28/05/2023
নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস আজ
আজ রবিবার (২৮ মে) নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। প্রতি বছর এই দিনে নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু হার কমানো ও নবজাতকের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে এ বিষয়ে অনুমোদন দেন। ১৯৯৮ সাল থেকে দেশব্যাপী নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালন শুরু হয়। ২০১৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ উদ্যোগ টেকসই উন্নয়নের অন্তর্ভুক্ত করে। নিরাপদ মাতৃত্বের কার্যক্রম পরিচালনা করে সরকার, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংগঠন।
গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন জটিলতার কারণে বিশ্বে প্রতিদিন ৮৩০ নারীর মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৯৯ শতাংশের মৃত্যু ঘটে উন্নয়নশীল দেশে। ১৯৮৭ সালে কেনিয়ায় নাইরোবি কনফারেন্স এই নিরাপদ মাতৃত্বের ঘোষণা করা হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ২০০০ সালের দিকে ৫০ শতাংশ মাতৃমৃত্যু কমানো। এসব কার্যক্রমে ২০০০-২০১৭ পর্যন্ত মাতৃমৃত্যুর হার ৩৮ শতাংশ কমে। আমাদের দেশে প্রতি ১ লাখ প্রসবের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার ১৬৫ জন। ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়নে এ সংখ্যা ৭০ জনে কমিয়ে আনতে হবে।
গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়ে সব নারীর জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণই হলো নিরাপদ মাতৃত্ব। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘গর্ভকালে চারবার সেবা গ্রহণ করি নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করি’।
গর্ভকালীন সময়ে যা করণীয়:
১। গর্ভাবস্থায় কমপক্ষে চারবার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র বা সদর হাসপাতালে এসে শারীরিক পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।
২। গর্ভধারণের ৪ থেকে ৮ মাসের মধ্যে মাকে দুই ডোজ টিটি টিকা নিতে হবে।
৩। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি করে পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খেতে হবে (খাবারের তালিকায় সাধ্যমত ফল-মূল, সবুজ শাক-সবজি, ডাল, সীম, মাছ, মাংস,ডিম, দুধ, ছোট মাছ ইত্যাদি থাকতে হবে)।
৪। প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
৫। ভারি কাজ ছাড়া অন্যান্য দৈনন্দিন কাজ-কর্ম করা যাবে।
৬। দিনের বেলায় কমপক্ষে ১ ঘন্টা বিশ্রাম নিতে হবে।
৭। গর্ভবতী মাকে মানসিকভাবে শান্তিতে রাখতে হবে।
গর্ভকালীন বিপদচিহ্ন যা দেখা দিলে সাথে সাথে সাহায্য নেওয়া উচিত:
১। রক্তস্রাব: গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা পরে খুব বেশি রক্তস্রাব, দুর্গন্ধযুক্তস্রাব, প্রসবের পর গর্ভফুল না পড়া।
২। মাথাব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখা: গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা প্রসবের পর শরীরে পানি আসা, খুব বেশি মাথা ব্যথা হওয়া ও চোখে ঝাপসা দেখা।
৩। ভীষণ জ্বর: গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের পর তিনদিনের বেশি জ্বর থাকা।
৪। বিলম্বিত প্রসব: প্রসব ব্যথা ১২ ঘন্টার বেশি থাকা এবং প্রসবের সময় শিশুর মাথা ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গ আগে বের হওয়া।
৫। খিঁচুনি: গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা প্রসবের পরেও খিঁচুনি হওয়া।
নিরাপদ প্রসব পরিকল্পনার জন্য যা করনীয়:
১। কোথায় কাকে দিয়ে প্রসব করানো হবে, তা আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হবে।
২। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র,উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, মেডিকেল কলেজ বা সদর হাসপাতাল অথবা বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে প্রসব করানো নিরাপদ।
৩। গর্ভকালীন জটিলতার কোনো লক্ষণ দেখা দিলে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র বা কোন হাসপাতালে নিতে হবে-তা আগে থেকেই ঠিক রাখতে হবে।
৪। প্রসবকালীন খরচের জন্য গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় টাকা জমিয়ে রাখতে হবে।
৫। রক্তের গ্রুপ মিলিয়ে আগে থেকেই ২/৩ জন রক্তদাতা ঠিক রাখতে হবে।
৬। জরুরি অবস্থায় গর্ভবতীকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।