19/03/2025
" ইতিবাচক মনোবিজ্ঞান"
নিয়ে লেখার আগ্রহ ছিল ভালো কোন রেফারেন্স পাচ্ছিলাম না
ইতিবাচক মনোবিজ্ঞান কি ?
ইদানীং ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে চারপাশে বিভিন্ন রকম আলোচনা চলছে।
এমনকি যেইসব বইয়ের মলাটে আনন্দ বা খুশি জাতীয় কিছু লেখা থাকে, তাঁদের কাটতিও বেশী হয়।
তাছাড়া বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এই বিষয়ে লেখা বেরিয়েছে। আমেরিকাতে প্রায় ২০০‘র ওপর কলেজে এই বিষয়টি বিস্তারিত ভাবে পড়ানো শুরু করা হয়েছে।
হঠাৎ এই আগ্রহের কারণ কী?
প্রায় এক শতকেরও বেশি সময় ধরে
মনোবিজ্ঞানে পড়াশোনাই হোক
বা চিকিৎসা,
সবার মনোযোগ বিকার এবং
মানসিক সমস্যার দিকেই ছিল।
এর একটা বড় কারণ হল যারাই এই ক্ষেত্রে গবেষণা করেছেন,
যেমন ধরুন সিগ্ম্যান ফ্রয়েড, তাঁরা সকলেই চিকিৎসা জগতের সাথে যুক্ত ছিলেন।
তারপর, ১৯৯৮ সালে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাঃ মার্টিন সেলিগ্ম্যান আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হন।
উনি নিজের পদমর্যাদার বলে
ইতিবাচক মানসিকতা
যেমন, মানবিকতা, দয়া, কৌতূহল, সৃজনশীলতা, সাহস, ক্ষমাশীল মন, আশা, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা শুরু করেন।
কিন্তু সেলিগ্ম্যানই প্রথম নন,
তাঁর ৬০ বছর আগে অ্যাব্রাহাম ম্যাস্লো অবধি এই বিষয়ে গবেষণা করে গেছেন।
তিনি ব্যক্তিত্ব ও অনুপ্রেরণা, আত্ম-উপলব্ধি, ইত্যাদি নিয়ে তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু স্থানাভাবে আজ আমরা শুধুমাত্র দুটি বিষয় নিয়ে এখানে আলোচনা করব: কর্মগতি ও বন্ধুত্বের প্রয়োজন নিয়ে।
*** কর্মগতি ***
আপনি কখনও এমন কিছু করেছেন যে সময় কোথা দিয়ে কেটে গেছে কিছু বুঝতেই পারেননি?
যদি এর উত্তর হ্যাঁ হয়, তবে আপনি কর্মগতির স্বাদ পেয়েছেন যা আজ সমস্ত মনোবিদের কাছেই খুব প্রাসঙ্গিক বিষয়।
কারণ এই রকম মুহুর্ত গুলিতে আপনি সব থেকে বেশি কাজ করতে পারেন, যা কর্মক্ষেত্রে খুবই জরুরি।
এই বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোড়ন ফেলেন ডাঃ মিহাই চিকসেন্টমিহাই।
১৯৩৪ সালে হাঙ্গারিতে জন্মগ্রহণ করার পর মিহাই নিজের শৈশব দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বন্দী হিসেবে কাটান।
সেখানেই তিনি দাবা খেলা নিয়ে নিজের অসীম উৎসাহ আবিষ্কার করেন। উনি পরে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন,
"এটা আমার জন্যে এক অন্য জগতে প্রবেশ করার মায়াবী দরজা ছিল।
আমি ঘন্টার পর ঘন্টা সেই দাবার জগতে হারিয়ে যেতাম যেখানে সব কিছুরই নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন ছিল।”
কিশোর বয়সে তিনি ছবি আঁকতে গিয়ে দেখলেন যে সেটিও যথেষ্ট মজাদার একটি কাজ—এবং ১৯৬৫ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পরে, তিনি শিল্পী এবং সৃজনশীল ব্যক্তিদের উপরে একটি অভিনব গবেষণা চালান।
সেখান থেকেই তিনি কর্মগতি নিয়ে আবিষ্কার করেন – তাঁর ভাষায়,
“মস্তিষ্কের এমন একটি অবস্থা যাতে কোনও কাজ করা কালীন আপনার বাহ্যজ্ঞ্যান থাকবে না।”
ডাঃ চিকসেন্টমিহাই কর্মগতির ৮টি লক্ষণ খুঁজে পেয়েছেন:
১) কর্ম ও জ্ঞ্যানের মিশ্রণ, যা আপনাকে সেই কাজের প্রতি সম্পূর্ণ রূপে আকৃষ্ট করে ;
২) হাতের কাজে সম্পূর্ণ মনোযোগ দেবার ফলে অন্য কিছুতে মন বসে না;
৩) ভুল হবার দুশ্চিন্তা না থাকা;
৪) আত্ম-অহংকারের বিলুপ্তি ;
৫) দ্রুত গতিতে সময় কেটে যায় ;
৬) কাজের শেষে অনাবিল আত্মতৃপ্তি ;
৭) এই কাজের জন্য আপনাকে কোনও একটি বিশেষ গুনের অধিকারী হতে হবে, যা অন্য কারও নেই ;
৮) কাজের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং পরিণতি থাকবে।
***বন্ধুত্ব***
আপনার জীবনে কোনো বিশ্বস্ত বন্ধু আছেন কী?
