13/02/2024
শ্বেতপ্রদর
(Leucorrhoea )
ইহার অপর ইংরেজী নাম 'The whites'। স্ত্রীলোকগণের যোনি এবং জরায়ুর শ্লৈষ্মিক আবরণী হইতে শ্লেষ্মা, রস, পুঁজ ইত্যাদি যে ক্লেদস্রাব নির্গত হয় তাহারই নাম শ্বেতপ্রদর। সাধারণ কথায় ইহাকে অনেকে প্রদরের পীড়া বলে, অনেক সময় অন্য ব্যাধির লক্ষণরূপে ইহা প্রকাশ পায়। সেই জন্য কাহারও কাহারও মতে ইহা আদৌ স্বতন্ত্র পীড়া নহে, পরন্তু জরায়ু, যোনি, ডিম্বনালী ইত্যাদি স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ের পীড়ার লক্ষণ মাত্র। সে যাহা হউক, স্ত্রীজাতির মধ্যে এই পীড়া খুব বেশী দেখা যায়, এবং ইহা একটি কৃচ্ছসাধ্য ব্যাধি বলিয়া পরিগণিত হইয়া থাকে।
✓ কারণতত্ত্ব:-স্ক্রফুলা বা গণ্ডমালা ধাতু এবং শ্লেষ্মাপ্রধান ধাতুকে ইহার পূর্ব্ববর্তী কারণ বলা যায়। এই সকল ধাতুবিশিষ্ট স্ত্রীলোকগণ স্বাভাবিক দুর্ব্বল হইয়া থাকে। তজ্জন্য স্বাভাবিক রক্তসঞ্চালনে ব্যাঘাত ঘটাইয়া এই রোগ উৎপন্ন করে। যে সকল কারণে রোগিণীর সাধারণ দুর্ব্বলতা আসে তাহাই শ্বেতপ্রদরের কারণ। এই স্রাবের আরও অনেক কারণ থাকিতে পারে। তন্মধ্যে নিম্নলিখিত কারণগুলি প্রধান:
(১) ঋতুকালে তলপেটে ঠাণ্ডালাগান বা অন্য কোন কারণে জননেন্দ্রিয়ের প্রদাহ।
(২) প্রমেহ রোগ (Gonorrhoea)।
(৩) গর্ভস্রাব বা প্রসবের পর জরায়ু দূষিত হওয়া।
(৪) জরায়ুমুখে বা প্রসবপথে ক্যান্সার। গম্মীর ঘা, আব (tumor) বা অন্য কোন রোগ হওয়া।
(৫) অজীর্ণ, আমাশয়, পুরাতন ম্যালেরিয়া জ্বর, কালা জর, যক্ষ্মা প্রভৃতি ব্যাধিতে স্বাস্থ্যভঙ্গ হওয়া।
(৬) হস্তমৈথুন, অতিরিক্ত রতিক্রিয়া, পুনঃ পুনঃ গর্ভধারণ বা পুনঃ পুনঃ গর্ভস্রাব।
(৭) যোনিদ্বারে ক্ষুদ্র ক্রিমির উপদ্রব।
✓লক্ষণতত্ত্ব ও উৎপত্তিস্থল:- শ্বেতপ্রদর স্রাব প্রথম নিঃসরণ সময়ে সাদা ই থাকে, সেই জন্যই ইহাকে শ্বেতপ্রদর বা লিউকোরিয়া বলে, কিন্তু অব্যবহিত পরেই ইহা সবুজ এবং হরিদ্রা প্রভৃতি রঙবিশিষ্ট হইয়া থাকে।
১.ভাল্ভা বা বাহ্য অঙ্গ সংক্রান্ত শ্বেতপ্রদরে ভাল্ডার শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী আক্রান্ত হয়। ভাল্ভার গাত্র হইতে আঠার ন্যায় একপ্রকার রস নিঃসৃত হয়।
