02/08/2022
মোঃ আব্দুল লতিব সম্রাট
প্রফেশনাল সাইকোলজিস্ট
বি.এস.সি. (অনার্স) এম.এস. (সাইকোলজি), রাবি
এস.এম.টি.পি.আই (কাউন্সিলিং অ্যান্ড সাইকোথেরাপি), প্যাসিল্ক
বিষয়ঃ- ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়।
"আমি ডিপ্রেশনে আছি" এখন এই বাক্যটি বিশেষ করে তরুণ সমাজের কাছে একটি ট্রেন্ডে পরিনত হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মন খারাপ আর ডিপ্রেশনে ভোগা এক বিষয় নয়। মন খারাপ থাকা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যা এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। ডিপ্রেশন এক ধরনের মুড ডিসঅর্ডার এখানে ম্যানিক এপিসোড থাকে না শুধুমাত্র ডিপ্রেসিভ এপিসোড উপস্থিত থাকে। তাই আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাঝে তীব্রভাবে নিষ্ক্রিয়তা দেখা দেয়।
DSM -5 (American Psychiatric Association, 2013) উল্লেখিত নিচের ৯ টি লক্ষণের মধ্যে অন্তত ৫ টি লক্ষণ একটানা ২ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে ব্যক্তির ভেতর উপস্থিত থাকলে বলা যায় যে তিনি ডিপ্রেশনে আক্রান্ত।
লক্ষণগুলি হলোঃ-
*(A)
১. দিনের বেশীরভাগ সময় মন খারাপ থাকা।
২. কাজ-কর্মে আনন্দ ও আগ্রহ কম থাকা।
৩. উল্লেখযোগ্য ভাবে ওজন কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া (এক মাসে ৫%), অথবা খাবারের রুচি কমা বা বেড়ে যাওয়া।
৪. অস্বাভাবিকভাবে ঘুম কমা বা বাড়া।
৫. প্রায় খুব চুপচাপ হয়ে পড়া।
৬. প্রায় প্রতিদিন ক্লান্তবোধ করা বা শক্তি হারিয়ে ফেলা এমন অনুভব করা।
৭. প্রায় প্রতিদিন নিজেকে অপরাধী বা দায়ী বা মূল্যহীন মনে করা।
৮. প্রায় প্রতিদিন সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা অথবা চিন্তা বা মনোযোগের সামর্থ হারিয়ে ফেলা।
৯. ক্রমাগত মৃত্যুচিন্তা কিংবা আত্নহত্যার চিন্তা বা আত্নহত্যার প্লান বা আত্নহত্যার চেষ্টা করা।
*(B) এক্ষেত্রে ব্যক্তির পেশাগত, ব্যক্তিগত, সামাজিক জীবনযাত্রা সিগনিফিকেন্টলি ব্যাহত হবে।
*(C) ঔষধ বা অন্য কোন অসুখের প্রভাবে উপসর্গ গুলো দেখা দিলে তা বিষন্নতা বলে বিবেচিত হবে না।
*(D) সিজোফ্রেনিয়া জাতীয় রোগের উপসর্গগুলো বেশি পরিলক্ষিত হলে তা বিষন্নতা বলে বিবেচিত হবে না।
*(E) বিষন্নতার ক্ষেত্রে মানিক বা হাইপার ম্যানিক এপিসোড থাকবে না, এটা থাকলে বাইপলার মুড ডিজঅর্ডার বলে চিহ্নিত হবে।
ডিপ্রেশনের কারণ সমূহঃ-
নিজের চাহিদার কথা অন্যের কাছে প্রকাশ করতে না পারা, শরীরবৃত্তীয় বা হরমোনাল কারণ, অন্যকে বিষন্ন হতে দেখে শেখা, কোন প্রকার আঘাত বা ক্ষতির অভিজ্ঞতা, কাজের প্রতি শতভাগ নিখুঁত হওয়া, সমস্যার সমাধানে দক্ষতার অভাব, দাম্পত্য কলহ বা বিচ্ছেদ, যৌন সঙ্গমের অভাব, পেশাগত দক্ষতার অভাব, চাপ সৃষ্টিকারী ঘটনা, ইচ্ছা করে কোন কাজ দেরিতে করা, অপরাধবোধ বা আত্মবিশ্বাসের অভাব ইত্যাদি।
বিষন্নতা থেকে বের হওয়ার উপায়ঃ-
নিম্নে লিখিত টিপসগুলো যথাযথভাবে পালন করতে পারলে মাইন্ড এবং মডারেট লেভেলের বিষন্নতা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
শারীরিক ব্যায়াম - প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম (সাইকেলিং, জগিং, সুইমিং ইত্যাদি) করার চেষ্টা করা, যার ফলে শরীর থেকে ঘাম নির্গত হবে।
