04/06/2025
টং দোকানে বসে ডাঃ জাকারিয়া আল জিহাদ ভাইয়ের সাথে চা খাচ্ছিলাম। বিল দিয়ে ঘুরতেই দেখি পাশের ইলেকট্রিসিটি পোলটার গায়ে কি একটা লিফলেট লাগানো। উৎসাহ নিয়ে উনি বললেন, “দেখি তো, কী লেখা আছে।” সাদা কাগজে লাল কালি দিয়ে বড় বড় করে লেখা,
"আমি ১০০০ টাকার একটা নোট এখানে হারিয়ে ফেলেছি। যদি কেউ খুঁজে পান দয়া করে আমার কাছে পৌঁছে দিন। আমি একজন বৃদ্ধ মহিলা, চোখে খুব কম দেখি।"
তার নিচে একটি ঠিকানা দেওয়া।
ঠিকানাটা কাছেই। হাঁটা পথে মিনিট পাঁচেক। ডাঃ জাকারিয়া আল জিহাদ বললেন, “চলুন, খুঁজে দেখা যাক।”
আমি আর তিনি খুঁজতে খুঁজতে ওই ঠিকানায় পৌঁছালাম। জং ধরা ভাঙাচোরা গেট দিয়ে সাবধানে ভেতরে ঢুকলাম। একটি জরাজীর্ণ টিনের ঘর, উঠানে এক অশীতিপর বৃদ্ধা বসে আছেন।
আমাদের পায়ের শব্দে তিনি মুখ তুলে তাকালেন, “কে?”
ডাঃ জাকারিয়া আল জিহাদ কাছে গিয়ে বললেন, “আমরা রাস্তায় আপনার ১০০০ টাকা খুঁজে পেয়েছি।”
আমাদের কথা শুনে বৃদ্ধা হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন। ধাতস্থ হয়ে বললেন, “বাবা, এই পর্যন্ত অন্তত ১০/১২ জন আমার কাছে এসে বলেছে, তারা নাকি রাস্তায় আমার টাকা পেয়েছে। আমার কোনো টাকা হারায়নি। ওই লেখাগুলোও আমার না, আমি ভালো করে পড়তেও পারি না!”
ডাঃ জাকারিয়া আল জিহাদ নিচু হয়ে ওনার হাত ধরে বললেন, “এখনো সন্তান মনে করে আপনি টাকাটা রেখে দিন।”
বৃদ্ধা টাকাটা হাতে নিয়ে বললেন, “বাবা, আমি খুব অসুস্থ। ভালো করে হাঁটতে পারি না। তোমাদের খেতে দিই!”
এই বলে তিনি অনেক কষ্টে লাঠিতে ভর দিয়ে বারান্দায় উঠলেন। আমি আর ডাঃ জাকারিয়া আল জিহাদ দুজনেই ওনাকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেলাম।
তিনি কম্পমান হাতে বাটিতে গুড়মুড়ি ঢালতে বললেন, “তোমরা আমার অতিথি! বসো।”
পেটে ক্ষুধা ছিল না, তবুও ডাঃ জাকারিয়া আল জিহাদের আন্তরিকতা আর বৃদ্ধার চোখের জল দেখে আর না বলতে পারিনি। আমরা ধীরে ধীরে গুড়মুড়ি খেতে খেতে গল্প করছিলাম। বৃদ্ধা জানালেন, এই পৃথিবীতে আপনজন বলতে আর কেউ নেই। আগে ভিক্ষা করতেন, এখন আর বেরোতে পারেন না।
ফেরার সময় বৃদ্ধা বললেন, “বাবা, একটা অনুরোধ—ওই কাগজটা ছিঁড়ে ফেলো।”
ডাঃ জাকারিয়া আল জিহাদ ওনার বাড়ি থেকে বের হয়ে বললেন, “দেখুন, সবাইকে বলার পরও কেউ কেন কাগজটা ছিঁড়ে ফেলেনি!”
আমি ওনার কথায় সায় দিয়ে ভাবছিলাম, ওই মানুষটির কথা যিনি এই অভিনব পদ্ধতিতে বৃদ্ধাকে সাহায্য করছেন। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা আর শ্রদ্ধায় মন ভরে উঠল।
হঠাৎ পাশ থেকে একজন ভদ্রলোক এগিয়ে এসে বললেন, “এই ঠিকানাটা কোথায়? আমি রাস্তায় ১০০০ টাকার নোট পেয়েছি, ফেরত দিতে চাই।”
ঠিকানা দেখিয়ে আমরা ওনাকে সামনে এগিয়ে যেতে বললাম।
ডাঃ জাকারিয়া আল জিহাদ আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, “এভাবেই বেঁচে থাকুক আমাদের মানবতা!”
আমি চুপচাপ তার পাশে দাঁড়িয়ে মাথা নাড়ালাম।
এভাবেই গল্পটি লিখেছেন আমার এক শুভাকাঙ্ক্ষী।
তার জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা ও ধন্যবাদ।