15/09/2023
প্যানক্রিয়েটাইটিস কি? অগ্নাশয় এর প্রদাহকে প্যানক্রিয়েটাইটিস বলে। যে কোন বয়সেই এই রোগ হতে পারে। কারণ -পিত্তথলির ছোট ছোট পাথর থাকলে, সেগুলো পিত্তনালী দিয়ে অগ্নাশয় এর নালীর মুখ ব্লক করে দেয়। তখন অগ্নাশয় এর রস খাদ্যনালীতে যেতে পারে না। সেই অগ্নাশয় রসে অগ্নাশয় নিজেই জলতে থাকে। অগ্নাশয় নালীর অগ্নাশয় রস বের হওয়ার নির্গমন মুখ বন্ধ থাকার কারণে, নালী প্রেসার বেড়ে যায়।তখনই প্যানক্রিয়েটাইটিসের এর ব্যথা উঠে। এছাড়া যাদের মধ্যপানের নিয়মিত অভ্যাস আছে, জন্মগত কিছু রোগের কারণে, ভাইরাস ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার কারণে,বিশেষ এলাকার অধিবাসী হওয়ার কারণে, অনেক সময় ইআরসিপি নামক একটি প্রসিডিউর যার মাধ্যমে পিত্তনালির পাথর এনডিস্কোপীর মতো পিত্তনালীর পাথর বের করা হয় সেটা করার পরে, পেটের যে কোন বড় অপারেশন করার পরে অগ্নাশয়ের প্রদাহ অসুখটা হতে পারে। আবার অগ্নাশয় নালীতে পাথর থাকলে অথবা অগ্নাশয়ের শরীরে পাথর থাকলেও প্যানক্রিয়েটাইটিস নামক রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। উপসর্গ- হঠাৎ করে প্রচন্ড পেট ব্যথা হয়, পেট ব্যথা পিঠের দিকে যায়, নামাজ পড়ার সময় সিজদা দেওয়ার মতো ঝুঁকে থাকলে ব্যাথা থেকে তখন কিছুটা মুক্তি পাওয়া যায়। পেট ব্যথার সাথে বমি, জ্বর এমনকি জন্ডিসও হতে পারে। চিকিৎসা পদ্ধতি -চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর অগ্নাশয়ের প্রদাহের সঠিক কারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে খুঁজে বের করার পরে সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে।রোগীর রক্তের পরীক্ষা, অগ্নাশয় এনজাইমের পরীক্ষা,পেটের আলট্রাসনোগ্রাফি, এমআরসিপি, ভাইরাস নির্ণয়ের পরীক্ষার পাশাপাশি রোগীর ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগটার ধরণ ও বিস্তৃতি চিকিৎসকরা নির্ধারণ করেন। প্রথমে ব্যথার ওষুধ, এন্টিবায়োটিক দিয়ে, খাদ্য হজম করার এনজাইম দিয়ে এবং চর্বি তেল জাতীয় খাবার অ্যাভয়েড করার পরামর্শ দিয়ে রোগীর ব্যথার উপশম করার চেষ্টা করেন।অনেক সময় রোগের জটিল ইফেক্ট এর কারণে, ইনফেকশন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গে ছড়িয়ে পড়লে ফুসফুসে পানি আসা, পেটে পানি আসা, কিডনি রেস্পেটরি ফেইলোর এর মত সিনারিও যদি ডেভেলপ করে, এসব ইমার্জেন্সি কেসে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হয়। অগ্নাশয় নালীর পাথরের কারণে যদি বারবার ব্যথা উঠে এবং অগ্নাশয় নালীর ভিতরে যদি পাথর থাকে তখন সার্জনদের পরামর্শ অনুযায়ী অপারেশন ল্যাটারাল প্যানক্রিয়েটিকোজেজুনোসটমি অথবা অগ্নাশয় নালীর পাথর বের করে অগ্নাশয় নালীর সাথে খাদ্য নালীর বাইপাস অপারেশন করে অগ্নাশয় রোগ থেকে মুক্তি পেতে হয়। অগ্নাশয় এর প্রদাহ রোগে রোগীকে দীর্ঘদিন ভুগতে হয় এজন্য রোগীদের ধৈর্যশীল হয়ে চিকিৎসকের সঠিক পরামর্শ মেনে চলতে হয় । একটি ঘরে যখন আগুন লাগে সে আগুন বন্ধ হলেও ঘরে আগুনের ছাপ থেকে যায় । সেরকম প্যানক্রিটাইটিসের প্রদাহ যখন একবার শুরু হয়, সেই প্রদাহ ওষুধের মাধ্যমে কন্ট্রোল রাখা যায় কিন্তু পূর্বের প্রদাহে ছাপ সারা জীবনই বহন করতে থাকে রোগী। এজন্য রোগীকে ধৈর্যশীল হতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাকি জীবন চলতে হবে।