২৫ বছরেরও বেশী সময় ধরে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিকেরা বিশ্বস্ত বন্ধুত্ব এবং সুস্থতার সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন।
আশ্চর্য্যের ব্যাপার এই, যে এটি কোনও নতুন বিষয় নয়। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটেল বন্ধুত্বকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন—
স্বার্থের সম্পর্ক,
কামনার সম্পর্ক,
আবেগের সম্পর্ক।
তাঁর মতে এই আবেগের সম্পর্কই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের আচার আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে।
মধ্যযুগে, মসেস মায়মনিডিস বলেছেন,
“আমাদের সবার জীবনেই বন্ধু প্রয়োজন। একজন ব্যক্তি সুখে এবং আনন্দে থাকলে, তাঁরও বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে ভাল লাগে। কিন্তু দুর্দিনে সেই বন্ধুদের বাস্তবিক ভাবেই প্রয়োজন হয়। বিশেষত বার্ধক্যে বন্ধুত্ব এক বিশাল ভরসা।”
যদিও অ্যারিস্টটেল এবং মায়মনিডিসের মত দার্শনিকরা অনেক আগেই বন্ধুত্ব এবং সুস্থতার মধ্যে নিবিড় সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন,
কিন্তু তাঁর প্রকৃত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখন আমাদের হাতে আসছে।
এবং এটি একটি বিশাল ক্ষেত্র: মার্কিনি জনতার মাদকাসক্তি থেকে শুরু করে মেক্সিকান পুরুষের দৈনন্দিন অভ্যাস পর্যন্ত।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে একজন বিশ্বাসযোগ্য ভাল বন্ধু থাকলে পরে যে কোনও রকম আত্মঘাতী চিন্তা-ভাবনা হ্রাস পায় এবং শারীরিক অসুস্থতাও কম দেখা যায়।
ব্রিটেনে ওবেসিটি সংক্রান্ত একটি গবেষণায়, ডাঃ পল সার্টিস প্রমাণ করেছেন যে একাকীত্ব দ্রুত আমাদের বার্ধক্যের দিকে ঠেলে দেয়।
রেফারেন্স - ড: এডয়ার্ড হফম্যান
এডয়ার্ড হফ্ম্যান নিউ ইয়র্কের ইয়েশিভা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগে অতিরিক্ত সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন।
এডওয়ার্ড হফ্ম্যান নিউ ইয়র্কে ইয়েশিভা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান ভিভাগের সহকারী অধ্যক্ষ।
তাছাড়া উনি একজন অনুমতিপ্রাপ্ত মনোচিকিৎসক। মনোবিজ্ঞান জগতে ওঁনার সম্পাদিত এবং লেখা ২৫টিরও বেশী বই আছে।
সম্প্রতি ডাঃ উইলিয়াম কম্পটন রচিত পজিটিভ সাইকোলজি: দ্য সায়েন্স অফ্ হ্যাপিনেস অ্যান্ড ফ্লারিশিং বইটিতে সহ লেখকের ভূমিকা পালন করেছেন।
এছাড়া উনি ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ্ পজিটিভ সাইকোলজি এবং জার্নাল অফ্ হিউম্যানিস্টক সাইকোলজি’র সম্পাদক মণ্ডলীর অন্তর্গত।
আপনি তাকে এই বিষয় আরো জানতে চাইলে columns@whiteswanfoundation.org ঠিকানায় চিঠি লিখতে পারেন।