07/09/2024
# # # দ্বিপার্শ্বীয় হাইড্রোনেফ্রোসিস (Bilateral Hydronephrosis) এর বিস্তারিত:
**হাইড্রোনেফ্রোসিস** হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে কিডনি থেকে মূত্র সঠিকভাবে নিষ্কাশিত হতে পারে না, ফলে কিডনি ফুলে যায়। যখন এটি উভয় কিডনিতে হয়, তখন একে **দ্বিপার্শ্বীয় হাইড্রোনেফ্রোসিস** বলা হয়।
# # # # **কারণসমূহ:**
দ্বিপার্শ্বীয় হাইড্রোনেফ্রোসিসের কারণগুলো মূত্রপ্রবাহে বাধা বা অন্যান্য সমস্যার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে:
1. **মূত্রনালীর প্রতিবন্ধকতা**:
- **পাথর**: কিডনি বা ইউরেটারে পাথর থাকলে মূত্রপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
- **প্রস্টেট বৃদ্ধি**: পুরুষদের ক্ষেত্রে, প্রস্রাবের পথে প্রস্টেটের বৃদ্ধি মূত্রের প্রবাহকে বাধা দিতে পারে।
- **টিউমার**: মূত্রাশয়, ইউরেটার বা প্রস্টেটে টিউমার হলে মূত্র প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়।
- **ইউরেটারের সংকোচন বা গঠনগত ত্রুটি**: মূত্রনালীর সংকীর্ণতা জন্মগতভাবে বা আঘাতের কারণে হতে পারে, যা মূত্র প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে।
2. **মূত্রাশয়ের সমস্যাগুলো**:
- **নিউরোজেনিক ব্লাডার**:
স্নায়বিক সমস্যা থাকলে মূত্রাশয় সম্পূর্ণরূপে মূত্র খালি করতে পারে না, ফলে মূত্র জমে যায়।
- **মূত্রাশয় থেকে মূত্র সঠিকভাবে নিষ্কাশন না হওয়া**:
এটি দীর্ঘমেয়াদী হাইড্রোনেফ্রোসিসের কারণ হতে পারে।
3. **ইউরেটারাল রিফ্লাক্স**:
এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে মূত্র মূত্রাশয় থেকে কিডনির দিকে ফিরে আসে, ফলে কিডনি ফুলে ওঠে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
4. **ইউরেটারাল অবস্ট্রাকশন**:
ইউরেটারে বাধা থাকলে কিডনি থেকে মূত্র বের হতে পারে না, ফলে মূত্র জমে কিডনিতে চাপ সৃষ্টি করে।
# # # # **লক্ষণসমূহ:**
দ্বিপার্শ্বীয় হাইড্রোনেফ্রোসিসের লক্ষণগুলো অবস্থা অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে:
1. **তলপেটে বা পাশের অংশে ব্যথা**:
কিডনিতে মূত্র জমার কারণে চাপ সৃষ্টি হয়, যা ব্যথার কারণ হতে পারে।
2. **মূত্র প্রবাহের সমস্যা**:
মূত্র প্রবাহ কমে আসা বা মূত্র করা কঠিন হতে পারে।
3. **ঘন ঘন মূত্রত্যাগের প্রয়োজন**:
বারবার প্রস্রাব করার ইচ্ছা হতে পারে, কিন্তু পরিমাণে কম হতে পারে।
4. **মূত্র সংক্রমণ (UTI)**:
মূত্র জমার কারণে সংক্রমণ হতে পারে, এর ফলে জ্বর, ব্যথা, প্রস্রাবে জ্বালা, এবং প্রস্রাবে রক্ত দেখা দিতে পারে।
5. **বমি বমি ভাব বা বমি**:
কিডনির সমস্যার কারণে বমি ভাব হতে পারে।
6. **মূত্রে রক্ত**:
প্রস্রাবের সাথে রক্ত দেখা যেতে পারে, যা কিডনির প্রদাহ বা পাথরের কারণে হয়।
7. **জ্বর ও ঠাণ্ডা**:
সংক্রমণের কারণে শরীরে জ্বর এবং ঠাণ্ডা লাগার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
# # # # **প্রভাব**:
দ্বিপার্শ্বীয় হাইড্রোনেফ্রোসিস দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে কিডনির কার্যকারিতা কমতে পারে। কিছু দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলো হলো:
- **কিডনির স্থায়ী ক্ষতি**:
দীর্ঘ সময় ধরে মূত্র জমা হলে কিডনি স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা **কিডনি ফেইলিউর** এর দিকে নিয়ে যেতে পারে।
- **ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা**:
কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
- **রক্তচাপ বৃদ্ধি**:
কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- **ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়া**:
সংক্রমণ কিডনিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা **পাইলোনেফ্রাইটিস** বা **সেপসিস** এর মতো গুরুতর অবস্থায় পরিণত হতে পারে।
# # # # **চিকিৎসা:**
দ্বিপার্শ্বীয় হাইড্রোনেফ্রোসিসের চিকিৎসা রোগের কারণ এবং এর তীব্রতার উপর নির্ভর করে:
1. **কারণ নির্ধারণ এবং ব্যবস্থাপনা**:
- **পাথর বা টিউমার সরানো**: যদি পাথর বা টিউমার মূত্রপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে, তবে এটি সরানোর জন্য সার্জারি বা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োজন হতে পারে।
- **প্রস্টেটের চিকিৎসা**:
প্রস্টেট বৃদ্ধি হলে তার জন্য ওষুধ বা প্রয়োজন হলে সার্জারি করতে হবে।
- **ইউরেটার সংকীর্ণতার চিকিৎসা**:
ইউরেটার সংকীর্ণ হলে শল্যচিকিৎসা বা স্টেন্টিং পদ্ধতিতে সমস্যা সমাধান করা হতে পারে।
2. **সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ**:
- **অ্যান্টিবায়োটিক**:
সংক্রমণ থাকলে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।
3. **কিডনি এবং মূত্রাশয়ের ফাংশন ঠিক রাখা**:
- যদি মূত্রের অবরুদ্ধতা দূর করা যায়, তবে কিডনির ক্ষতি কমানো সম্ভব। ফলোআপের মাধ্যমে কিডনি ঠিকঠাক কাজ করছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
4. **ড্রেনেজ পদ্ধতি**:
- যদি মূত্রনালীতে মূত্র নিষ্কাশনের সমস্যা থাকে, তাহলে **ক্যাথেটার** বা **নেফ্রোস্টোমি টিউব** ব্যবহার করে কিডনি থেকে মূত্র বের করার ব্যবস্থা করা হয়।
5. **ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন**:
- যদি কিডনির কার্যকারিতা একেবারে নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে **ডায়ালাইসিস** বা **কিডনি প্রতিস্থাপন** প্রয়োজন হতে পারে।
# # # # **প্রতিরোধ এবং যত্ন**:
- মূত্রনালীর সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে প্রচুর পানি পান করা এবং সংক্রমণ হলে দ্রুত চিকিৎসা করা।
- প্রস্রাব আটকে রাখা থেকে বিরত থাকা।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে কিডনির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা।
- কিডনির কার্যকারিতা ঠিক রাখার জন্য ডাক্তারের সাথে নিয়মিত পরামর্শ করা।
দ্বিপার্শ্বীয় হাইড্রোনেফ্রোসিস একটি গুরুতর সমস্যা এবং চিকিৎসার অভাবে কিডনির স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিলে এই রোগের গুরুতর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।