wi-fi hotspot

01/01/2019
10/10/2017

" ব্লু হোয়েল" বা Blue whale এর অর্থ নীল তিমি । নীল তিমিরা মৃত্যুর আগে সাগরের তীরে উঠে আসে - তারা আত্মহত্যা করে বলে অনেকের ধারণা ! একারণেই গেমের নাম রাখা হয়েছে ' Blue whale ' বা নীল তিমি । মনে রাখবেন - গেমটি বাধ্য করে তার ইনস্টলকারীকে সবগুলো স্তর খেলার জন্য ।
' ব্লু হোয়েল ' গেমটি ৫০ টি লেভেলে বিভক্ত । F57 নামক রাশিয়ান হ্যাকার টিম গেমটি তৈরি করে । ২০১৩ সালে তৈরি হয়েছিলো গেমটি , কিন্তু ২০১৫ সালে VK. com নামক সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল জনপ্রিয়তা পায় এবং প্রচুর ডাউনলোড হয় গেমটি । ফিলিপ বুদেকিন নামক রুশ হ্যাকার যে কিনা সাইকোলজির ছাত্র ছিলো এবং ভার্সিটি থেকে বহিষ্কার হয়েছিলো - তার মাথার বুদ্ধি থেকেই জন্ম নেয় এই গেমটি । রাশিয়ান আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতারের পর সে জানায় হতাশাগ্রস্হদের পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার জন্যই সে গেমটি বানিয়েছে । হতাশা গ্রস্হদের পৃথিবীত বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই ।
।।
রাশিয়ায় এ গেম খেলে মৃতের সংখ্যা ১৫১ জন , এবং রাশিয়ার বাইরে মারা গেছে ৫০ জন । জুলিয়া ওভা ও ভের্নিকা ওভা নামক দুই বোন প্রথম এই গেইমের শিকার । গেমটির ৫০ তম লেভেলে গিয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে ওরা সুইসাইড করেছিলো । জুলিয়া ওভা মৃত্যুর ঠিক আগে সোশাল নেটওয়ার্কে নীল তিমির ছবি আপলোড দিয়ে লিখেছিলো - ' The end ! '
।।
গেমটি মূলত একটি ডার্ক ওয়েভের ( dark wave ) গেম । ডার্ক ওয়েভ হলো ইন্টারনেটের অন্ধকার জগৎ । মনে রাখবেন - গেমটি আপনি একবার ডাউনলোড করলে আর কখনোই আনইনস্টল করতে পারবেন না । গেমটি আপনার ফোনের সিস্টেমে ঢুকে আপনার আপনার আই পি এড্রেস , মেইলের পাসওয়ার্ড , ফেসবুক পাসওয়ার্ড , কনট্যাক্ট লিস্ট , গ্যালারী ফটো এমনকি আপনার ব্যাংক ইনফর্মেশান ! আপনার লোকেশান ও তারা জেনে নিচ্ছে !
।।
' ব্লু হোয়েল ' গেম ওপেন করা মাত্র আপনাকে একজন এডমিন পরিচালনা শুরু করবে । আপনাকে জিজ্ঞেস করবে - ' গেমটি খেলা শুরু করলে আপনি কোনোভাবেই এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন না , আপনি সর্বশেষে মৃত্যু বরণও করতে পারেন , আপনি কি চ্যালেন্জ গ্রহন করতে আগ্রহী ? '
।।
আপনি ইয়েস বা নো অপশনের মধ্যে ' ইয়েস ' অপশন ক্লিক করা মাত্রই পা দিয়ে দেবেন মৃত্যু ফাঁদে ।
।।
গেমটির প্রথম দশটা লেভেল খুবই আকর্ষনীয় । ইউজার এডমিন কিছু মজার মজার নির্দেশনা দেন - যেমন রাত তিনটায় ঘুম থেকে উঠে হরর ছবি দেখা , চিল্লাচিল্লি করা , উঁচু ছাদের কিনারায় হাঁটাহাঁটি করা , পছন্দের খাবার খাওয়া ইত্যাদি নির্দেশনা দিতে দিতে এডমিন হাতিয়ে নেবেন আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন । প্রথম দশ টা লেভেল পার করার পর আপনাকে তৈরি করা হবে পরবর্তী দশটি লেভেলের জন্য । পনেরো লেভেল পর্যন্ত চলবে আপনার ইনফরমেশান হাতানোর কাজ ! পনেরো লেভেলের পর আপনাকে কঠিন মিশন দেয়া শুরু হবে ! যেমন অ্যাডমিন আপনাকে বলতে পারে আপনার হাতে ব্লেড দিয়ে নীল তিমির ছবি আঁকুন !
।।
প্রথম বিশটা চ্যালেন্জ অতিক্রম করার পর অ্যাডমিন তার কৌশল পরিবর্তন করতে শুরু করে। ।।
আপনি টেরই পাবেন না প্রথম বিশ ধাপে সংগ্রহ করে ফেলা আপনার তথ্যের উপর ভিত্তি করে আপনাকে মোহাক্রান্ত বা হিপনোসিস পদ্ধতি প্রয়োগ শুরু করা হবে ।
আপনি তখন ভাববেন এই গেম ছাড়া আপনার বেঁচে থাকা অসম্ভব । আপনাকে শীতের দিনে খালি গায়ে ঘুরতে বলা হবে , বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করা , বন্ধুর মোবাইল চুরি করা , আপনার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটার সাথে দুর্ব্যবহারের মিশন দেয়া হবে আপনাকে ! আবার এসবের প্রমাণের ছবি বা ফটো এডমিনকে পাঠাতে হবে আপনার ! এভাবেই কৌশলে বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের থেকে কৌশলে আলাদা করে ফেলা হবে আপনাকে এবং আপনি পৌঁছে যাবেন পঁচিশ লেভেলে !
পঁচিশ লেভেলের পর নির্দেশনা আসবে মাদক বা ড্রাগ নেবার ! এভাবেই সম্মোহিত করে করে আপনাকে তিরিশ লেভেল পর্

তিরিশ তম লেভেল আপনি অতিক্রম করার পর গেম এডমিন হঠাৎ আপনার সাথে একটু চিট শুরু করবে !একত্রিশ তম লেভেল আনলক করবে না , এদিকে আপনি হয়ে উঠবেন ক্রেজী !
।।
তারপর কিছুদিন আপনাকে সারপ্রাইজ দিয়ে হঠাৎ এডমিন - বলবে একত্রিশ তম লেভেল আনলকড ! আপনার নগ্ন ছবি চাওয়া হবে এই স্তরে ! আপনি হিপনোসিস ও মাদকের কারণে নিজের নগ্ন ছবি পাঠাতেও চিন্তা করবেন না , ড্রাগ নেবার র মাত্রা বাড়াতে থাকবেন আপনি ! এরপর নির্দেশনা আসবে আপনার ভালোবাসার মানুষের সাথে সেক্স করে গোপনে ছবি তুলে আপলোড করতে বা নিজের শরীরে একাধারে শ খানেক সুঁই ফোটাতে এবং ফটো আপলোড করে পাঠাতে ।
এভাবেই চলে যাবেন আপনি চল্লিশ তম লেভেলে !
।।
এবার আপনি ভীত হয়ে গেমার টিমকে অনুরোধ করবেন আপনাকে মুক্তি দেবার জন্য ! আপনি কাঁদবেন , হাতজোড় করবেন , চাইবেন গেমটি আনইনস্টল করার জন্য !
তখন শুরু হবে ব্ল্যাকমেইলিং ! গেমার টিম বা এডমিন তখন আপনারই পাঠানো সকল তথ্য ফাঁস করে দেবার হুমকি দেবে , আপনি বাধ্য হয়ে প্রবেশ করবেন একচল্লিশ তম স্তরে !
।।
একচল্লিশ থেকে ঊনপন্চাশ তম লেভেলে আপনি প্রচন্ড হতাশ আর মাদকাসক্ত হবেন ....... পন্চাশ তম স্তরে আপনাকে মুক্তির শর্ত দেয়া হবে ! বলা হবে আপনাকে নিজের শরীরে অ্যানাসথেসিয়ার ড্রাগ ক্যাটামিন পুশ করে তাদের কে ছবি পাঠাতে এবং নিশ্চিত দশ তলার চেয়েও উঁচু কোনো ছাদের একেবারে কিনারায় দাঁড়িয়ে যদি সেলফি আপলোড দিতে পারেন তবে আপনি মুক্ত !
আপনি সেটা পারবেন না আর , কারণ শরীরে পুশ করা ক্যাটামিন আপনার মস্তিষ্কে চলে যাবে ততোক্ষণে ! আপনি মোবাইলের স্ক্রীণে তখন নির্দেশ আসবে - ' নিচের দিকে তাকাও ! লাফ দাও , মুক্তি পাও ! '
।।
আপনি মুক্তি পেতে গিয়ে আত্মহত্যা করবেন !
এই ব্লু হোয়েল গেমটিতে ব্যবহার করা হয়েছে চমৎকার গ্রাফিক্স , ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিক ভীষণ করুন ! All i want ও Ranway গানের মিউজিক ব্যবহার করা হয়েছে ।
দুটো মিউজিক শুনলেই শরীরের রক্ত হীম হয়ে যাবে !
।।
সবশেষে বলবো -
এসব আজেবাজে গেম যাতে কেও আপলোড করবেন না ,
নিজেকে ভালোবাসুন , পরিবারকে সময় দিন , জীবনকে ভালোবাসুন।