সুষম খাবার - প্রচুর পরিমাণে রঙিন ফলমূল এবং শাকসবজি খেতে হবে, চিনি এবং ক্যাফেইন জাতীয় খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে, প্রক্রিয়াজাত করা খাবার বাদ দিতে হবে। দিনের ষোল ঘন্টা শুধুমাত্র পানি খেয়ে এবং বাকি আট ঘন্টা উপরিউক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে পারলে তা বেশ ফলপ্রসু হতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুম - দৈনিক সাত থেকে নয় ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করা, কারণ বিষন্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ঘুম অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়।
রিল্যাক্সেশন চর্চা - দিনের নির্দিষ্ট সময়ে কমপক্ষে দুইবার রিলাক্সেশন (ব্রিদিং, পিএমআর) চর্চা করার চেষ্টা করা।
নেগেটিভ চিন্তা হ্রাস করা - নেতিবাচক চিন্তার প্রতি কম সময় ব্যয় করার চেষ্টা করা, কারণ মানুষ যেই চিন্তার প্রতি বেশি সময় ব্যয় করে সাধারণত সেটাই বিশ্বাস করতে শুরু করে।
ইতিবাচক দিক খোঁজা - ঘটনার ইতিবাচক দিক খোঁজার প্রতি বেশি সময় ব্যয় করার চেষ্টা করা।
জটিল ভাবে চিন্তা পরিহার করা - কোন একটি বিষয় বা ঘটনাকে সহজভাবে চিন্তা করা শিখতে হবে।
নিজেকে দোষারোপ না করা - কোন একটি ঘটনা বা পরিস্থিতির জন্য সব সময় নিজেকে দোষারোপ না করে, এর পেছনে অন্যদেরও দোষ থাকতে পারে তা চিন্তা করার চেষ্টা করা।
অন্যকে ক্ষমা করে দেওয়া - অন্যকে ক্ষমা করে দেওয়ার মাধ্যমে নেতিবাচক চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
অটোমেটিক নেগেটিভ থট সনাক্ত করা - অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোন চিন্তাটি বারবার আপনার মস্তিষ্কে আসছে তা নির্দিষ্টভাবে শনাক্ত করতে হবে।
চিন্তাটি বাস্তবসম্মত নাকি অবাস্তব এর পেছনে যুক্তি গুলো খুঁজে বের করা - চিন্তাটির পক্ষে এবং বিপক্ষে যুক্তি বিশ্লেষণ করতে হবে।
মাইন্ডফুলনেস চর্চা করা - শারীরিকভাবে যেখানে অবস্থান করছেন মানসিকভাবেও ঠিক সেখানেই অবস্থান করা অর্থাৎ সর্বদা বর্তমানে থাকার চর্চা করতে হবে।
নেগেটিভ চিন্তার মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা - নেতিবাচক চিন্তার গতিরোধ করতে এর মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে হবে, নেতিবাচক চিন্তা গুলো যখন আসতে শুরু করবে তখন অন্য কোন প্রোডাক্টিভ কাজে মনোনিবেশ করা।
নেতিবাচক চিন্তাকে ইতিবাচক চিন্তায় রূপান্তর করা - প্রত্যেকটি ঘটনার ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুইটি দিক রয়েছে, নেতিবাচক চিন্তাটির পেছনের ইতিবাচক দিক খোঁজা।
নিজের সফলতা বা ভালো গুণগুলো খুঁজে বের করা - একদম ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ সফলতা গুলো খুঁজে বের করা করা।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ - যারা আপনাকে সহায়তা করেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
মাফ করা - আপনার চোখে অপরাধীদের মাফ করে দেওয়া।
নতুন কাজ শুরু করা - নতুন কোন কাজে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করা।
অধিক লক্ষণীয় বিষয়ঃ-
*যত বেশি নেগেটিভ চিন্তা করবেন, সেই বিষয়টি তত বেশি বিশ্বাস করবেন।
*কাজ থেকে নিজেকে যত দূরে সরিয়ে নিবেন বিষন্নতা তত বৃদ্ধি পাবে।
উপরিউক্ত পরামর্শ গুলো যথাযথভাবে পালন করার পরেও বিষন্নতা থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে দ্রুত একজন প্রফেশনাল সাইকোলজিস্ট এর শরণাপন্ন হয়ে কাউন্সিল বা সাইকোথেরাপি গ্রহণ করুন।