15/12/2023
রোগকে বিদায় জানান
আপনি ব্যাথায় কাতর হয়ে পড়েছেন? ব্যাথা বেদনায় নীল হয়ে গেছেন? অসুস্থতায় আপনার শরীর কি পাংশুটে বর্ণ ধারণ করেছে? ডাক্তারদের কাছে যেতে যেতে আপনি কি বিরক্ত? হাসপাতালের করিডোরগুলোয় হাটতে হাটতে আপনি কি ক্লান্ত? আপনার মাথায় কি শুধু ক্লিনিকের নাম গুলো ঘুরপাক খায়? ডাক্তারের সাথে সাক্ষাতের তারিখ আর রোগের বিভিন্ন ধরনগুলোই কি আপনার মূল চিন্তা?
কেমন লাগবে যদি আপনাকে একটা বিষয় জানিয়ে দিই--যা আপনার আত্মা থেকে সকল দুঃখ কষ্ট মুছে দেবে?
সেটাই আল্লাহর নাম আশ শাফী তথা "আরোগ্যদাতা"!
এখন আপনার ব্যথিত হৃদয়কে কিছুক্ষণের জন্য শ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণের সুযোগ করে দিন। তারপর এই দয়ালু নামটি সম্পর্কে ধারাবাহিক ভাবে জানুন। এ নামটির ছায়ায় আশ্রয় নিলে আপনি বুঝতে পারবেন এর প্রয়োজন কত? আর আপনি এটাও বুঝতে পারবেন যে,আপনি এই নিয়ামত থেকে কতটা দূরে আছেন!
আশ শাফী তথা আরোগ্যদাতা আল্লাহর এমন একটি নাম যার প্রশংসা আমরা এ জন্যই করি যে,তিনি নিজেকে এ নামে নামকরন করেছেন। তিনি নিজেকে সুস্থতা প্রদানের গুণে গুণান্বিত করেছেন। তিনিই সেই সত্তা যিনি সুস্থতা দান করেন এবং বান্দার সুস্থ ও নিরাপদ রাখেন। এই নামটি শুনলেই এর ভেতরকার অর্থটা বোঝা যায়৷ এর বাহ্যিক দিকই অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য কে ফুটিয়ে তোলে।
সুস্থতা শব্দটা রোগের সাথেই সম্পৃক্ত। মানবজীবনে রোগ শোক নিত্যকার ঘটনা। এটা বিবিধ কষ্ট নিয়ে হাজির হয়। এর থেকে কেউ রেহাই পায় না। যে ব্যক্তি চোখের ব্যাথা থেকে মুক্ত,সে মাথা ব্যাথায় আক্রান্ত। আবার মাথাটা ভাল হলে পাজরের ব্যাথায় আরম্ভ হয়। এ ব্যাথা শেষ হলে জ্বর এসে হানা দেয়,জ্বরটা কমে গেলে পেটব্যাথা শুরু হয়। পেটের ব্যাথা নামলে দাঁত টনটন করে এভাবে কোন না কোনো অসুস্থতা লেগেই থাকে।
আবার সে যখন সুস্থতা লাভ করে, দেখতে পায় তার ভাই কাতরাচ্ছে,রোগাক্রান্ত হয়ে কষ্ট পাচ্ছে তার বোন। তার মা কান্নাকাটি করছে। ছেলেটা চেঁচামেচি করছে। সবচে প্রিয়জন আত্মার আত্মা ব্যাথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে,মরনব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে আছে।
জীবনটা আসলে দুঃখ কষ্ট ব্যাথার একটা ময়দান।
এ জন্যই আল্লাহ নিজের নাম দিয়েছেন আশ শাফী তথা "আরোগ্য দাতা"। যেন আপনি আপনার সকল ব্যাথা নিয়ে তার দয়ার আঙিনায় সিজদায় লুটে পড়েন। তার অদৃশ্য মহান শক্তির কাছে আপনার সকল ব্যাথার অনুভূতি প্রকাশ করেন।
রোগ এক ভয়াবহ জিনিস। এতে আক্রান্ত হয়ে অহংকারী ব্যক্তিটিও হারিয়ে ফেলে তার শক্তি। দূর্বলতা তাকে ছেয়ে ফেলে। ফলে সজীব চঞ্চল প্রাণ মানুষটার অনুভূত হয় অবসাদ, দূর্বলতার স্পর্শ।
আল্লাহ শরীরের এ সজীবতাকে মুহুর্তের জন্য স্নান করে দেওয়ার ফায়সালা করে দেন। যেন বান্দা নিজের দূর্বলতাকে স্বীকার করে নেয়। সে যেন বুঝতে পারে আদতে তার শক্তি সামর্থ্য বলতে কিছুই নেই।
আল্লাহ মানুষের জন্য রোগের ফায়সালা করে দেন,যেন সে এই রোগের মাধ্যমে এর কাছাকাছি একটা বিষয়কে স্মরণ করে। সেটা হলো মৃত্যু। রোগ যেমন সজীবতা ম্লান করে দেয় তেমনি মৃত্যুও জীবনের পরিসমাপ্তি এনে দেয়। তাইতো বড় বড় সুনামধন্য চিকিৎসকের চিকিৎসা নেওয়ার পরেও লাশ হয়ে ফিরে।
ব্যক্তি আপনি তো মৃত্যু দিয়েই গড়া! কি কথাটা মাথায় ঢুকছে না?