(সংগৃহীত )

04/09/2017

ইতিহাস
ঐতিহাসিক যে রহস্যগুলোর পাওয়া গেছে সমাধান


প্রকৃতি রহস্য পছন্দ করে। প্রকৃতির এই রহস্যের খেলা নিরন্তর। যুগে যুগে ইতিহাসও আমাদের উৎসুক মনকে আন্দোলিত করে গেছে জানা-অজানা অসংখ্য রহস্যের অবতারণার মাধ্যমে, যার মধ্যে বেশ কিছু রহস্য সমাধান মিললেও, সমাধান না হওয়া রহস্যের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। আধুনিক বিজ্ঞানের বদৌলতে এবং বিজ্ঞানীদের অব্যাহত প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যে বেশ কিছু ঐতিহাসিক রহস্যের সমাধান জানা গেছে এবং একই সাথে অসংখ্য রহস্যের জট খোলা শুরু হয়েছে। বিজ্ঞানী এবং ঐতিহাসিকগণ মহাবিশ্ব ও আমাদের নিজেদের অতীত সম্পর্কে অপ্রত্যাশিত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন এবং সাম্প্রতিককালে তারা উল্লেখযোগ্য কিছু সাফল্য অর্জন করেছেন। এমনই কিছু সমাধান হওয়া রহস্য নিয়ে চলুন জানা যাক।

এন্টার্কটিকার রক্তপ্রপাত রহস্য

সময়টা ১৯১১ সাল, পূর্ব এন্টার্কটিকার টেইলর গ্লেসিয়ারে বিজ্ঞানীরা দেখলেন এক অদ্ভুত দৃশ্য! সাদা-শুভ্র তুষার ঢেকে গেছে লাল রক্তে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করলেন, জলজ উদ্ভিদ বা শ্যাওলা এই ঘটনার জন্য দায়ী। কিন্তু তার কোনো প্রমাণ তাদের কাছে ছিল না।

এন্টার্টিকার রক্তপ্রপাত; source: National Geographic

রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করলেন ইউনিভার্সিটি অফ আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কসের গবেষকরা। তুষারবিদ এবং অনুজীব বিশেষজ্ঞরা এ রক্তপ্রবাহের কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছেন। তাদের ভাষ্যমতে, বরফের নিচে ভূগর্ভস্থ একটি লেক রয়েছে, যা প্রচুর আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় এর জল রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। নোনা পানির সাথে অক্সিজেন যৌগের বিক্রিয়ার ফলে এই রং ধারণ করে। মজার ব্যাপার হলো, এত ঠাণ্ডাতেও কিন্তু সেই জায়গার পানি জমে যায় না।

আগুনের জলপ্রপাত

আগুনের জলপ্রপাত; source: LostWorlds.org

ধরুন, আপনি ঝর্ণা দেখতে পশ্চিম নিউইয়র্কের অর্চাড পার্ক শহরের চেস্টনাট রিজ পার্কে ঢুকলেন। ঝর্ণার কাছে এগিয়ে যেতেই নাকে গ্যাসের ঝাঁঝালো গন্ধ গিয়ে পৌঁছুলো। কাছে যেতেই আপনার চক্ষু চড়কগাছ! শুরুতে দৃষ্টিভ্রম মনে হলেও, পরে সত্যিই অবাক হয়ে দেখলেন, ঝর্ণার পানি যেখানে পড়ছে, ঠিক তার পেছনেই জ্বলছে আগুন। বিজ্ঞানীদের মতে, মাটির নিচে থাকা পাথর থেকে উৎপন্ন হয় এই গ্যাস। তা থেকেই এই আগুনের সূত্রপাত।

তুরস্কের তুলার প্রাসাদ

তুরস্কের দক্ষিণ-পশ্চিমের রাজ্য দেনিজলিতে গেলে দেখা মিলবে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যমণ্ডিত শ্বেতশুভ্র জলপ্রপাত পামুক্কালে। তুর্কি শব্দ পামুক্কালের অর্থ তুলার প্রাসাদ। তুরস্কের মেন্দেরেস নদীর উপত্যকায় সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে তুষারের ন্যায় ধবধবে এই ঝর্ণা।

প্রাকৃতিক রহস্যে ঘেরা সেই তুলার প্রাসাদ; source: Lazer Horse

এটি ৮,৮৬০ ফুট লম্বা, ১,৯৭০ ফুট চওড়া ও ৫২৫ ফুট উঁচু। এই জলপ্রপাতে রয়েছে ঔষধি গুণসম্পন্ন কার্বনেট মিনারেল। অনেকে মনে করেন, এই জলে গা ভেজালে শরীরে রোগবালাই হয় না। যদিও বর্তমানে এখানে কেউ গোসল করতে পারে না। তুরস্ক সরকার জায়গাটির ক্ষতি হতে পারে দেখে তাতে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ রেখেছে। ধারণা করা হয়, এখানকার লেকগুলো ২০ লাখ বছরে পুরনো। বিজ্ঞানীদের ধারণা, বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্পের ফলে মাটিতে অনেক ফাটলের সৃষ্টি হয়। এরপর মাটির নিচে থাকা ক্যালসিয়াম কার্বনেট মিশ্রিত পানি চলে এলো উপরে। গরম পানি হওয়া ও বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে সময় লাগলো না, থেকে গেলো শুধু এই ক্যালসিয়াম কার্বনেট। এই কার্বনেট ধীরে ধীরে কঠিন অবস্থায় রুপ নিয়ে লেকের কাঠামোর সাথে মিশে গেল। আর তারপর বৃষ্টির পানি এসে পাম্মুকালেকে পরিপূর্ণতা দিল।

আতাকামা মরুভূমির তিমি রহস্য

পৃথিবীতে আবিস্কার হওয়া বিভিন্ন প্রাচীন ফসিলের মধ্যে চিলির আতাকামায় আবিস্কৃত তিমির বিশাল এক কবরস্থান অন্যতম। বিজ্ঞানীরা কোনোভাবেই এতগুলো তিমির মৃত্যুর কারণ বের করতে পারছিলেন না। তারা বুঝতে পারছিলেন না যে, এতগুলো তিমির আত্মহত্যার কারণ কী হতে পারে।

খুঁজে পাওয়া তিমির জীবাশ্ম; source: BBC

এই ধরনের ঘটনা ভিন্ন ভিন্ন সময়কালে পরিলক্ষিত হয়, যার প্রথমটি প্রায় ২০,০০০ বছর আগে ঘটেছিল। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেন, বিষাক্ত শ্যাওলা খাওয়ার ফলে তাদের মৃত্যু ঘটে। মৃত এই প্রাণীগুলো একটা সময় পর সমুদ্রের তলদেশে সমাহিত হয়। এক সময় তিমিগুলো চিলির আতাকামা মরুভূমির এই এলাকায় জীবাশ্ম রূপ ধারণ করে। প্যান-আমেরিকান মহাসড়ক প্রশস্ত করার জন্য যখন কাজ শুরু করা হয়, তখন উঁচু পাহাড় থেকে তিমিদের এই হাড়গুলো দেখা যেত। এরপর এই জায়গাটির নাম দেওয়া হয় ‘তিমির পাহাড়’। এই কাজের সূত্র ধরে আমেরিকা এবং চিলির গবেষকেরা এই ফসিলের ব্যাপারে কাজ করার একটি বিশাল সুযোগ পান। বিজ্ঞানীদের মাত্র ২ সপ্তাহ সময় দেওয়া হয় সব ধরনের গবেষণা চালানোর জন্য। কারণ তার পরপরই প্যান-আমেরিকান হাইওয়ের কাজ শুরু হবার কথা ছিল। গবেষণা চালানোর সময় তিমির পাশাপাশি আরও বেশ কিছু প্রাণীর জীবাশ্মের অস্তিত্ব পান বিজ্ঞানীরা।

বোসাম হেড রহস্য

ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের শহর চিকেস্টারের নিকটবর্তী সমুদ্র উপকূলীয় একটি গ্রাম বোসাম। সেই বোসাম গ্রামেই ১৮০০ সালের দিকে পাওয়া যায় ১৭০ কেজি ওজনের একটি পাথরের তৈরি মূর্তি। মূর্তি তো পাওয়া গেলো, কিন্তু তারপর?