২.ইউটেরাইন বা জরায়ুবীয় শ্বেতপ্রদর, জরায়ুগ্রীবাস্থ বা cervical এবং জরায়ুদেহমধ্যস্থ বা corporeal ভেদে দুই প্রকারে বিভক্ত হইয়া থাকে। জরায়ুগ্রীবাস্থ শ্বেতপ্রদর আঠার ন্যায় শ্লেষ্মাময় অগুলালার ন্যায় হইয়া থাকে, পুঁজের সঙ্গে যুক্ত হইয়া ইহা হরিদ্রাবর্ণবিশিষ্টও হইয়া থাকে। ইহা ক্ষারগুণবিশিষ্ট (alkaline reaction)। ৩.কর্পোরিয়াল বা জরায়ুদেহমধ্যস্থ স্রাব জলীয় এবং শ্লেষ্মাবিশিষ্ট হয়। ইহার সহিত কখনও কখনও পুঁজ সংযুক্ত থাকে। স্রাব অগুলালার ন্যায় হড়হড়ে হয়। এই প্রকার শ্বেতপ্রদরে জরায়ু স্থানচ্যুত হইতে পারে। যোনিও শিথিল হয়, স্রাব সাধারণতঃ ঋতুর পূর্ব্বে বা পরে প্রকাশ পায়, কোমরে ও তলপেটে বেদনা হয়, অতিরিক্ত স্রাবে রোগিণী ক্রমে ক্রমে দুর্ব্বল হইয়া পড়ে। ক্ষুধামান্দ্য, কোষ্ঠকাঠিন্য, হৃৎস্পন্দন প্রভৃতি প্রকাশ পায়। অনেক সময়ে রোগিণীর জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়, নানাবিধ স্নায়বীয়তা ও ক্ষীণভাব-লক্ষণ প্রকাশ পায়।
৪.যোনি হইতে জাত শ্বেতপ্রদর ঝাঁঝাল বা হাজাকর হয়, যে স্থানে লাগে সে স্থান হাজিয়া যায়। স্রাবের রঙ প্রথমে সাদা থাকে, কাপড়ে সাদা দাগ লাগে, কিন্তু পীড়া বেশী দিনের হইলে ঈষৎ সবুজ বা হরিদ্রা রঙ হইয়া থাকে। স্রাব অস্বচ্ছ, কটু, যন্ত্রণা এবং বেদনাদায়ক হয়, যোনিমধ্যে উষ্ণতা এবং সঙ্কোচনবোধ (sense of constriction and heat) হয়। যোনির উপরিভাগে চুলকানি ও যন্ত্রণা হয়। মূত্রনলীর উপদাহ উপস্থিত হয়। ঘন ঘন প্রস্রাব হয় এবং প্রস্রাবে জালা হয়।
✓ভাবীফল (Prognosis): - লিউকোরিয়া দুৰ্দ্দম্য, কৃচ্ছসাধ্য ব্যাধি, বিশেষতঃ জরায়ুর গভীরতর পীড়া হইতে উদ্ভুত লিউকোরিয়া। নির্দোষ আরোগ্য অনেক সময় অসম্ভব হইয়া পড়ে, তবে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার সঙ্গে পথ্যাপথ্য ও আনুষঙ্গিক বিধির কঠোরতা অবলম্বনে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাইতে পারে।
# আনুষঙ্গিক চিকিৎসা ও পথ্যাদি-সর্ব্বপ্রকার উত্তেজক আহার, মাংস, ডিম্ব, পেঁয়াজ, রসুন, লঙ্কা-মরিচের ঝাল এবং গরম মসলা পরিত্যাজ্য, মাছও সুপথ্য নহে, ইহাতে অপকারই বেশী হয়, স্বাভাবিক নিয়মিত আহার প্রশস্ত। খাদ্য বিশেষরূপে পুষ্টিকর হওয়া উচিত, কারণ ইহা ধাতুগত রোগ এবং ধাতুগত দৌর্ব্বল্যই ইহার অন্যতম কারণ।
প্রসব-পথ প্রত্যহ ডুসদ্বারা উত্তমরূপে পরিষ্কার করিলে সাময়িক উপকার হইতে পারে।
বিস্তারিত জানতে পোস্টটির নিচে কমেন্ট করুন ।