05/05/2024
সৌদি আরব ও বাংলাদেশ কতটুকু ইসলামী দেশ?
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হুসাইন আসকারি বহুবছর ধরে গবেষণা করেছেন ইসলামিক দেশগুলো কতটুকু ইসলামিক তা নিয়ে। ইসলামের রাষ্ট্র ও সমাজের নিয়মকানুন মেনে চলা দেশগুলো খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে যারা দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের বিধি-বিধান মেনে চলে তারা আসলে মুসলিম দেশ নয়।
সমীক্ষায় দেখা গেছে যে সবচেয়ে বেশি ইসলাম ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চলা দেশ হল নিউজিল্যান্ড তারপরে লুক্সেমবার্গ। এরপর আয়ারল্যান্ড, আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক ষষ্ঠ এবং কানাডা সপ্তম স্থানে রয়েছে।
ইসলাম ধর্মের নিয়ম মানা মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া ৩৮তম, কুয়েত ৪৮তম, বাহরাইন ৬৪তম এবং আশ্চর্যজনকভাবে সৌদি আরব ১৩১তম অবস্থানে রয়েছে। গ্লোবাল ইকোনমি জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায়, বাংলাদেশের অবস্থান সৌদিদের নীচে। হায়রে সোনার দেশ! বাংলাদেশকে মুসলিম দেশ দাবি করে ইসলামের অবমাননা করা হচ্ছে কিনা তা আল্লাহই ভালো জানেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, মুসলিমরা নামাজ, রোজা, সুন্নাহ, কোরআন, হাদিস, হিজাব, দাড়ি, পোষাক সম্পর্কে খুব সতর্ক কিন্তু রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পেশাগত জীবনে ইসলামের আইন মেনে চলে না।
মুসলিমরা বিশ্বের অন্য কারো চেয়ে বেশি ধর্মীয় উপদেশ, ওয়াজ নাসিহত শোনে, কিন্তু কোনো মুসলিম দেশ বিশ্বের সেরা দেশ হতে পারেনি। কিন্তু গত ষাট বছরে মুসলমানরা জুমার খুতবা অন্তত ৩০০০ বার শুনেছে। আর আজকাল মিডিয়াতে হাজারো রকম ইসলামী উপদেশ শুনেই চলছে, কিন্তু জাতিগত পরিবর্তন নেই। অনেকে বলেন, মুসলমানরা দরিদ্র বলে ভালো হতে পারেনা। কিন্তু জরিপে দেখা গেছে দরিদ্র মুসলিম দেশে যারা সম্পদশালী হন তাদের বেশিরভাগ একদিকে ধর্মপালনকারী থাকেন, আর সম্পদ আহরণের বেলায় হয়ে যান অসীম দুর্নীতিবাজ।
উল্লেখ্য, একজন অসাধু চীনা ব্যবসায়ী বলেন, 'মুসলিম ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছে দুই নম্বর জাল জিনিস তৈরির অর্ডার নিয়ে আসে এবং বলে অমুক অমুক বিখ্যাত কোম্পানির লেবেল লাগাতে। পরে আমি তাদেরকে আমাদের সাথে খেতে বললে তারা বলে এই খাদ্য হালাল নয়, তাই আমি খাব না। তাহলে নকল পণ্য বিক্রি করা কি হালাল?'
