08/10/2025
পিরিফর্মিস সিনড্রোম হলো নিতম্বের একটি পেশীজনিত সমস্যা, যেখানে নিতম্বের গভীরে অবস্থিত পিরিফর্মিস পেশীটি (Piriformis Muscle) স্ফীত বা শক্ত হয়ে গেলে তার পাশ দিয়ে যাওয়া সায়াটিক নার্ভের (Sciatic Nerve) ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে নিতম্ব থেকে পা পর্যন্ত তীব্র ব্যথা, অসাড়তা বা ঝিনঝিন অনুভূতি হতে পারে। এই ব্যথা অনেক সময় কোমরের ডিস্ক সমস্যার (Sciatica) মতো মনে হলেও, এর মূল কারণ পিরিফর্মিস পেশী।
পিরিফর্মিস সিনড্রোম কেন হয়? (Causes)
পিরিফর্মিস সিনড্রোম হওয়ার সঠিক কারণ সবসময় জানা না গেলেও, কিছু বিষয় এই সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে:
পেশীর আঘাত বা অতিরিক্ত ব্যবহার: নিতম্বে সরাসরি আঘাত লাগলে বা দৌড়ানো, সাইকেল চালানো বা দীর্ঘক্ষণ হাঁটার মতো কাজ করতে গিয়ে পেশী অতিরিক্ত ব্যবহার হলে।
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা: দীর্ঘ সময় ধরে ভুল ভঙ্গিতে বসে থাকলে পিরিফর্মিস পেশীতে চাপ পড়ে এবং খিঁচুনি তৈরি হতে পারে।
পেশীর খিঁচুনি বা শক্ত হয়ে যাওয়া: পেশীর আকস্মিক সংকোচন বা শক্ত হয়ে যাওয়া সায়াটিক নার্ভের উপর চাপ সৃষ্টি করে।
ভুল ভঙ্গিতে ভার তোলা: ভারি জিনিস ভুল উপায়ে তোলার সময় পেশীর ক্ষতি হতে পারে।
শারীরিক কাঠামোর অস্বাভাবিকতা: কিছু মানুষের ক্ষেত্রে জন্মগতভাবে সায়াটিক নার্ভ পিরিফর্মিস পেশীর মধ্য দিয়ে যেতে পারে, যা সহজেই চাপ সৃষ্টি করে।
প্রধান লক্ষণসমূহ (Symptoms)
পিরিফর্মিস সিনড্রোমের প্রধান লক্ষণগুলো সাধারণত নিতম্ব থেকে শুরু হয়ে নিচের দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং এটি সাধারণত শরীরের এক পাশে হয়:
লক্ষণ (Symptoms) বিবরণ (Description)
নিতম্বে গভীর ব্যথা নিতম্বের গভীরে, বিশেষ করে বসার সময় বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় ব্যথা তীব্র হওয়া।
ব্যথা ছড়িয়ে পড়া ব্যথা কোমর থেকে শুরু হয়ে পা পর্যন্ত বাছুর (Calf) বা পায়ের পাতা পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে (সায়াটিকার মতো)।
অসাড়তা ও ঝিনঝিন আক্রান্ত পা এবং নিতম্বের অংশে ঝিঁঝিঁ বা অসাড় (Tingling and Numbness) অনুভূতি হওয়া।
দীর্ঘক্ষণ বসতে অসুবিধা চেয়ারে বা গাড়িতে দীর্ঘ সময় বসে থাকলে ব্যথা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায়।
হাঁটার সময় কষ্ট সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠার সময় বা দৌড়ানোর সময় কষ্ট হওয়া।
চিকিৎসা এবং ফিজিওথেরাপি (Treatment and Physiotherapy)
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার ছাড়াই পিরিফর্মিস সিনড্রোমের চিকিৎসা করা সম্ভব। ফিজিওথেরাপি এক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
১. প্রাথমিক চিকিৎসা ও সতর্কতা (Self-Care & Precautions)
বিশ্রাম: ব্যথা বাড়লে যে কাজগুলো করলে কষ্ট হয়, তা কিছুদিনের জন্য এড়িয়ে চলতে হবে।
ঠান্ডা বা গরম সেঁক: প্রাথমিক অবস্থায় (প্রথম ৪৮ ঘণ্টা) আক্রান্ত স্থানে ঠান্ডা সেঁক দিলে ফোলা ও প্রদাহ কমে। এরপর গরম সেঁক দিলে পেশী শিথিল হয়।
বসার অভ্যাস পরিবর্তন: দীর্ঘ সময় একভাবে বসে না থেকে প্রতি ৩০ মিনিট পর পর উঠে দাঁড়ান বা হাঁটুন। সঠিক ভঙ্গি বা পোশ্চার বজায় রাখুন।
২. ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা (Physiotherapy Treatment)
একজন ফিজিওথেরাপিস্ট নিম্নলিখিত পদ্ধতির মাধ্যমে চিকিৎসা করেন:
ফিজিওথেরাপি পদ্ধতি (Physiotherapy Modalities) কার্যকারিতা (Effectiveness)
ম্যানুয়াল থেরাপি পেশীকে নরম করা এবং সরাসরি প্রসারিত (Stretching) করার জন্য থেরাপিস্ট হাত দিয়ে নির্দিষ্ট কৌশল প্রয়োগ করেন।
স্ট্রেচিং ব্যায়াম পিরিফর্মিস ও এর আশেপাশের পেশীগুলোকে শিথিল ও নমনীয় করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু স্ট্রেচিং শেখানো হয়। যেমন: সুপাইন পিরিফর্মিস স্ট্রেচ।
শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়াম নিতম্ব এবং পেটের (Core) পেশীগুলোর শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, যা শরীরের সঠিক স্থিতিশীলতা (Stability) বজায় রাখে।
ইলেক্ট্রোথেরাপি ব্যথা কমাতে এবং পেশীর খিঁচুনি বন্ধ করতে TENS বা আল্ট্রাসাউন্ডের মতো থেরাপি ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩. অন্যান্য চিকিৎসা (Other Medical Treatments)
যদি কনজারভেটিভ চিকিৎসায় (যেমন ফিজিওথেরাপি) ফল না পাওয়া যায়, তবে ডাক্তার নিম্নলিখিত চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারেন:
ওষুধ: নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস (NSAIDs) বা পেশী শিথিল করার ওষুধ (Muscle Relaxants)।
ইনজেকশন: পিরিফর্মিস পেশীর মধ্যে স্টেরয়েড (Steroid) অথবা বোটুলিনাম টক্সিন (Botox) ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে, যা পেশীর খিঁচুনি কমাতে সাহায্য করে।
অস্ত্রোপচার (Surgery): খুব কম ক্ষেত্রেই, যখন অন্য কোনো চিকিৎসায় ফল পাওয়া যায় না, তখন সায়াটিক নার্ভের উপর চাপ কমাতে অস্ত্রোপচার করা লাগতে পারে।
পিরিফর্মিস সিনড্রোম থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পেতে নিয়মিত ব্যায়াম এবং সঠিক জীবনযাত্রা মেনে চলা জরুরি। ব্যথা অনুভব করলে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
Regan's Physiotherapy, Disability & Rehabilitation Center-RPDRC
01301-028164 01704753598