17/01/2023
বিষণ্ণতা কী?
বিষণ্ণতা হল সবচেয়ে সাধারণ ধরনের মানসিক স্বাস্থ্যগত একটি অবস্থা এবং প্রায়ই উদ্বেগের পাশাপাশি এটি বিকাশ লাভ করে।
বিষণ্ণতা হালকা ও স্বল্পস্থায়ী বা গুরুতর ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। কিছু মানুষ শুধু একবার বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়, তবে অন্যরা এটি একাধিকবার অনুভব করতে পারে।
বিষণ্ণতা আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করতে পারে, তবে যথাযথ সহায়তা প্রদান করা হলে এটি প্রতিরোধযোগ্য। এটি জানা গুরুত্বপূর্ণ যে, আত্মহত্যার কথা চিন্তা করে এমন তরুণদের সাহায্য করার জন্য অনেক কিছু করা যেতে পারে।
বিষণ্ণতার কারণ কী?
মানসিক নির্যাতন, স্কুলে সহিংসতা, ঘনিষ্ঠ কারো মৃত্যু অথবা পারিবারিক সহিংসতা বা পারিবারিক ভাঙ্গনের মতো কিছু সমস্যার প্রতিক্রিয়া হিসাবে বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপে থাকার পর কেউ বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হতে পারে। এটি পরিবারেও চলতে পারে। কখনও কখনও আমরা জানি না কেন এটি ঘটে।
শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মাঝে বিষণ্ণতা
শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মাঝে দীর্ঘ সময় ধরে অসুখী ভাব বা বিরক্তি হিসেবে বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে। একটু বড় শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মাঝে বিষণ্ণতা দেখা দেওয়া খুব সাধারণ বিষয়। তবে প্রায়ই এটি অজানা অবস্থায় রয়ে যায়।
কিছু শিশু হয়তো বলতে পারে যে, তারা "অসুখী" বা "দুঃখ" বোধ করছে। আবার অন্যরা বলতে পারে যে, তারা নিজেদের আঘাত বা এমনকি হত্যা করতে চায়। বিষণ্ণতায় আক্রান্ত শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের নিজের ক্ষতি করার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই এই ধরনের প্রতিক্রিয়া সবসময় গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত।
একটি শিশুকে শুধু দুখী দেখালেই সে বিষণ্ণতায় ভুগছে– এমনটা মনে করার কারণ নেই। তবে যদি এই দুখীভাব অব্যাহতভাবে দেখা যায় বা স্বাভাবিক সামাজিক কাজকর্ম, আগ্রহ, স্কুলের কাজ বা পারিবারিক জীবনে এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, তাহলে এর অর্থ হতে পারে- তাদের মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সহায়তা প্রয়োজন।
মনে রাখবেন, শুধু একজন ডাক্তার বা একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞই বিষণ্ণতা নির্ণয় করতে পারেন। তাই আপনি যদি আপনার সন্তানের বিষয়ে চিন্তিত হন তাহলে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীকে পরামর্শের জন্য জিজ্ঞাসা করতে দ্বিধা করবেন না।
magnifying glass
শিশুদের মাঝে বিষণ্ণতার লক্ষণ ও উপসর্গ
একেক শিশুর ক্ষেত্রে বিষণ্ণতা একেকভাবে অনুভব হতে পারে। এখানে বিষণ্ণতার কিছু সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গ দেওয়া হলো:
শারীরিক লক্ষণ ও উপসর্গ:
ক্লান্তি বা কম শক্তি; এমনকি বিশ্রামে থাকলেও
অস্থিরতা বা মনোযোগ দিতে অসুবিধা
দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পাদনে অসুবিধা
ক্ষুধা বা ঘুমের নিয়মে পরিবর্তন
যন্ত্রণা বা ব্যথা যার কোনো সুস্পষ্ট কারণ নেই।
আবেগীয় ও মানসিক লক্ষণ ও উপসর্গ:
অবিরাম দুঃখ, উদ্বেগ বা বিরক্তি
বন্ধুবান্ধব ও কাজকর্মে আগ্রহ হারানো, যা তারা সাধারণত উপভোগ করে
অন্যদের কাছ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়া এবং একাকীত্ব
নিজেকে গুরুত্বহীন ভাবা, আশাহীনতা বা অপরাধবোধ কাজ করা
এমন সব ঝুঁকি নেওয়া যা সাধারণত তারা নেয় না
