11/08/2023
শোকঃ
শোকের নির্দিষ্ট কিছু পর্যায় আছে। শোকের পাঁচটি পর্যায় খুঁজে বের করেছেন সুইস-আমেরিকান মনোচিকিৎসক এলিজাবেথ কুবলার রস। সর্বপ্রথম ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত On Death and Dying বইয়ে তিনি The five stages of grief হিসেবে শোকের পাঁচটি পর্যায়ের কথা উল্লেখ করেন। একে কুবলার রস মডেল হিসেবে অভিহিত করা হয়। মূলত মৃত্যুপথযাত্রী রোগীদের সাথে কথা বলে, তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অর্থাৎ যখন তারা তাদের অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর কথা জানতে পারলেন, এবং তারপর থেকে কেমন মানসিক অবস্থার ভেতর দিয়ে গেছেন, এগুলোর উপর ভিত্তি করে তিনি শোকের পাঁচটি পর্যায় নির্ধারণ করেন। প্রাথমিকভাবে কুবলার মৃত্যুপথযাত্রীদের ক্ষেত্রেই শোকের এই পাঁচটি পর্যায়ের কথা বলেছিলেন। তবে মানুষ কেবল মৃত্যুশোকেই মূহ্যমান হয় না, তার জীবনে আরও অনেক শোকেরই আগমন ঘটতে পারে। আবার মৃত্যুশোক বলতেও কেবল যে মারা যাবে, তার মানসিক অবস্থাকেই নির্দেশ করে না। বরং যে মারা যাবে বা গেছে, তার কাছের মানুষদেরও মৃত্যুশোক একইভাবে প্রভাবিত করে। এসব কথা মাথায় রেখে কুবলার বলেন, স্বাভাবিকভাবে শোকসন্তপ্ত মানুষ এই পাঁচটি পর্যায় অতিক্রম করে:
Denial (অস্বীকার)
Anger (রাগ)
Bargaining (দর কষাকষি)
Depression (অবসাদ)
Acceptance (মেনে নেওয়া)
Denial (অস্বীকার): প্রথমে ব্যক্তি কিছুতেই তার সাথে হওয়া খারাপ ঘটনাটিকে মেনে নিতে পারে না। সে আশা করতে থাকে, কোথাও হয়তো কোনো ভুল হচ্ছে। শীঘ্রই হয়তো সে ভুলের অবসান ঘটবে।
Anger (রাগ): যখন আর বাস্তবতাকে অস্বীকার করে থাকা যায় না, তখন হতাশা গ্রাস করে ব্যক্তিকে। কিন্তু হতাশার চেয়েও বেশি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে রাগ। এই রাগ নির্দিষ্ট কারও ওপর নয়, এই রাগ তার ভবিতব্যের উপর। কেন আমার সাথেই এমন হয়, আমি কী দোষ করেছি- এই ধরনের চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে তার মাথায়।
Bargaining (দর কষাকষি): এই পর্যায়ে অনেক ‘যদি’, ‘কিন্তু’, ‘হয়তো’র আগমন ঘটে। যদি আমি এটা না করে ওটা করতাম, তাহলে হয়তো আমাকে এমন বিপদে পড়তে হতো না; আমার সাথে যা হয়েছে, তা মেনে নিচ্ছি, কিন্তু কোনোভাবে তো এর প্রভাব প্রশমিত করা যেতে পারে; অমুক কাজটা করলে হয়তো বা আমার অবস্থা কিছুটা হলেও ফিরবে- এমন ভাবতে থাকে শোকগ্রস্ত ব্যক্তিটি।
Depression (অবসাদ): এই পর্যায়ে সব আশা হারিয়ে পুরোপুরি বিষণ্নতায় ছেয়ে যায় ব্যক্তির মন। এমন অবস্থায় ব্যক্তি অনেক বেশি উদাসীন হয়ে পড়ে, শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকেও নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয়, অনেকটাই নীরব ও আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। সামনে আর কোনো আশার আলো নেই, এই চরম সত্যের যন্ত্রণা কুরে কুরে খেতে থাকে তাকে।
Acceptance (মেনে নেওয়া): এই পর্যায়ে ব্যক্তি আবারও স্বাভাবিক হয়ে উঠতে থাকে। তার সাথে যা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যা তার জন্য অপেক্ষা করছে, সেসবকে এবার মেনে নিতে আরম্ভ করে। তবে এই মেনে নেয়া মানে যে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যক্তির সন্তুষ্ট হওয়া, তা নয় মোটেই। বরং বাস্তবতাকে পরিবর্তন করা সম্ভব না, তাই একেই মেনে নিতে হবে, এমন আত্মোপলব্ধিই ঘটে এই পর্যায়ে।
©Roarmedia