21/11/2023
স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির আধিক্য, হৃদরোগ ইত্যাদি সমস্যার কারণ হিসেবে বাড়তি ওজন চিহ্নিত হয়েছে। এটি আরও নানা রোগব্যাধির জন্য দায়ী। শরীরের ওজন যদি উচ্চতার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন মানুষের সুস্থতা বা সৌন্দর্য বলতে কিছুই থাকে না। মানসিক, শারীরিকসহ নানা রোগের উৎপত্তি হয়। দৈনন্দিন কাজেও নানা রকম বিঘ্ন ঘটে। অল্প পরিশ্রমে ক্লান্তি আসে, সক্ষমতাও কমে যায়। কোনো কাজ সহজভাবে করা কঠিন হয়ে পড়ে। দেখা দিতে পারে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা।
অতিরিক্ত ওজনের কারণে দেখা দিতে পারে ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র। অতিরিক্ত ওজনসম্পন্ন মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হলে ডায়াবেটিসজনিত জটিলতাও বেশি মাত্রায় দেখা দেয়। অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা গেঁটে বাতের কারণে অস্থিসন্ধি শরীরের ওজন বহন করে। দীর্ঘ দিন অতিরিক্ত ওজন বহন করার জন্য অস্থি সন্ধিতে পরিবর্তন দেখা দেয়। ফলে নানা রকম বাত ব্যথা হয়। মেরুদ , কোমর ও হাঁটুতে ব্যথা বা প্রদাহ হতে পারে। গেঁটে বাতের ফলে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। লিভার বা যকৃতে চর্বি জমে অকার্যকর করে দিতে পারে। একই সঙ্গে যকৃতের নানা সমস্যা, এমনকি লিভার সিরোসিস পর্যন্ত হতে পারে। স্থূলকায় মানুষের পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সাধারণ দেহের মানুষের তুলনায় তাদের, বিশেষ করে যদি ৪০ বছরের বেশি বয়সী নারী হন, পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। পেটের পেশির সংকোচন ও প্রসারণ দুর্বল হয়ে পড়ে, হার্নিয়ার ঝুঁঁকি বেড়ে যায়। কোনো অস্ত্রোপচারের পর সেই সেলাইয়েও সহজে হার্নিয়া হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া পেটের খাদ্য খাদ্য নালিতে উঠে আসা বা রিফ্লাক্সের কারণও ওজনাধিক্য। স্থূলতার সঙ্গে ইদানীং নানা ধরনের ক্যান্সারের সম্পৃক্ততাও মিলেছে। খাদ্যনালি, অন্ত্র, যকৃত, স্তন ক্যান্সার এবং লসিকা গ্রন্থির ক্যান্সারের সঙ্গেও স্থূূলতার সম্পর্ক আছে। স্থূূলকায় মানুষের পায়ের শিরা অনেক সময় ফুলে ওঠে। একে বলে ভ্যারিকোস ভেইন। জটিলতা বেড়ে গেলে এ থেকে পরিত্রাণে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। নাক ডাকা ও ঘুমের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার বড় কারণ স্থুলতা। স্লিপ এপনিয়ার রোগীর হৃদরোগ, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। স্থূলতার কারণে অনেক সময় সন্তান ধারণে সমস্যা হয়। স্থূল কিশোরী ও তরুণীদের ডিম্বাশয়ে সিস্ট ও অনিয়মিত মাসিক থেকে শুরু করে বন্ধ্যত্ব ও জরায়ুতে সিস্ট ও উর্বরতা হ্রাসের কারণ হিসেবে স্থূলতা দায়ী। ত্বকের রঙ কালো হয়ে যাওয়া বা অ্যাকানথোসিস নাইগ্রিক্যানস, ত্বকের কুঁচকিতে সংক্রমণ স্থূল শরীরের ব্যক্তিদেরই সমস্যা। অবাঞ্ছিত লোম ইত্যাদি সমস্যাও হতে পারে। এ ছাড়া বিষণ্নতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব বা সামাজিকভাবে হেয় হওয়া ইত্যাদি স্থূলতার সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। তাই শুধু হৃদরোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপই নয়; বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলে আপনি নানাবিধ সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারেন।