06/10/2025
কাজী নজরুল, শিশির মনির ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি
কাজী নজরুল ইসলাম একসময় বলেছিলেন—
“খোদার বক্ষে লাথি মার…”
এই কথাটি শুনে তৎকালীন কিছু আলেম ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে কাফের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু কবি নিজেই মঞ্চে উঠে স্পষ্ট করে বলেছিলেন— “আমি সেই খোদার বক্ষে লাথি মারতে বলেছি, যার বুক আছে।” প্রকৃত খোদার তো কোনো বুক নেই। এখানে নজরুল আসলে ভণ্ডামি, কুসংস্কার ও মিথ্যা খোদার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। এ কথা শুনে তখনকার আলেমরা লজ্জিত হয়ে সভা ত্যাগ করেছিলেন।
এই নজরুলই বলেছেন—
“মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান,
মুসলিম তার নয়নমণি, হিন্দু তার প্রাণ।”
এই লাইন উদ্ধৃত করে শিশির মনির ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, বাংলাদেশ মূলত একটি মুদ্রার মতো। রোজা হচ্ছে সেই মুদ্রার এপিঠ, আর পূজা হচ্ছে ওপিঠ। অর্থাৎ মুসলিম ও হিন্দু—দু’জনেই বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
কিছু মানুষ এই বক্তব্যকে ইসলাম অবমাননা বলে রাগ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু বাস্তবে শিশির মনির উদ্দেশ্য ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলা। তিনি রোজাকে মুসলিম সমাজের প্রতীক হিসেবে, আর পূজাকে হিন্দু সমাজের প্রতীক হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর বক্তব্য ধর্মতাত্ত্বিক নয়, বরং কাব্যিক ও রূপক অর্থে।
আমরা জানি, ইসলাম কিংবা হিন্দুধর্ম—কোনো ধর্মই বলে না যে রোজা ও পূজা একই জিনিস। ধর্মতাত্ত্বিক দৃষ্টিতে এরা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কিন্তু জাতীয় ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের পরিচয় গঠনে এ দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এই দেশ মুসলিম-হিন্দু মিলেই সম্পূর্ণ।
বাংলাদেশের চিরায়ত বৈশিষ্ট্য হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। এখানে কেউ কাউকে ধর্মের কারণে হেয় করতে পারে না। প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার আছে নিজ নিজ ধর্ম সুন্দরভাবে পালনের।
তাই বলা যায়—
জাতীয় ঐক্য ও সাহিত্যিক রূপকের দৃষ্টিতে তিনি আসলে ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের কথাই বলেছেন।
এবং কোন ভাবেই তিনি ইসলাম বা রোজাকে অবমাননা করেননি।