28/10/2024
মুসলমানী (সারকামসিশন) নিয়ে কিছু কথা:
আসছে নভেম্বর, ডিসেম্বর মাস।
আমার চোখের সামনে ভাসছে রক্তেভেজা বিকৃত পেনিস আর আতংকিত একটা নিস্পাপ মুখ।
প্রতিদিন ৭/৮ টা বাচ্চা হাজাম/ওস্তাদ/হুজুর দিয়ে মুসলমানি করার পর রক্তপাত বন্ধ করতে না পেরে, পেনিসের অগ্রভাগ কেটে নিয়ে, আধখেঁচড়া ভাবে অল্প চামড়া কেটে, ইনফেকশন নিয়ে ভর্তি হচ্ছে ওয়ার্ডে।
সারকামসিশন (মুসলমানী) দুইটা কারনে করা হয়ে থাকে : প্রথমত, মেডিকেল। দ্বিতীয়ত, ধর্মীয়।
মেডিকেল রিলেটেড সমস্যার জন্য যদি সারকামসিশন করতে হয়, তবে, সেক্ষেত্রে, বয়স কোনো ফ্যক্টর নয়, যখন সমস্যা - তখন-ই অপারেশন। কিন্তু ধর্মীয় কারনে যদি সারকামসিশন করতে হয়, তবে বয়স একটু বেশি হলে করা যেতে পারে।
মনে রাখতে হবে, সারকামসিশন একটা অপারেশন; একটা অপারেশন এর জন্য কি কি আবশ্যক,সেটা জেনে নিই।
১.বাচ্চা অপারেশন করার উপযুক্ত কিনা এজন্য রুটিন কিছু পরীক্ষা,
২.একজন সার্জারীর চিকিৎসক,
৩.একজন এনেস্থেটিস্ট চিকিৎসক , একজন সার্জনের এসিস্ট্যান্ট চিকিৎসক ,
৪. জীবানুমুক্ত স্টান্ডার্ড অপারেশন থিয়েটার ,
৫. জীবানুমুক্ত যন্ত্রপাতি, সুতা,
৬.অজ্ঞান/অবশ করার ঔষধ ও মেশিন,
৭. অপারেশন পরবর্তী ঔষধ
কোনো স্টেপকে অসম্পূর্ণ/অবহেলা করা মানেই, আপনার আদরের বাচ্চাকে বুঝে/ না বুঝে বিপদে ফেলা।
কারন মনে রাখতে হবে, সারকামসিশন একটা অপারেশন, অপারেশনে কোনো ত্রুটি হলে সেটা সারাজীবন বাচ্চাকে বহন করতে হবে, প্রত্যেকবার প্রস্রাবের সময় বাচ্চা বিপদে পড়বে, বিকৃত একটা পেনিস নিয়ে সারাজীবন বাচ্চাকেই যন্ত্রনা ভোগ করতে হবে।
নাম মাত্র অবশ করে হাত পা চেপে ধরে হাজাম দিয়ে ঘরে/ ওষুধের দোকানে মুসলমানি করা ক্রাইম ও অমানবিক। একটা বাচ্চা কি পরিমান টর্চারড হয় ঐ সময়টাতে, এটা চিন্তা করতেও ভয় লাগে।
অজ্ঞান করতে গিয়ে সাম্প্রতিককালে ২ টা বাচ্চা মারা গিয়েছে - এই অজুহাত তো। ওকে ফাইন। রাস্তায় তো কত লোক এক্সিডেন্টে মারা যায়, তাই বলে রাস্তায় বের হওয়া বন্ধ করেছে মানুষ?
যে দুইটা বাচ্চা মারা গিয়েছে, ভালো করে খোজ নিয়ে দেখার অনুরোধ থাকলো, কেনো ঐ সময়ে অঘটনগুলো ঘটেছিল।
বাচ্চাকে অজ্ঞান করার আগে ৪/৫ ঘন্টা না খেয়ে থাকতে হয়, তাও যদি গোপনে অল্প পানি খাইয়ে দেন, ও সেটা হাইড করেন, এরপর অজ্ঞান করলে বাচ্চার ক্ষতি হয়- দোষটা কার বলেন??
