
08/06/2025
লোহা, মানব সভ্যতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক উপাদান। উঁচু দালান বা বিশাল সেতু, বর্তমান যুগে আমরা যেদিকেই তাকাই না কেন, লোহার ব্যবহার সবখানেই দেখতে পাই। কিন্তু আপনি কি জানেন লোহা আসলে পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়নি। গবেষকরা বলছেন এই লোহা পৃথিবীর বাইরে থেকে এসেছে। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ১৪০০ বছর আগে এই বিষটি স্বয়ং আল্লাহ কোরআনে বর্ণনা করেছেন।
লোহা স্বাধারণত প্রকৃতিতে আকরিক হিসেবে পাওয়া যায়। আকরিক হলো এক প্রকারের প্রাকৃতিক শিলা, যার মধ্যে থাকে বিপুল পরিমাণে খনিজ। এই আকরিক থেকে বিশেষ প্রকৃয়ায় আলাদা করা হয় লোহা। আর সেই লোহাই আমরা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকি। আগে ভাবা হতো গুরুত্বপূর্ণ এই ধাতুটি পৃথিবীতেই সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বিংশ শতাব্দির মাঝামাঝি সময়ে গবেষকরা দেখলেন লোহা পৃথিবীতে সৃষ্টি হওয়া সম্ভব না।
বিগব্যাং এর কিছু সময় পরেই মহাবিশ্বে হাইড্রোজেন গ্যাস খুব সহজেই সৃষ্টি হয়। সেই হাইড্রোজেন একসাথে ঘনীভূত হয়ে নক্ষত্রের জন্ম দেয়। আর নক্ষত্রের কেন্দ্রে প্রচন্ড তাপ ও চাপের ফলে হিলিয়াম সৃষ্টি হয়। কিন্তু এর চেয়ে ভারী পদার্থগুলো সৃষ্টি হতে প্রয়জন ছিলো আরও অনেক বেশি শক্তির। আর এই শক্তি আসে সুপার নোভা থেকে। যখন কোন নক্ষত্রের জ্বালানি ফুড়িয়ে যায় তখন প্রচন্ড বিশফোরণের মাধ্যমে তার সমাপ্তি ঘটে। আর এই বিষ্ফোরণকেই বলা হয় সুপার নোভা। এই সুপার নোভার ফলেই লোহা, তামা, পিতলের মতো ভারী পদার্থগুলোর জন্ম।
আমাদের সৌরজগতের জন্ম যে ডাস্ট ক্লাউড বা ধুলিমেঘ থেকে তাতে মূলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস ছিলো। এই ধুলিমেঘ থেকে আমাদের সূর্যসহ বাকি সব গ্রহ-উপগ্রহের জন্ম। তাই সৌরজগতের গ্রহ গুলোতে লোহা থাকার কোন সম্ভাবনা ছিলো না। কিন্তু মহাবিশ্বের অন্যান্য জায়গায় সুপারনোভার ফলে সৃষ্টি হওয়া লোহা উল্কাপিন্ড রূপে পৃথিবীতে আছড়ে পরে। কোটি কোটি বছর ধরে এই উল্কাপাত চলতে থাকে এবং পৃথিবীর বুকে লোহা জমা হতে থাকে। অর্থাৎ এই লোহা আকাশ থেকে এসেছে পৃথিবীতে।
এবার তাকাই পবিত্র কোরআনের দিকে। কোরআনের ৫৭ নম্বর সুরাটির নাম, সুরা হাদীদ। হাদীদ শব্দটির অর্থই হচ্ছে লোহা। কিন্তু কোরআনের একটা সুরার নাম আল্লাহ কেন লোহা রাখলেন? এর উত্তর কিছুটা পাওয়া যায় সুরার ২৫ নম্বর আয়াতে। আল্লাহ বলেন, “এবং আমরা আকাশ থেকে লোহাকে তার মহান শক্তি দিয়ে নাযিল করেছি, মানবতার জন্য উপকারিতা দিয়ে। এবং তাদের জন্য প্রমাণ হিসেবে যারা আল্লাহর কে না দেখেই তাঁর এবং তাঁর রসূলদের জন্য দাঁড়াতে ইচ্ছুক। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশক্তিমান, পরাক্রমশালী” [সুরা হাদীদ, আয়াত: ২৫]
এই আয়াতটিতে আল্লাহ লোহা পাঠানো বুঝাতে ‘আনজালনা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আনজালনা শব্দটি এসেছে নাজিল শব্দ থেকে, যার অর্থ উপর থেকে বা আকাশ থেকে কিছু পাঠানো। অর্থাৎ, কোরআনে আল্লাহ বলছেন তিনি আকাশ থেকে লোহা পাঠিয়েছেন মানবজাতির কল্যাণের জন্য। আর বর্তমান বিজ্ঞানের কল্যাণে আমরা দেখলাম আসলেও লোহার উৎপত্তি এই পৃথিবীতে না। উল্কাপিন্ড রূপে এটি এসেছে আকাশ থেকেই।
যুগ যত আধুনিক হচ্ছে, বিজ্ঞান তত এগিয়ে যাচ্ছে। আর বিজ্ঞান যত এগিয়ে যাচ্ছে পবিত্র কোরআনের বর্ণনা আরও স্পষ্টভাবে আমরা বুঝতে পারছি। আমাদের চারদিকে রয়েছে আল্লাহর অস্তিত্বের নিদর্শন। আর এসব নিদর্শনের জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে হিদায়াতের উপহার। মহান আল্লাহ আমাদের তাঁর নিদর্শণগুলো বুঝার তৌফিক দিক।
Collected