12/06/2025
অভিনেতা সমু চৌধুরী সম্ভবত ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত। অসংখ্য কারণের মাঝে বার্ধক্য একটি। এছাড়া স্ট্রোক, পারকিনসন্স ডিজিজ, জেনেটিক্স ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে ডিমেনশিয়া হতে পারে। ইতিহাস নিলে হয়তো পাওয়া যাবে, তিনি অনেকদিন ধরেই একই কাজ বারবার করেন, একই কথা বারবার বলেন, একই ব্যক্তিকে বারবার খোঁজেন।
ডিমেনশিয়া একটা নিউরো-সাইকিয়াট্রিক ডিসঅর্ডার। অনেকেই এটাকে অ্যামনেশিয়া বা স্মৃতিভ্রমের সাথে গুলিয়ে ফেলেন। কিন্তু এটা আসলে আরো অনেক জটিল।
প্রথম কথা হচ্ছে, ডিমেনশিয়া কখনো ঠিক হয় না এবং সময়ের সাথে সাথে এটা বাড়তে থাকে। কিছু ওষুধ কাজ করে বলে দাবী করা হলেও তেমন কোনো দীর্ঘমেয়াদী রেসপন্স আসলে পাওয়া যায় না।
দ্বিতীয় কথা হলো, ডিমেনশিয়া মানেই অ্যালঝেইমার্স নয়। ঐটা ডিমেনশিয়ার একটা ধরণ মাত্র।
এখন আসি ডিমেনশিয়াতে কী কী হয় সেটা নিয়ে। মেডিকেল সায়েন্স কপচায়ে লাভ নাই। সহজ বাংলায় বললে, ডিমেনশিয়াতে অর্জিত স্মৃতি, ব্যক্তিত্বের গুণাবলী, ভাষা এবং দক্ষতা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়।
এখানে স্মৃতিশক্তি হারানোটা আসলে কী বুঝায়? আমজনতা তো বটেই মেডিসিন ফ্যাকাল্টির বাইরের ডাক্তারদেরও অনেকেই ধরে নেন, বাবা তো ত্রিশ বছর আগের কথাও বলে দিচ্ছেন। তাহলে ডাক্তার কেন বলছেন যে উনি ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত?
এর কারণ হলো ডিমেনশিয়ার একদম শুরুতে রোগী রিসেন্ট মেমোরি হারানো শুরু করেন। একদম বেইসিক জিনিস যেগুলো সহজে নজরে পড়ে না। যেমন, চাবি কোথাও রেখে ভুলে যাওয়াটা আমাদের সবার সাথেই হয়, তাই আমরা শুরুতে এই জিনিসটা ধরতে পারি না। অনেক রোগী এই পর্যায়ে নিজেই বলতে পারেন যে উনি বারবার ভুলে যাচ্ছেন। যত সময় যায়, রোগী আস্তে আস্তে পেছনের কথা ভুলতে থাকেন। মানে এখানে স্মৃতিশক্তি হারায় বর্তমান থেকে উল্টোদিকে।
ছয় মাস পর কোনো এক সকালে দেখা যায়, রোগী তার ছোট নাতিকে চিনতে পারছেন না কিন্তু বড় নাতিকে ঠিকই চিনতে পারছেন এবং বারবার ছোটজনকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করছেন যে এটা কে। এর কয়েক বছর পর দেখা যায়, রোগী এখন তার নিজের সন্তানের স্ত্রীর সাথেও অপরিচিতের মতো আচরণ করছেন। একসময় রোগী সম্পূর্ণ চুপচাপ হয়ে যান।
স্মৃতিশক্তি ছাড়াও রোগী আরো অনেক কিছুই হারাতে থাকে। যেমন, রোগী আগে অনেক রাশভারী ছিলেন, এখন একদম নরম হয়ে গেছেন। রোগী আগে ভালো বক্তৃতা দিতেন, এখন ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। খাবার মুখে নিয়ে বসে থাকেন। একই পজিশনে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে বা শুয়ে থাকেন। দিনে ঘুমান, সারারাত জেগে পাগলামি করেন। দেখে মনে হবে, এক মাসের কোনো শিশুকে অ্যাডাল্ট মানুষের শরীরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। শরীর বড় হলেও, আচার আচরণ সব শিশুর মতো।
এর সাথে যোগ হয় অস্বাভাবিক আচরণ। যেমন, কারণ ছাড়াই প্রচন্ড ভয় পাওয়া, অমূলক সন্দেহপ্রবণতা, গায়ে বা বিছানায় পোকামাকড় দেখা বা অনুভব করা, যেখানে সেখানে প্রস্রাব-পায়খানা করে দেয়া ইত্যাদি।
নিজের চোখে দেখা সবচেয়ে এক্সট্রিম ডিমেনশিয়ার কেইসটা লিখে শেষ করি। মহিলা রোগী মোটামুটি সবসময় কমবেশি নরমাল আচরণ করেন। একটাই সমস্যা, ছেলের সাথে ছেলের বৌকে দেখলেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। নরমাল মানুষ দেখলে ভাববে হয়তো উনি পুত্রবধূকে অপছন্দ করেন বলে গালিগালাজ করছেন। আসলে তার ছেলের চেহারা দেখতে তার স্বামীর মতো। তার স্বামী বহু আগে মারা গেছেন। কিন্তু রোগীর স্মৃতি দিনকে দিন চলে যাচ্ছে পেছনের দিকে। উনি নিজের ছেলেকে ভাবছেন তার কমবয়সী স্বামী এবং পুত্রবধূকে ভাবছেন পরনারী।
Dementia is probably the cruelest method to torture a human to death.
(পুনশ্চঃ ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিকে দিয়ে কোনো দলিলপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নিলে আদালতে সেটা খারিজ হয়ে যায়।)
© ডা. ইফতেখার চৌধুরী