03/07/2025
ভনিতা ছেড়ে আজ একটা কঠোর সত্য শুনবেন?
আমাদের সমাজে সবচেয়ে হিংস্র প্রশ্নটা কী জানেন? কারো সাথে দীর্ঘদিন পর আলাপ হওয়ার পর,
"কেমন আছিস?" নয়।
সবচেয়ে হিংস্র, সবচেয়ে অপমানজনক প্রশ্ন হলো, তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা,
"তুই এখন কিসে আছিস?"
কারণ এটা কোনও প্রশ্ন নয়। এটা একটা স্ক্যানার।
যখন দূর থেকে কোনও চেনা মুখ এগিয়ে এসে প্রশ্নটা করে, তখন তার চোখ আপনার দিকে তাকায় না।
তার চোখ আপনার পোশাকের ব্র্যান্ড খোঁজে, আপনার হাতে ধরা মোবাইল ফোনটার মডেল জরিপ করে, আপনার কব্জির ঘড়িটার ঔজ্জ্বল্য মাপে।
তার কান আপনার কন্ঠস্বর শোনে না, সে শোনার চেষ্টা করে উত্তরের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কোনো কোম্পানির নাম, কোনো ভারিক্কী পদ বা CTC'র অঙ্ক।
"কিসে আছিস?", এই নিরীহ চেহারার প্রশ্নটা আসলে একটা অদৃশ্য এক্স-রে মেশিন, যা আপনার চামড়া ভেদ করে সোজা আপনার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স আর সামাজিক স্ট্যাটাসটাকে পড়ে ফেলে।
এমনকি ধরুন, বহুদিন পর আপনার দেখা হলো কোনো পুরনো পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে।
আপনি আন্তরিক ভাবে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
"কেমন আছেন আপনি?”
আপনি ভাবলেন, সে-ও হয়তো একইভাবে আপনার খোঁজ নেবে। কিন্তু না।
তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে প্রথম প্রশ্নটাই,
"কিসে আছো এখন?"
আপনি বুঝে যান, এটা খোঁজ নয়, এটা হিসেব।
এটা একটা আপডেট-চাওয়া প্রশ্ন, যাতে সম্পর্কের মানদণ্ড ঠিক করা যায়।
আসুন, প্রশ্নটাকে অনুবাদ করি,
"কিসে আছিস?" মানে হলো,
তোমার দাম কত?
তোমাকে বন্ধু হিসেবে রাখলে আমার প্রোফাইলে ওজন বাড়বে তো?
তোমাকে পারিবারিক অনুষ্ঠানে ডাকলে আত্মীয়রা কী ভাববে?
তোমার সাথে এক টেবিলে বসলে আমার স্ট্যাটাস কমে যাবে না তো?
এই একটামাত্র প্রশ্নে নির্ধারিত হয়ে যায়,
আপনি কতটা সম্মান পাবেন,
কতটা পাত্তা পাবেন,
কোন ক্লাসের লোক বলে ধরা হবে আপনাকে।
আল্টিমেটলি আপনার স্ট্যাটাস কতটা!
এর ফলে,
যে ছেলেটা নিজের উদ্যোগে কিছু করার স্বপ্ন দেখছিল, সে সবার প্রশ্নের ভয়ে একটা "নিশ্চিত" চাকরিতে ঢুকে পড়ে।
যে মেয়েটা দুর্দান্ত ছবি আঁকত, সে তুলি-রঙ বাক্সবন্দী করে রাখে, কারণ "ছবি এঁকে কী হবে?" এই প্রশ্নটাই তার আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেয়।
যে মানুষটা অবসাদে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, সেও মুখে হাসি ঝুলিয়ে রাখে, কারণ কেউ তার যন্ত্রণা জানতে চায় না, সবাই শুধু তার অবস্থা নিয়ে মন্তব্য করতে প্রস্তুত।
আমাদের চারপাশে প্রতিদিন হাজারো মানুষ মুখোশ পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নিজের স্বপ্নকে শেষ করে বাঁচতে শিখেছে তারা। শুধু এই একটামাত্র প্রশ্নের জন্য।
দয়া করে তাকে জিজ্ঞাসা করুন সে কেমন আছে।
সে কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে…
তার রাতগুলো ঠিকঠাক ঘুমে কাটে কিনা,
তার মনে কোনো কথা জমে আছে কিনা, এইগুলো শুনুন।
তার ব্যর্থতা, তার স্ট্রাগল, তার শূন্যতা নিয়ে কথা বলার জায়গা দিন।
আপনার একটামাত্র প্রশ্ন, "তুই ভালো আছিস তো?"
কারও ভিতরে জমে থাকা কান্নাকে মুক্তি দিতে পারে।
কিন্তু আমরা কী করি?
আমরা সেই সুযোগটাই নিই না।
আমরা সোজা গিয়ে তাকে ট্যাগ করি, সে সফল না ব্যর্থ, সে দামি না সস্তা, সে যোগ্য না অযোগ্য।
আমরা জিজ্ঞাসা করি না, সে আদৌ ঠিক আছে কিনা।
আমরা শুধুই হিসেব করি, তার সঙ্গে দেখা করা, কথা বলা, কিংবা ছবি তোলা আমাদের লাভজনক কিনা।
তাকে বোঝার চেষ্টার বদলে আমরা বিচার করি।
তাকে কাছে টানার বদলে দূরে সরিয়ে দিই।
তাকে প্রশ্ন করার বদলে তাকে শেষ করে ফেলি, অন্তত ভিতর থেকে।
এই সমাজে কেউ যদি আজ নিজেকে লুকিয়ে রাখে, মুখোশ পরে হাঁটে, নিজেকে তুচ্ছ ভাবে, তাহলে জানবেন, তাকে এতবার মূল্যহীন বলে দেওয়া হয়েছে যে, সে নিজেকেই বিশ্বাস করা ছেড়ে দিয়েছে।
তাই এবার যদি সত্যিই সম্পর্ক তৈরি করতে চান,
তাহলে প্রোফাইল নয়, ব্যক্তিটাকে দেখুন।
জানতে চাওয়ার সাহস রাখুন, বোঝার ধৈর্য রাখুন। সম্পর্ক গড়ে ওঠে আন্তরিকতায়, আপনার সমাজ দেখানো স্ট্যাটাসে না!