02/05/2025
Bold opinions
বাইরের পৃথিবী যে আমাদের তেমন ভ্যালু করে না এটার মূল কারণ স্কিল ইস্যু না। কিংবা অশিক্ষিত মানুষের হার বেশি, আমরা অর্থনৈতিক দিক থেকে দরিদ্র এগুলোও মূল বিষয় না আসলে। কারণ পৃথিবীতে এরকম অনেক জাতি আছে যারা দরিদ্র, শিক্ষার হারে পিছিয়ে তবুও অন্যরা তাদের অনেক ভ্যালু করে৷ আইপিএল বিগব্যাশে আফগানরা যেই ভ্যালু পায়, আমরা সেটাও পাই না। আইপিএলে আমাদের চেয়ে বিলো স্ট্যান্ডার্ডের প্লেয়ার নেয় যেমন - করিম জান্নাত, কিন্তু আমাদের নেয় না। এমনকি অস্ট্রেলিয়া থেকে ইংল্যান্ড, পাকিস্তান থেকে নিউজিল্যান্ড আমাদেরকে পাত্তাও দেয় না কোনো আলোচনায়। জেসন গিলেস্পি, জনাথন ট্রট রা পাকিস্থান-আফগানিস্থানের কোচ হয়, কিন্তু আমরা আমাদের জন্য কোনো কোচ ই খুঁজে পাই না এখন। আমাদের যে সবাই একটু ছোট করে দেখে এইটা স্বয়ং সাকিব আল হাসান অবধি ফিল করেছে নানা সময়।
আমাদের কোথাও নিতে চায় না - এর সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে আমরা অনেক Uncultured। এটা শিক্ষিত, অশিক্ষিতের ব্যাপার না। আমরা এভারেজেই প্রচন্ড uncultured। অনেক সময় টিম করতে গেলে আমরা কম মেম্বার নেই তবুও বিশেষ কোনো মানুষকে টিমে ইনক্লুড করা থেকে বিরত থাকি না? কারণ তাকে দলে নিলে Diseconomies of Scale তৈরি হয়। কাজের এফিসিয়েন্সি কমে যায়৷ এভারেজ বাঙ্গালি হচ্ছে ঠিক ওইরকমের একজন মেম্বার, যাকে দলে নিলে দলের কালচার নষ্ট হয়। আর এটা আমাদের সবার মধ্যে। সবার মধ্যেই।
দেখবেন লোকাল বাসে উঠলে কেউ ভেতরের দিকে যেতে চায় না। কেন চায় না তার কোনো লজিক নাই। পেছনে ফাঁকা। সে সামনেই নেমে যাবে এমনটাও না। কিন্তু সে ভেতরে যাবে না। বাংলাদেশের লোকাল মার্কেটের দোকানদার, হকার বা রিক্সাওয়ালা আর দারোয়ানরা যে লেভেলের খারাপ ব্যবহার করে, সেক্সিস্ট মন্তব্য করে সেগুলো কখনো কেউ বলে না। বাসে কারো সাথে পা লাগছে বা ধাক্কা লাগছে, আপনি যদি বলেন সরি, দেখবেন উল্টো আপনার ওপর দিয়েই সব যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের লোকাল বাসে এরকম হওয়াটা যে স্বাভাবিক এবং সরি বলাটা যে কোনো ক্ষতিপূরণ না বরং কার্টেসি - এই স্বাভাবিক জ্ঞানটুকু আমাদের নাই। আমরা বুঝিই না আসলে। এই ব্যাপার গুলো কিন্তু বইপত্র পড়ায়ে শেখানো যায় না কখনো। এগুলো একটা জাতির গড় কালচার। সে কিভাবে বড় হয়, কি কি শেখে, কিভাবে ভাবে - এগুলার উপর তার আচরণ গড়ে ওঠে। আমি সেদিন ড.মুহম্মদ ইউনূসের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচনা দেখছিলাম, সে প্রতিটা গ্রিটিংসের এন্সার দিচ্ছিলো, নিজে গ্রিট করছিল। একবার এক লেখায় পড়েছিলাম, খুব ছোটবেলায় ঐ লেখক/লেখিকার সাথে অমর্ত্য সেনের দেখা হয়েছিলো, অমর্ত্য সেন নিজে জিজ্ঞেস করেছিলেন - কেমন আছো?
