06/02/2025
রোগীকে জিজ্ঞাসা করলাম, মা কি সমস্যা আপনার?
রোগী : বিশাল সমস্যা বাবা।
আমি: বলেন কি বিশাল সমস্যা?
রোগী : পেটের সমস্যা
আমি: পেটের কি সমস্যা
রোগী : গ্যাসের সমস্যা
আমি : এইটা যে গ্যাসের সমস্যা তা বুঝলেন কিভাবে?
রোগী : পেট ফুলে থাকে, কিছু খাইতে পারি না।পায়খানার রাস্তা দিয়ে শুধু গ্যাস বাইর হয়।......................
আরও বিস্তারিত রোগের ইতিহাস নিলাম, শারিরীক পরীক্ষা করলাম। পরে কনফার্ম হবার জন্য কিছু ল্যাবরেটরি ইনভেস্টিগেশন করলাম। ফাইনালি উনার রোগ নির্নয় হলো, Non Ulcer Dyspepsia.
আমাদের অনেকেরই ধারনা কিছু খেলেই গ্যাস হয়, গ্যাসের জন্য পেট ফুলে যায়,প্রচুর পাদ হয়।সুতরাং এগুলো গ্যাসের সমস্যা।বছরের পর বছর তথাকথিত গ্যাসের ঔষধ খেয়ে যান।
অথচ বাস্তবতা হলে গ্যাস বা গ্যাস্ট্রিক বলে কোন রোগ পৃথিবীতে নেই।
আসলে আমরা যে খাবার প্রতিদিন খাই, তা পেটের ভেতরে গিয়ে নানা কেমিক্যাল, ব্যাকটেরিয়া ও এনজামের মাধ্যমে হজম হয়।এই হজম প্রক্রিয়ায় খুব ন্যাচারালি কিছু গ্যাস তৈরি হবে।এখন আপনি এগুলো না খেয়ে যদি একটা পাত্রে রেখে দেন দেখবেন ২৪ ঘন্টা পরে সেখান থেকে গ্যাস বের হচ্ছে।তার মানে খাবার হজমের প্রক্রিয়ায় কিছু গ্যাস হওয়া খুবই স্বাভাবিক বিষয়। তবে হ্যা, বিভিন্ন কারনে এটা কিছু কম বেশি হতে পারে।কিন্তু আপনি খাবার খাবেন ২ থালা আর কোন গ্যাস পেটে হবে না এট অসম্ভব ব্যাপার।
আমাদের শরীর হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে কমপ্লেক্স একটা ফ্যাক্টরি। সেখানে খাবার হচ্ছে জ্বলানী।ফ্যাক্টরিতে যখন জ্বালানি ব্যবহার হবে তখন গ্যাস তৈরি হবেই।বরং কারও যদি গ্যাস না হয় আমরা ভয় পেয়ে যাই। বিশেষ করে সার্জনরা অপারেশনের পরের দিন গ্যাসের / পাদের খোজ খুব আগ্রহের সাথে নেন।কারণ আপনার গ্যাস হচ্ছে মানে আপনার ফ্যাক্টরি ঠিক আছে, পরিপাকতন্ত্র যথাযথ ভাবে কাজ করতেছে।
সুতরাং,
১) ডাক্তারের নিকট আপনার সমস্যা খুলে বলুন। আপনার কি রোগ সেটা উনিই নির্নয় করে চিকিৎসা দিবেন। উনাকে ভুলভাল রোগের নাম বলার দরকার নাই।
২)গ্যাসকে হা বলুন।গ্যাস আপনার জন্য ব্লেসিং।গ্যাস নিয়ে অস্থির হবেন না।
৩) গ্যাস গ্যাস করে আজীবন সো কলড স্যাকলো, সার্জেল, এক্সিয়াম ইত্যাদি ঔষধ আজীবন খাবেন না।রক্তশূন্যতা, হাড়ের ক্ষয়, খাদ্য তন্ত্রে ইনফেকশন, কিডনি জটিলতা সহ বিভিন্ন রোগের কারন হচ্ছে এই অতিরিক্ত "গ্যাসের" ঔষধ সেবন।
৪) নিজে নিজে ডাক্তারি না করে এই কাজ যার করার তাকেই করতে দিন।
শুভ রাত্রি।