20/06/2023
থ্যালাসেমিয়া
থ্যালাসেমিয়া (ইংরেজি: Thalassemia) একটি অটোজোমাল মিউট্যান্ট প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত বংশগত রক্তের রোগ। এই রোগে রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিন কণার উৎপাদনে ত্রুটি হয়। থ্যালাসেমিয়া ধারণকারী মানুষ সাধারণত রক্তে অক্সিজেনস্বল্পতা বা “অ্যানিমিয়া”তে ভুগে থাকেন। অ্যানিমিয়ার ফলে অবসাদগ্রস্ততা থেকে শুরু করে অঙ্গহানি ঘটতে পারে। থ্যালাসেমিয়া দুইটি প্রধান ধরনের হতে পারে: ১) আলফা থ্যালাসেমিয়া (ক.আলফা থ্যালাসেমিয়া মেজর , খ.আলফা থ্যালাসেমিয়া মাইনর) ২) বিটা থ্যালাসেমিয়া। (ক.ß থ্যালাসেমিয়া মেজর , খ. ß থ্যালাসেমিয়া মাইনর) সাধারণভাবে আলফা থ্যালাসেমিয়া, ß থ্যালাসেমিয়া থেকে কম তীব্র। আলফা থ্যালাসেমিয়া বিশিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে রোগের উপসর্গ মৃদু বা মাঝারি প্রকৃতির হয়ে থাকে। অন্যদিকে বিটা থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা বা প্রকোপ অনেক বেশি; এক-দুই বছরের শিশুর ক্ষেত্রে ঠিকমত চিকিৎসা না করলে এটি শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
ডেল্টা বিটা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর পেরিফেরাল ব্লাড ফিল্ম
বিশ্বে বিটা থ্যালাসেমিয়ার চেয়ে আলফা থ্যালাসেমিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি। আলফা থ্যালাসেমিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চীনের সর্বত্র এবং কখনও কখনও ভূমধ্যসাগরীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের লোকদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১ লক্ষ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।
শিশুদের ক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়া
সাধারণত, জন্মগতভাবে একটি শিশু থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হয়ে থাকে যা, শিশু ও মা-বাবার কোন ভুল থেকে নয় বরং জেনেটিক্যালি বা জিনগত কারণে সংঘটিত হয়। শিশুর বয়স বৃদ্ধির ২ বছরের মধ্যে রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হতে শুরু করে যা পরবর্তীতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া তথা পরিক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগের নিরুপণ করা হয়। থ্যালাসেমিয়া মেজর বা কুলি অ্যানিমিয়া (Cooley anemia)-তে আক্রান্ত সন্তান বড় হয়ে সাধারণত ৩০ বৎসর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
শিশুর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে সমস্যা দেখা দেয় সেটি হলো তার যথাযথ বৃদ্ধি না হওয়া। আর সেই সাথে রক্তস্বল্পতা, অরুচি, দুর্বলতা সহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। শিশুটি স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। শিশু মনে হীনমন্যতার সৃষ্টি হয় ও নিজেকে অস্বাভাবিক ভাবে এবং সেই সাথে সবার সঙ্গ এড়িয়ে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ, নিয়মিত রক্ত সঞ্চালন ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এ রোগে আক্রান্ত শিশুকে সুস্থ জীবন যাপনের ব্যবস্থা করে দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব।
লক্ষণ
প্লীহার আকার বেড়ে গেছে
অতিরিক্ত আয়রন[১]
সংক্রমণ,
অস্বাভাবিক অস্থি বৃদ্ধি,
প্লীহা বড় হয়ে যাওয়া (স্প্লিনোমেগালি),
অবসাদ অনুভব,
বৃদ্ধি ব্যাহত হয়,
দুর্বলতা,
শ্বাসকষ্ট,
মুখ-মন্ডল ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া,
অস্বস্তি,
ত্বক হলদে হয়ে যাওয়া (জন্ডিস),
হাড়ের বিকৃতি(প্রধানত করোটি এবং মুখমণ্ডল),
ধীরগতিতে শারীরিক বৃদ্ধি,
পেট বাইরের দিকে প্রসারিত হওয়া বা বৃদ্ধি পাওয়া,
গাঢ় রঙের প্রস্রাব,
হৃৎপিণ্ডে সমস্যা
চিকিৎসা
মাইনর থ্যালাসেমিয়াতে সাধারণত চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। থ্যালাসেমিয়া মেজরে নিয়মিত রক্ত সঞ্চালন প্রধান চিকিৎসা। বার বার রক্ত নেবার একটি বিপজ্জনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো বিভিন্ন প্রত্যঙ্গে অতিরিক্ত লৌহ জমে যাওয়া। এর ফলে যকৃত বিকল হয়ে রোগী মারাও যেতে পারে।
প্রতিরোধ
থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করা খুবই সম্ভব। এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। যদি স্বামী-স্ত্রী দুজনই থ্যালাসেমিয়া বাহক বা একজন থ্যালাসেমিয়া বাহক এবং একজন হিমোগ্লোবিন ই এর বাহক হয় তবে প্রতি গর্ভাবস্থায় –
এ রোগে আক্রান্ত শিশু জন্ম নেয়ার সম্ভাবনা থাকে শতকরা ২৫ ভাগ।
বাহক শিশু জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে শতকরা ৫০ভাগ।
আর সুস্থ শিশু জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা থাকে শতকরা ২৫ ভাগ।
স্বামী স্ত্রী দুজনের যেকোনো একজন যদি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকেন, তাহলে নবজাতকের থ্যালাসেমিক হবার কোন সম্ভাবনা থাকে না। তবে নবজাতক থ্যালাসেমিয়ার বাহক হতে পারে যা কোন রোগ নয়।
তাই এ রোগের বাহকদের মধ্যে বিয়ে নিরুৎসাহিত এবং প্রতিহত করার মাধ্যমে সমাজে নতুন থ্যালাসেমিক শিশুর জন্ম হ্রাস করা যায়। সুতরাং, দেরি না করে আজই থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় এর জন্য হিমোগ্লোবিন (হেমাটোলজিস্ট বা রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ) ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং আপনার শিশুকে এর অভিশাপ থেকে মুক্ত রাখুন।
এছাড়া ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ অর্থাৎ যেসব পরিবারে স্বামী ও স্ত্রী দুজনই এ রোগের বাহক অথবা যাদের এক বা একাধিক থ্যালাসেমিক শিশু আছে তারা গর্ভস্থ ভ্রুণ পরীক্ষার মাধ্যমে সম্ভাব্য থ্যালাসেমিক শিশু নির্ণয় এবং তা পরিহার (গর্ভপাত) করতে পারেন। গর্ভাবস্থার ১৬ থেকে ১৮ সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষাটি করালে ভালো হয়।
থ্যালাসেমিয়া বংশগত রোগ। সংক্রামক বা ছোঁয়াচে নয়। এটি পিতামাতার কাছ থেকে সন্তানের মধ্যে আসে। মা-বাবা দুই জনেই যদি রোগী হয় তা হলে সুস্থ বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যদি মা-বাবার একজন রোগী হয় অন্যজন সুস্থ হয় তাহলে কিছু সন্তান বাহক হবে, কিন্তু সুস্থ হবে। রোগটি মা-বাবার থেকেই সন্তানের মধ্যে সঞ্চালিত হয়। তাই যদি বিবাহ করার পূর্বে রক্তের পরীক্ষা করে নেওয়া যায় যে পাত্র বা পাত্রী কেউই বাহক বা রোগী নয় তা হলে রোগটি সঞ্চালিত হতে পারবে না।
সূত্র:
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা
Cianciulli P (অক্টোবর ২০০৮)। "Treatment of iron overload in thalassemia"। Pediatr Endocrinol Rev। 6 (Suppl 1): 208–13। পিএমআইডি 19337180।
"Thalassemia Complications"। Thalassemia। Open Publishing। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১।
দেশে দেড় কোটিরও বেশি মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক, ইত্তেফাক, ৮ মে ২০২১
( এর লক্ষ্মণ দেখামাত্র একজন হেমাটোলজিস্ট বা রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ) ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
যোগাযোগ
হাইপারটেনশন এন্ড রিসার্চ সেন্টার, ধাপ জেল রোড,রংপুর।
শরিফ(পিআরও)
01400888751