#অপারেশন এর গুরুত্বপূর্ণ ধাপ:
১.বাইরের চামড়া বেশি কাটা যাবেনা, তাতে পেনিসের অনুভূতি (সেনসেশন) কমে যাবে, ২.ভিতরের মিউকোসা বেশি রাখা যাবে না। তাহলে সেইপ নষ্ট হবে।
৩.ব্লিডিং(রক্তপাত) বন্ধ করতে হবে৷
৪. চিকন ও পরে সেলাই কাটা লাগবে না এরকম সুতা দিয়ে সেলাই দিতে হবে।
# প্রতিকার:
১. সারকামসিশন করার পূর্বে অবশ্যই রুটিন চেক আপ, CBC, CT, BT B.grouping, CXR PA view, S.Creatinine আবশ্যক
২৷ বাচ্চার সর্দি/কাশি/ দীর্ঘমেয়াদী রোগ থাকলে সেই রোগের চিকিৎসা না করে অপারেশন করার দরকার নাই
৩. বাচ্চাকে অবশ্যই অপারেশন এর আগে ৪/৫ ঘন্টা খালিপেটে থাকতে হবে। একফোঁটা পানি ও খাওয়া যাবে না।
অজ্ঞান নাকি অবশ, কোনটা নিরাপদ?:
কোনোটাই সম্পূর্ণ নিরাপদ নয়, তবে একজন দক্ষ এনেস্থিটিস্ট এর উপস্থিতি আপনাকে নিরাপত্তা দিতে পারে উভয়ক্ষেত্রেই। এমনকি সম্পুর্ন অজ্ঞান না করে এনেস্থিটিস্ট বাচ্চাকে ঘুম পাড়িয়েও অপারেশন করার ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।
তবে যদি অজ্ঞান না করে অবশ করে অপারেশন করতে হয়, অবশ্যই বাচ্চাকে মোটামুটিভাবে একটু ম্যাচিউর ও শক্ত মনের হতে হবে। সেক্ষেত্রে বয়স ৬/৭ বছর পার হলে ভালো হয়।
# কসমেটিক /ডিভাইস/লেজার:
প্রথম কথা, ডিভাইস এর মাধ্যমে সারকামসিশন করলে পেনিসের শেপ ভালো হওয়া সম্ভব নয়।পরবর্তীতে পুনরায় অপারেশন লাগার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
লেজার অনেক ব্যয়বহুল, তবে রক্তপাত কমানো ছাড়া ভুমিকা নাই বললেই চলে। ডিসেকশন মেথডে ডায়াথার্মি মেশিনের সাহায্যে অপারেশন করাটাই বৈজ্ঞানিকভাবে সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য।
৳৳৳ টাকা-পয়সা:
যদি আপনি উচ্চতর ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ শিশু সার্জন / ইউরোলজিস্ট/প্লাস্টিক সার্জন/ জেনারেল সার্জন এর কাছে অপারেশন করতে চান, আপনাকে মোটা অংকের টাকা খরচ করার প্রস্তুতি নিতে হবে। কারন সাধারণত একজন বিশেষজ্ঞ সার্জন উপরের ৭ টা স্টেপ মেনে চলবেন। সেক্ষেত্রে কম টাকায় করা সম্ভব নয়।
যদি কম টাকায় করতে চান, ন্যুনতম এমবিবিএস ডাক্তারের শরনাপন্ন হোন। তিনি আপনাকে অল্প খরচে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন।
আর যদি এটাও সম্ভব না হয়, সরকারী হাস্পাতালে যোগাযোগ করুন। একটু সময় লাগবে সিরিয়াল পেতে। কিন্তু সবুরে মেওয়া ফলবে।copied