে এবং এটি ঠান্ডার প্রতি সংবেদনশীল।
তবে এই সংবেদনশীলতা বাইরের ঠান্ডা বা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার মতো নয়, বরং এটি আভ্যন্তরীণ ঠান্ডা ভাব — শরীরের ভেতর থেকে ঠান্ডা অনুভব করে।
#খাদ্যাভ্যাস ও রুচি (Food Symptoms):
Graphites-এর রোগীদের থাকে:
লবণ, মিষ্টি ও মাছের প্রতি বিতৃষ্ণা (aversion)
এটি একমাত্র ওষুধ যেটি এই তিনটির প্রতি একসাথে অনিচ্ছা দেখায়।
তুলনায় Argentum nitricum (Arg. nit.) একেবারে উল্টো — সে লবণ ও মিষ্টির প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা (craving) দেখায়, এবং সে একটি উষ্ণরক্ত, উত্তেজনাপূর্ণ ও উচ্চ-শক্তির ওষুধ।
Graphites-এ আবার দেখা যায় মুরগির মাংস খাওয়ার প্রবল ইচ্ছা।
#প্রেসক্রিপশনের সতর্কতা:
এই ধরনের কীগুলো (keynotes) যেমন—খাদ্যরুচি, ঠান্ডা, নখ, ত্বক ইত্যাদি—একটি উপসর্গকে একা ধরে প্রেসক্রিপশন দেওয়া যাবে না।
বরং পুরো রোগীর সার্বিক চিত্র, যেমন:
বাইরের জগতের সঙ্গে সম্পর্কহীনতা (lack of contact),
মানসিক স্থবিরতা (blandness),
চেহারার বৈশিষ্ট্য — এগুলোর সাথে মিলিয়ে দেখেই প্রেসক্রিপশন দিতে হবে।
-এর সাথে বিভ্রান্তির সম্ভাবনা:
Graphites ও Ferrum metallicum-এর মধ্যে বিভ্রান্তি হতে পারে, কারণ:
দুজনেই ক্লান্ত, স্থূলকায় এবং ঠান্ডাপ্রবণ
দুজনেরই রক্ত-সঞ্চালনের সমস্যা বা flushing থাকে।
পার্থক্য:
Graphites রোগীদের ভয়, হতাশা ও সিদ্ধান্তহীনতা প্রধানত সকালে হয়।
এছাড়া তাদের মধ্যে থাকে একটি অজ্ঞাত বিপদের ভয়।
-এর সঙ্গে তুলনা:
অনেক সময় Pulsatilla ও Graphites রোগীদের মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতা দেখে মনে হতে পারে তারা একই রকম।
পার্থক্য:
Pulsatilla হলো উষ্ণ রক্তবিশিষ্ট এবং সন্ধ্যার পর অবস্থার অবনতি হয়।
Graphites হলো ঠান্ডা প্রকৃতির এবং সকালে উপসর্গ খারাপ হয়।
এই বিভ্রান্তিমূলক কেসে রোগীর প্রতি:
তাজা বাতাসে প্রতিক্রিয়া কেমন,
হাঁটার গতি কেমন,
এবং খাদ্যাভ্যাস কেমন — এসব বিবেচনায় আনতে হয়।
carbonica-র সঙ্গে তুলনা:
Calcarea carb. ও Graphites দুজনেই:
ঠান্ডাপ্রবণ (chilly),
স্থূল ও মোটা গড়নের (obese),
এবং মানসিক ক্লান্তি বা কাজ করতে অনীহা থাকে।
তবে:
Graphites একেবারে "anti-intellectual", অর্থাৎ বুদ্ধিভিত্তিক কাজ করতে একদম চায় না।
Calcarea কিছুটা কষ্টে পড়ে, কিন্তু চেষ্টা করে কাজ শেষ করতে।
Graphites রোগীরা শারীরিকভাবে বেশি মজবুত ও খসখসে/অশোভন প্রকৃতির হতে পারে, যেখানে Calcarea রোগীরা তুলনামূলকভাবে ভদ্র ও নরম প্রকৃতির।
Essence of Materia Medica
George Vithoulkas
অবলম্বনে।