03/05/2025
নয়মাস দশদিনের সফল গর্ভধারণ শেষে ওটি টেবিলের অসহনীয় যন্ত্রণা কিংবা হাসপাতালের বারান্দায় ভয়ার্ত অপেক্ষার প্রহর শেষে ফুটফুটে সন্তানকে প্রথমবার কোলে নেয়ার মধুরতম মুহূর্ত, পুরনো পৃথিবীতে নতুন করে নিজেকে আবিষ্কার করা, সন্তানের মুখে মা/বাবা ডাক শোনা। এসবই তো মানুষের প্রতি মহান আল্লাহ পাকের শ্রেষ্ঠতম উপহার।
সেই সন্তানের বৃদ্ধি ও বিকাশ নিয়ে নতুন বাবা-মায়ের চিন্তার শেষ নেই। সারাক্ষণ একটাই চিন্তা, বাবুটা ঠিকমতো বেড়ে উঠছে তো? আসুন মিলিয়ে নেয়া যাক আপনার প্রিয় সন্তানের সাথে...
বিভিন্ন বয়সে শিশুদের আদর্শ ওজনঃ
০ মাসঃ ২.৫-৩.৩ কেজি
১ মাসঃ ৩-৪.৪ কেজি
২ মাসঃ ৩.৬-৫.৩ কেজি
৩ মাসঃ ৪.১-৬ কেজি
৪ মাসঃ ৪.১-৬.৭ কেজি
৫ মাসঃ ৫.১-৭.৩ কেজি
৬ মাসঃ ৫.৫-৭.৩ কেজি
৭ মাসঃ ৬-৭.৩ কেজি
৮ মাসঃ ৬.৪- ৮.৮ কেজি
৯ মাসঃ ৬.৭-৯.২ কেজি
১০ মাসঃ ৭.১-৯.৫ কেজি
১১ মাসঃ ৭.৩-৯.৯ কেজি
১২ মাসঃ ৭.৫-১০.২ কেজি
১৩ মাসঃ ৭.৮-১০.৫৪ কেজি
১৪ মাসঃ ৮-১০.৭ কেজি
১৫ মাসঃ ৮.২- ১০.৯ কেজি
১৬ মাসঃ ৮.৩-১১.১ কেজি
১৭ মাসঃ ৮.৫-১১.৩ কেজি
১৮ মাসঃ ৮.৭-১১.৫ কেজি
১৯ মাসঃ ৮.৮-১১.৭ কেজি
২০ মাসঃ ৯-১১.৯ কেজি
২১ মাসঃ ৯.১-১১ কেজি
২২ মাসঃ ৯.৩-১২.১ কেজি
২৩ মাসঃ ৯.৪-১২.৩ কেজি
২৪ মাসঃ ৯.৬-১২.৫ কেজি
২৫ মাসঃ ৯.৭-১২.৭ কেজি
২৬ মাসঃ ৯.৯-১২.৯ কেজি
২৭ মাসঃ ১০-১৩ কেজি
২৮ মাসঃ ১০.২-১৩.২ কেজি
২৯ মাসঃ ১০.৩-১৩.৪ কেজি
৩০ মাসঃ ১০.৫-১৩.৬ কেজি
৩১ মাসঃ ১০.৬-১৩.৭ কেজি
৩২ মাসঃ ১০.৮-১৩.৯ কেজি
৩৩ মাসঃ ১০.৯-১৪.১ কেজি
৩৪ মাসঃ ১১-১৪.২ কেজি
৩৫ মাসঃ ১১.১-১৪.৪ কেজি
৩৬ মাসঃ ১১.৩-১৪.৫ কেজি
৩৭ মাসঃ ১১.৪-১৪.৮ কেজি
৩৮ মাসঃ ১১.৬-১৫ কেজি
৩৯ মাসঃ ১১.৮-১৫.১ কেজি
৪০ মাসঃ ১১.৯-১৫.৩ কেজি
৪১ মাসঃ ১২-১৫.৪ কেজি
৪২ মাসঃ ১২.১-১৫.৬ কেজি
৪৩ মাসঃ ১২.৩-১৫.৮ কেজি
৪৪ মাসঃ ১২.৪-১৬ কেজি
৪৫ মাসঃ ১২.৫-১৬.১ কেজি
৪৬ মাসঃ ১২.৬-১৬.৩ কেজি
৪৭ মাসঃ১২.৮-১৬.৫ কেজি
৪৮ মাসঃ ১২.৯-১৬.৬ কেজি
৪৯ মাসঃ ১৩-১৬.৮ কেজি
৫০ মাসঃ ১৩.১-১৭ কেজি
৫১ মাসঃ ১৩.২-১৭.১ কেজি
৫২ মাসঃ ১৩.৩-১৭.৩ কেজি
৫৩ মাসঃ ১৩.৪-১৭.৫ কেজি
৫৪ মাসঃ ১৩.৫-১৭.৭ কেজি
৫৫ মাসঃ ১৩.৬-১৭.৮ কেজি
৫৬ মাসঃ ১৩.৭-১৮ কেজি
