
08/07/2025
অনেকেই জানতে চান - এনজিওগ্রাম কী এবং এটি কীভাবে হৃদরোগ নির্ণয়ে সহায়তা করে?
আসলে এটি একটি বিশেষ ধরনের পরীক্ষা, যার মাধ্যমে হার্টের রক্তনালিগুলোর প্রকৃত অবস্থা সরাসরি দেখা যায়। কখনো কখনো ইসিজি, ইকো বা ইটিটি স্বাভাবিক থাকলেও রক্তনালিতে ব্লক থাকতে পারে, যা শুধু এনজিওগ্রামের মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা সম্ভব।
✅ এনজিওগ্রাম কী?
📷 এক ধরনের এক্স-রে পরীক্ষা
🩸 এখানে হাত বা পায়ের রক্তনালী দিয়ে ক্যাথেটারের মাধ্যমে হার্টের রক্তনালীতে কনট্রাস্ট বা ডাই ( এক ধরনের মেডিসিন)পুশ করে হার্টের রক্তনালির ব্লক দেখা হয়
🧪এনজিওগ্রামের মাধ্যমে ব্লক কোথায়, কতটা, কত পার্সেন্ট তা নির্ণয় করা যায়।
🔍 কখন করা প্রয়োজন?
- হার্ট এটাকের পর
- হার্ট ফেইল, কার্ডিওমায়োপ্যাথির কারণ জানতে
- বুকে ব্যথা বা চাপ
-হার্টের কারনে অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে যাওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
- ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হাই কোলেস্টেরল এসব রোগীদের হার্টের সমস্যা নিশ্চিত হতে।
- ইসিজি বা ইকো রিপোর্টে হার্টের সমস্যা ধরা পড়লে
⚙️ পদ্ধতি (প্রক্রিয়া):
1. এনজিওগ্রাম এক সময় কুচকির ( Femoral) রক্তনালি দিয়ে করা হতো, যেটা তুলনামূলক কষ্টদায়ক ছিল। এখন আমরা সাধারণত ডান হাতের রক্তনালী দিয়ে করে থাকি। যেখানে একটা ইনসুলিন সিরিঞ্জ দিয়ে লোকাল অ্যানাস্থেশিয়া দেওয়া হয়। রোগী শুধু মাত্র ইনসুলিন দেয়ার মতো ব্যথা বোধ করেন। হাতে এনজিওগ্রাম করলে সব কিছু স্বাভাবিক থাকলে রোগীরা দুই ঘন্টা পর বাসায় চলে যেতে পারেন।
2. এনেন্থেসিয়া দেয়ার পর হাতের রক্তনালী তে একটা সরু টিউব (ক্যাথেটার) প্রবেশ করানো হয়। যেটা সম্পূর্ণ ব্যথামুক্ত।
3. এরপর এই টিউব দিয়ে ডাই পুশ করে এক্স-রে তে ছবি তোলা হয়। ব্যস এনজিওগ্রাম শেষ।
4. সাধারণত একটা এনজিওগ্রাম করতে ১০-২০ মিনিট সময় লাগে। তবে এনজিওগ্রামের আগে রক্তের বেশ কিছু ফিটনেস টেস্ট দেখে নিতে হয়।
5. সবশেষে রিপোর্ট অনুযায়ী চিকিৎসা নির্ধারণঃ ব্লক অনুযায়ী কখনো ঔষধ, কখনো রিং বা এনজিওপ্লাস্টি, কখনো আবার বাইপাস প্রয়োজন পড়ে।
🛡️ সম্ভাব্য ঝুঁকি (খুব কম):
- অল্প রক্তপাত বা ব্যথা
- অ্যালার্জি
- কিডনিতে সাময়িক চাপ
- ১০০০০ মানুষের এনজিওগ্রাম করলে ১ জনের খুব বিরল কিছু জটিলতা হতে পারে। যেটা খুবই রেয়ার।
🧾 পরীক্ষার পর করণীয়:
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে
- পরিমাণ মতো পানি খেতে হবে
- হাতে পা পায়ের ক্যাথেটার প্রবেশের স্থানে ভার না দেওয়া, এক সপ্তাহ ঐ হাত দিয়ে ভারী জিনিস না আলগানো। পায়ে করা হলে পা ভাঁজ করে নিচে / মাটিতে না বসা।
- রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন।
❌ এনজিওগ্রাম নিয়ে ভুল ধারণা
🚫 এটা অপারেশন বা হৃদরোগের চিকিৎসা নয় বরং হৃদরোগ নির্নয়ের পরীক্ষা।
🚫 শুধু এনজিওগ্রামে কোন ব্লক খোলে না
🚫 এনজিওগ্রাম করলেই সব সময় রিং বা বাইপাস লাগে না।
🚫 এটাতে তেমন কোন ব্যথা নাই। এটা শুধুই এক্সরে এর মতো একটা পরীক্ষা।
কারা এনজিওগ্রাম করেনঃ
সাধারণত হৃদরোগের উপর ডিগ্রীধারী ও প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিষ্টরা করে থাকেন।
✅ স্মরণে রাখুন:
🕒 সময়মতো এনজিওগ্রাম মানে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা
🧑⚕️ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শই নিরাপদ পথ
❤️ সচেতন থাকুন, হৃদয়কে সুস্থ রাখুন
আপনার হৃদয়ের খবর রাখুন —প্রয়োজনে এনজিওগ্রাম জানাবে তার ভিতরের কথা।