আমাদের শিক্ষিত যারা তারাও কম যায় না। আমরা যত শিক্ষককে সালাম দেই, সালামের উত্তর পাই? আমি পাই না। ১% এর কাছে পাই বড়জোর। সালামের উত্তর দিতে কত সেকেন্ড টাইম লাগে বলেন তো! উনারা কতই বা বিজি থাকেন যে সালামের উত্তরটুকুও দিতে পারেন না? আসলে পারেন, কিন্তু দেন না। কারণ ঐটাই আমাদের কালচার। আমরা এরকমই। শিক্ষিত অশিক্ষিত ইস্যু না। একটু উপরের কারো সাথে কথা বলার সময় দেখবেন সে কখনো থেমে দাঁড়িয়ে কথা বলে না। সে যদি ব্যস্ত থাকে তাহলে নো অবজেকশন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা কেউ অত ব্যস্ত থাকি না। হাটতে হাটতে কথা বললে আমাদের নিজেদেরকে সুপিরিয়র ফিল হয়, আমরা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ অনুভব করি। অথচ কারো সাথে থেমে অল্প হলেও কথা বলা যে একটা ম্যানার এই সেন্সটাই আমাদের নাই। আমরা ভাবতেই পারি না, মানুষকে ভ্যালু দেয়াটাও শিষ্টাচারের একটা অংশ হতে পারে।
ফুড রেঞ্জার্সের বাংলাদেশের ভিডিও গুলো যদি দেখেন, দেখবেন বিদেশি পেয়ে কেমন করতেছে। হালিম খাইতে চাইছে এক প্লেট! এরপর ৫০০ টাকার হালিম ধরায় দিছে, ৫০ টাকার জিনিস ২০০ টাকা রাখতেছে, পারলে চেয়ে আরো রেখে দেয় - ঐ যে আমারে দিতে কইছে - এর মতো। উপমহাদেশের দোষ দেবেন? আচ্ছা, এবার পাকিস্তানের গুলো দেখেন। কেউ টাকাই নিতে চায় না। বলতেছে মেহমান, টাকা নিবো কেন। একজন দুইজন না। প্রায় সবাই। টাকা নিতে চায় না। খুবই ছোট স্যাম্পলিং যদিও, কিন্তু এতেও দুই দেশের গড় মানুষের ভেতরের কালচার বোঝা যায় আসলে।
আপনি Shehwar & Maria ইউটিউব চ্যানেলের শেহওয়ারকে ভালোভাবে খেয়াল করতে পারেন। সে যখন বাইরের মানুষের সাথে কথা বলে, অপরিচিত কারো সাথে কথা বলে, বাসায় কথা বলে - বুঝবেন সে আমাদের চেয়ে কতটা আলাদা। He knows lots of courtesies। আমার বন্ধুকে দেখতাম, চা যখন খাইতো সে Compliments দিতো, রিক্সাওয়ালারে সরি বলতো, Courtesy মেইনটেইন করতো সুন্দর করে। এমন না ও অনেক বিনয়ী, কিন্তু Cultured। আমরা এভারেজে Uncultured জন্যই ঐ যে রাস্তায় কাউরে দেখে তার পোশাক নিয়ে কথা বলি, মোরাল পুলিশিং করতে যাই - এমন না এই জিনিস টেক্সটবুকে পড়লেই কেউ বুঝে যাবে সবকিছু। আমাদের বড় বড় স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে এরকম Uncultured মানুষ যে কত্ত আছে তার ইয়ত্তা নাই। ওদেরই বা দোষ কি! আমরা সবাই এমন। কালচার ব্যাপারটা ভেতরে লালন করতে হয় আসলে। আমাদের মধ্যে নাই জন্যই আমরা যেখানে যাই স্ট্রাগল করি।
তাই কেউ আমাদের সহজে পিক করতে চায় না। স্কলারশিপ দিতে চায় না, চাকরি দিতে চায় না, দলে নিতে চায় না - কারণ আমরা পরিবেশ নষ্ট করে ফেলি।
একটা মজার গল্প পড়ছিলাম। সত্য মিথ্যা জানি না। এখনো এক্সপেরিয়েন্স করার সুযোগ পাইনাই। ইংল্যান্ডের যেখানে অনেক বাঙ্গালি থাকে, অই জায়গাটার নাম হয়ে গেছে বাংলা টাউন। বেশ ভালো। ব্রিটিশ দেশে বাংলা টাউন। আবার ইংল্যান্ডে সবচেয়ে বেশি খাদ্যে ভেজালও নাকি পাওয়া যায় ঐ বাংলা টাউনেই! নাহ অবাক হবার মতো কিছু না। কেননা ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধানই ভানে!
opinions