আপনার প্রতিটা জিনিস মৃত্যুর সাথে মেলে। আপনার ঘুমও মৃত্যু। অসুস্থতাও মৃত্যু। জীবনের নতুন ধাপে পৌঁছালে আগের ধাপের মৃত্যু ঘটে,যেমন যৌবন আপনার শৈশবের মৃত্যু ঘটায়। আবার বার্ধক্য আপনার যৌবনের মৃত্যু ডেকে আনে। আপনি জীবনের সাথে যতটুকু মেশেন,তার চেয়েও বেশি মেশেন মৃত্যুর সাথেই। তারপরও আমাদের কল্পনা আমাদের মাঝে এ বিশ্বাস এনে দেয় যে,আমরা চিরস্থায়ী। আর এ কারণেই আমাদের শরীর চিৎকার করে বলতে থাকে "তোমার ধ্বংস অতি সন্নিকটে!"
একজন মানুষ অসুস্থ শরীর নিয়ে বিছানায় পড়ে থাকা অবস্থায় যখন আসা যাওয়া করতে থাকা সুস্থ লোকদের দেখতে থাকে,তখন তার মাঝে জেগে উঠে তাওবার মনোভাব। সে অনুভব না করলেও কবরের বাতাস যেন তার চারিদিকে প্রবাহিত হয়।
আপনি যখন অসুস্থ, আপনার তখন মনে হতেই পারে আপনার আত্মা মৃত ব্যক্তিদের সাথে আলাদা জগতে আছে। ধ্বংস হয়ে যাওয়ার দুই ধাপ হিসেবে আপনার দুই চোখ আর দুই ঠোঁট শুকিয়ে যেতে থাকে। আপনার চাহুনিতে কাঁপুনি দৃশ্যমান হয়।
এই তো জীবন। ঠিক এ জীবনটাই আপনার শরীরের ভেতর থেকে আপনাকে দেখতে আসা মানুষগুলোর হাতের ইশারায় বিদায় জানাচ্ছে।
এভাবে রোগ যখন চূড়ান্ত রূপ নেয়, আর দুনিয়ার মোহ থেকে আপনি যখন নিজেকে মুক্ত করে নেন, তখন আশ শাফী তথা আরোগ্য দাতা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা রোগকে আপনার শরীর থেকে ত্যাগের অনুমতি দেন। সুস্থতাকে আদেশ করেন আপনার দেহে বিচরণ করার। ধীরে ধীরে আবার আপনার দুই গালে উজ্জ্বলতা ফিরে আসে। অসুস্থতার দিনগুলোতে মুখে যে মলিনতার সৃষ্টি হয়েছিল তা মুছে গিয়ে ফুটে ওঠে মিষ্টি হাসি।
আপনার এই হাসিমাখা মুখটা এনে দিল কেন?
তিনিই আমার রব, তিনিই আরোগ্যদাতা।
সংকলিত ও সম্পাদিত।
মূল লেখা: ড. সাঈদ
বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন