09/07/2025
"আয়রনের অভাবজনিত অবস্থা( রক্তস্বল্পতা) -এ থেকে পরিত্রাণে করণীয়,আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের উৎস "
কেমন আছেন আপুরা?সবাই সবসময় অনেক ভালো আর সুস্থ থাকুন এটাই চাই।
আজ আপনাদের সাথে কথা হবে আয়রন সমৃদ্ধ কিছু খাবার এবং দেহে এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে।আয়রন এর অভাব হলে এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।এটা এখন খুবই পরিচিত আর কমন সমস্যা। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের থেকে বেশি শুনা যায়,প্রায় অনেকেই এনিমিয়ায় ভুগছেন।
আমাদের শরীরের জন্য যেসব খাবার উপকারী তাদের মাঝে আয়রন অন্যতম। হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য আয়রন অত্যাবশ্যকীয়।হিমোগ্লোবিন এক ধরণের প্রোটিন যা লাল রক্ত কণিকার মধ্যে থাকে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। হিমোগ্লোবিন এর মতোই আর একটি উপাদান হচ্ছে মায়োগ্লোবিন যা মাংসপেশিতে থাকে।এই মায়োগ্লোবিন এর উৎপাদনের জন্য ও আয়রন প্রয়োজনীয়। প্রাপ্ত বয়স্ক একজন
✅পুরুষ মানুষের জন্য দৈনিক ৮ মিলিগ্রাম আয়রন প্রয়োজন।আর মহিলাদের প্রয়োজন ১৮ মিলিগ্রাম।গর্ভবতী মহিলার দৈনিক ২৭ মিলিগ্রাম আয়রন প্রয়োজন।
🔹শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে আয়রন ডেফিসিয়েন্সি এনিমিয়া হয়।এই প্রকারের এনিমিয়া হলে দুর্বল ও ক্লান্ত লাগার পাশাপাশি মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। সাধারণত শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের আয়রনের ঘাটতি জনিত অ্যানেমিয়া হয়ে থাকে। এর ফলে মহিলাদের প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি হতে পারে। প্রাণীজ আয়রন ও উদ্ভিজ আয়রন এই দুই ধরণের আয়রন পাওয়া যায়। আয়রনের ঘাটতি পূরণের জন্য এই দুই ধরণের আয়রন ই গ্রহণ করা প্রয়োজন।
⭕মেয়েদের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ প্রতি ১০০ এম.এল এ ১০ গ্রামের নিচে এবং ছেলেদের ১২ গ্রামের নিচে হলে এনিমিয়া হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।এনিমিয়াতে রক্তকোষরর আকার ছোট হয় এবং ফ্যাকাসে হয়।এনিমিয়া রোগিদের তাই ফ্যাকাসে দেখায়।
⏩লক্ষণ:
এনিমিয়া হলে ক্লান্তিবোধ,মাথা ঘুরা,বুক ধড়ফড় প্রভৃতি লক্ষণের সাথে কখনও কখন ও হাতে পায়ে পানি জমে।আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
✅প্রাণীজ খাদ্য উৎস যেমন - মাছ,মাংস,ডিমের কুসুমে ভালো পরিমাণে আয়রন থাকে।কলিজা, হৃৎপিন্ড আয়রন এর ভালো উৎস।শস্য,ডাল,বাদাম,বীচি,সবুজ শাক,শুকনা ফল,ঝোলা গুড়, ডুমুর,খেজুর ইত্যাদিতে আয়রন থাকে।
▶️যে সকল খাবার আমাদের দেহের আয়রন এর চাহিদা পুরণ করবে সেগুলো হলো:
✅কলিজা:
আয়রনের সবচেয়ে ভালো উৎস হচ্ছে কলিজা। এছাড়াও এতে ভিটামিন, খনিজ লবণ ও প্রোটিন থাকে।গরুর কলিজাতে আয়রনের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এক স্লাইস গরুর মাংসে ৫ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।যারা কলিজা খেতে পছন্দ করেন না তারা ডিম ও লাল মাংস খেতে পারেন।আধা কাপ ডিমের কুসুমে ৩ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে এবং ৩ আউন্স লাল মাংসে ২-৩ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।
✅ছোলা:
এক কাপ ছোলাতে ৫ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে এবং এতে প্রোটিন ও থাকে। নিরামিষ ভোজীদের জন্য ছোলা আদর্শ খাদ্য। ছোলা খুবই উপাদেয় খাবার। এটা সালাদ ও পাস্তার সাথেও ব্যবহার করা যায়।
✅কুমড়ার বীচি:
এক কাপ কুমড়ার বীচিতে ২ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। সুস্বাদু কুমড়ার বীচি রান্না করে,সালাদের সাথে,সিদ্ধ করে বা ভেঁজে বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। তাই কিছু কুমড়ার বীজ বাসায় রাখুন।
✅ডাল:
আয়রনের একটি ভালো উৎস হল ডাল। এক কাপ ডালে ৬ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে এবং প্রচুর ফাইবার থাকে।এতে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কম থাকে এবং রক্তের সুগার লেভেল ঠিক রাখে।
✅পালং শাক:
এক কাপ রান্না করা পালংশাকে ৬ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, এছাড়াও এতে প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ ও ই থাকে। রান্না করা পালং শাক এর পুষ্টি উপাদান খুব সহজেই শরীর শোষণ করে নিতে পারে। বাচ্চাদের জন্য এটা খুবই ভালো।
✅সিদ্ধ আলু:
সিদ্ধ আলুতে ভিটামিন সি, বি ভিটামিন, প্রচুর পটাশিয়াম থাকার পাশাপাশি উচ্চমাত্রার আয়রন থাকে। খোসা সহ একটি সিদ্ধ আলুতে ৩ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে।
👉এছাড়া ডার্ক চকলেট,তফু,সব ধরমের ডিম,স্যালমন মাছ,ফর্টিফাইড ব্রেকফাস্ট সিরিয়াল,কলা, কাজু বা নরমাল বাদাম, আলু, টমেটো,ওটস, মাশরুম,সয়াবিন,কুমড়ার বিচী, prune জুস,নারিকেল দুধ এসব খাবার ও আয়রনের ভালো উৎস।
👉শরীরে আয়রন যাতে ঠিকমতো শোষিত হয় তার জন্য আয়রন জাতীয় খাবারের সাথে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন- কমলা, স্ট্রবেরি, ব্রোকলি ইত্যাদি খেতে হবে।আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেলে যদি কারো সমস্যা হয় তাহলে আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।সিভিয়ার এনিমিয়ার খাবারের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ ডক্টর এর ট্রিটমেন্ট একান্ত আবশ্যক।
আজ এ পর্যন্তই,সবার সুস্থতা কামনা করছি। ❤