৫৭ মাসঃ ১৩.৮-১৮.২ কেজি
৫৮ মাসঃ ১৩.৮-১৮.৪ কেজি
৫৯ মাসঃ ১৩.৯- ১৮.৫ কেজি
৬০ মাসঃ ১৪-১৮.৭ কেজি
শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধির আদর্শ হারঃ
১ম বছরঃ ২৫ সেমি/বছর।
২য় বছরঃ ১২ সেমি/বছর।
৩য়-৪র্থ বছরঃ ৭ সেমি/বছর।
৫ম-৬ষ্ঠ বছরঃ ৫ সেমি/বছর।
বয়স অনুযায়ী শিশুর আদর্শ উচ্চতাঃ
১ বছরঃ ৭৫ সেমি।
২ বছরঃ ৮৭ সেমি।
৩ বছরঃ ৯৫ সেমি।
৪ বছরঃ ১০০ সেমি।
৫ বছরঃ ১১০ সেমি।
৬ বছরঃ ১১৭ সেমি।
বয়সের সাথে সাথে শিশুর মগজের পরিমাণ ঠিকমতো বাড়ছে কিনা তা জানা দরকার। মাথার পরিধি মেপে নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মাথার ভেতরের মগজের পরিমাণ ও ক্রমবৃদ্ধি বোঝা যায়। কারণ মগজ বৃদ্ধির সাথে সাথে মাথার পরিধিও বৃদ্ধি পায়, মগজ বৃদ্ধি না পেলে মাথার পরিধিও বাড়েনা।
কানকে মাথার সাথে চেপে ধরলে যে জায়গায় স্পর্শ করে ঠিক সেই বরাবর ফিতা ধরে মাথার চারদিকে ঘুরিয়ে মাপ নেবেন যাতে ফিতাটি কপালের ভ্রুর ঠিক উপরে এবং মাথার সবচেয়ে পেছনের অংশটি ছুঁয়ে থাকে।
বিভিন্ন বয়সে শিশুর মাথার পরিধিঃ
বয়সঃ ছেলেঃ মেয়েঃ
০ মাস - ৩৪.৮ সেমি ৩৪.৩ সেমি
১ মাস - ৩৭.২ সেমি ৩৬.৪ সেমি
২ মাস - ৩৯ সেমি ৩৮ সেমি
৩ মাস - ৪০.৬ সেমি ৩৯.৫ সেমি
৪ মাস - ৪১.৮ সেমি ৪০.৫ সেমি
৫ মাস - ৪২.৮ সেমি ৪১.৫ সেমি
৬ মাস - ৪৩.৮ সেমি ৪২.৪ সেমি
৭ মাস - ৪৪.৬ সেমি ৪৩.১ সেমি
৮ মাস - ৪৫.৪ সেমি ৪৩.৭ সেমি
৯ মাস - ৪৫.৮ সেমি ৪৪.৩ সেমি
১০ মাস - ৪৬.১ সেমি ৪৪.৮ সেমি
১১ মাস - ৪৬.৬ সেমি ৪৫.২ সেমি
১২ মাস - ৪৭ সেমি ৪৫.৬ সেমি
১৩ মাস - ৪৭.৪ সেমি ৪৫.৯ সেমি
১৪ মাস - ৪৭.৬ সেমি ৪৬.২ সেমি
১৫ মাস - ৪৭.৮ সেমি ৪৬.৫ সেমি
১৬ মাস - ৪৮ সেমি ৪৬.৭ সেমি
১৭ মাস - ৪৮.২ সেমি ৪৬.৯ সেমি
১৮ মাস - ৪৮.৪ সেমি ৪৭.১ সেমি
১৯ মাস - ৪৮.৬ সেমি ৪৭.৩ সেমি
২০ মাস - ৪৮.৮ সেমি ৪৭.৫ সেমি
২১ মাস - ৪৮.৯ সেমি ৪৭.৭ সেমি
২২ মাস - ৪৯ সেমি ৪৭.৯ সেমি
২৩ মাস - ৪৯.১ সেমি ৪৮ সেমি
২৪ মাস - ৪৯.২ সেমি ৪৮.১ সেমি
৩৬ মাস - ৫০ সেমি ৫০ সেমি
৪৮ মাস - ৫০.৩ সেমি ৫০.৩ সেমি
৬০ মাস - ৫০.৮ সেমি ৫০.৮ সেমি
কখন বুঝবেন আপনার শিশুর বিকাশ ঠিকমতো হচ্ছে না?
✅ ঘাড়ের নিয়ন্ত্রণঃ ৫ মাস বয়স।
✅ সাহায্য ছাড়া বসতে পারাঃ ১২ মাস বয়স।
✅ সাহায্য ছাড়া দাঁড়াতে পারাঃ ১৮ মাস বয়স।
✅ ঠিকমতো হাঁটতে পারাঃ ২০ মাস বয়স।
✅ ২-৩ শব্দের বাক্য বলতে পারাঃ ৩৬ মাস বয়স।
✅ নিজের নাম বলতে পারাঃ ৪৮ মাস বয়স।
✅ পায়খানা নিয়ন্ত্রণঃ ৬০ মাস বয়স।
উল্লেখিত বয়সের মধ্যে শিশুর এই বৃদ্ধিগুলো না হলে তাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় "Developmental dealy" বলা হয়।
শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য নিম্নোক্ত খাবারগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চর্বিহীন মাংসঃ শিশুদের ওজন বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে ভালো খাবার চর্বিহীন মাংস। এতে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন এবং ক্যালরি থাকে।
ডালঃ ডাল খেলে শিশুদের ওজন খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
ডালে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, কার্বোহাইড্রেট, আয়রণ, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক থাকে যা শিশুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
মিল্কশেকঃ খেজুর, বাদাম ও দুধ মিলিয়ে মিল্কশেক বানিয়ে খাওয়ালে শিশুদের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
কলাঃ কলায় প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম, ফাইবার, ভিটামিন বি-৬ এবং ভিটামিন সি থাকে যা শিশুদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
মিষ্টি আলুঃ শিশুদের ওজন বেশ দ্রুত বৃদ্ধি করার জন্য চমৎকার একটি খাবার হচ্ছে 'মিষ্টি আলু'। পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিনে ভরপুর এই খাবারটি ৬ মাস বয়সের পর থেকে শিশুকে খাওয়াতে পারেন।
পেঁপেঃ শিশুদের হজমশক্তি এবং স্বাস্থ্য বাড়াতে নিয়মিত পেঁপে খাওয়ান। এতে আছে প্রচুর ক্যালরি, প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট।
এছাড়াও পর্যাপ্ত বিকাশের জন্য শিশুকে গাজর, টমেটো, লালশাক, পুঁইশাক, পালংশাক, বীট, ডালিম, মিষ্টিকুমড়া, পাকা আম, কাঁঠাল, মলা, ঢেলা মাছ, দুধ, মাখন, পনির, কলিজা, ডিম, কডমাছ, মাছের মাথা খাওয়াবেন।
প্রায় সব মায়েদের একটি কমন প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। "স্যার, আমার বাচ্চাটা কিছুই খেতে চায়না। কি করবো?"
