25/09/2018
ডা. আমজাদ হোসেন
আমজাদ হোসেনের জন্ম ১৯২২ সালের ২১শে নভেম্বর। ছাত্রজীবন থেকেই মেধার স্বাক্ষর রাখা আমজাদ হোসেন ১৯৫৪ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল স্কুল থেকে এলএমএফ পাশ করে লোভনীয় সব চাকরীর সুযোগ পায়ে ঠেলে চলে আসেন নিজ এলাকা নবীনগরে। ইচ্ছা নিজের এলাকার মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা।
নবীনগরের উন্নতিকল্পে তিনি কাজ করে গেছেন নিরন্তর। নবীনগরের যোগাযোগ ব্যাবস্থা উন্নয়নে তাঁর ছিলো এক অনবদ্য ভূমিকা। এই এলাকার প্রথম দিকের সমস্ত রাস্তাঘাট তৈরীতে তাঁর ভূমিকা ছিলো অগ্রগণ্য।
বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ডা. আমজাদ হোসেন এলাকায় নারী শিক্ষা বিস্তারের জন্যে ঐসময়েই স্থাপন করেছেন ইচ্ছাময়ী গার্লস স্কুল। এছাড়াও ছিলেন নবীনগর সরকারী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। এলাকার শতবর্ষী নবীনগর পাইলট স্কুলে তিনি টানা ১৫ বছর সভাপতির পদ অলংকৃত করেছেন।
রাজনীতি সচেতন ডা. আমজাদ হোসেন পাকিস্তান শাষনামল থেকেই ছিলেন রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। তাঁরই কন্যার নামে প্রতিষ্ঠিত “লিলি ক্লিনিক” ছিলো বিশিষ্ট রাজনীতিবিদদের আলোচনার নিরাপদ জায়গা।
১৯৭০ এর জাতীয় নির্বাচনের পর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি আগরতলার হাপানিয়া ক্যাম্পে সহকারী মেডিকেল অফিসার নিযুক্ত হন। ২ নং সেক্টরের মেলাঘর হেডকোয়ার্টারে ক্যাপ্টেন খালেদ মোশাররফ ও হায়দার আলীর সাথে সরাসরি কাজ করেছেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে। এ বছরেরই অগাষ্ট মাসের দিকে নবীনগরে ফিরে এসে রসুল্লাবাদ গ্রামে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যে স্থাপন করেন হাসপাতাল। অক্টোবরে সেই হাসপাতাল হানাদার বাহীনির আক্রমনে ধ্বংস হয়ে যায়। অদম্য ডা আমজাদ হোসেন এরপর নবীনগরের দাল্লামহল্লা গ্রামে স্থাপন করেন আরেকটি হাসপাতাল। নভেম্বরের শেষ দিকে নবীনগরের নিজ এলাকা আলমনগরে অবস্থান করে মুক্তাঞ্চল ঘোষনার আগ পর্যন্ত সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। (বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র- ৩য় পত্র, পৃষ্ঠা ৬৩৫)
স্বাধীনতার পরপর স্বদেশ বিনির্মানেও ডা. আমজাদ হোসেনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিলো। তিনি ছিলেন হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি , নবীনগর রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সভাপতি , আমরা ধূমপান নিবারণ করি নামক, নবীনগর শাখার সভাপতি।
১৯৯৭ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী এই মহৎ প্রাণ ,লোকসেবী বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মৃত্যুবরণ করেন।