22/02/2024
জরুরী পোস্ট, সময় নিয়ে পড়ুন, ঝুঁকি এড়িয়ে চিকিৎসা নিন-
মাঝেমধ্যেই খবর আসে, অপারেশনের পর রোগীর জ্ঞান ফেরেনি এমনকি রোগী মৃত্যুর খবরও পাওয়া যায়।
সাধারণত রোগীরা অভিজ্ঞ সার্জনের খোঁজ করেন। কিন্তু অপারেশনের সফলতা শুধুমাত্র সার্জনের উপর নির্ভর করে না। একটা অপারেশনের সফলতা সার্জন এবং এনেস্থেটিস্টের উপর সমানভাবে নির্ভর করে। তাই কোনো রোগীর অপারেশনের আগে সার্জনকে ভালোভাবে জানার সাথেসাথে অবশ্যই আপনার এনেস্থেটিস্টকে জানুন।
প্রশ্ন ১।
আপনি কী আপনার এনেস্থেসিওলজিস্টকে চেনেন?
উত্তর-
যখন কোনো রোগি কোনো সার্জিক্যাল সমস্যার জন্য চিকিৎসকের শরনাপন্ন হন তখন তিনি অত্যন্ত সাবধানতার সাথে তার চিকিৎসক নির্বাচন করে থাকেন। বিশেষ করে আমাদের দেশের রোগীরা সরাসরি উচ্চ ডিগ্রীধারী চিকিৎসক নির্বাচন করেন। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা সরকারী, বেসরকারী হাসপাতালের নামডাকওয়ালা অধ্যাপক পর্যায়ের চিকিৎসকের খোঁজ করে থাকেন। খুব সংগত কারনেই তিনি এমনটি করে থাকেন কারণ তিনি সেই চিকিৎসকের ছুরির নীচে নিজের জীবন সঁপে দেবেন, সেইক্ষত্রে অত্যন্ত সুবিবেচনার সাথে সার্জন পছন্দ করবেন এবং এটা করাই স্বাভাবিক।কিন্তু আমাদের দেশের রোগীরা বুজতে চান না বা তাদের বুঝতে দেওয়া হয় না যে, অপারেশনের আগে, অপারেশন চলাকালীন সময়ে এবং অপারেশনের পরে একজন সার্জনের সমান বা ক্ষেত্রবিশেষে কখনও কখনও সার্জনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন আরেকজন চিকিৎসক, তিনি এনেসথেসিওলজিস্ট।
একটি সার্জিক্যাল টিমের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন সদস্য এনেসথেসিওলজিস্ট, আপনি যখন সার্জনের ছুরির নীচে তখন যেকোনো মুমুর্ষূ অবস্থার জন্য আপনার পাশে থাকেন এনেসথেসিলজিস্ট।
আপনার সার্জারী চলাকালীন সময়ে এনেস্থেসলজিস্ট আপনার পক্ষের একজন আইনজীবীর মতোই কাজ করে।
প্রশ্ন ২-
এনেস্থেসিওলজিস্ট কারা?
উত্তর-
অন্যান্য চিকিৎসকের মতো এনেস্থেসিওলজিস্টও একজন চিকিৎসক, যারা তাদের এমবিবিএস ডিগ্রী শেষ করার পরে এনেস্থেসিয়া কাজে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এমবিবিএস শেষ করার পর বাংলাদেশে প্রায় সব সাবজেক্টেই উচ্চতর ডিগ্রী (এফসিপিএস/এমডি/ডিপ্লোমা) গ্রহণের সুযোগ আছে, তেমনি এনেস্থেসিয়াতেও আছে এই উচ্চতর ডিগ্রী গ্রহণের সুযোগ, অন্যদের মতোই তাঁদেরও সকল প্রশিক্ষণ শেষ করে যথাযথ পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে এসব ডিগ্রী অর্জন করতে হয়। কখনও কখনও ডিগ্রী অর্জনের পরও এই বিষয়ে উচ্চতর ট্রেনিং নেবার প্রয়োজন পড়ে।
অপারেশন চলাকালীন সময়ে অজ্ঞান করে রেখে আপনাকে শুধু ব্যথামুক্ত করে রাখাই একজন এনেস্থেসলজিস্টের কাজ নয়, বরং সার্জারী চলাকানীন সময়ে আপনার ব্লাড প্রেসার, হার্টরেট, শ্বাসের গতি, রক্তের মধ্যে অক্সিজেনের প্রবাহ এবং সার্জারীজনিত কারনে আপনি মুমুর্ষূ হয়ে গেলে আপনাকে রক্ষা করার কাজটিও করতে হয় একজন এনেস্থেসিওলজিস্টকে।
শুধু অপারেশন চালাকালীন সময়েই নয়, বরং এনেস্থেসিয়া পরবর্তী যেকোন ক্রিটিক্যাল অবস্থার পরিচর্যাও করে থাকেন আপনার এনেস্থেটিস্ট।
প্রশ্ন ৩-
আপনি কী আপনার পছন্দমতো এনেস্থেটিস্টকে নির্বাচন করতে পারেন?
উত্তর -
খেয়াল করুন একটি সাকসেসফুল অপারেশনের জন্য একজন সার্জনের যতটুকু ভূমিকা ঠিক ততটুকু ভূমিকা একজন এনেস্থেটিস্টের। সেইক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই এনেস্থেটিস্ট নির্বাচন করার ক্ষমতা রাখেন। এমতবস্থায় আপনি আপনার পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা, আপনার পরিচিতজনের রিকোমেন্ডেশান নিয়ে এনেস্থেটিস্ট নির্বাচন করুন। কারণ অপারশন চলাকালীন সময়ে একজন এনেস্থেটিস্টই আপনাকে রাখবে ব্যথামুক্ত, আপনার যেকোনো মুমুর্ষূ অবস্থায় আপনাকে নিরাপদ রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে আপনাকে রক্ষা করবেন।
তাই অপারেশেনের আগেই এনেস্থেটিস্টের সাথে সাক্ষাৎ করুন। অপারেশন পূর্ববর্তী এই সাক্ষাতটি আপনাকে তার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।
প্রশ্ন ৪-
অপারেশনের পূর্বে এই সাক্ষাতটি কেন জরুরী?
উত্তর -
যেভাবে আপনি সার্জনের সাথে দেখা করে আপনার রোগের বিস্তারিত জানিয়েছেন ঠিক তেমনিভাবেই আপনার এনেস্টটিস্টের সাথে দেখা করে আপনার রোগের বিস্তারিত জানান, পরীক্ষানীরিক্ষার সমস্ত রিপোর্ট দেখান। সমস্ত রিপোর্ট এবং কিছু শারীরিক পরীক্ষার পর তিনি আপনাকে এনেস্থেসিয়া দেবার ব্যাপারে ছাড়পত্র দেবার পর আপনার অপারেশনটি হবে, নচেৎ নয়।
প্রয়োজনে আপনি কী ধরনের এনেস্থেসিয়া পছন্দ করেন, বা এনেস্থেটিস্ট কী ধরনের এনেস্থেসিয়া আপনাকে দিতে চান সেট আ নিয়েও বিস্তারিত আলাপ করুন।
মূল কথা আপনার জীবনরক্ষাকারী একটি অপারেশনকে সাকসেসফুল করে তুলতে একজন সার্জনের ভূমিকা যতটা ঠিক ততটাই ভূমিকা একজন এনেস্থেটিস্টের।
সার্জারীকালীন সময়ে নিরাপদ থাকতে আপনার এনেস্থেটিস্ট নির্বাচনে সচেতন হউন।
ডা. আশরাফ জুয়েল
চিকিৎসক, কবি ও কথাসাহিত্যিক।
কনসালটেন্ট, সার্জিক্যাল এণ্ড ট্রান্সপ্লান্ট। আইসিইউ।
ইউনাইটেড হাসপাতাল, ঢাকা।