একজন জাপানি নওমুসলিম বলেছেন, 'আমি পশ্চিমা দেশগুলোতে অমুসলিমদের ইসলামের বিধি-বিধান অনুসরণ করতে দেখি, আর পূর্বের দেশগুলোতে আমি ইসলাম দেখি কিন্তু মুসলমান দেখিনা। আলহামদুলিল্লাহ, ইসলাম ও মুসলমানের মধ্যে পার্থক্য জেনে আমি ইতিমধ্যে আল্লাহর ধর্ম গ্রহণ করেছি।"
ইসলাম শুধু নামাজ পড়া এবং রোজা রেখে না খেয়ে থাকা নয়, এটি একটি জীবন বিধান এবং অন্যদের সাথে যোগাযোগ ও সংসর্গের একটি বিষয়।
যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে কপালে দাগ লাগিয়ে ফেলেছে, ফরজ ও নফল রোজা রাখে অথচ সে আল্লাহর দৃষ্টিতে মুনাফিক হতে পারে।
কারণ রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “প্রকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সর্বহারা ও শূন্য মানুষ তারাই যারা কিয়ামতের দিন রোজা, নামাজ, বহুবার হজ, আর প্রচুর দান-খয়রাত সহ হাজির হবে, কিন্তু দুর্নীতি, অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ, অসৎ কামাই, অন্যের উপর জুলুম, অবিচার, এবং অন্যের হক বা অধিকার হরণ করার কারণে খালি হাতে তারা জাহান্নামে যাবে।" সহীহ : মুসলিম ৫৯-(২৫৮১), তিরমিযী ২৪১৮। আরো আছে।
যারা ক্ষমতা পান ও সম্পদশালী হন মূলতঃ তাদের উদ্যেশ্যে এই হাদীস বলা হয়েছে।
ইসলামের দুটি অংশ রয়েছে, একটি হল 'ইমান' নামক বিশ্বাসের প্রকাশ্য ঘোষণা, এবং অন্যটি হল 'এহসান' নামক ঈমানের বিষয়, যা ন্যায়সঙ্গতভাবে সঠিক সামাজিক নিয়ম অনুসরণ করে পালন করার কথা বলে। উভয়ই একসাথে পালন না করলে ইসলাম অসম্পূর্ণ থেকে যায় যা প্রতিটি নামধারী মুসলিম দেশে ঘটছে এখন।
ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা বা হালাল হারাম মেনে চলা একজনের ব্যক্তিগত দায়িত্ব এবং এটি আল্লাহ ও বান্দার মধ্যেকার একটি বিষয়। কিন্তু সামাজিক রীতিনীতি মেনে চলা শুধু একজন বান্দা ও আরেকজন বান্দার মধ্যেকার ব্যাপার এবং সুন্দর ও শান্তির পৃথিবীর জন্যে সেটিই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়।
অন্য কথায়, মুসলিমরা যদি তাদের জীবনে ইসলামী নীতির চর্চা না করে তাহলে মুসলিম সমাজ হবে ঘুষ, দুর্নীতি, অবিচার, অত্যাচার দিয়ে ভরা একটি কলুষিত এবং অসম্মানজনক সমাজ।
লর্ড বার্নার্ড শ একবার বলেছিলেন, "ইসলাম শ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং মুসলমানরা সবচেয়ে খারাপ অনুসারী।"
আল্লাহ আমাদেরকে আল্লাহর নিজের মনোনীত ধর্ম ইসলামের অনুসরণ করে মুসলমান হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন। তা না হলে কেয়ামতের দিনে মুসলিম নামের মানুষগুলি সারাজীবন অবধারিত জান্নাতের আশা করে পেছনে পরে রইবে আর সঠিক দ্বীনের ওপর চলা মানুষেরা ডান হাতে তার রিজুমি নিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস চলে যাবে হাসতে হাসতে।
(২০১০ সন থেকে রহমান ও আসকার কর্তৃক বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত অনেকগুলি সমীক্ষা ও গবেষণা পত্রের সারাংশ নিয়ে বাংলা লেখাটি তৈরি করা হয়েছে।)
ছবি: নিউইয়র্কে বাল্ডউইন শহরতলীতে হাঁটতে গিয়ে "নূহ লিয়ার নৌকা" নামের একটি ফুড শপের ছবিটি তুলেছিলাম এই কথা ভেবে যে, নামের জন্যে যেমন নূহের নৌকা হয়না, তেমনি ইসলাম আর মুসলিম নাম হলেই সবাই আসল মুসলমান হয়না।
লেখক ডাক্তার আরিফুর রহমান