09/08/2025
নন-এসি ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনা কেন বিপদজনক?জেনে নিন...
বর্তমান সময়ে স্বাস্থ্যসেবার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো ওষুধ।
একজন রোগীর সুস্থতার পেছনে কার্যকর ওষুধের ভূমিকা অপরিসীম।আজকাল অনেক ফার্মেসিতে দেখি এসি নেই, অথচ প্রচুর দামি ও সংবেদনশীল ওষুধ মজুদ রাখা হচ্ছে। একটু ভেবে দেখেছি— প্রায় সব ওষুধেই লেখা থাকে “২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে সংরক্ষণ করুন”।এই দেশের গরমে, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে, দিনের তাপমাত্রা ৩৫-৪০ ডিগ্রির ওপরে উঠে যায়।
তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে— এসব নন-এসি ফার্মেসিতে রাখা ওষুধগুলো আদৌ কি নিরাপদ?
কেন নন-এসি ফার্মেসি ঝুঁকিপূর্ণ?
অধিকাংশ ওষুধের গায়ে স্পষ্টভাবে লেখা থাকে —
"Store below 25°C in a cool and dry place."
উচ্চ তাপমাত্রায় সংরক্ষণের ফলে ওষুধের রাসায়নিক গঠন ভেঙে যেতে পারে, যা তার কার্যকারিতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
নষ্ট বা অকার্যকর ওষুধ সেবনের ফলে শরীরে বিপজ্জনক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যা রোগীর স্বাস্থ্যের আরও অবনতি ঘটাতে পারে।সংবেদনশীল ওষুধের ক্ষেত্রে বিপদের আশঙ্কা বেশি। যেমন-
গ্রীষ্মকালীন অতিরিক্ত তাপে ইনসুলিনের "কোল্ড চেইন" ভেঙে যাওয়া ও অনুপযুক্ত ফার্মেসি সংরক্ষণের ফলে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার (Hypoglycemia) — রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া) ঝুঁকি প্রায় ৪০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এপিপেন, ইনহেলার বা রেফ্রিজারেটেড অ্যান্টিবায়োটিকের মতো তাপমাত্রা-সংবেদনশীল ওষুধ সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে কার্যকারিতা হ্রাস বা ডিভাইস বিকল হতে পারে, যা জরুরি চিকিৎসা ব্যর্থতার কারণ হতে পারে।
ইউরোপের তাপপ্রবাহে ট্রাইসাইক্লিক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, অ্যান্টিসাইকোটিক (Antipsychotic — মানসিক রোগ যেমন স্কিজোফ্রেনিয়া বা বাইপোলার ডিসঅর্ডারের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ) ও বেঞ্জোডায়াজেপিন (Benzodiazepine — anxiety, insomnia ও epileptic seizure নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত স্নায়ু-শিথিলকারী ওষুধ) ব্যবহারকারীদের মধ্যে তাপ-সম্পর্কিত জটিলতার ঝুঁকি বেড়েছে, যা গরম আবহাওয়ায় এয়ার কন্ডিশনবিহীন ফার্মেসিতে সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখার ব্যর্থতার সাথে সম্পর্কিত। কুয়েতে এক শিশুর ওমেপ্রাজল সাসপেনশন ফ্রিজে না রেখে কক্ষ তাপমাত্রায় সংরক্ষণের ফলে কয়েকদিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়—যা অনুপযুক্ত সংরক্ষণের বাস্তব ক্ষতি ও চিকিৎসা ব্যর্থতার ঝুঁকিকে স্পষ্ট করে।
জরুরি চিকিৎসা পরিষেবার (EMS) ক্ষেত্রেও উচ্চ তাপে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে লোরাজেপাম ও সাকসিনাইলকোলিনের মতো ওষুধের কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ার প্রমাণ মিলেছে।
বাস্তব সূত্র:
২০০৮ সালে নাইজেরিয়ায় প্রায় ৮৪ জন শিশু মারা যায় Paracetamol syrup খেয়ে।কারণ-
ওষুধটি ঠিকমতো তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে সংরক্ষণ করা হয়নি এবং
উৎপাদন ও পরিবহনের সময়ও উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা ছিল।
এর ফলে syrup-এর ভেতরে তৈরি হয়েছিল diethylene glycol, যা একটি বিষাক্ত কেমিক্যাল ( এক ধরনের অ্যান্টি-ফ্রিজ যা মানুষের জন্য মারাত্মক বিষ)। পরবর্তীতে, লিভার ও কিডনি সম্পূর্ণভাবে বিকল হয়ে যায়।
শিশুরা ধীরে ধীরে কোমায় চলে যায় এবং মারা যায়।
এজন্য আমি মনে করি আমাদের একটু সচেতন হওয়া দরকার।
এসি নেই, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ নেই এমন ফার্মেসি থেকে না কেনাই ভালো।
ক্রেতা হিসেবে আমাদের জানা প্রয়োজন, কোন ওষুধ কীভাবে সংরক্ষণ করা উচিত এবং কোন পরিবেশে তা কেনা নিরাপদ।
আমরা যদি শুধুমাত্র এসি-সুবিধা সম্পন্ন, নিয়ম মেনে পরিচালিত ফার্মেসি থেকে ওষুধ সংগ্রহ করি, তাহলে অন্য ফার্মেসিগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চাপ তৈরি হবে।ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের (DGDA) দায়িত্ব হলো ফার্মেসিগুলোকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা এবং ওষুধ সংরক্ষণের জন্য নির্ধারিত তাপমাত্রা বজায় রাখা বাধ্যতামূলক করা। এজন্য আমাদের উচিত সরকারি তদারকি জোরদার করা।
আমাদের উচিত ওষুধকে কেবল পণ্যে পরিণত না করে, সেটিকে জীবনের অংশ হিসেবে দেখা।
একটি মাত্র ভুল সংরক্ষণ অনেক বড় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।সবচেয়ে বড় কথা, নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হওয়া মানে এসব ছোটখাটো বিষয়ও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা।ওষুধের পেছনে টাকা দিচ্ছি শুধু না, জীবনটাও দিচ্ছি। তাই ওষুধ যেন নিরাপদ হয়, এটা দেখা আমার-আপনার দায়িত্ব।
তাই আসুন,
আমরা সচেতন হই,
নিরাপদ ওষুধ ব্যবহারে সতর্ক হই,
আর নন-এসি ফার্মেসি থেকে ওষুধ কেনা বর্জন করি!🤍
ক্রেডিট:
খন্দকার তাসনীম নেওয়াজ পরমা
২৬তম আবর্তন
ফার্মেসি বিভাগ
বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়