26/06/2025
আজ অলোচনা করব কলোরেক্টাল ক্যান্সার সম্পর্কে।
কলোরেক্টাল ক্যান্সার (Colorectal Cancer) হল বৃহদান্ত্র (colon) ও মলদ্বার (rectum)-এ সৃষ্ট এক ধরনের ক্যান্সার। এটি বিশ্বজুড়ে ক্যান্সারের একটি সাধারণ(কমন) এবং গুরুতর রূপ।
কলোরেক্টাল ক্যান্সার কী?
কলোরেক্টাল ক্যান্সার হলো এমন একধরনের ক্যান্সার যা কোলন বা রেকটামের অভ্যন্তরীণ দেয়ালে গঠিত কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি থেকে শুরু হয়। ধীরে ধীরে এটি টিউমারে পরিণত হয় এবং শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কেন হয়? (কারণসমূহ)
১. বয়স: ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের বেশি দেখা যায়।তবে, যে কোন বয়সেই হতে পারে।
২. জেনেটিক্স: পরিবারে কারও থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।
৩. পলিপস: কোলনের ভিতরে থাকা নিরীহ পলিপ সময়ের সাথে ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।
4. খাদ্যাভ্যাস: বেশি চর্বিযুক্ত, কম আঁশযুক্ত খাবার।
5. ধূমপান ও অ্যালকোহল: দীর্ঘদিন ধূমপান বা অ্যালকোহল গ্রহণ।
6. স্থূলতা (অধিক মোটা) ও অলস জীবনধারা
7. আন্ত্রিক রোগ: যেমন Ulcerative Colitis বা Crohn’s Disease।
লক্ষণসমূহ:
কলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় লক্ষণহীন হতে পারে। তবে সাধারণ লক্ষণগুলো হল:
• মলের সঙ্গে রক্ত যাওয়া
• ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য বারবার হওয়া
• পেট ব্যথা, গ্যাস বা ফাঁপা ভাব
• হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
• ক্লান্তি বা দুর্বলতা
• মলের আকৃতি বা রঙে পরিবর্তন
• মল ত্যাগের পরেও মল বাকি থাকার অনুভূতি
পরীক্ষা ও নিরীক্ষা:
১. স্টুল টেস্ট: মলের মধ্যে রক্ত খোঁজার জন্য।
২. কলনোস্কপি: কোলনের অভ্যন্তর দেখার জন্য ক্যামেরাযুক্ত নল ঢোকানো হয়।
3. সিগময়েডোস্কপি: কোলনের নিচের অংশ পরীক্ষা।
4. CT Colonography (Virtual Colonoscopy)
5. বায়োপসি: টিস্যু সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে ক্যান্সার কোষ আছে কিনা দেখা হয়।
6. CT বা MRI স্ক্যান: ক্যান্সার ছড়িয়েছে কিনা দেখতে।
চিকিৎসা:
চিকিৎসার ধরন নির্ভর করে ক্যান্সারের স্টেজ, অবস্থান ও রোগীর স্বাস্থ্যগত অবস্থা অনুযায়ী।
১. সার্জারি:
• ক্যান্সার আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলা হয়।
• প্রয়োজনে কোলোস্টমি করা হয়।
২. কেমোথেরাপি:
• ক্যান্সার কোষ ধ্বংসের জন্য ওষুধ প্রয়োগ।
৩. রেডিওথেরাপি:
• ক্যান্সার কোষ ধ্বংসের জন্য রেডিয়েশন ব্যবহার।
৪. টার্গেটেড থেরাপি:
• নির্দিষ্ট কোষ বা প্রোটিনকে লক্ষ্য করে চিকিৎসা।
⸻
প্রতিরোধের উপায়:
✅ সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা (আঁশযুক্ত খাবার, ফলমূল, শাকসবজি)
✅ ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার
✅ নিয়মিত ব্যায়াম
✅ স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা
✅ ৫০ বছর বয়সের পর নিয়মিত স্ক্রিনিং
✅ পলিপ থাকলে তা নিয়মিত ফলোআপ ও প্রয়োজনে অপসারণ
✅ পারিবারিক ইতিহাস থাকলে আগে থেকে সতর্ক থাকা
উপসংহার:
কলোরেক্টাল ক্যান্সার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে, তবে চিকিৎসার সফলতার হার অনেক বেশি। তাই নিয়মিত স্ক্রিনিং ও সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।