06/04/2024
লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য হাসিল করতে
আমরা যেভাবে নামাজ আদায় করবো
▬▬▬▬▬▬◄◖◉◗►▬▬▬▬▬▬
➤ প্রথম কথা: লাইলাতুল কদরের প্রধান আমল হলো, কিয়াম তথা নামাজে দণ্ডায়মান হওয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াবের আশায় কদরের রাতে (ইবাদতের জন্য) দণ্ডায়মান হবে, তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১৯০১, মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৬০]
➤ দ্বিতীয় কথা: এই রাতের সর্বোত্তম আমল হবে লম্বা সময় ধরে কিয়ামুল লাইল তথা তাহাজ্জুদের নামাজ ও নফল নামাজে দণ্ডায়মান থাকা। যাদের পক্ষে সম্ভব, নামাজে লম্বা কিরাত পড়বেন। কিরাত ও কিয়ামকে লম্বা করতে একই রাকাতে অনেকগুলো সুরা পড়তেও কোনো অসুবিধা নেই। ধরুন, কারো দশটি সূরা মুখস্থ আছে; তাহলে তিনি প্রথম রাকাতে পাঁচটি ও দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচটি সুরা পড়তে পারেন।
➤ তৃতীয় কথা: যদি সম্ভব হয়, তাহলে লাইলাতুল কদরের তালাশে রাতে না ঘুমানো উত্তম। আয়িশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম বিশ দিন (রাতে) সালাত আদায় করতেন ও ঘুমাতেন। কিন্তু শেষ দশকে ঘুমাতেন না; বরং পরিধেয় বস্ত্রকে মজবুত করে বেঁধে নামাজে মনোনিবেশ করতেন।’ [আহমাদ, আল-মুসনাদ: ৬/৬৮, ১৪৬]
➤ কদরের আমল শুরু হবে মাগরিবের ওয়াক্ত থেকে এবং চলবে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। সুতরাং, এই পুরো সময়টিই গুরুত্বপূর্ণ। তাই, এই সময়টুকুতে যথাসাধ্য আমলে লেগে থাকতে হবে। বিশেষ করে নফল নামাজে।
➤ ‘‘শবে কদরের নামাজ’’ বলতে বিশেষ নিয়মের, বিশেষ সুরা দিয়ে কোনো নামাজ আদায়ের কথা সহিহ হাদিসে সাব্যস্ত হয়নি। সুতরাং, কদর তালাশে সাধারণভাবেই নফল নামাজ পড়বেন। সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন, শেষ রাতে তাহাজ্জুদ পড়ার।
➤ মাগরিব থেকে ইশার মধ্যবর্তী সময়ে নফল নামাজ পড়া রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবাগণ ও সালাফে সালেহিনের অভ্যাস ছিলো। সুতরাং, এ সময় নফল নামাজ পড়া উত্তম। এই সময়ের নামাজকে হাসান আল বাসরি (রাহ.) ‘তাহাজ্জুদের সমতূল্য’ গণ্য করতেন। (বিস্তারিত আমরা আউয়াবিন নামাজ নিয়ে একটি পোস্টে আলোচনা করেছি। কমেন্টে লিংক পাবেন)
➤ কদরের রাতে তাওবাহর উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া যায়। সাধারণভাবে তাওবাহর উদ্দেশ্য অন্তরে জাগরূক রেখে নিয়ত করবেন। মুখে কিছু বলতে হবে না। এরপর দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বেন, যেভাবে সাধারণ নফল পড়েন। অতঃপর, আন্তরিকতার সাথে নিজের গুনাহের জন্য ক্ষমা চাবেন।
আবু বকর (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “যখন কোনো বান্দা গুনাহ করার পর সুন্দরভাবে অজু করে দাঁড়িয়ে যায় এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখন আল্লাহ তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেন।” [তিরমিযি, আস-সুনান: ৪০৮; হাদিসটি সহিহ]
নামাজের পর দু‘আ করবেন আন্তরিকভাবে। তবে, তাওবাহর নামাজের সিজদায় এবং সালাম ফেরানোর পূর্বে ইস্তিগফার (আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা) করা আরো চমৎকার কাজ হবে। কদরের আমলের পোস্টে আমরা ইস্তিগফারের বাক্য তুলে ধরেছি। লিংক কমেন্টে পাবেন।
➤ মনে রাখতে হবে, লাইলাতুল কদর নির্দিষ্ট বা নির্ধারিত (fixed) নয়। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা রামাদানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ২০২০]
তবে, শেষ দশকের বেজোড় রাতে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। হাদিসে এসেছে, ‘‘তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ২০১৭]
সেই হিসেবে ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তম রাতে বিশেষভাবে কদর তালাশ করতে হবে (অন্যান্য দিনেও সাধ্যানুযায়ী করতে হবে)। আজ (বুধবার) ২৩ তম রাত শুরু হতে যাচ্ছে মাগরিব থেকে। সুতরাং আজকের রাতটি সম্ভাবনাময়।
মুহাদ্দিসগণ বলেন, লাইলাতুল কদরের রাতটি গোপন রাখার উদ্দেশ্য হলো, যাতে মানুষ শেষ দশকের প্রতিটি রাতকেই কদরের রাত মনে করে ইবাদত করে। তাছাড়া, তাঁরা এটাও বলেছেন যে, কদরের রাত প্রত্যেক বছর একই দিনে হয় না। বরং এটি পরিবর্তিত হয়। (আমরা এটি নিয়ে বিস্তারিত লিখেছি একটি পোস্টে। কমেন্টে লিংক দেওয়া হলো)
➤ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, ‘‘কদরের রাতটি (মর্যাদার দিক থেকে) হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।’’ [সুরা আল ক্বাদর, আয়াত: ০৩]
হিসাব করলে দেখা যায়, এই রাতটির মর্যাদা ৮৩ বছরের সমান! সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি। সুতরাং, যে-রাতটির মর্যাদা এত বেশি, সেটিকে খুঁজে পেতে রমাদানের শেষ দশটি রাতেই ইবাদতে লেগে থাকা উচিত; বিশেষত বেজোড় রাতগুলোতে। আর গ্লোবাল হিসাব করলে জোড়-বেজোরের ব্যাপার থাকে না। শেষ দশটি রাতই সমান গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আমরা লোকাল হিসাবকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি।