21/12/2023
রাস টকস
এটি একটি গুল্ম জাতীয় গাছ।
এর চলতি নাম - পয়জন আইভি। ১৬৩৫ সালে করনুটাস নামের এক উদ্ভিদ বিজ্ঞানী এই গুল্মটি প্রথম আবিষ্কার করেন, কিন্তু গুল্মটি খুব একটা ব্যবহার হত না। ১৭৯৮ সালে ডাফরেনয় নামের একজন চিকিৎসক লক্ষ্য করেন এই গুল্মের রস চামড়ার উপরে হওয়া হার্পেটিক জাতীয় উদ্ভেদ সারাতে পারে। সেই থেকে এই গুল্ম চিকিৎসা জগতে একটি জায়গা করে নিয়েছিল। এই বিষাক্ত গুল্মটি উত্তর আমেরিকা ও কানাডাতে বেশি জন্মায়।
হ্যানিম্যান ১৮১৩ সাল থেকে রাস টকস গুল্মের পাতা থেকে ঔষধ তৈরি করে পরীক্ষা করতে থাকেন এবং ১৮১৬ সালে ৯৭৬ টি লক্ষন সহ ঔষধটিকে তার মেটিরিয়া মেডিকা পিউরার দ্বিতীয় ভলিউমে জায়গা দেন।
এই ঔষধের প্রধান প্রধান লক্ষণ ---
১) হ্যানিম্যান বলেছেন --- আমি দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষা করে বুঝলাম এই ঔষধটি মাংসপেশিতে টান বা খিঁচুনি লাগার একটি উৎকৃষ্ট ও স্পেসিফিক ঔষধ ,
( Of late years multiplied experience has taught me that Rhus is the most efficacious and the specific remedy for the frequently fatal effects of overlifting of the muscles and contusions ".
১০০০ শক্তি ৪ ঘন্টা অন্তর
১০/১২ বার,
২) রাস টকস গাছটির ভীষণভাবে বৃদ্ধি বা বাড়বাড়ন্ত হয় জুন বা জুলাই মাসে, অর্থাৎ বর্ষাকালে, আর এই সময়ে গাছটির ফুলও ফোটে। কোন গাছের যখন ফুল ফোটে বুঝতে হবে সেই সময় তার সর্বাত্মক বৃদ্ধি হয়েছে এবং তার ভিতরের সবরকম গুণগত উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই জন্য বর্ষাকালীন বৃদ্ধিযুক্ত রোগে রাস টকস অত্যন্ত কার্যকরী হয়। রাতে বিশেষ করে মাঝ রাতে এই গুল্মের মধ্যে পয়জনাস অর্থাৎ বিষাক্ত ভাব বাড়ে, সেই জন্য রাস টকসের অনেক বৃদ্ধি রাতে, বিশেষ করে মাঝ রাতের পরে হয়।
৩) অত্যন্ত শারীরিক ছটফটানি, কোন এক জায়গায় চুপ করে বসে বা শুয়ে থাকতে পারে না, সব সময় শারীরিক অস্থিরতা প্রকাশ করা রাস টকসের একটি প্রধান লক্ষণ, কারণ তাতে সে ভাল থাকে, ( এ্যাকোনাইট, আর্সেনিক, ফসফরাস,)
৪) ঠান্ডা স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়াতে থাকার জন্য, বা ভিজে বা আদ্র আবহাওয়ায় থাকার জন্য, বা বৃষ্টিতে অনেকক্ষণ ভেজার পরে, বা অনেকক্ষণ ধরে স্নান করার পরে, যে কোন রোগের সূত্রপাত হলে, এবং তার সাথে গা হাত পা খুব ব্যথা থাকলে, এবং শারীরিক ছটফটানি প্রকাশ পেলে রাস টকসই প্রথম এবং প্রধান ঔষধ,
৫) অত্যন্ত শীত কাতুরে, শীত খুব বেশি, ঠান্ডাতে সব কষ্ট বাড়ে , এবং গরমে সব কষ্ট কমে, ( হিপার, নাকস, সোরিনাম, সালফার, কেলি কার্ব)
৬) সব রকম বাতের ব্যথায় এই ঔষধ অত্যন্ত কার্যকরী -- ঘাড়ে ব্যথা, পিঠে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, হাতের বা পায়ের জয়েন্টে ব্যথা, কানের পিছনে অর্থাৎ টেম্পারো ম্যান্ডিবুলার জয়েন্টে ব্যথা, ইত্যাদি সকল ব্যথায় এই ঔষধ একটি ধন্বন্তরি ঔষধ, তবে দুইটি লক্ষণ অবশ্যই দেখতে হবে,
i) স্থির বা শান্তভাবে থাকলে ব্যথা বাড়ে, কিন্তু চলাফেরা বা নড়াচড়ায় ব্যথা কমে, এবং
