15/09/2025
ভিসেরাল গাউট (Visceral Gout) একটি গুরুতর অসংক্রামক রোগ, যা সাধারণত মুরগি, হাঁসসহ বিভিন্ন পোলট্রি প্রাণীতে দেখা যায়। এটি মূলত কিডনির কার্যকারিতা ব্যাহত হওয়ার ফলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিড জমে গিয়ে ঘটে। নিচে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো:
ভিসেরাল গাউট বা কিডনি রোগ কী?
পোলট্রির ভিসেরাল গাউট একটি রোগ যেখানে ইউরিক অ্যাসিড রক্তে অতিরিক্ত হয়ে দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে (যেমন কিডনি, লিভার, হৃদপিণ্ড ও এয়ার স্যাক) সাদা, চকের মতো স্ফটিক আকারে জমা হয়। এটি সাধারণত কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে ইউরিক অ্যাসিড ঠিকভাবে বের না হলে ঘটে।
কারণসমূহ:
কিডনি বিকলতা: ভাইরাস (যেমন ইনফেকশাস ব্রঙ্কাইটিস) বা মাইকোটক্সিনের কারণে কিডনির ক্ষতি হয়।
পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন): পর্যাপ্ত পানি না পেলে, বিশেষ করে ছোট মুরগিতে বা পানির উৎস পরিবর্তনের পরে গাউট দেখা দিতে পারে।
পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা: অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম বা ক্যালসিয়াম-ফসফরাসের অনুপাত ঠিক না থাকলে কিডনির ওপর চাপ পড়ে।
ভাইরাসজনিত সংক্রমণ: অ্যাভিয়ান অ্যাস্ট্রোভাইরাস বা অ্যাভিয়ান নেফ্রাইটিস ভাইরাস সংক্রমণে গাউট হতে পারে।
লক্ষণ ও শনাক্তকরণ:
খাওয়ায় অনীহা, দুর্বলতা, অতিরিক্ত পানি খাওয়ার চেষ্টা, পাতলা পায়খানা।
অনেক সময় হঠাৎ মৃত্যুহার বেড়ে যায়।
পোস্টমর্টেমে কিডনি বা অভ্যন্তরীণ অঙ্গে সাদা জমাট দাগ দেখা যায়।
প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ:
পুষ্টিসমৃদ্ধ, ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্য নিশ্চিত করা।
মুরগিকে সবসময় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা।
ফিডে মাইকোটক্সিন নিয়ন্ত্রণে রাখা।
ভাইরাস প্রতিরোধে বায়োসিকিউরিটি বজায় রাখা।
মরণোত্তর (Post-Mortem) লক্ষণ:
মূল চিহ্ন: লিভার, হৃদপিণ্ড, এয়ার স্যাক এবং কিডনির ভিতরে সাদা, চকের মতো ইউরেট (Urate) জমা দেখা যায়।
কিডনির পরিবর্তন: কিডনি ফ্যাকাশে ও ফোলা দেখায়, ইউরেট জমার ফলে ইউরেটারগুলো মোটা ও শক্ত হয়ে যায়।
রোগ নির্ণয়:
মূল নির্ণয়ের উপায়: মরণোত্তর পরীক্ষায় অঙ্গগুলোর উপর সাদা ইউরেট স্ফটিক দেখা যায়।
মাইক্রোস্কোপ পরীক্ষায়: সূচের মতো ইউরেট স্ফটিক নিশ্চিতভাবে ধরা পড়ে।
রক্তে ইউরিক অ্যাসিড পরিমাপ: আক্রান্ত পালগুলোতে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা যাচাই করা যায়।
প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:
সঠিক পুষ্টি: ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিনের সঠিক অনুপাতসহ ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
পর্যাপ্ত পানি: সব সময় বিশুদ্ধ, ঠাণ্ডা পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
পরিবেশ ব্যবস্থাপনা: খাবারে মাইকোটক্সিন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ব্রুডিং চলাকালে সঠিক আর্দ্রতা বজায় রাখা প্রয়োজন।
সংক্রমণ প্রতিরোধ: ইনফেকশাস ব্রঙ্কাইটিসের মতো ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর বায়োসিকিউরিটি ও টিকা প্রয়োগ নিশ্চিত করা।
ফ্লুইড থেরাপি: পানিশূন্যতায় দ্রুত ও পর্যাপ্ত ফ্লুইড থেরাপি প্রয়োগ করলে ইউরেট স্ফটিক জমা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
Collected....