10/01/2024
ওভারিয়ান সিস্ট বা ডিম্বাশয় সিস্ট-
ইদানিং সময়ে নারীদের যেসব রোগ খুব বেশি লক্ষ্য করা যায় তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ওভারিয়ান সিস্ট বা ডিম্বাশয় সিস্ট। ওভারিয়ান সিস্ট হল ওভারিতে থাকা পানি পূর্ণ থলে, যা ওভারিতে তৈরি হয়। ওভেরিতে সিস্ট হলে অনেকেই দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকেন। ওভারিয়ান সিস্টের (Ovarian cyst) কথা শুনলেই যেকোনো মেয়ে ভয় পায়। একটা সমীক্ষা বলছে, আমাদের দেশে ২০ থেকে ২৫ ভাগ মেয়েরা এই রোগে আক্রান্ত।
ওভারিয়ান সিস্টকে অনেকে ক্যান্সারের কারণ হিসেবে ধরে থাকে। ওভালুসেনে তৈরি হওয়া এ সকল সিস্ট কোনক্রমে ক্যান্সার নয়। ডাক্তারি ভাষায় এই সিস্টগুলোকে ফাংশনাল সিস্ট বলা হয়ে থাকে। নারীদের ওভারি কিংবা ডিম্বাশয় সিস্ট সাধারণত জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি যেকোনো সময়েই হতে পারে। সাধারণত ৫০ বছরের মধ্যেই নারীদের শরীরে বেশি ওভারিয়ান সিস্ট হয়ে থাকে। ওভারিয়ান সিস্ট সৃষ্টি হওয়ার ৩ থেকে ১০ মাসের মধ্যে নিজ থেকে ছোট হয়ে যায়।
ওভারিয়ান সিস্ট বা ডিম্বাশয় সিস্ট কেন হয়-
ওভারি বা ডিম্বাশয় এর প্রধান কাজ হল শরীরে ডিম্বাণু তৈরি করা। প্রতি মাসেই ওভারিতে ডিম্বাণু তৈরি হয়। ওভালুসনের সময় ওভারির ভেতর সিস্ট মতো দেখতে ফলিকলের সৃষ্টি হয় এবং ডিম্বানু নিঃসরণের পর পরিণত ফলিকলগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ওভারিতে এই প্রক্রিয়াটি ঠিকঠাক ভাবে না হয় তাহলে ওভারিয়ান সিস্ট দেখা দেয়। যদি ওই ধরনের সিস্ট ফাংশনাল তবুও সন্তান ধারণের সক্ষমতা থাকে।
এছাড়া অনিয়মিত সেক্স লাইফ, হরমোনের সমস্যা, অল্পবয়সে ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার কারণে সিস্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালে এ সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া দেরিতে বিয়ে, দেরিতে সন্তান নেওয়ার কারণেও ওভারিয়ান সিস্ট বা ডিম্বাশয় সিস্ট হতে পারে।
ওভারিয়ান সিস্ট বা ডিম্বাশয় সিস্ট এর লক্ষন-
ওভারিয়ান সিস্ট এর বেশ কিছু লক্ষণ চিকিৎসকরা উল্লেখ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
তলপেটে ব্যথা অনুভূত হওয়া।
পেট সবসময় ভার মনে হওয়া।
অল্প খেলেও পেট ভরে যাওয়া।
বমি বমি ভাব হওয়া।
বন্ধ্যাত্ব।
এছাড়া আরো কিছু লক্ষণ রয়েছে। অনিয়মিত ঋতুস্রাব, মাসিকের সময় মারাত্মক ব্যথা, তলপেট ফুলে যাওয়া, প্রস্রাবে সমস্যা, বমিভাব, সিস্টের ইনফেকশন, তলপেটে ব্যথার সঙ্গে হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি পায়। তবে যদি ক্যান্সার দেখা দেয় তা হলে ওজন কমে যাবে। ওভারিতে সিস্ট দেখা দিলে ডায়রিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া ওভারিয়ান সিস্ট হলে পেট ফাঁপা, বুক জ্বালাপোড়াও হয়ে থাকে। এই রোগ হলে পিঠে চাপ পড়ে এবং তা থেকে ব্যথা সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ এ কারণে থাইয়ে ব্যথা অনুভব করে থাকেন।
ওভারিয়ান সিস্ট বা ডিম্বাশয় সিস্ট এর প্রকারভেদ-
ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ে বিভিন্ন ধরনের সিস্ট হয়ে থাকে। সেগুলো হল-
# পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম- পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রম বা PCOS হল একাধিক সিস্ট থাকা। ওভারিতে যে সকল ছোট ফলিকল থাকে সেগুলো পূর্ণাঙ্গ না হলে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিস্ট হতে পারে। এর প্রথম সমস্যা হলো অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়া। বিশেষ করে অবিবাহিত মেয়েদের এই সব ধরনের সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। অনিয়মিত পিরিয়ড বলতে তিন-চার মাস পর পর হওয়া বোঝায়। কিংবা ব্লিডিং অনেক কম হওয়া অথবা কয়েক মাস পর পরিমাণে অনেক বেশি হওয়া বোঝায়।
এই ওভারিয়ান সিস্ট হলে শরীরে অপ্রত্যাশিত কিছু পরিবর্তন দেখা দেয় যেমন চিকন থেকে মোটা কিংবা হঠাৎ মোটা থেকে শুকিয়ে যাওয়া, কিংবা হঠাৎ দেহের রং পরিবর্তন হওয়া উল্লেখযোগ্য লক্ষন। তাছাড়া পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম হলে শরীরে অবাঞ্ছিত লোম দেখা যায়।
# ফাংশনাল সিস্ট- সাধারণত বেশিরভাগ মেয়েদের ক্ষেত্রে ফাংশনাল সিস্ট হয়ে থাকে। ওভারি থেকে ডিম, না ফুটলে অথবা ডিম ফোটার পরও ফলিকল গুলো চুপসে না গেলে ফাংশনাল সিস্ট তৈরি হতে পারে। এ ধরনের সিস্টে শরীর তেমন কোন সমস্যা হয় না। এই সিস্ট নিজ থেকেই ভাল হয়ে যায়।
# এনডিওমেট্রি ওটিক্স বা চকলেট সিস্ট- ওভারিতে থাকা টিস্যুগুলো যদি জরায়ু ছাড়া শরীরে বা পেটের অন্য কোথাও হয়ে থাকে তখন এনডিওমেট্রি ওটিক্স সিস্ট তৈরি হয়। এ ধরনের ওভারিয়ান সিস্ট হলে পিরিয়ড নিয়মিত হয় না এবং বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। এই সিস্টকে ডাক্তারি ভাষায় চকলেট সিস্ট বলা হয়ে থাকে।
# ডার্ময়েড সিস্ট- ডার্ময়েড সিস্ট হল ওভারির ভেতরে যেকোন টিসু যেমন- চামড়ার টিসু, চুলের টিসু, হাড়ের টিসু, পেশির টিসু ইত্যাদি দিয়ে তৈরি সিস্ট। এই সিস্ট সাধারণত নন-ক্যান্সারাস ধরনের। ডার্ময়েড সিস্ট হলে ওভারিতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। ওভারি পেচিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
# এডেনোমা সিস্ট- ওভারিতে এক ধরনের তরল জাতীয় পদার্থ জমে এ ধরনের ওভারিয়ান সিস্ট সৃষ্টি হয়। এই সিস্ট হলে তেমন কোন সমস্যা তৈরি হয় না, তাই এই সিস্ট হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করে খুব সহজেই এই ধরনের ওভারিয়ান সিস্ট থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।
ওভারিয়ান সিস্ট এর চিকিৎসা-
ওভারিয়ান সিস্ট সনাক্ত করতে সাধারণত প্রথমে আলট্রাসনোগ্রাফি করানো হয়। এরপর ওভারিয়ান সিস্টের প্রকারভেদের উপর নির্ভর করে চিকিৎসা পদ্ধতিত রয়েছে। ৯০% ওভারিয়ান সিস্ট হোমিওপ্যাথিক ঔষধের মাধ্যমে নিরাময় করা সম্ভব হয়।
তবে কিছু কিছু সিস্ট এর ক্ষেত্রে টিউমার মার্কার দেখে ফেলে দিতে হয় কিংবা ওভারি সহ ফেলে দিতে হয়। বর্তমানে ল্যাপরোস্কোপের মাধ্যমে খুব সহজেই পেট ছিদ্র করে সিস্ট ফেলে দেওয়া যায় এবং মাত্র সাত দিনের মধ্যেই সুস্থ জীবনে ফিরে আসা যায়। তবে বর্তমানে নারীদের হরমোন জনিত সমস্য এবং ওভারি সিস্ট দূর করার বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা হাতের নাগালে পাওয়া যায়। তাই এসব অত্যাধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে ওভারি সিস্ট দূর করা সম্ভব।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা আধুনিক, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন ও সফল এবং অধিকতর কার্যকর একটি বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি। আপনি অনায়াসেই হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন।
Dr. Md. Shantonu Rahman
Kohinoor Homeo Care