26/07/2025
আমি একজন ডাক্তার।
ডাক্তারী পেশাটাকে নিয়ে আমি গর্বিত। সব পেশাতেই মানবসেবার সুযোগ থাকলেও এই পেশাতে সুযোগ অনেক বেশি। আমি এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাচ্ছি। সমালোচনাকারী ও সোসাল মিডিয়ায় সস্তা ভিউ ভিখারীরা আমাকে কসাই দালাল যাই বলুক না কেন, আমার কিছু যায় আসেনা। আমি তো আমাকে চিনি, আমার কর্তৃপক্ষ আমার সম্পর্কে জানেন, আমার রোগীরা আমাকে চিনে, আমার সহকর্মীরা আমাকে চিনে, আরার বন্ধুরা আমাকে চিনে, আমার পরিবার আমাকে চিনে-এটাই আমার জন্য যতেষ্ট।
বিশ বছরের ডাক্তারীজীবনে কোন ডায়াগনস্টিক বা ফার্মাসিউটিক্যাল থেকে কখনও এক টাকাও কমিশন নিইনি। চাকরী বা পোস্টিংএ কোন অবৈধ সুযোগ খুজিনি। যা কিছু পেয়েছি, যা কিছু হয়েছি নিজ মেধায়, নিজ যোগ্যতায়, নিজ চেষ্টায়।নিজের চরিত্র, সততা, নৈতিকতা ও পেশাদ্বারিত্ব নিয়ে গর্বিত আমি। তাই মিথ্যে সমালোচকদের নিয়ে বিব্রতবোধ করিনা, করবার প্রয়োজন বোধ করিনা।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশে পাশের ৭-৮ জেলার বৃহৎ জনগোষ্ঠী চিকিৎসা নিতে আসে। সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দিকে তাকিয়েছেন কখনও। নব্বই শতাংশ মানুষ গরীব অসহায়। সীমিত সুযোগ সুবিধার ভিতর বিশাল জনবলের চিকিৎসা নিশ্চিত করা অতটা সহজ কাজ নয়।প্রয়োজনীয়তার প্রাধিকারের ভিতর সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করতে হয়। দিনরাত কাজ করছেন সম্মানিত পরিচালক মহোদয়, ডেপুটি পরিচালক, সহকারী পরিচালকবৃন্দ, অধ্যপক, সহযোগী অধাপক,সহকারী অধ্যাপক, কনসালটেন্ট, মেডিকেল অফিসার, প্রশিক্ষনার্থী চিকিৎসকগন, নার্স, টেকনিশিয়ান ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীগন। সবাই নিজের সামর্থের সবটুকো দিয়ে কাজ করছে। আমরা বসে নেই, এই হাসপাতালের সুযোগ্য পরিচালকের অধীনে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি আমরা ডাক্তার, নার্স সহ শতশত সেবাকর্মী।
বিছানা, ফ্লোর, বারান্দায় শুয়ে থাকা রোগীরা আমাদেরই ভাই বোন, বাবা-মা। করিডোরে হাটার সময় নিদের এলাকাবাসী, প্রতিবেশী, আত্মীয়, অনাত্মীয় ও শুভাকাঙ্খীদেরও শুয়ে থাকতে দেখা যায়। কারো ভর্তিতে বিলম্ব, অপারেশনে বিলম্ব আমার বা আমাদের ইচ্ছাকৃত নয়। সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসার গুনগত মান বৃদ্ধিতে সরকার সর্বদা সচেষ্ট। আমরাদের চেষ্টাও অব্যহত আছে।
আমার ইউরোলজি বিভাগে প্রতিদিন ৮০-১০০ দন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসে। প্রায় অর্ধেক রোগী অপারেশনের প্রয়োজন হয়। সবাইকে আসার সাথে সাথে ভর্তি করে, সব টেস্ট করে অপারেশন করে দেয়া বাস্তবসম্মত নয়। তাই প্রাধিকার ভিতিতে সিরিয়ালে অপেক্ষা করতে হয়।
কেউ অপেক্ষা না করে বাইরে টেস্ট করাইতে চাইলে আমি নিষেধ করতে পারিনা। বাইরে দালাল প্রতারকদের হাত থেকে বাচার জন্য পরীক্ষার খরচ এমনকি সরবরাহ না থাকা ওষুধের দামও জানতে চায় রোগীরা। কোন ক্লিনিক বা ওষুধের দোকানের নাম না বলে দামের আইডিয়া দেয়াটা আমার কাছে সমীচিন মনে হয়েছে। না হলে তথাকথিত প্রতারক চক্র গ্রাম থেকে আসা রোগীদের পকেট কাটতে দ্বিধা করেনা। কখনও রোগীদেরকে কোন বেসরকারী হাসপাতালের নাম সাজেস্ট করিনা।সরকারী হাসপাতালের আমরা রুমে প্রাইভেট চেম্বারেরর কোন কার্ড রাখিনা।
প্রাইভেস প্র্যাকটিস ডাক্তারদের জন্য কোন নিষিদ্ধ কাজ না। সম্মানের সাথে দীর্ঘদিন ইথিক্যাল প্র্যকটিসের মাধ্যমে রোগীদের সেবা দিয়ে আসছি। আমার চেম্বারের গরীব রোগীদের ভিজিট না নিয়ে প্রাইভেট চেম্বার থেকে সরকারী হাসপাতানে চিকিৎসা নিতে পাঠানো রুগীর সংখ্যা নিতান্ত কম না। প্রাইভেট হাসপাতালে বিনা পয়সায় গরীব রোগীদের অপারেশন এর সংখ্যাও কম না।
নিয়ম অনুযায়ী অপারেশন রুগীদের অপারেশনের পদ্ধতিগুলো এবং সম্ভাব্য পার্শপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানানো মানে ভয় ভিতি প্রদর্শন নয়। প্রাইভেট অপারেশনে কাউকে বাধ্য করার সুযোগ নেই। সরকারী হাসপাতালে প্রতিদিন ব্যবহার হওয়া অপারেশনের যন্ত্রপাতির কোনটা সাময়িক বিকল হওয়া অস্বাভাবিক নয়। হাসপাতালে অপারেশন করতে চাওয়া রোগীকে সঠিক তথ্য প্রদান করা মানে হাসপাতাল নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো নয়।
তুমি সাংবাদিক নও। ফেক ভিডিং তৈরী করে ব্ল্যকমেইল করে টাকা আদায় তোমার পেশা। তুমি প্রতারক। আমি অসৎ নই, অপরাধী নই, তোমার কাছে মাথা নত না করাটা আমার প্রথম প্রতিবাদ। সাংবাদিকতা মহান পেশা, তুমি সেই পেশাকে কলঙ্কিত করেছো।
ডাঃ মোঃ ইব্রাহিম আলী
আবাসিক সার্জন (ইউরোলজি)
ময়মনসিংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।