কিছু কিছু বাচ্চা সত্যিই খেতে চায়না। বয়স অনুযায়ী বৃদ্ধি এবং বিকাশও ঠিকমতো হয়না। বাচ্চা এক্টিভ না থেকে সবসময় চুপচাপ বসে থাকে। এর জন্য বেশ কিছু কারণ দায়ী। যেমন অপুষ্টি, রক্তশূন্যতা, কৃমি, বিভিন্ন জীবানু দ্বারা বারবার ইনফেকশন হওয়া। এসব ক্ষেত্রে কালবিলম্ব না করে সরাসরি চিকিৎসকে দেখিয়ে বাচ্চার চিকিৎসা করাবেন।
এবার আসি বাচ্চার খাবার রুচি বাড়াতে মা বাবার করণীয়গুলো কি কি..
✅ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মা-বাবার অসচেতনতা, অতিরিক্ত সচেতনতা এবং অনিয়মই বাচ্চার খেতে না চাওয়ার প্রধান কারণ। তাই এ ব্যপারে মা-বাবাকে সঠিক জ্ঞান রাখতে হবে।
✅ বাচ্চার আবদার মেটানোর জন্য বাইরের মুখরোচক খাবারে অভ্যস্ত করে তুললে বাচ্চা ঘরের পুষ্টিকর খাবার খেতে চাইবে না এটাই স্বাভাবিক। চাওয়ার সাথে সাথে আইসক্রিম, চকলেট, চিপস, বিস্কুট, পিজ্জা, বার্গার, প্যাকেটজাত জুস এনে দেবেন না। এগুলো বাচ্চাকে পুষ্টিকর খাবারের প্রতি অনাগ্রহী করে তোলে।
✅ বাচ্চাকে যখন তখন খেতে না দিয়ে তার খাবারের সময় নির্দিষ্ট করে ফেলুন। অন্য সময়ে তাকে খাওয়াতে যাবেন না। খেয়ালখুশি মতো যখন তখন খাইয়ে বাচ্চার ক্ষুধা নষ্ট করবেন না।
✅ পরিবারের অন্য সবার খাবার সময়ে বাচ্চাকেও সাথে রাখুন। বাচ্চারা অনুকরণপ্রিয়। বড়দের দেখাদেখি আনন্দ নিয়ে খাবে।
✅ বাচ্চার পেটে যতটুকু ক্ষুধা সে ততটুকুই খেতে চাইবে। বাচ্চারা বড়দের মতো থালা ভরে খাবেনা। এটা মেনে নিন। কখনোই জোড় জবরদস্তি করে বাচ্চাকে খাওয়াতে যাবেন না। এতে করে বাচ্চা ভয় পায়। আস্তে আস্তে খাবারের প্রতি তীব্রতা অনীহা তৈরি হয়।
✅ বাচ্চাকে পর্যাপ্ত খেলাধুলা করতে দিন। বাচ্চা খেলতে খেলতে ক্লান্ত হবে এবং ক্ষুধা লাগবে।
✅ বাচ্চারা কোন খাবারটি খেতে পছন্দ করে তা খুঁজে বের করুন। তার পছন্দমতো পুষ্টিকর খাবার রান্না করুন। প্রতিদিন একই খাবার না দিয়ে মাঝেমধ্যে খাবারে বৈচিত্র্য আনুন।
✅ বাচ্চাকে আকর্ষণীয় রঙিন প্লেটে খেতে দিন। এতে করে খাবারের প্রতি তার আগ্রহ বাড়বে।
✅ টিভি বা ফোনে কার্টুন দেখিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াবেন না। এতে করে বাচ্চা খাবারের স্বাদ পায় না। অন্যদিকে মনোযোগের কারণে পরিপাকের প্রয়োজনীয় এনজাইমগুলো নিঃসৃত হয়না। ফলে বদহজমের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
✅ বাচ্চাকে পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে বুঝান। বাইরের খাবারের খারাপ দিকগুলো বুঝান। আদর করে বুঝালে আপনার নাড়ি ছেঁড়া ধন আপনার কথা বুঝবে না, এটা হতেই পারেনা। আপনার এবং আপনার সোনামণির জন্য অনেক অনেক দোয়া ও শুভকামনা রইলো।
Collected
জাকারিয়া সরকার
শিশু কিশোর মনোবিজ্ঞানী