বৃহৎ আকারের বোসাম হেড; source: YouTube

তারপর অতিবাহিত হয়ে গেছে অনেক বছর। ২০১৩ সালে এসে বিজ্ঞানের বদৌলতে থ্রিডি লেজার স্ক্যানের মাধ্যমে বোর্নেমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইলস রাসেল এবং হ্যারি ম্যানলি গবেষণা এবং নানান পরীক্ষার পর জানান, বোসাম হেডের এই মূর্তিটি রোমান সাম্রাজ্যের এককালের শাসক ‘ট্রাজানের’। ১১৩ বছরের অপেক্ষার সমাধান হলো শেষ পর্যন্ত।

এন্টিকাইথেরা

এন্টিকাইথেরাকে ধরা হয় বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন এনালগ কম্পিউটার। খ্রিষ্টপূর্ব ৬০ অব্দে প্রাচীন গ্রিসের জ্যোতির্বিদেরা দিক নির্ণয়ের জন্য গ্রহ-নক্ষত্রের গণনাকার্যে একটি যন্ত্র ব্যবহার করতেন। এন্টিকাইথেরা মেকানিজম নামে পরিচিত যন্ত্রটি সর্বপ্রথম খুঁজে পাওয়া যায় ১৯০১ সালে। গ্রিসের এন্টিকাইথেরা দ্বীপের কাছে জাহাজডুবির ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে গিয়ে ডুবুরি দল এটি খুঁজে পায়। উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্রের মধ্যে ছিল বিভিন্ন ধরনের ধাতব মুদ্রা, ব্রোঞ্জ মার্বেলের মূর্তি, অলংকার, পাত্র সহ নানান জিনিস। উদ্ধার হবার পর প্রায় দু’বছর এটি পড়ে ছিল এথেন্সের প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে।

এন্টিকাইথেরা; source: pinterest

তখনও কেউ এর ব্যাপারে কোনো ধারণা করতে পারেনি। প্রত্নতাত্ত্বিক ভ্যালেরিওস স্টেইস ১৯০২ সালে উদ্ধার হওয়া জিনিসগুলো পরীক্ষা করার সময় লক্ষ্য করেন এবং বোঝেন এটি উদ্ধার হওয়া অন্যান্য জিনিস থেকে আলাদা। এরপর থেকে এটি নিয়ে শুরু হয় নানান গবেষণা। ২০০৫ সালে এসে জোরেসোরে শুরু হয় আবার গবেষণা। এ কাজে যুক্ত হয় বিশ্ববিখ্যাত হাই টেকনোলজি কোম্পানিগুলো। ব্যাপক গবেষণার পর জানা যায়, এন্টিকাইথেরার সাহায্যে গ্রিক সভ্যতায় মাপা হতো চন্দ্র, সূর্য ও অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান, গণনা করা হতো চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ। যোগ-বিয়োগ-গুণ-ভাগ করে নির্ধারণ করে দিত কোন রাশিতে অবস্থান করছে চন্দ্র-সূর্য। পাশাপাশি জ্যোতিষবিদ্যার কাজেও ব্যবহৃত হতো এই যন্ত্রটি। এতে ছিল ব্রোঞ্জের তৈরি মোট ৩০টি গিয়ার। পুরো যন্ত্রটি রাখা ছিল যে বাক্সে সেটাও তৈরি ছিল কাঠ আর ব্রোঞ্জ দিয়ে।

নাজকা লাইন রহস্য

পেরুর রাজধানী লিমা থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণে নাজকা এবং পাল্পা শহরের মাঝে এই নাজকা লাইন অবস্থিত। মরুভূমিটির প্রায় ৪৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আঁকা হয়েছে বিভিন্ন জীবজন্তু, গাছ, এলিয়েন ও বহু জ্যামিতিক নকশা, যার মধ্যে কোনো কোনোটি আবার ২০০ মিটার পর্যন্ত বড়। খ্রিস্টপূর্ব ২০০-৬৫০ খ্রিস্টাব্দের মাঝে এ নকশাগুলো আঁকা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এই লাইনটি সর্বপ্রথম মানুষের চোখে পড়ে ১৯৩০ সালের দিকে, যখন এই এলাকা দিয়ে প্রথম বিমান চলাচল শুরু হয়। বিমানের সেই যাত্রীদের মাধ্যমে পুরো খবর ছড়িয়ে পড়লে রীতিমত হইচই শুরু হয় সারা বিশ্বজুড়ে। রহস্যের সমাধানে এগিয়ে আসেন বিজ্ঞানীরা।

নাজকা নকশা: মাকড়শা; source: Museum of Unnatural Mystery

আজকের বিজ্ঞান ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছে, নাজকা সভ্যতার লোকেরা এসব ভূগোল ব্যবহার করত দেবতাদের সাথে যোগাযোগ করার উপায় ভেবে। বিভিন্ন ধর্মীয় রীতিনীতির অংশ হিসেবে নাজকার অধিবাসীরা এসব এঁকেছিল। এটিকে অনেকে এক ধরনের এস্ট্রোনমিক্যাল ক্যালেন্ডার হিসেবেও অভিহিত করেন। কম্পিউটারের দ্বারা পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, নাজকাতে আঁকা একটি বিশালাকার মাকড়সার ছবির সঙ্গে অরিয়ন নক্ষত্রপুঞ্জের যথেষ্ট মিল রয়েছে। অনেকে নাজকা লাইনের সাথে এলিয়েনদের সংশ্লিষ্ট করার চেষ্টা করেন, যদিও এগুলোর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখা নেই। নাজকা লাইন নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও কাজ করছেন। ভবিষ্যতে হয়তো আরও চমকপ্রদক তথ্য অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

02/09/2017

জীবনী
বেয়ার গ্রিলস: অপরাজেয় অভিযাত্রীর উপাখ্যান

। জাম্বিয়ার বিশাল প্রান্তরে প্লেনটাকে একটা ছোট বিন্দুর মতোই দেখাচ্ছে। ধীরে ধীরে খুলে গেল প্লেনের দরজাটা। লাফ দেওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে সুদর্শন চেহারার এক যুবক। শেষবারের মতো প্রার্থনা করে লাফ দিলো সে। লাফ দেওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ ফুরফুরে মেজাজেই ছিলো। জীবনের সেরা মুহূর্তগুলোর একটা উপভোগ করতে যাচ্ছে এসএসআর-এর সর্বশেষ ট্রেইনি।

প্লেন থেকে নামছেন এক অভিযাত্রী; Source: Youtube

প্যারাস্যুটের দড়িটা ধরে টান দিতেই সে বুঝতে পারলো, কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। প্যারাস্যুট যে খুলছেই না! আবারও চেষ্টা করল, নাহ এবারেও হলো না। প্যারাস্যুটের রিজার্ভ প্যাকটা ব্যবহার করা উচিৎ হবে কিনা, তা ভাবতেই ভাবতেই মাটি আরও কিছুটা কাছে চলে এসেছে… নাহ, পৈতৃক প্রাণটা এত সহজে খোয়ানো উচিৎ হবে না। শেষবারের মতো হ্যাঁচকা টান দিয়ে খোলার চেষ্টা করলো পলিথিনের তৈরি বস্তুটা। তারপর হঠাৎ করেই খুলে গেলো জীবন রক্ষাকারী প্যারাস্যুট। কিন্তু বিধি বাম, শেষ রক্ষা হলো না তার। মাটি ছোঁয়ার আগে যতটুকু কম গতি প্রয়োজন ছিল, তার ধারেকাছেও যেতে পারেনি সে। সোজা গিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়লো ছয় ফুটের দীর্ঘ দেহটা। সোজা বললে ভুল হবে, পিঠটা ছিলো নিচের দিকে। পিঠে থাকা নরম প্যারাস্যুটের রিজার্ভ প্যাকটা যেন হঠাৎ করেই শক্ত পাথর হয়ে গেল। শরীরের হাড় যেন একেবারে গুড়ো হয়ে গিয়েছে! মৃত্যুপথযাত্রীর খাতায় কি নতুন কোনো নাম উঠতে যাচ্ছে?

তার দিকে ছুটে গেলো সবাই। স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হলো হাসপাতালে। যা ভাবা হয়েছিল, বলা যায় তার চেয়ে বেশ কম ক্ষতিই হয়েছে। মেরুদণ্ড দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে, ভেঙে গিয়েছে ৩টি কশেরুকা। মৃত্যু থেকে মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূর থেকে বেঁচে ফিরে আসলো সে, স্পাইনাল কর্ডে আঘাত লাগলে সেখানেই তার ইহলীলা সাঙ্গ হয়ে যেতে পারত! বয়স আর ফিটনেস দেখে ডাক্তার আর অপারেশন করার ঝুঁকির মধ্যে গেলেন না, তার পরিবর্তে তাকে প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে সময় কাটাতে হবে ফিজিওথেরাপি আর আলট্রা-সাউন্ড ট্রিটমেন্টের মধ্যে।

যে দুর্ঘটনার পর ভাবা হয়েছিল সে হাঁটতেই পারবে না, ঠিক সেই দুর্ঘটনাই যেন জীবনের মোড় পালটে দিলো তার। ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য ইচ্ছার জোরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ার দেড় বছরের মাথায় এভারেস্টের চূড়ায় উঠল সে, সর্বকনিষ্ঠ ব্রিটিশ হিসেবে! যদিও গত বিশ বছরে রেকর্ডটি আরও চার বার ভাঙা হয়েছে।

এভারেস্ট জয় করার পর; Source: beargrylls.com

এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝে ফেলেছেন, কার কথা বলা হচ্ছে। সেই অদম্য বেয়ার গ্রিলস, যিনি ঘুরে দেখেছেন পৃথিবীর প্রতিটি কোণা, মুখোমুখি হয়েছেন অসাধারণ সব চ্যালেঞ্জের এবং লাঞ্চবক্সের লিস্টে যোগ করেছেন অদ্ভুত সব রেসিপি! দুনিয়ার বুকের অন্যতম সেরা এই অভিযাত্রীর গল্পগুলোই শুনে নেওয়া যাক।

অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় পড়া যেভাবে

আটলান্টিকের গা ঘেঁষে বেড়ে ওঠা আয়ারল্যান্ডের ছোট্ট শহর ডোনাদিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এডওয়ার্ড মাইকেল গ্রিলস। তারপর সেখানেই নানীর কাছে চার বছর কাটিয়ে পাড়ি জমালেন ইংল্যান্ডের দক্ষিণে, আইল অফ উইটে। সাগরের চারপাশে থাকার ফলেই হয়তো সাগরের প্রতি আলাদা ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল তার। তাছাড়া বাবা মাইকেল গ্রিলসও রয়্যাল ইয়ট স্কোয়াড্রনের একজন সদস্য; তাই অ্যাডভেঞ্চারের নেশার হাতেখড়িটাও পেয়েছিলেন বাবার কাছ থেকেই।

বাবার ইয়টে বেয়ার গ্রিলস; Source: beargrylls.com

একদিকে নানী প্যাট্রিশিয়া ফোর্ড নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের প্রথম নারী এমপি, অন্যদিকে বাবা স্যার মাইকেলও যুক্তরাজ্যের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ; তাই স্বভাবতই রাজনীতির হালকা আঁচড় তার মাঝে থাকাটা স্বাভাবিক ছিলো। কিন্তু অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় পাওয়া এই কারাতের ব্ল্যাকবেল্টকে এসব আটকে রাখতে পারেনি। কলেজে থাকতে থাকতেই গঠন করেছেন পর্বতারোহীদের ক্লাব। কিশোর বয়সেই নেতৃত্ব দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের স্কাউট দলকে। পড়াশোনা শেষ করার পর ছুটে গিয়েছিলেন ভারতে। কারণ? ভারতের আর্মড ফোর্সের সৈন্যদের অ্যাডভেঞ্চারপূর্ণ জীবন তার কাছে বেশ আকর্ষণীয় বলেই মনে হয়েছিলো। সিকিম আর দার্জিলিংয়ের পাহাড়ে-প্রান্তরে ঘুরে বেড়ানো বেয়ার গ্রিলস ভারতের নাগরিক না হওয়ার কারণে আর্মড ফোর্সে সুযোগ না পেয়ে শেষমেশ ঢুকে পড়লেন ব্রিটিশ আর্মিতে। তারপর ব্রিটিশ আর্মির স্পেশাল এয়ার সার্ভিসের ৩ বছরের জীবন তাকে পরিণত করলো ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্কাইডাইভারে।

আর সেই স্কাইডাইভিং করতে গিয়েই জাম্বিয়ায় প্যারাস্যুট অ্যাক্সিডেন্ট, অতঃপর ব্রিটিশ আর্মি থেকে অবসর। এই অকাল অবসরের কারণেই হয়তো জীবনের মোড় ঘুরে গেলো তার। শুরু হলো নতুন অভিযানের গল্প।

এসএএস-এর ট্রেনিংয়ে বেয়ার গ্রিলস; Source: Mpora

অভিযাত্রীর ডায়েরি

২৩ বছর বয়সে এভারেস্ট বিজয়ের মাধ্যমেই বেয়ার গ্রিলসের বড় ধরনের অভিযানের সূচনা হয়। তারপর একের পর এক রেকর্ড ভেঙেছেন শুধু। বলা যায়, জীবনে যত ধরনের অ্যাডভেঞ্চার করা সম্ভব, তার সবকিছুই কিছুটা হলেও করে ফেলেছেন। এভারেস্টে ওঠার পরপরই পুরো বিশ্বে, বিশেষ করে গ্রেট ব্রিটেনে তাকে নিয়ে ব্যাপক হইচই শুরু হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রয়্যাল লাইফবোট ইনিস্টিটিউশনের তহবিল গঠনের জন্য জেট স্কি নিয়ে তিনি চক্কর দিয়েছেন ব্রিটিশ আইলের এ মাথা থেকে ও’ মাথা। দুর্ঘটনায় পা হারানো বন্ধুর সাহায্যের জন্য নগ্ন হয়ে নেমে গিয়েছেন শীতল টেমস নদীতে! পানি আর তার শরীরের মাঝখানে বাধা হয়ে ছিল শুধু একটা বাথটাব।

প্রথম চিত্র: বাথটাব নিয়েই টেমস নদীতে নগ্ন অবস্থায় রোয়িং করছেন বেয়ার গ্রিলস, দ্বিতীয় চিত্র: জেট স্কি নিয়ে ব্রিটিশ ইজেলস চক্কর দেওয়ার সময়; Source: beargrylls.com

সাগরের নীল পানিকে আপন করেই তিনি ছোট্ট বাতাস ভরা নৌকা দিয়ে উত্তর মেরুর বরফ কেটে বেরিয়ে এসেছেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মরুভূমি অ্যান্টার্কটিকা পাড়ি দিয়েছেন জেট স্কি দিয়ে, এমনকি বরফশীতল হিমালয়ের উপর সর্বোচ্চ উচ্চতায় প্যারাগ্লাইডিং করার রেকর্ডটাও তার দখলে। এভারেস্টের উপর দিয়েই হয়তো গ্লাইডার নিয়ে ভেসে যেতেন, কিন্তু চীন সীমান্তে অনধিকার প্রবেশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে তা আর হয়ে ওঠেনি।

উত্তর মেরু অভিযান শেষে উদযাপনরত বেয়ার গ্রিলস; Source: beargrylls.com

পৃথিবীর বুকে সর্বোচ্চ উচ্চতায় ডান হাতের কাজ সেরে ফেলার রেকর্ডটাও দখলে রেখেছেন ‘দ্য বেয়ার’। ইংল্যান্ডের এক দাতব্য সংস্থার অর্থ তহবিলের জন্য অক্সিজেন মাস্ক নিয়েই বেলুনে চড়ে ২৫ হাজার ফুট উচ্চতায় ডিনার করেছিলেন তিনি!

বেলুনে চড়ে মেঘের দেশে; Source: Squad Up

দুই মেরু পাড়ি দেওয়া, এভারেস্ট জয় করা এই ব্যক্তি হয়তো শুধু পানির নিচে ডুব দেওয়ার রেকর্ডগুলোই বাকি রেখেছেন।

হিমালয়ে স্কাইডাইভিং-এর সময়; Source: beargrylls.com

ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড

এভারেস্ট জয় কিংবা মেরু অভিযান, এর কোনোটিই বেয়ার গ্রিলসকে ততটা খ্যাতি এনে দিতে পারেনি যতটা এনে দিয়েছে ডিসকাভারি চ্যানেলের ‘ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড’ অনুষ্ঠানটি। প্রতিকূল পরিবেশ কিংবা দুর্গম অঞ্চল থেকে কীভাবে বেঁচে ফেরা যায় তার চিত্রায়ন করতেই বেয়ার গ্রিলস ছুটে গিয়েছেন গ্রেট ক্যানিয়নে, পুড়েছেন উতাহর তীব্র রোদে, খাবি খেয়েছেন আল্পসের বরফগলা পানিতে, তাড়া খেয়েছেন আফ্রিকার সাভানায় হাতি-সিংহের কাছ থেকে, মশার কামড় খেয়েছেন কোস্টা রিকার রেইনফরেস্টে, রাত কাটিয়েছেন আইসল্যান্ডের বরফের গুহায়, মানুষখেকো বুশম্যানদের পাল্লায় পড়েছেন নামিবিয়ায়, নগ্ন হয়ে সাঁতার কেটেছেন সাইবেরিয়ার -৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়, সাপ খেয়েছেন সিয়েরা নেভাডার প্রান্তরে, প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তাল ঢেউ পার করেছেন সামান্য ভেলার সাহায্য নিয়ে, এমনকি সাহারার তীব্র রোদে পানিশূন্যতার কারণে পান করেছেন নিজের মূত্রও!

নরওয়ের গিরিখাতে ঝোলার সময়; Source: BBC America

কিন্তু ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ডের প্রতিটি ঘটনাই কি সত্য? একে পুরোপুরি সত্যও বলা যাবে না, আবার মিথ্যা বলে একেবারে উড়িয়ে দেওয়াও ঠিক হবে না। ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির রিপোর্টে জানা যায়, ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ডের একেকটি পর্ব তৈরি করতে কয়েকদিন সময় লেগে যায়, যেখানে টিভিতে দেখানো হয় মাত্র দুই দিনের বেঁচে থাকার কৌশল।

ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ডের পিছনের দৃশ্য; Source: NBC

বিবিসির রিপোর্টে দেখা যায়, প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপে থাকা অবস্থায় ভেলা বানাতে তাকে দলের অন্য সদস্যরা সহযোগিতা করেছে। হাওয়াই দ্বীপের রবিনসন ক্রুশো জঙ্গলে না থেকে তিনি রাত কাটিয়েছিলেন এক হোটেলে! পরবর্তীতে বেয়ার গ্রিলস অনুষ্ঠানের এ ধরনের ত্রুটির জন্য ক্ষমা চান দর্শকদের কাছে।

তবে একটি অনুষ্ঠানের এমন অসামঞ্জস্যতা তার যাবতীয় অর্জনকে ঢেকে দেয় না। তার দুঃসাহসকে বাহবা না দিয়ে উপায় নেই। প্যারাগ্লাইডার নিয়ে খরস্রোতা আমাজন নদে ঝাঁপিয়ে পড়া কেবল মুখের কথা নয়। পদে পদে মৃত্যুর আশঙ্কা নিয়েও প্রকৃতির একেবারে গভীরে মিশে যাওয়া বেয়ার গ্রিলসকে টেলিভিশনের পর্দায় যে মুগ্ধতা নিয়ে আমরা দেখি, সেই মুগ্ধতা মিথ্যে নয়। জীবনের মোড় পালটে দেওয়া ভয়াবহ প্যারাস্যুট অ্যাকসিডেন্টকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে একটি কথাই বলেছিলেন তিনি,

তাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে অজস্র সিনেমা। তিন দশক যাবত তিনি মুম্বাই পুলিশ তথা ভারতীয় আদালতের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তি, অন...
26/08/2017

তাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে অজস্র সিনেমা। তিন দশক যাবত তিনি মুম্বাই পুলিশ তথা ভারতীয় আদালতের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তি, অন্যদিকে পাকিস্তানের কাছে একজন সুরক্ষিত মেহমান। করাচির ক্লিফটন বিচের কাছে তার অবস্থানকে প্রায় দুর্ভেদ্য করে রেখেছে পাকিস্তানের আইএসআই। বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত তার মাফিয়া চক্রের জাল। হাজার হাজার কোটি রুপি তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ধার দিয়েছিলেন বলে সন্দেহ পোষণ করেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। পাকিস্তানের নন্দিত ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াদাদের ছেলে জুনায়েদের সাথে নিজের মেয়ে মাহরুখকে বিয়ে দিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন তিনি। তাকে ধরার জন্য ভারতীয় পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজেছে দিনের পর দিন; কিন্তুু নাগাল পায়নি। ফোর্বস ম্যাগাজিনে তার নাম উঠেছিলো পৃথিবীর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায়। প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করা কিংবা নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য যেকোনো পদক্ষেপ নিতে জুড়ি নেই তার। তিনিই হলেন আন্ডারওয়ার্ল্ডের অঘোষিত সম্রাট দাউদ ইব্রাহীম হাসান কসকর।

দাউদ ইব্রাহীম; source: AP

এক সৎ পুলিশ কনস্টেবলের অপরাধী পুত্র

ভারতের সবচেয়ে সম্পদশালী প্রদেশ মহারাষ্ট্রের উপকূলবর্তী অঞ্চল রত্নগিরির মুমকা জেলার অধিবাসী হাসান কসকর বোম্বে নগরীর ডুংরিতে এক সেলুনের দোকান দেন। হাসান কসকরের ছেলে ইব্রাহীম কসকর পড়াশোনা করে বোম্বে পুলিশে ঢোকেন। অনেক বছর চাকরি করার পর তিনি হেড কনস্টেবল পদে উন্নতি লাভ করেন। হেড কনস্টেবল পদটি যথেষ্ট সম্মানের। তাছাড়া মুসলিমদের মধ্যে এই পদে খুব কম পুলিশই যেতে পারতো। অত্যন্ত ধার্মিক ইব্রাহীম কসকর বিশ্বাস করতেন- মুখ দিয়েছেন যিনি, আহার দেবেন তিনি। তাই বিয়ের পর তিনি পরিবার পরিকল্পনাকে আমলে না নিয়ে একে একে ৭ ছেলে ও ৫ মেয়ের জন্ম দেন। এই হেড কনস্টেবল ইব্রাহীম কসকরের দ্বিতীয় ছেলেই হলেন অপরাধজগতের ভয়ঙ্কর ত্রাস, ভারতীয় আন্ডারওয়ার্ল্ডের ‘বাপ কা ডন’ দাউদ ইব্রাহীম।

যুবক বয়সে দাউদ; source: Oneindia, Courtesy : Joy C Raphael

দাউদ ইব্রাহীম ভেঙে দিয়েছিলেন অপরাধ সংগঠনের চেনা ছক, ক্ষেত্রবিশেষে তিনি ছিলেন ইতালিয়ান ও মেক্সিকান মাফিয়াদের চেয়েও ভয়ংকর; গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়েই ছিলো তার নেটওয়ার্ক। টাটা, বিড়লা কিংবা আম্বানীদের মতোই তিনি গড়ে তুলেছিলেন হাজার হাজার কোটি রুপির বিশাল এক সাম্রাজ্য।

বোম্বের অপরাধ জগতে দাউদের জড়িয়ে পড়া

বোম্বে নগরী মায়াময়, যাদুর শহর। সব সম্ভাবনা আর স্বপ্নের শহর। তেমনি এ শহর কালো টাকা আর অপরাধমূলক কাজেরও আখড়া। সদাব্যস্ত এ শহরে যে লাইনেই কাজ করা যায়, সেই লাইনেই টাকা। বোম্বে নগরীর দক্ষিণ প্রান্তে বিশাল সংখ্যক মুসলমানদের বাস। আর মুসলমানদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাঠানদের বাস। দেশভাগের পূর্বে তারা পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ থেকে সেখানে বসবাস করতে এসেছিলো রোজগারের আশায়। দেশভাগের পরও তারা বোম্বে নগরী ছাড়েনি। কারণ দুর্ধর্ষ পাঠানরা ভয় কী জিনিস তা জানে না। হিন্দুদের তুলনায় মুসলমানরা ছিল শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে। আর অপরাধ প্রবণতায় মুসলমানদের ধারে কাছেও ছিল না হিন্দুরা।

দাউদ ইব্রাহীম ভেঙে দিয়েছিলেন অপরাধ সংগঠনের চেনা ছক; source: Mirror

দাউদ ইব্রাহীম সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে বোম্বের মুসলিম মাফিয়াদের সম্পর্কে জানতেই হবে। মুসলমান মাফিয়াদের আদিগুরু হাজী মাস্তান বোম্বের উপকূল জুড়ে চোরাচালানের ব্যবসা করে অঢেল বিত্তের মালিক হন। সঙ্গী শুকুর বখিয়াকে সাথে নিয়ে তিনি মহারাষ্ট্র-গুজরাট জুড়ে এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। হিন্দি মুভির নায়িকা মধুবালার ভক্ত ছিলেন হাজী মাস্তান। দিলীপ কুমারের সাথে এক অনুষ্ঠানে দেখাও হয়েছিল তার। হাজী মাস্তানের সমসাময়িক পাঠান মাফিয়া ছিলেন করিম লালা। মারমুখী পাঠানদের নিয়ে তিনি দক্ষিণ বোম্বেতে বাস করে চাঁদাবাজির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। করিম লালা-হাজী মাস্তান জুটি মিলিতভাবে বোম্বের অপরাধ জগতের সম্রাট বনে যান। ঠিক সেই সময়টাতে দাউদ ইব্রাহীমের পিতা ইব্রাহীম কসকর ডুংরিতে বসবাস শুরু করেন।

২৬ ডিসেম্বর, ১৯৫৫ সাল। জন্ম হয় দাউদ ইব্রাহীমের। তার জন্মের খবর শুনে ইব্রাহীম কসকরের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে যান করিম লালা। করিম লালা যদি জানতেন, এই ছেলে বড় হয়ে তার অপরাধ সাম্রাজ্য ভেঙে তছনছ করবে- তাহলে নিশ্চয়ই তিনি মিষ্টি নিয়ে তাকে স্বাগত জানাতে যেতেন না।

সে যা-ই হোক, ছোটবেলা থেকেই দাউদ ইব্রাহীম দেখে আসছিলেন পিতার নিদারুণ অভাবের সংসার। কর্মসূত্রে এক ভুল বোঝাবুঝির ঘটনায় দাউদের পিতা চাকরি থেকে অব্যাহতি পান। অভাবের তাড়নায় সপ্তম শ্রেণীতে ওঠার পর দাউদ আর স্কুলে যাননি।

দাউদের বিয়েতে একসাথে বাঁ থেকে আমিরজাদা, সামাদ খান, দাউদ ইব্রাহীম ও আলমজেব; source: Joy C Raphael

এরপর তিনি জড়িয়ে পড়েন ছিনতাই আর ছিঁচকে চুরিতে। পথচারীদের ভয় দেখিয়ে জিনিসপত্র লুট করার কাজে তার সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিল বড় ভাই সাবির ইব্রাহীম। দুই ভাই মিলে ছোঠখাটো একটি দল বানিয়ে ফেললেন। বোম্বে জুড়ে তখন পাঠান মাফিয়াদের একচ্ছত্র রাজত্ব। ধীরে ধীরে সবাই টের পাচ্ছিল, দক্ষিণ বোম্বে থেকে হেড কনস্টেবল ইব্রাহীম কসকরের ছেলেও অপরাধজগতে হাত মকশো করছে।

সাবির ইব্রাহীম খুন: প্রতিশোধের নেশায় উন্মত্ত দাউদ

দাউদ-সাবির দুই ভাই যখন ধীরে ধীরে বোম্বের অপরাধজগতে রাজত্ব করতে চাইলো, তখনই নারীঘঠিত কারণে খুন হয় সাবির ইব্রাহীম। এশিয়ার সবচেয়ে বড় পতিতালয় বোম্বের কামাথিপুরায় জনৈক দেহপসারিণীকে ভালো লেগে যায় সাবির ইব্রাহীমের। সেই পতিতাকে আবার নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান পাঠান মাফিয়া আমিরজাদা। এ দ্বন্দের জেরে আমিরজাদা খুন করে সাবিরকে। সঞ্জয় গুপ্তের মুভি ‘শ্যুটআউট এট ওয়াডালা’তে এ বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

