26/08/2025
আপনি সম্ভবত মূত্র বা প্রস্রাবের নমুনায় (urine specimen) পাওয়া ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টাল (calcium oxalate crystal) সম্পর্কে জানতে চাইছেন। এটি প্রস্রাব পরীক্ষা (urine analysis) বা ইউরিনারি মাইক্রোস্কোপি (urinary microscopy) এর একটি সাধারণ ফলাফল।
ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টাল কী?
ক্যালসিয়াম অক্সালেট হলো একটি রাসায়নিক যৌগ যা ক্যালসিয়াম এবং অক্সালেট নামক দুটি উপাদান দিয়ে তৈরি। এটি আমাদের শরীরে স্বাভাবিকভাবেই থাকে এবং কিছু নির্দিষ্ট খাবার থেকে আসে। সাধারণত, এটি প্রস্রাবের সাথে মিশে দ্রবীভূত অবস্থায় শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।
যখন ক্যালসিয়াম এবং অক্সালেট-এর পরিমাণ প্রস্রাবে খুব বেশি হয়ে যায়, অথবা প্রস্রাব খুব বেশি ঘন (concentrated) হয়, তখন এই যৌগটি দ্রবীভূত না হয়ে ছোট ছোট কঠিন কণা বা ক্রিস্টালে রূপান্তরিত হয়। এই ক্রিস্টালগুলোকে মাইক্রোস্কোপের নিচে দেখা যায়।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টাল পাওয়া যাওয়া কিছু ক্ষেত্রে স্বাভাবিক হতে পারে। তবে এর উপস্থিতি কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিতও দিতে পারে, যেমন:
মূত্রনালীর পাথর (Kidney stones): এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টালগুলি একীভূত হয়ে বড় আকার ধারণ করলে তা কিডনি, ইউরেটার (ureter), বা মূত্রথলিতে (bladder) পাথর (stone) তৈরি করতে পারে। এই পাথরগুলো খুবই বেদনাদায়ক হতে পারে এবং মূত্রনালীর কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
অতিরিক্ত অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার: কিছু নির্দিষ্ট খাবার, যেমন: পালং শাক, বিট, বাদাম, চকোলেট, এবং কিছু ফল ও সবজি অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে প্রস্রাবে অক্সালেটের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
ডিহাইড্রেশন (Dehydration): শরীর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল না পেলে প্রস্রাব ঘন হয়ে যায়, ফলে ক্রিস্টাল গঠনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
কিছু রোগ: কিছু বিপাকীয় রোগ (metabolic diseases) বা কিডনির কিছু সমস্যা এই ক্রিস্টাল গঠনের কারণ হতে পারে।
এর চিকিৎসা বা করণীয় কী?
যদি আপনার প্রস্রাব পরীক্ষায় ক্যালসিয়াম অক্সালেট ক্রিস্টাল পাওয়া যায়, তাহলে আপনার চিকিৎসক এর কারণ নির্ণয় করতে এবং পরবর্তী পদক্ষেপের পরামর্শ দিতে পারেন। সাধারণত, যে পরামর্শগুলো দেওয়া হয় তার মধ্যে রয়েছে:
পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান: এটি সবচেয়ে কার্যকর উপায়। বেশি জল পান করলে প্রস্রাব পাতলা হয় এবং ক্রিস্টাল দ্রবীভূত হতে সাহায্য করে।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন: অক্সালেট-সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমানো। তবে খাদ্য তালিকা থেকে সব অক্সালেট-সমৃদ্ধ খাবার বাদ না দিয়ে, একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
চিকিৎসকের পরামর্শ: যদি বারবার ক্রিস্টাল পাওয়া যায় বা অন্য কোনো উপসর্গ দেখা যায় (যেমন পেটে ব্যথা, প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া), তাহলে এর পেছনের কারণ খুঁজে বের করতে চিকিৎসক আরও কিছু পরীক্ষা করাতে পারেন।
মনে রাখবেন, শুধুমাত্র একটি ইউরিন টেস্টে ক্রিস্টাল পাওয়া গেলেই যে আপনার কিডনিতে পাথর হয়েছে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। এটি স্বাভাবিকও হতে পারে। তাই এই ধরনের রিপোর্ট পেলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত।