02/03/2025
এসে গেছে পবিত্র রমজান মাস। গরমের একদম শুরুতে এবারের রমজান, তাই রোযা পালন করতে হবে প্রায় ১৫ ঘন্টা। পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে শুরু করে সারা দেশেই ইফতার এবং সেহেরি'র জন্য নানারকম চটকদার ও বাহারি খাবারের পসরা নিয়ে চলবে মাতামাতি। এতো লম্বা সময় রোযা রেখে, পুষ্টি গুণ বজায় রেখে স্বাস্থ্যসম্মত কি কি খাবার খাওয়া উচিত আর কি কি খাবার এড়িয়ে চলা উচিত আসুন জেনে নিই সংক্ষেপে।
➤সেহেরির খাবারঃ
☞ কি কি বেশি খাবেন?
১. অবশ্যই সেহেরিতে এমন সব খাবার খেতে হবে যেগুলোতে বেশি পরিমানে শর্করা থাকে। এতে করে রোজা থাকতে সুবিধা হবে এবং ক্ষুধা কম অনুভূত হবে। অর্থাৎ, পরিমিত ভাত বা রুটি হতে হবে প্রধান খাবার।
২. খাদ্যতালিকায় অবশ্যই রাখতে হবে আঁশযুক্ত খাবার। পর্যাপ্ত শাক-সবজি গ্রহণের ফলে পরিপাকতন্ত্র সচল থাকবে এবং হজমশক্তি স্বাভাবিক থাকবে।
৩. দেহে শক্তি যোগায় এমন খাবার খেতে হবে, তবে সীমিত। পরিমিত মাছ বা মাংশের সাথে ছোলা, হালিম, বাদাম ইত্যাদি খাবার শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তি ও পুষ্টি নিশ্চিত করবে।
৪. অল্প পরিমাণে দই বা পুডিং, চিড়া, পাকা কলা, এক গ্লাস দুধ (ডায়াবেটিস রোগীরা দুধের সর ফেলে দিয়ে অর্ধেক গ্লাস) শরীরের পুষ্টির ভারসাম্য করবে।
৫. আঁশযুক্ত ফল, পানিযুক্ত সবজি রোযাদার কে ক্লান্তি থেকে দূরে রাখবে। ২/৩ টি খেজুর, আপেল, পেয়ারা, শসা, তরমুজ, বাংগী ইত্যাদি অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে।
৬. খাবার শেষে পানিশূন্যতা রোধে পরিমিত পানি পান করতে হবে।
☞ কি কি খাবেন না?
১. কখনোই পেট ভরে সেহেরি খাবেন না।
২. অস্বাভাবিক বেশি প্রোটিন (মাছ বা মাংশ) খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এতে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয়।
৩. অতিরিক্ত দুগ্ধ জাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকুন, অধিক চিনি দিয়ে শরবত পানে বিরত থাকুন।
৪. কখনোই সেহেরিতে অতিরিক্ত চা বা কফি পান করবেন না। এতে শরীরে মূত্রচাপ তৈরি হবে।
➤ইফতার এর খাবারঃ
☞ কি কি খাবেন?
১. ইফতারে খেতে হবে সহজপাচ্য খাবার। ইফতারের শুরুতে পাতলা শরবত খাওয়া উচিত। এ ছাড়া ইফতারে খাওয়া যেতে পারে খেজুর, নরম খিচুড়ি বা গরম গরম ভাত (হালকা তরকারি দিয়ে), চিড়া-দই, কলা, ডিম সেদ্ধ, হালিম, স্যুপ, সাগু, কম চিনি দিয়ে দুধ বা সেমাই, সুজি, পায়েস, ফিরনি, ছোলা সেদ্ধ ইত্যাদি।
২. ইফতারে বড়া জাতীয় খাবার যেমন আলুবড়া, ডালবড়া, বেগুনি, পিঁয়াজু, ডিমের চপ ইত্যাদি খেতে চাইলে অল্প তেল দিয়ে ভাজা যেকোনো একটি পদের একটি বা দুটি খাওয়া যেতে পারে।
৩. ভাজা পিঁয়াজু, বেগুনী, আলুর চপ বা জিলাপি দিয়ে মুড়ি মাখা খেতে চাইলে সর্বোচ্চ ১ ছোট বাটির বেশি নয়।
৪. ইফতারে মৌসুমি ফল (কলা, তরমুজ, বাংগী, বেল, পেয়ারা ইত্যাদি) খান। পরিমিত পানি পান করতে হবে। আখের রস, ডাবের পানি পান করতে পারেন।
☞ কি কি খাবেন না?
১. ইফতারে কখনোই অত্যধিক ভাজাপোড়া খাবেন না। দোকানে বিক্রিত অতিরিক্ত তেল-ঝাল-মশলা জাতীয় বাহারি খাবার পরিহার করাই উত্তম।
২. ইফতারে তৃষ্ণা মিটানোর জন্য একবারে বেশি পানি পান করা বা অতিরিক্ত শরবত পানে বিরত থাকুন।
৩. ইফতারে অত্যধিক ভারী খাবার( বিরিয়ানি, গরুর/খাসীর মাংশ) না খাওয়াই উত্তম। সারাদিনের রোযার পরে ভারী খাবার হজমের সমস্যা সৃষ্টি করবে এবং পাচন ক্রিয়া দেরী করবে।
➤রাতের খাবারঃ
রাতের খাবার নির্ভর করবে ইফতারের খাবার কেমন হয়েছে তার উপর। ইফতার যদি বেশি ভারী হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে রাতের খাবার কম করে খেতে হবে। তবে ইফতার থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত পরিমিত পানি পান করতে হবে।
✔এছাড়া,
** ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রে সকালের ডোজ ইফতারের সময় এবং রাতের ডোজ সেহেরির সময় ধরে হিসেব করে নিবেন। অন্যান্য ক্ষেত্রে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিবেন।
** ডায়াবেটিস রোগীরা বিশেষ করে যারা ইনসুলিন নেন, তারা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে রোযা রাখবেন।
** রোযার সময় কোনো বেলায় অধিক খাওয়া বা কোনো বেলার খাবার (বিশেষ করে রাতের খাবার) পুরোপুরি বাদ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
** অতিরিক্ত খাবার স্যালাইন বা অতিমাত্রায় ডাবের পানি পান থেকে বিরত থাকুন।
** অযথা গ্যাস্ট্রিক/আলসারের ঔষধ সেবন থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ডাঃ শংকর কে বিশ্বাস
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