ঠাণ্ডা মাথায় নৃশংসভাবে শত্রুকে শেষ করার পরিকল্পনা করতেন দাউদ; source: The Logical Indian

আমিরজাদাকে হত্যা করার জন্য হন্যে হয়ে উঠে দাউদ ও তার দলবল। পরিচয় হয় কিলার বড় রাজনের সাথে। বড় রাজন দাউদের খেদমতে এক ভাড়াটিয়া খুনীকে প্রেরণ করে। তার নাম পরদেশী। সাবির হত্যা মামলায় আমিরজাদা তখন জেলে। দাউদ-বড় রাজন-পরদেশী, এই তিনজন মিলে সিদ্ধান্ত নেয় আমিরজাদাকে কোর্ট প্রাঙ্গনে হত্যা করা হবে। যে কথা সে কাজ। আমিরজাদাকে শত শত মানুষের সম্মুখে কোর্ট প্রাঙ্গনে হত্যা করে পরদেশী। কিন্তু সে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। গ্রেফতার হয় দাউদ ও বড় রাজন। যদিও বেশ কিছুদিন পর আবার জামিনে বেরিয়ে পড়ে দাউদ।

পাঠানদের পাল্টা হামলা ও দাউদ ইব্রাহীমের দেশত্যাগ

আমিরজাদা হত্যার ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে পাঠানরা। এ হামলার মাস্টারমাইন্ড দাউদের সহচর বড় রাজন তখনও জেলে। বড় রাজনকে ঠিক সেই কায়দায় কোর্ট প্রাঙ্গনে হত্যা করার পরিকল্পনা করে তারা। পাঠান গ্যাং আলমজেব এজন্য আবদুল কুনজুকে ভাড়া করে। নির্ধারিত দিনে বড় রাজনকে কোর্টে তোলা হয়। পুলিশ নিরাপত্তার চাদরে কোর্টপ্রাঙ্গন ঢেকে ফেলে। কিন্তু হায়! আবদুল কুনজুর ভাড়া করা কিলার নৌবাহিনীর ইউনিফর্ম পড়া সাফালিকা ভদ্র মানুষের মতো কোর্ট প্রাঙ্গনে ঘোরাফেরা করতে থাকে। পুলিশের এই ধারণা ছিলো না যে, নৌবাহিনীর সদস্য সেজে কোনো কিলার পুলিশকে বোকা বানাতে পারে। পুলিশের আশেপাশেই কিলার অবাধে ঘুরতে থাকে, যেহেতু তাকে আর কেউ আটকায়নি। একদম কাছে এসে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে কথিত নৌ-সেনা বড় রাজনকে হত্যা করে।

একটার পর একটা খুনখারাবির ঘটনায় জড়িয়ে পড়ায় পুলিশের খাতায় তার নাম উঠে গেলো চিরতরে; source: timesofindia.indiatimes.com

এবার দাউদের পালা। বড় রাজন হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য দাউদ পাঠান গ্যাংদের বিরুদ্ধে দাবার গুটি সাজাতে থাকে। উত্থান ঘটে ছোটা রাজনের। ছোটা রাজনের সাথে বিরোধ ছিলো পাঠান গ্যাং আবদুল কুনজুর। আবদুল কুনজু তখন জেলখানায়। ছোটা রাজন আবদুল কুনজুকে আবার কোর্ট প্রাঙ্গনে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। বোম্বে পুলিশ অপরাধীদের এসব প্রতিহিংসাপরায়ণ কাণ্ডকারখানা শক্ত হাতে দমন করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাই কুনজুকে কোর্ট প্রাঙ্গনে হত্যা চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ছোটা রাজন অন্য পথ বেছে নেয়। একদিন কুনজুকে চিকিৎসার জন্য জেল থেকে হাসপাতালে আনা হলো। ছোটা রাজন সেই সংবাদ পড়ে আহত হওয়ার ভান ধরে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে পড়ল। চোখের পলকে সবাই দেখলো, হাতে-পায়ে ব্যান্ডেজ করা এক লোক হঠাৎ সুস্থ মানুষের মতো পিস্তল নিয়ে দৌড় দিলো। কুনজুর কেবিনে গিয়ে বৃষ্টির মতো গুলি ছুঁড়তে লাগলো সে। কুনজু খতম।

শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু- এই নীতি ধারণ করে মাফিয়া ডন দাউদ ছোটা রাজনকে তার দলে ভেড়ানোর জন্য উঠেপড়ে লাগলো। ছোটা রাজন দাউদের দলে যোগ দিয়ে দাউদের শক্তি বৃদ্ধি করলো। আরেক দুর্ধর্ষ পাঠান সামাদ খানকে দাউদ ছোটা রাজনের সহায়তায় হত্যা করলো। এভাবে একটার পর একটা খুনখারাবির ঘটনায় জড়িয়ে পড়ায় পুলিশের খাতায় তার নাম উঠে গেলো চিরতরে। বোম্বে নগরী আর নিরাপদ মনে হলো না তার কাছে। ১৯৮৬ সালে দাউদ তার জন্মভূমি বোম্বে নগরী ছেড়ে দুবাই পালিয়ে গেলো।

হোয়াইট হাউজ ইন দুবাই: মাফিয়া ডন দাউদের নতুন আস্তানা

দুবাই শহর তখন বিকশিত হচ্ছে। ভারতীয় মাফিয়া ডনদের নিরাপদ আস্তানা হয়ে উঠে দুবাই। বন্দী বিনিময় চুক্তি না থাকায় দুবাইয়ে কোনো ভারতীয় গ্রেফতার হলেও তাকে ভারতে ফেরত আনা যেতো না। স্বর্ণ চোরাচালান, জাল টাকার ব্যবসা, অস্ত্র সরবরাহ, চাঁদাবাজি, কন্ট্রাক্ট কিলিং- এসব কাজ দুবাইতে বসেই করতো দাউদের কুখ্যাত ‘ডি কোম্পানি’। দাউদের দলে যোগ দেয় আবু সালেম, ছোটা রাজন, ছোটা শাকিল, লম্বু শাকিল, টাইগার মেমন- এসব কুখ্যাত ডনরা। পুরো মধ্যপ্রাচ্য আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে ছিলো দাউদের নেটওয়ার্ক। দাউদ নিজেকে মহিমান্বিত করার জন্য দুবাইয়ের জুমেরাহ বিচ সংলগ্ন তার বাসভবনের নাম দিয়েছিল ‘হোয়াইট হাউজ’।

দাউদ ইব্রাহীম ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তোলে ‘ডি কোম্পানি’র মাধ্যমে; source: Yahoo Cricket

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই যে, বলিউডের সাথে দাউদের ছিলো চরম সুসম্পর্ক। বেনামে অনেক সিনেমার প্রযোজনা করতো দাউদ। শুধু তা-ই নয়, বলিউড নায়িকা মন্দাকিনীর সাথে দাউদের রোমাঞ্চের খবরও চাউর হয়েছিলো সিনে পত্রিকায়। হিন্দি সিনেমার পাইরেটেড সিডির ব্যবসাও ছিলো দাউদের নিয়ন্ত্রণে।

ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়, যখন বোম্বে নগরীতে ১৯৯৩ সালে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা হওয়ায় পাকিস্তানের আইএসআইয়ের ছত্রচ্ছায়ায় দাউদ বোম্বেতে বোমা হামলার পরিকল্পনা করে। এ কাজে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে টাইগার মেমন। এই বোমা হামলায় ২৫৭ জন লোক নিহত হয়। দাউদ হয়ে পড়েন ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী। আমিরাত সরকারের সাথে বন্দী বিনিময় চুক্তি করে দাউদকে পাকড়াও করার উদ্যোগ নেয় ভারত। সেই মুহুর্তে দাউদ পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। আইএসআইয়ের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই দাউদ করাচীতে আছেন বলে ভারতের গোয়েন্দাদের মতামত। ক্রিকেটার জাভেদ মিঁয়াদাদের ছেলের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ের সময় দাউদ অনুষ্ঠানস্থল দুবাইয়ে হাজির থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আইএসআই তাকে অনুষ্ঠানে থাকতে নিষেধ করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর ভয়ে।

আইএসআইয়ের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই দাউদ করাচীতে আছেন বলে ভারতের গোয়েন্দাদের মতামত; source: News Pakistan

হাজার হাজার কোটি রুপি অবৈধ পথে আয় করে দাউদ করাচির রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও নাকি টাকা ধার দেন দাউদ! ওদিকে বোম্বে পুলিশ ক্রসফায়ারে প্রায় ১,৫০০ সন্ত্রাসীকে হত্যা করে। ভেঙে যায় বোম্বের মাফিয়াদের নেটওয়ার্ক। দাউদের সাঙ্গপাঙ্গদের মধ্যে কেউ ক্রসফায়ারে নিহত হন আর কেউ বা জেলে বন্দী আছেন। দাউদেরও বয়স হয়েছে। অপরাধী নেটওয়ার্ক গুটিয়ে এনে চুপচাপ পাকিস্তানে বসবাস করছেন তিনি। পাকিস্তান যদিও কখনো তা স্বীকার করে না।

তথ্যসূত্র: S Hussain Zaidi (2015). Dongri to Dubai: Six Decades of the Mumbai Mafia. Seventeenth impression- April 2015. Roli Books Pvt Ltd. p. 50-100, 300-307.

