30/04/2025
সবাইকে পড়ার অনুরোধ রইল.....
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম জীবনে যেমন বিলাসী জীবন পাড় করেছেন , তেমনি জীবনের শেষ কয়েক বছর ভয়ংকর ভাবে রোগে ভুগেছিলেন । ধারাবাহিক ভাবে Systemic disease গুলো তাকে কাবু করে ফেলে । মৃত্যুর দ্বার পর্যন্ত না নিয়ে ক্ষান্ত হয় নি , এমনকি সব ধরনের চিকিৎসার পরেও ।
১৯৩৭ সালে তার প্রথমে সিস্টেমিক সেলুলাইটিস (systemic cellulitis) ধরা পড়ে । এর পর থেকে সে অনেক দিন অজ্ঞান অবস্থায় ছিলেন । ধরে নেয়া হয় তার "উচ্চ মাত্রার ডায়াবেটিস" এই রোগের কারন ছিল । এই রোগের চিকিৎসা করেন প্রফেসর বিধান চন্দ্র রায় । তার চিকিৎসায় রবী ঠাকুর অল্প দিনেই সুস্থ্য হয়ে ওঠেন।
বিশ্বকবিরর আরো এক কষ্টদায়ক রোগ ছিল । তা হলো প্রস্টেট এনলারজমেন্ট (BEP) . যার জন্য তার বেশ কয়েক বার প্রস্রাব আটকে গিয়েছিল । অনেক ব্যাথা সহ্য করতে হয়েছে Retention Of Urine এর জন্য। ক্যাথেটার করে রাখতে হতো তাকে , না হয় আটকে যেতো ।
দুঃখজনক হলেও সত্যি – "রবীন্দ্রনাথ হোমিওপ্যাথিক ঔষধ এলোপ্যাথিকের চেয়েও বেশী পছন্দ করতেন" ।
কিন্তু সেই সময়ে প্রস্টেট এনলারজমেন্টের জন্য যে হোমিও ঔষধ ব্যবহার করা হয়েছিল , তা কোনো কাজ করেনি। পরে ২ টা মেডিকেল বোর্ড করে তার এলোপ্যাথিক চিকিৎসা শুরু করা হয় । এক বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন – ভারতের বিখ্যাত প্রফেসর "নীল রতন সরকার" , আরেক বোর্ডে ছিলেন- "প্রফেসর বিধান চন্দ্র রায়"। প্রথমে মেডিকেল ট্রিটমেন্ট চললেও বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সার্জারীর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ।
আশ্চর্যের বিষয় হলো- তার সার্জারী হয় , তার জন্ম হয়েছিল জোড়াসাকোর যেই ঘরে , সেই ঘরে । লাইসল দিয়ে স্টেরাইলাইজ করা তার ঘর। পরে প্রফেসর এল এম ব্যানার্জির নেতৃত্বে ৩১ জুলাই ১৯৪১ সালে , তার ইউরিনারী ব্লকেজ এর জন্য “সুপ্রাপিউবিক সিস্টোস্টমি”(suprapubic cystostomy) করা হয় । প্রস্টেট কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েও সেটা বাতিল করা হয়, শুধু মাত্র Reactionary Hemorrhage ও ডায়াবেটিস আনকন্ট্রোলড বলে ।
কিন্তু সাপোর্ট হিসেবে কোনো এক্টিবায়োটিক ছিল না। সালফা ড্রাগ দিয়ে তার আর কাজ চলছিল না। পেনিসিলিন চালু হলেও দূর্ভাগ্যজনক ভাবে রবী ঠাকুরের জন্য কোনো পেনিসিলিন সাপ্লাই দেয় নাই ব্রিটেন । অজুহাত ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সৈন্যদের জন্য সাপ্লাই দিয়ে , মজুদ শেষ । আলেকজান্ডার নামক পুলিশ সাড়াইতে পেনিসিলিন পাওয়া গিয়েছিল , কিন্তু রবীর জন্য পাওয়া যায় নাই।
অপারেশনের পরেই শুরু হয় Bleeding । সেটা হয়তো কোনো ভাবে কন্ট্রোল করা গিয়েছিল । কিন্তু ইউরিনারী ইনফেকশন ও সেপসিস কোনো ভাবেই কন্ট্রোল করা যায় নাই । কিডনি ও ইউরিন ইনফেকশন হওয়ার কারন হিসেবে ছিল আবার সেই ডায়াবেটিস । তার ডায়াবেটিস কোনো ভাবেই কন্ট্রোল হচ্ছিল না। সে সময় ডায়াবেটিসের জন্য ইউজ করা হতো এনিমেল ইনসুলিন । কিন্তু সেটাও লন্ডন থেকে আনা লাগত। এক সময় শর্ট সাপ্লাই দেখিয়ে সেটাও বন্ধ হয়ে যায় । মৃত্যু ঘন্টা বাজতে আর কি লাগে ।
Repeated ইনফেকশনের শিকার হয়ে অপারেশনের ৭ দিন পর আগস্ট মাসের ৭ তারিখে কবি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন । কবি মৃত্যুর আগেই বুঝতে পারছিলেন হয়তো – তার চিকিৎসার সব পথা একে একে বন্ধ হয়ে আসছে । তাই হয়তো অপারেশনের আগের দিন ৩০ জুলাই , ১৯৪১ সালে তার জীবনের শেষ কবিতার লাইন লিখেছিলেন –
“তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছো আকির্ণ করি” ।
বি.দ্র.- কবিগুরু যেখানে এন্টিবায়োটিক না পেয়ে মারা গেলো আর সেখানে আমরা যত্রতত্র এন্টিবায়োটিক সেবন করছি,কখনো নিজে নিজে,কখনো হাতুড়ে ডাক্তার দ্বারা আবার কখনো ওষুধের দোকানদারের মাধ্যমে। তাই আসুন সবাই সচেতন হয়, একমাত্র এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডাক্তার ব্যতিত এন্টিবায়োটিক সেবন করব না.সবাই এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স প্রতিরোধ করি।