নিজের ক্ষতি বা আত্মহত্যার চিন্তা
এই উপসর্গগুলোর একটি বা একাধিক দেখা দেওয়ার অর্থ এই নয় যে, একটি শিশু বিষণ্ণতায় আক্রান্ত। তবে এমন অনেক উপায় রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি আপনার সন্তানকে এই অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে সহায়তা করতে পারেন। আপনি যদি আপনার সন্তানের জন্য চিন্তিত হন, তাহলে পরামর্শের জন্য আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে দ্বিধা করবেন না।
hands
আপনার সন্তানকে মানিয়ে নিতে সাহায্য করার উপায়
আপনি যদি মনে করেন আপনার সন্তান হতাশাগ্রস্ত, তাহলে তাকে সহায়তা করতে আপনি নিচের কাজগুলো করতে পারেন:
কী ঘটছে তা দেখুন: তাদের জিজ্ঞাসা করুন তারা কেমন অনুভব করছে এবং বিবেচনা বা পরামর্শ ছাড়াই মন খুলে তাদের কথা শুনুন। আপনি আস্থা রাখেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে যারা আপনার সন্তানকে চেনে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন। যেমন প্রিয় শিক্ষক বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করুন, উদ্বেগজনক কিছু তাদের নজরে এসেছে কিনা বা বিভিন্ন জিনিসের প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়ায় কোনো পরিবর্তন এসেছে কিনা। নতুন একটি স্কুল ভর্তি হওয়া বা বয়ঃসন্ধিকালের মতো জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সময় সন্তানের সুস্থতার দিকে বিশেষ মনোযোগ দিন।
তাদের সঙ্গে সময় কাটান: কথাবার্তা বলা বা তারা উপভোগ করবে- এ ধরনের বয়স-উপযোগী বিভিন্ন কার্যক্রম একসঙ্গে করার মাধ্যমে উষ্ণ, নির্ভরতা ও সমর্থনের পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করুন। তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমের প্রতি আগ্রহী হোন, যেমন স্কুলে তাদের দিনটি কেমন ছিল বা তারা তাদের বন্ধুদের কোন দিকটি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে।
ইতিবাচক অভ্যাসকে উৎসাহিত করুন: আপনার সন্তানকে এমন সব কাজ করতে উৎসাহিত করুন, যা সাধারণত তারা উপভোগ করে। নিয়মিত খাওয়া ও ঘুমানোর অভ্যাস বজায় রাখুন এবং সক্রিয় থাকুন। শারীরিক কার্যকলাপ তাদের মন ভালো রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। সঙ্গীত আমাদের মেজাজের ওপর জোরালো প্রভাব ফেলতে পারে। তাই একসঙ্গে এমন গান শোনার চেষ্টা করুন যা তাদের জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক অনুভূতি দেয়।
নিজেদের প্রকাশ করতে দিন: সন্তানকে আপনার সঙ্গে কথা বলতে দিন। তারা কেমন অনুভব করছে সে সম্পর্কে তারা কী বলে তা মনোযোগ সহকারে শুনুন। ভাবনা শেয়ার করার জন্য আপনার সন্তানকে কখনই চাপ দেবেন না। এর পরিবর্তে আপনি অন্যান্য ধরনের সৃজনশীল অভিব্যক্তি; যেমন ছবি আঁকা, কারুশিল্প বা তাদের চিন্তাভাবনা ও অভিজ্ঞতা লিখে রাখতে উৎসাহিত করতে পারেন। মনের অবস্থা লিখে রাখা একটি মাধ্যম যা শিশুদের মন খারাপ করে বা মেজাজ বিগড়ে দেয়- এমন বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে সাহায্য করতে পারে। এগুলো তাদের জীবনের ইতিবাচক দিক এবং তারা যে বিষয়গুলো নিয়ে গর্বিত তার একটি দুর্দান্ত স্মারক হতে পারে।
মানসিক চাপপূর্ণ পরিবেশ থেকে রক্ষা করুন: আপনার সন্তানকে এমন পরিস্থিতি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন যেখানে তারা অতিরিক্ত মানসিক চাপ, দুর্ব্যবহার বা সহিংসতার সম্মুখীন হতে পারে। এর পাশাপাশি সীমানা নির্ধারণ ও নিজের যত্ন নেওয়ার ইতিবাচক অভ্যাস বজায় রাখাসহ আপনার নিজের জীবনের মানসিক চাপ সামাল দিতে স্বাস্থ্যকর আচরণ ও প্রতিক্রিয়ার উদাহরণ তৈরি করার কথা মনে রাখবেন।