ii) সবরকম ঠান্ডাতে ব্যথা বাড়ে, এবং সব রকম গরমে, বা গরম সেঁকে ব্যথা কমে। পিঠের ব্যাথা চাপলে কমে।
একভাবে শুয়ে থাকলে ব্যথা বাড়ে, তাই বিছানায় সমানে ছটফট করতে থাকে, কিন্তু নিজের শরীরের দোষ মনে করে না, ভাবে বিছানাটা খুব শক্ত, ( আর্নিকা, ব্যাপটিসিয়া, পাইরোজেন৷) ,
৭) এটি তরুন চর্ম রোগের একটি অত্যন্ত ভালো ঔষধ, তবে চর্ম রোগের বৈশিষ্ট্য হলো --ফোসকা পড়ার মতন, অর্থাৎ ভিতরে কিছু জল থাকার মতন উদ্ভেদ। অর্থাৎ, রাস টকসের চুলকানি একেবারে শুকনো নয়, উদ্ভেদগুলির ভিতরে কিছু রস থাকবে। অসহ্য চুলকানি , চুলকানি রাত্রে বাড়ে,এবং গরম সেঁকে বা উত্তাপ প্রয়োগে ভালো থাকে। এইজন্যে যেসব উদ্ভেদের ভিতরে একটু জল থাকে, যেমন -- হাম, পকস, হার্পেটিক, ঠোটের উপরে হওয়া জ্বরঠুঁটো, ইত্যাদি উদ্ভেদজনিত চর্মরোগে রাস টকস অদ্বিতীয় ঔষধ । আর্টিকেরিয়া বা আমবাতেও এটি অত্যন্ত কার্যকরী ঔষধ, গরম সেঁক দিলে আমবাত কমে।
৮) বহু ক্ষেত্রে জিভের আগার দিকে লালচে ভাব থাকে, কখনও বা ত্রিভুজের মতন তিন কোনাযুক্ত লাল রংয়ের আভা দেখতে পাওয়া যায় ,
৯) যে সকল জ্বর, বা টাইফয়েডের শুরুতে ডায়েরিয়া বা পাতলা পায়খানা থাকবে, রাস টকস একমাত্র নির্দেশক ঔষধ, অবশ্য অন্য কিছু সিমপটমস দেখা দরকার , যেমন শীত বেশী লাগবে, গরমে আরাম পাবে, নড়াচড়াতে আরাম পাবে, ইত্যাদি ।
( জ্বরের শুরু থেকে সাংঘাতিক কোষ্ঠবদ্ধতা --- ব্রাইওনিয়া ),
১০) ঠান্ডা দুধ খেতে ভালোবাসে,
১১) স্বপ্ন দেখে খুব ভারী কাজ করছে -- মালপত্র বহন করা, গাড়ী বা নৌকা চালানো, ইত্যাদি,
১২) শরীরের যে কোন জায়গায়, বিশেষ করে হাতে বা পায়ে, ঝিনঝিন করা, বা অবস হওয়া, বা মাংসপেশী কেঁপে ওঠা ---
এটিও এই ঔষধের একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ।
( a sensation of tingling and twitching in the affected limb),
১৩) এই ঔষধের কয়েকটি মানসিক লক্ষনও খু্বই উল্লেখযোগ্য,
খুব উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ, ও মানসিক অস্থিরতা, সব সময় মন মেজাজ খারাপ থাকে, আর থাকে সন্দেহপ্রবনতা, সহজে সবকিছু বিশ্বাস করতে চায় না।
★ব্রাইওনিয়ার সাথে এই ওষুধের খুব ভালো সম্পর্ক । হ্যানিম্যান একসময় একটি মাত্র ঔষধ প্রয়োগ করতে বললেও নিজে কিন্তু ব্রাইওনিয়া ও রাস টকস ঔষধ দুইটি অল্টারনেট বা পালটাপালটি করে টাইফয়েড জ্বরে প্রয়োগ করছেন। এ ব্যাপারে হ্যানিম্যান নিজে লিখেছেন,
" Rhus alterations with Bryonia could cure all case of the disease in the hands of careful practitioners ".
★ হ্যানিম্যানের মতে রাস টকস একটি এ্যান্টি সোরিক ঔষধ,
তবে শুধু রাস টকস নয়, কোন ঔষধের মায়াজম নিয়ে বেশি ভাবার দরকার নেই, বেশি কচকচানি করারও দরকার নেই।
★ রাস টকস ১০০০ শক্তি ভাল কাজ করে।
রাস টকস ব্যবহার করে আমরা এ্যালোপ্যাথদের যথেচ্ছ পেন কিলার ব্যবহার করে মানুষদেরকে কিডনি নষ্ট করার হাত থেকে বাঁচাতে পারি!
নিচে রাস টকস বা পয়জন আইভি নামের গুল্ম জাতীয় গাছটির একটি ছবি দিলাম।
############xxc###############x
Copy from Dr. Robin Barmon's post.