ফিচার ইমেজ- Stillunfold

মন্তব্তাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে অজস্র সিনেমা। তিন দশক যাবত তিনি মুম্বাই পুলিশ তথা ভারতীয় আদালতের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তি, অন্যদিকে পাকিস্তানের কাছে একজন সুরক্ষিত মেহমান। করাচির ক্লিফটন বিচের কাছে তার অবস্থানকে প্রায় দুর্ভেদ্য করে রেখেছে পাকিস্তানের আইএসআই। বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত তার মাফিয়া চক্রের জাল। হাজার হাজার কোটি রুপি তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ধার দিয়েছিলেন বলে সন্দেহ পোষণ করেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। পাকিস্তানের নন্দিত ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াদাদের ছেলে জুনায়েদের সাথে নিজের মেয়ে মাহরুখকে বিয়ে দিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন তিনি। তাকে ধরার জন্য ভারতীয় পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজেছে দিনের পর দিন; কিন্তুু নাগাল পায়নি। ফোর্বস ম্যাগাজিনে তার নাম উঠেছিলো পৃথিবীর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায়। প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করা কিংবা নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য যেকোনো পদক্ষেপ নিতে জুড়ি নেই তার। তিনিই হলেন আন্ডারওয়ার্ল্ডের অঘোষিত সম্রাট দাউদ ইব্রাহীম হাসান কসকর।

দাউদ ইব্রাহীম; source: AP

এক সৎ পুলিশ কনস্টেবলের অপরাধী পুত্র

ভারতের সবচেয়ে সম্পদশালী প্রদেশ মহারাষ্ট্রের উপকূলবর্তী অঞ্চল রত্নগিরির মুমকা জেলার অধিবাসী হাসান কসকর বোম্বে নগরীর ডুংরিতে এক সেলুনের দোকান দেন। হাসান কসকরের ছেলে ইব্রাহীম কসকর পড়াশোনা করে বোম্বে পুলিশে ঢোকেন। অনেক বছর চাকরি করার পর তিনি হেড কনস্টেবল পদে উন্নতি লাভ করেন। হেড কনস্টেবল পদটি যথেষ্ট সম্মানের। তাছাড়া মুসলিমদের মধ্যে এই পদে খুব কম পুলিশই যেতে পারতো। অত্যন্ত ধার্মিক ইব্রাহীম কসকর বিশ্বাস করতেন- মুখ দিয়েছেন যিনি, আহার দেবেন তিনি। তাই বিয়ের পর তিনি পরিবার পরিকল্পনাকে আমলে না নিয়ে একে একে ৭ ছেলে ও ৫ মেয়ের জন্ম দেন। এই হেড কনস্টেবল ইব্রাহীম কসকরের দ্বিতীয় ছেলেই হলেন অপরাধজগতের ভয়ঙ্কর ত্রাস, ভারতীয় আন্ডারওয়ার্ল্ডের ‘বাপ কা ডন’ দাউদ ইব্রাহীম।

যুবক বয়সে দাউদ; source: Oneindia, Courtesy : Joy C Raphael

দাউদ ইব্রাহীম ভেঙে দিয়েছিলেন অপরাধ সংগঠনের চেনা ছক, ক্ষেত্রবিশেষে তিনি ছিলেন ইতালিয়ান ও মেক্সিকান মাফিয়াদের চেয়েও ভয়ংকর; গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য জুড়েই ছিলো তার নেটওয়ার্ক। টাটা, বিড়লা কিংবা আম্বানীদের মতোই তিনি গড়ে তুলেছিলেন হাজার হাজার কোটি রুপির বিশাল এক সাম্রাজ্য।

বোম্বের অপরাধ জগতে দাউদের জড়িয়ে পড়া

বোম্বে নগরী মায়াময়, যাদুর শহর। সব সম্ভাবনা আর স্বপ্নের শহর। তেমনি এ শহর কালো টাকা আর অপরাধমূলক কাজেরও আখড়া। সদাব্যস্ত এ শহরে যে লাইনেই কাজ করা যায়, সেই লাইনেই টাকা। বোম্বে নগরীর দক্ষিণ প্রান্তে বিশাল সংখ্যক মুসলমানদের বাস। আর মুসলমানদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাঠানদের বাস। দেশভাগের পূর্বে তারা পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ থেকে সেখানে বসবাস করতে এসেছিলো রোজগারের আশায়। দেশভাগের পরও তারা বোম্বে নগরী ছাড়েনি। কারণ দুর্ধর্ষ পাঠানরা ভয় কী জিনিস তা জানে না। হিন্দুদের তুলনায় মুসলমানরা ছিল শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে। আর অপরাধ প্রবণতায় মুসলমানদের ধারে কাছেও ছিল না হিন্দুরা।

দাউদ ইব্রাহীম ভেঙে দিয়েছিলেন অপরাধ সংগঠনের চেনা ছক; source: Mirror

দাউদ ইব্রাহীম সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে বোম্বের মুসলিম মাফিয়াদের সম্পর্কে জানতেই হবে। মুসলমান মাফিয়াদের আদিগুরু হাজী মাস্তান বোম্বের উপকূল জুড়ে চোরাচালানের ব্যবসা করে অঢেল বিত্তের মালিক হন। সঙ্গী শুকুর বখিয়াকে সাথে নিয়ে তিনি মহারাষ্ট্র-গুজরাট জুড়ে এক বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। হিন্দি মুভির নায়িকা মধুবালার ভক্ত ছিলেন হাজী মাস্তান। দিলীপ কুমারের সাথে এক অনুষ্ঠানে দেখাও হয়েছিল তার। হাজী মাস্তানের সমসাময়িক পাঠান মাফিয়া ছিলেন করিম লালা। মারমুখী পাঠানদের নিয়ে তিনি দক্ষিণ বোম্বেতে বাস করে চাঁদাবাজির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। করিম লালা-হাজী মাস্তান জুটি মিলিতভাবে বোম্বের অপরাধ জগতের সম্রাট বনে যান। ঠিক সেই সময়টাতে দাউদ ইব্রাহীমের পিতা ইব্রাহীম কসকর ডুংরিতে বসবাস শুরু করেন।

২৬ ডিসেম্বর, ১৯৫৫ সাল। জন্ম হয় দাউদ ইব্রাহীমের। তার জন্মের খবর শুনে ইব্রাহীম কসকরের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে যান করিম লালা। করিম লালা যদি জানতেন, এই ছেলে বড় হয়ে তার অপরাধ সাম্রাজ্য ভেঙে তছনছ করবে- তাহলে নিশ্চয়ই তিনি মিষ্টি নিয়ে তাকে স্বাগত জানাতে যেতেন না।

সে যা-ই হোক, ছোটবেলা থেকেই দাউদ ইব্রাহীম দেখে আসছিলেন পিতার নিদারুণ অভাবের সংসার। কর্মসূত্রে এক ভুল বোঝাবুঝির ঘটনায় দাউদের পিতা চাকরি থেকে অব্যাহতি পান। অভাবের তাড়নায় সপ্তম শ্রেণীতে ওঠার পর দাউদ আর স্কুলে যাননি।

দাউদের বিয়েতে একসাথে বাঁ থেকে আমিরজাদা, সামাদ খান, দাউদ ইব্রাহীম ও আলমজেব; source: Joy C Raphael

এরপর তিনি জড়িয়ে পড়েন ছিনতাই আর ছিঁচকে চুরিতে। পথচারীদের ভয় দেখিয়ে জিনিসপত্র লুট করার কাজে তার সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিল বড় ভাই সাবির ইব্রাহীম। দুই ভাই মিলে ছোঠখাটো একটি দল বানিয়ে ফেললেন। বোম্বে জুড়ে তখন পাঠান মাফিয়াদের একচ্ছত্র রাজত্ব। ধীরে ধীরে সবাই টের পাচ্ছিল, দক্ষিণ বোম্বে থেকে হেড কনস্টেবল ইব্রাহীম কসকরের ছেলেও অপরাধজগতে হাত মকশো করছে।

সাবির ইব্রাহীম খুন: প্রতিশোধের নেশায় উন্মত্ত দাউদ

দাউদ-সাবির দুই ভাই যখন ধীরে ধীরে বোম্বের অপরাধজগতে রাজত্ব করতে চাইলো, তখনই নারীঘঠিত কারণে খুন হয় সাবির ইব্রাহীম। এশিয়ার সবচেয়ে বড় পতিতালয় বোম্বের কামাথিপুরায় জনৈক দেহপসারিণীকে ভালো লেগে যায় সাবির ইব্রাহীমের। সেই পতিতাকে আবার নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান পাঠান মাফিয়া আমিরজাদা। এ দ্বন্দের জেরে আমিরজাদা খুন করে সাবিরকে। সঞ্জয় গুপ্তের মুভি ‘শ্যুটআউট এট ওয়াডালা’তে এ বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

ঠাণ্ডা মাথায় নৃশংসভাবে শত্রুকে শেষ করার পরিকল্পনা করতেন দাউদ; source: The Logical Indian

আমিরজাদাকে হত্যা করার জন্য হন্যে হয়ে উঠে দাউদ ও তার দলবল। পরিচয় হয় কিলার বড় রাজনের সাথে। বড় রাজন দাউদের খেদমতে এক ভাড়াটিয়া খুনীকে প্রেরণ করে। তার নাম পরদেশী। সাবির হত্যা মামলায় আমিরজাদা তখন জেলে। দাউদ-বড় রাজন-পরদেশী, এই তিনজন মিলে সিদ্ধান্ত নেয় আমিরজাদাকে কোর্ট প্রাঙ্গনে হত্যা করা হবে। যে কথা সে কাজ। আমিরজাদাকে শত শত মানুষের সম্মুখে কোর্ট প্রাঙ্গনে হত্যা করে পরদেশী। কিন্তু সে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। গ্রেফতার হয় দাউদ ও বড় রাজন। যদিও বেশ কিছুদিন পর আবার জামিনে বেরিয়ে পড়ে দাউদ।

পাঠানদের পাল্টা হামলা ও দাউদ ইব্রাহীমের দেশত্যাগ

আমিরজাদা হত্যার ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে পাঠানরা। এ হামলার মাস্টারমাইন্ড দাউদের সহচর বড় রাজন তখনও জেলে। বড় রাজনকে ঠিক সেই কায়দায় কোর্ট প্রাঙ্গনে হত্যা করার পরিকল্পনা করে তারা। পাঠান গ্যাং আলমজেব এজন্য আবদুল কুনজুকে ভাড়া করে। নির্ধারিত দিনে বড় রাজনকে কোর্টে তোলা হয়। পুলিশ নিরাপত্তার চাদরে কোর্টপ্রাঙ্গন ঢেকে ফেলে। কিন্তু হায়! আবদুল কুনজুর ভাড়া করা কিলার নৌবাহিনীর ইউনিফর্ম পড়া সাফালিকা ভদ্র মানুষের মতো কোর্ট প্রাঙ্গনে ঘোরাফেরা করতে থাকে। পুলিশের এই ধারণা ছিলো না যে, নৌবাহিনীর সদস্য সেজে কোনো কিলার পুলিশকে বোকা বানাতে পারে। পুলিশের আশেপাশেই কিলার অবাধে ঘুরতে থাকে, যেহেতু তাকে আর কেউ আটকায়নি। একদম কাছে এসে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে কথিত নৌ-সেনা বড় রাজনকে হত্যা করে।

একটার পর একটা খুনখারাবির ঘটনায় জড়িয়ে পড়ায় পুলিশের খাতায় তার নাম উঠে গেলো চিরতরে; source: timesofindia.indiatimes.com

এবার দাউদের পালা। বড় রাজন হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য দাউদ পাঠান গ্যাংদের বিরুদ্ধে দাবার গুটি সাজাতে থাকে। উত্থান ঘটে ছোটা রাজনের। ছোটা রাজনের সাথে বিরোধ ছিলো পাঠান গ্যাং আবদুল কুনজুর। আবদুল কুনজু তখন জেলখানায়। ছোটা রাজন আবদুল কুনজুকে আবার কোর্ট প্রাঙ্গনে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। বোম্বে পুলিশ অপরাধীদের এসব প্রতিহিংসাপরায়ণ কাণ্ডকারখানা শক্ত হাতে দমন করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাই কুনজুকে কোর্ট প্রাঙ্গনে হত্যা চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ছোটা রাজন অন্য পথ বেছে নেয়। একদিন কুনজুকে চিকিৎসার জন্য জেল থেকে হাসপাতালে আনা হলো। ছোটা রাজন সেই সংবাদ পড়ে আহত হওয়ার ভান ধরে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে পড়ল। চোখের পলকে সবাই দেখলো, হাতে-পায়ে ব্যান্ডেজ করা এক লোক হঠাৎ সুস্থ মানুষের মতো পিস্তল নিয়ে দৌড় দিলো। কুনজুর কেবিনে গিয়ে বৃষ্টির মতো গুলি ছুঁড়তে লাগলো সে। কুনজু খতম।

শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু- এই নীতি ধারণ করে মাফিয়া ডন দাউদ ছোটা রাজনকে তার দলে ভেড়ানোর জন্য উঠেপড়ে লাগলো। ছোটা রাজন দাউদের দলে যোগ দিয়ে দাউদের শক্তি বৃদ্ধি করলো। আরেক দুর্ধর্ষ পাঠান সামাদ খানকে দাউদ ছোটা রাজনের সহায়তায় হত্যা করলো। এভাবে একটার পর একটা খুনখারাবির ঘটনায় জড়িয়ে পড়ায় পুলিশের খাতায় তার নাম উঠে গেলো চিরতরে। বোম্বে নগরী আর নিরাপদ মনে হলো না তার কাছে। ১৯৮৬ সালে দাউদ তার জন্মভূমি বোম্বে নগরী ছেড়ে দুবাই পালিয়ে গেলো।

হোয়াইট হাউজ ইন দুবাই: মাফিয়া ডন দাউদের নতুন আস্তানা

দুবাই শহর তখন বিকশিত হচ্ছে। ভারতীয় মাফিয়া ডনদের নিরাপদ আস্তানা হয়ে উঠে দুবাই। বন্দী বিনিময় চুক্তি না থাকায় দুবাইয়ে কোনো ভারতীয় গ্রেফতার হলেও তাকে ভারতে ফেরত আনা যেতো না। স্বর্ণ চোরাচালান, জাল টাকার ব্যবসা, অস্ত্র সরবরাহ, চাঁদাবাজি, কন্ট্রাক্ট কিলিং- এসব কাজ দুবাইতে বসেই করতো দাউদের কুখ্যাত ‘ডি কোম্পানি’। দাউদের দলে যোগ দেয় আবু সালেম, ছোটা রাজন, ছোটা শাকিল, লম্বু শাকিল, টাইগার মেমন- এসব কুখ্যাত ডনরা। পুরো মধ্যপ্রাচ্য আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে ছিলো দাউদের নেটওয়ার্ক। দাউদ নিজেকে মহিমান্বিত করার জন্য দুবাইয়ের জুমেরাহ বিচ সংলগ্ন তার বাসভবনের নাম দিয়েছিল ‘হোয়াইট হাউজ’।

দাউদ ইব্রাহীম ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তোলে ‘ডি কোম্পানি’র মাধ্যমে; source: Yahoo Cricket

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় এই যে, বলিউডের সাথে দাউদের ছিলো চরম সুসম্পর্ক। বেনামে অনেক সিনেমার প্রযোজনা করতো দাউদ। শুধু তা-ই নয়, বলিউড নায়িকা মন্দাকিনীর সাথে দাউদের রোমাঞ্চের খবরও চাউর হয়েছিলো সিনে পত্রিকায়। হিন্দি সিনেমার পাইরেটেড সিডির ব্যবসাও ছিলো দাউদের নিয়ন্ত্রণে।

ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়, যখন বোম্বে নগরীতে ১৯৯৩ সালে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা হওয়ায় পাকিস্তানের আইএসআইয়ের ছত্রচ্ছায়ায় দাউদ বোম্বেতে বোমা হামলার পরিকল্পনা করে। এ কাজে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে টাইগার মেমন। এই বোমা হামলায় ২৫৭ জন লোক নিহত হয়। দাউদ হয়ে পড়েন ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী। আমিরাত সরকারের সাথে বন্দী বিনিময় চুক্তি করে দাউদকে পাকড়াও করার উদ্যোগ নেয় ভারত। সেই মুহুর্তে দাউদ পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। আইএসআইয়ের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই দাউদ করাচীতে আছেন বলে ভারতের গোয়েন্দাদের মতামত। ক্রিকেটার জাভেদ মিঁয়াদাদের ছেলের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ের সময় দাউদ অনুষ্ঠানস্থল দুবাইয়ে হাজির থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আইএসআই তাকে অনুষ্ঠানে থাকতে নিষেধ করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর ভয়ে।

আইএসআইয়ের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই দাউদ করাচীতে আছেন বলে ভারতের গোয়েন্দাদের মতামত; source: News Pakistan

হাজার হাজার কোটি রুপি অবৈধ পথে আয় করে দাউদ করাচির রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও নাকি টাকা ধার দেন দাউদ! ওদিকে বোম্বে পুলিশ ক্রসফায়ারে প্রায় ১,৫০০ সন্ত্রাসীকে হত্যা করে। ভেঙে যায় বোম্বের মাফিয়াদের নেটওয়ার্ক। দাউদের সাঙ্গপাঙ্গদের মধ্যে কেউ ক্রসফায়ারে নিহত হন আর কেউ বা জেলে বন্দী আছেন। দাউদেরও বয়স হয়েছে। অপরাধী নেটওয়ার্ক গুটিয়ে এনে চুপচাপ পাকিস্তানে বসবাস করছেন তিনি। পাকিস্তান যদিও কখনো তা স্বীকার করে না।

তথ্যসূত্র: S Hussain Zaidi (2015). Dongri to Dubai: Six Decades of the Mumbai Mafia. Seventeenth impression- April 2015. Roli Books Pvt Ltd. p. 50-100, 300-307.

Times of India brings the Latest & Top Breaking News on Politics and Current Affairs in India & around the World, Cricket, Sports, Business, Bollywood News and Entertainment, Science, Technology, Health & Fitness news & opinions from leading columnists.

Address

Barlakha
Moulvi Bazar

Telephone

01715

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when wi-fi hotspot posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Share on Facebook Share on Twitter Share on LinkedIn
Share on Pinterest Share on Reddit Share via Email
Share on WhatsApp Share on Instagram Share on Telegram